ধারাবাহিক – প্রতি শনিবার ।
২৬তম পর্ব শুরু ……(Egret,
Stork,Heron)
পাখি পরিচিতি : বাংলা নাম- বড় কোর্চে বক / ধলা বক
ইংরেজি নাম : Great
Egret.
বৈজ্ঞানিক নাম : আরডিয়া আলবা (Ardea alba)
ধলা বক বা বড় বক লম্বা লম্বা পা ফেলে
জলের ধারে ঘুরে বেড়ায়। এদের গলাটা যেন একটু বেশিই লম্বা। ইংরেজি এস (S) অক্ষরের মতো গলাটাকে ওরা গুটিয়ে রাখে, শুধু
শিকার ধরার সময় বা উড়ে যাওয়ার সময় গলা টানটান হয়ে যায়। এরা অন্যান্য সব বকের মতোই
অগভীর জল থেকে মাছ,ব্যাঙ,ছোট সাপ ও জলের পোকা ধরে খায়।
এদের দৈর্ঘ্য ৩১ ইঞ্চি থেকে ৪১
ইঞ্চি। এরা দাঁড়িয়ে থাকলে মাটি থেকে উচ্চতা দাঁড়ায় প্রায় ৪০ ইঞ্চি। হলুদ ঠোঁট, কালো রঙের পা ও কালো পায়ের পাতা। এদের হলুদ রঙের ঠোঁট
পাতলা এবং দীর্ঘ। গোটা শরীর সাদা পালক দিয়ে ঢাকা। প্রজননের সময় এদের গায়ে ধবধবে সাদা ঝালরের মতো নতুন পালক
গজায়। তখন চেহারার জেল্লা দেখার মতো!যেন দুধসাদা পালকের
মাত্রা ছাড়া উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়ে।
শিকারের খোঁজে একদৃষ্টে
তাকিয়ে থাকে।
বড়ো বকের মতো মাঝারি কোর্চে বক (Intermediate
egret) এবং ছোট কোর্চে বকগুলো (Little
egret) বিলের ধারে শিকারের আশায় এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে
ঘন্টার পর ঘন্টা। মাঝারি
কোর্চে বকের খুব লম্বা টিকি আছে। তাই একে
টিকিধারী বলে।
পাখি পরিচিতি : বাংলা নাম- বেগুনি বক। এদেরকে আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে লালকাঁক বলে।
ইংরেজি নাম : Purple Heron.
বৈজ্ঞানিক নাম : আর্ডিয়া পুরপুরিয়া
(Ardea purpurea).
বেগুনি বক হলো বক প্রজাতির (Purple Heron) এক অদ্ভুত ধরনের পাখি। এরা বকের মতো জলাজমিতেই
বিচরণ করে। এরা লালকাঁক নামে পরিচিত হলেও বেগুনি রঙের বককে কেন লাল
কাঁক বলা হয় তা আমার জানা নেই। তবে,এদের শরীরের উপরের অংশ নীলচে বেগুনি, মাথা
আর গলার দিকটা লালচে। আকারে ধূসর বকের চেয়ে কিছুটা ছোট। এদের পালকের রঙ লালচে বাদামি। পেছনের অংশ গাঢ় ধূসর। পা দু’টো হলদেটে-কমলা। যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে প্রজননের
উপযুক্ত হয় তখন হলুদ রঙের সরু ঠোঁটটা আরও উজ্জ্বল হয়। এদের কালো রঙের লম্বাটে ঝুঁটি আছে। এদের লম্বা ঘাড় দেখতে সাপের
মতো যা ওড়ার সময় অনেকটা ‘ঝ’ আকৃতির হয়। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে বেগুনি বক অন্যান্য বক সারস ইত্যাদি সকল জলচর পাখিদের থেকে আলাদা।
বেগুনি বক অগভীর জলে খাবারের সন্ধান করে। মাছ, ব্যাঙ,
কীট-পতঙ্গ, খোলসে মাছ, ছোট,এমনকি ছোট পাখিও খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। রাত থেকে
ভোর পর্যন্ত শিকার ধরে। শিকারের জন্য এরা দীর্ঘ সময় নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এদের
ঠোঁট এতই শক্তিশালী যা একটা সাপকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এরা খুব ভীতু প্রকৃতির।
