Advt

Advt

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

ধারাবাহিক প্রতি শনিবার



১৯তমপর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখিকারঅন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

২০তম পর্ব শুরু ……

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

চন্দনা টিয়া (Alexandrine parakeet)

টিয়া (Parrot) অতি পরিচিত পাখি আমাদের চারপাশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে রঙিন আর বৈচিত্র্যময় পাখি হলো টিয়াআজ বলবো হরেকরকম টিয়া’-র হরেকরকম কথা 

একদিন বেলাশেষে এক ঝাঁক টিয়া পাখি উড়ে যাচ্ছিলো ......

 আমার বাড়ির উঠোন থেকে আকাশের প্রায় অনেকটাই দেখা যায়। আর আমি সেই উঠোনে দাঁড়িয়ে পাখিদের নিত্য আসা-যাওয়া, ওড়াউড়ি দেখতে থাকি। টিয়া পাখি দলবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করেএরা অত্যন্ত কোলাহল প্রিয়যে গাছে গিয়ে বসে এক ঘন্টায় সেই গাছের ফল,ফুল প্রায় শেষ করে দিয়ে আবার দল বেঁধে উড়ে যায় অন্য গাছে তবে,ভীষন কর্কশ ওদের ডাক বিশেষ করে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায় তীক্ষ্ণ চিৎকারে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত মুখর হয়ে ওঠেআমরা যত টিয়াপাখি দেখি তাদের মধ্যে সবুজ টিয়া’-ই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়

 টিয