এরা নির্জন বিল,ঝিল বা হাওরের কাছে ঘন নল বনের মধ্যে ঘাস এবং নল-খাগড়া সহযোগে বাসা তৈরি করে। বাসার উপকরণ সংগ্রহ করে পুরুষ পাখি। প্রজননকালে এদের গায়ের রঙ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেইসময় পুরুষ পাখি ঘাড়ের পালক মেলে ধরে বিভিন্ন
অঙ্গভঙ্গি করে স্ত্রী পাখির মনোরঞ্জন করে। এরপর স্ত্রী
পাখি ডিম পাড়ে। ২২-২৫দিনের মধ্যেই
ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে। তিনমাস বয়স
হলে বেগুনি বকের বাচ্চা উড়তে শেখে। আর এক বছরের
মধ্যেই তারা প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে। এরা অন্ততঃ
কুড়ি বছরেরও বেশি বাঁচে।
সাদা কাঁক
বেগুনি বক বা লালকাঁকের মতো বক প্রজাতির আরও দুটো পাখি হলো
সাদা কাঁক (Grey Heron) আর কালো কাঁক (Grey Heron).এরা একা
একা থাকতে পছন্দ করে। এদের গায়ের রঙ ধূসর এবং মাথায়
ঝুঁটি আছে। অন্য কাঁকের মতোই মাছ,ব্যাঙ,শামুক খায়। শিকার ধরে বেশ কায়দা করে। গলা গুঁজে একজায়গায় চুপ করে
দাঁড়িয়ে থাকে আর যেই শিকার দেখতে পায় অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে গলা তুলে শিকার ধরেই গিলে
ফেলে। সাদা কাঁক সারা ভারত জুড়েই দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা ‘মানিকজোড়’ কথাটা
খুবই ব্যবহার করি। বিশেষ করে ব্যঙ্গে…দুই অন্তরঙ্গ বন্ধু যারা একসঙ্গে থাকে এবং একই স্বভাবের তাদেরই মানিকজোড় বলি। পাখিদের মধ্যেও লম্বা পা-যুক্ত বক
আকারের একধরনের বকপাখি আছে যাদের নাম হলো মানিকজোড়। নাম থেকেই বোঝা যায় যে এরা
জোড়ায় থাকে। ডানার রঙ কালো কিন্তু গলার
কাছটায় সাদাটে ভাব থাকে। এরা সকলেই ভারী,শক্ত এবং
মোটা ঠোঁটযুক্ত পাখি। এরা জলের ধারেই বসবাস করে
বলে এদের স্থলভাগের দিকে দেখতে পাওয়া যায় না। এদের বৈজ্ঞানিক নাম সাইকোনিডিয়া
(Ciconiidae).
কত
অজস্র রকমের পাখি আছে যারা শুধুই বক প্রজাতিরই অন্তর্ভুক্ত। মদনটাক (Lesser Adjutant Stork) তেমনই একটা
অদ্ভুত ধরনের বক জাতীয় পাখি। এদের ন্যাড়া মাথা। ঠোঁট খুব শক্ত এবং মোটা। ঠিক যেমন ছাল ছাড়ানো মুরগির
মাথার মতো। এদের এখন বিপন্ন এবং বিরল
প্রজাতির প্রাণী হিসাবে গণ্য করা হয়। সাপ,ব্যাঙ,মরা মাছ ইত্যাদি এদের খাদ্য। সুন্দরবনে এদের বেশি পরিমাণে
দেখা যায়। মদনটাক পাখি গ্রামাঞ্চলে ‘হাড়গিলে’নামেও পরিচিত।
পাখি পরিচিতি : বাংলা নাম-
শামুকখোল। আঞ্চলিক ভাষায়,গ্রামে-গঞ্জে এদের শামুকভাঙা, শামুকখেকো ইত্যাদি বলা হয়। এরা শামুক গেঁড়ি-গুগলি খায় বলেই এমন ধরনের নামে ডাকা হয়।
ইংরেজি নাম : Openbill Stork
বৈজ্ঞানিক নাম : আ্যনাসটোমাস (Anastomus)
শামুকখোল হলো এক ধরনের বক যাদের ইংরেজিতে স্টর্ক বলা হয়। চলতি কথায় এরা বক পাখির পর্যায়ভুক্ত। শামুকখোল হলো স্টর্কদের মধ্যে
সবথেকে ছোট প্রজাতির। শামুকখোলের দুটো প্রজাতির একটি এশীয়, আরেকটি আফ্রিকান। এ দেশে এশীয় শামুকখোলের দেখা পাওয়া যায়। তাই ইংরেজিতে
এদের এশিয়ান ওপেন বিল স্টর্ক (Asian open bill stork)বলা হয়।
মাঠে ঘাটে, ধানক্ষেতে, জলাজমিতে এদের দলবদ্ধ হয়ে থাকতে
দেখা যায়। গায়ের রং হালকা ধূসর-সাদা আর লেজের দিকে কালো। ঠোঁটদুটি বেশ বড়ো আকারের আর
মাঝখানে ফাঁক আছে যা দিয়ে শক্ত খাবারও ভেঙে ফেলা যায়
সহজে। এর ফলে শামুক-ঝিনুক ধরে খেতে সুবিধা হয়। অনেক সময় গাছের ডালে দল বেঁধে এদের বসে থাকতে দেখা যায়। বোলপুরে একটা গোটা গ্রামের
নামই হল শামুকখোল গ্রাম,কারণ সেখানে প্রচুর পরিমাণে এই শামুকখোল পাখিদের
দেখা যায়। এরা সমতলের স্থায়ী বাসিন্দা। পশ্চিমবাংলার রায়গঞ্জে কুলিক নদীর ধারে
অনেক পরিমাণে দেখা যায়। তাছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলেও এদের বাস আছে।
এদের খাদ্যতালিকার বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে শামুক, ঝিনুক আর গুগলি। এছাড়া মাছ, কাঁকড়া, জলজ প্রাণী এবং ব্যাঙ এদের
প্রধান খাদ্য। লম্বা ও ভারী ঠোঁট দিয়ে ঝিনুকের শক্ত খোলা খুলে ভেতরের নরম অংশটুকু স্বচ্ছন্দে খেতে পারে।
এদের মাথার চাঁদি থেকে ঘাড়-গলা-বুক-পেট হয়ে লেজের তলা পর্যন্ত সাদা। প্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক
পাখির দেহ একদম সাদা দেখায়। কাঁধের নীচে, ডানার প্রান্তে এবং মাঝের পালক ও লেজ সবুজাভ কালো। লম্বা
ভারি ঠোঁট কালচে-লাল থেকে সবজে-শিঙ রঙের। এদের চোখ সাদা, ধূসর বা
হলদে-বাদামি রঙের। চোখের চারদিকের চামড়া পালকহীন। পা লম্বা ও পায়ের পাতা
অনুজ্জ্বল মেটে রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ধূসর বাদামি।
শামুকখোল
আমার বাড়ির সামনের মাঠে সকাল থেকেই অন্যান্য
বক পাখির সঙ্গে শামুকখোলেরও আনাগোনা শুরু হযে যায়। আর সূর্য অস্ত গেলেই ওরা দলবেঁধে
গাছে গিয়ে ওঠে। এরা কলোনী
তৈরি করে থাকতে পছন্দ করে।
শামুকখোল পাখিরা জুলাই-আগষ্ট মাসে বাসা বাঁধে,ডিম পাড়ে। প্রকৃতির রাজ্যে সকল প্রাণীর মধ্যেই প্রণয়ের বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেই অর্থে জোড়
বাঁধার আগে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারটাও
মুখ্য হয়ে ওঠে।
পাখিদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না।
আমার পরিচিত বিশিষ্ট এক বার্ডার
(পাখি-বান্ধব)একবার
তাঁর লেখায় শামুকখোলের প্রজননকালীন ক্রিয়াকলাপ বেশ সুন্দর করে লিখেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন…. অনেক পাখির মতো শামুকখোলও বাচ্চা দেওয়ার
জন্যে জোড় বাঁধে। এক
বছরের মধ্যে বাচ্চা বড়ো হলেই জোড় ভেঙে যায়। আবার পরের
বছর পুরুষ পাখি নতুন করে সঙ্গিনী নির্বাচন করে। নির্বাচনের
পর্বটা স্ত্রী-পাখির পছন্দের উপর অনেকখানি নির্ভর করে এবং সেই পদ্ধতিটাও বেশ অভিনব। পুরুষ পাখিরা
বাসা তৈরির যে কোনও একটা সামগ্রী,ধরা যাক গাছের শুকনো
ডাল,সেটা নিয়ে স্ত্রী পাখির সামনে গিয়ে বাড়িয়ে ধরবে। স্ত্রী-পাখির পছন্দ হতেও পারে আবার নাও হতে পারে! পছন্দ না হলে
স্ত্রী-পাখি ডালটা না নিয়ে ঘুরে বসবে। আর যদি
সে ডালটা নেয় তাহলে ঐ বছরের জন্যে ওরা জোড় বাঁধবে।
শামুকখোল শিকারে ব্যস্ত
এ
তো গেল নির্বাচন পর্ব।।
এরপর শুরু হবে প্রণয় নৃত্য। বিয়ে বলে
কথা! হোক না মাত্র এক বছরের জন্যে। এমন তো কত সিনেমাও দেখেছি! তাতেও তো একবছরের জন্যে নায়ক-নায়িকা কত নাচা-নাচি করে। সে নাচ
যে সে নাচ নয়, একেবারে বল-নৃত্য!
তাতে ওদের পা প্রায় নড়েই না,দুজনে একে অন্যের সাথে গলা মাথা
ঠেকিয়ে, ঠোঁট হা করে, কয়েক স্টেপে একসঙ্গে কয়েক ধাপ এগিয়ে পিছিয়ে,একসঙ্গে মাথা উঁচু করে,একসঙ্গে
মাথা নিচু করে। এমন বার
কয়েক করার পর নাচ শেষ হয়। সেই প্রণয়
নৃত্যও (Courtship Dance) নাকি দেখার মতো! এরপর দুজনে
লেগে পড়ে বাসা বাঁধার কাজে।
বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে অন্যান্য পাখিদের
সঙ্গে শামুকখোলও বাস করে। শীতকালে
বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে ওরা মিশে যায়। আমরা শীতকালে পূর্বস্থলীতে
ছুটে যাই পরিযায়ী পাখিদের টানে। তখন শ’য়ে শ’য়ে শামুকখোল দেখতে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে
দেখতে পাওয়া যায় আর এক ধরনের বক। নাম তার
কাস্তেচরা! শামুকখোল
এবং অন্যন্য পাখিদের সঙ্গে দিব্যি ভাব জমিয়ে নিয়ে তারা বসবাস শুরু করে। কাস্তেচরা
পাখি বিভিন্ন প্রকারের হয় এবং তারা
বিভিন্ন নামে পরিচিত।
কালো মাথা কাস্তে চরা (Black-headed lbis)
পাখি পরিচিতি : বাংলা নাম
- কালোমাথা কাস্তেচরা/ কাঁচিচোরা এক বড় জলচর পাখি। কালোমাথা
কাস্তেচরা’র নামের অর্থ
কৃষ্ণমস্তক পবিত্রপক্ষী।
ইংরেজি
নাম - Black Headed Ibis. Oriental
white ibis, Indian white ibis,and black-necked ibis
বৈজ্ঞানিক নাম: থ্রেস্কিওর্নিথিডে মেলানোসেফালাস (Threskiornithinae
melanocephalus).
আইবিস বা কাস্তেচরা হলো লম্বা
পা এবং বাঁকানো ঠোঁটের পাখিদের দল,যারা সমভূমি
এবং নলখাগড়া বেষ্টিত ঘাস জঙ্গল সমৃদ্ধ জলাভূমিতে বসবাস করে। এদের
দেখা মেলে বড় বড় চর,বিল,হাওর-বাওড় এর ধারে। শান্ত স্বভাবের নিরীহ পাখি এই
কাঁচিচোরা বা কাস্তেচরা। কালো ঠোঁটটা দেখতে প্রায় ধানকাটা কাস্তের মতোই। নাম তাই
কাস্তেচরা। পুরো শরীর সাদা। মাথা-ঘাড় গলা
ও ঠোঁট কালো। ঘাড়-মাথা অবশ্য পালকহীন। দেখে মনে হবে যেন কেউ তাকে আলকাতরা মাখিয়ে দিয়েছে
ঠোঁট থেকে শুরু করে মাথা-ঘাড় পর্যন্ত!
জল-বাদার ভেতরে ঠোঁট-ঘাড়-মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে জল-কাদা চষতে চষতে সামনের দিকে এগিয়ে
চলে খাদ্য খুঁজতে খুঁজতে, তখন দেখলে আশ্চর্য হতেই হয়। এদের স্ত্রী-পুরুষ আলাদা করে
চেনা যায় না।
চেহারায় রাজা-রাজা ভাবটা না থাকলেও এদের স্বভাবটা
কিন্তু রাজকীয়! যেখানেই থাকুক না কেন, আশপাশে দেহরক্ষীর মতো দু-চারটা বক, পান
কৌড়ি-কাদাখোঁচা,হট্টিটি বা অন্য পাখি ঘুরঘুর করে। কারণ, চরখুঁচির জল-কাদা ঘাঁটার
কারণে পোকা কিংবা মাছ লাফিয়ে উঠলেই এরা নিমেষে ঠোঁটে তুলে নেয়। কাস্তেচরাদের খাদ্য
তালিকায় আছে জলজ পোকা মাকড়,কুচো চিংড়িসহ ছোট মাছ, কেঁচো, ব্যাঙ, ছোট্ট সাপের
বাচ্চা ইত্যাদি। জলা জমিতে ঘুরে ঘুরে খাবার খুজে বেড়ায় এরা। খাবারের তালিকায় পছন্দসই
সবকিছু থাকলেও জলের সাপ এদের অতি প্রিয় খাবার।
লিটল ইগ্রেট, জাকানা,
পানকৌড়িদের সঙ্গে কাস্তেচরা
প্রজনন মৌসুমে এদের গলায় এবং ঘাড়ে
ঝোলে সাদাটে রঙের সুতোর মতো পালক,সেগুলো আবার হাওয়া পেলে দুলতে
থাকে। সেই গজিয়ে
ওঠা পালকগুলো বেশ শোভাবর্ধন করে। এরা বাসা
তৈরি করে বক-পানকৌড়ির সঙ্গে মিলেমিশে,তাই বক-পানকৌড়িরাই
এদের ডিম ও ছানার পাহারাদার। স্ত্রী
এবং পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম। জলাভূমিতে
দলবেঁধে এদের দেখা যায়। এদের স্বরযন্ত্র না থাকায় এরা নীরব। অর্থাৎ গলা দিয়ে শব্দ
বেরোয় না। তবে, জোড় বাঁধা
আর বাসা তৈরির সময় অদ্ভুত একটা স্বরে একে অন্যকে ডাকে। জুলাই-আগষ্ট মাস এদের প্রজননকাল
আর তখনই এরা বাসা বানায়। নীলচে বা সবুজাভ সাদা রঙের ২-৪টে
ডিম পাড়ে। সমগ্র এশিয়া জুড়ে একসময় কালোমাথা কাস্তেচরার অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু
এখন এরা শীতকালীন পরিযায়ী হয়েই আসে।
কালোমাথা কাস্তেচরা কালো গলা ও সাদা শরীরের বড়
আকারের জলচর পাখি। পাখিটির মাথা,গলা ও ঘাড় পুরোপুরি পালকহীন ও সম্পূর্ণ কালো।
বাকি দেহ পুরো সাদা। এর ঠোঁট কালো,লম্বা আর নিচের দিকে কাস্তের মত বাঁকা। ঘাড়ের
গোড়ায় কিছু পরিমাণ পালক ঝুলে থাকে। পিঠের শেষভাগ থেকে বেরিয়ে আসা চিকন চুলের মত
ধূসর বা কালচে রঙের বাহারি পালক দেখা যায়। বুকে হলুদ আভা। কাঁধ-ঢাকনিতে সাদা পালক
থাকতে পারে। চোখ লাল কিংবা লালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। যখন ওড়ে
তখন ডানার ভেতরের দিকে লাল ছড়া দাগ দেখা যায়। সাদা ডানার মধ্যে লালের ছড়াটা দেখতে লাগে
অপূর্ব সুন্দর
সহাবস্থান .......
কালো মাথা কাস্তেচরা এবং
খয়েরি কাস্তেচরা
Glossy
ibis and Black-headed ibis
পাখির নামকরণ হয় তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য
অনুযায়ী। সেই হিসাবে
বাংলা নাম কাস্তেচরা হলেও ইংরেজি আইবিশ (Ibis) নামটা বেশ
শ্রুতিমধুর। অনেক রকমের
Ibis আছে। যেমন Glossy Ibis, Red Naped Ibis, Black Headed Ibis ইত্যাদি। তবে, কাস্তেচরা পাখিদের বিশেষত্ব হল এদের ঠোঁট। এরকম
বাঁকানো বড়ো আকারের ঠোঁট অন্য পাখিদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না।
"পাখি প্রকৃতির
অলংকার".......
পরিবেশের সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও ভারসাম্য রক্ষায়
পাখির ভূমিকা অনন্য। প্রকৃতির সেই সৌন্দর্যের প্রতীক পক্ষিকুলের অবাধ বিচরণের
জন্যে আমাদের বাঁচাতে হবে গাছপালা পুকুর,খাল-বিল। ফিরিয়ে
আনতে হবে উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ। সবুজ ধ্বংস
না করে কাক-বক, বুলবুল,ময়না, টিয়া, পাপিয়া, শ্যামা, বাজ বা চিল সকল পাখির জন্যে বিস্তৃত হোক দূষণমুক্ত
প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ক্রমশ ……
২৭তম পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার ।
বিঃদ্রঃ – ছবি এবং ভি ডি ও লেখিকার নিজের তোলা ।
লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে আছে। যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন।
লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজিন, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে। বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায়। বর্তমানে বার্ড’স ফটোগ্রাফী এবং “পাখি-প্রকৃতি” নিয়ে লেখা শুরু করেছেন।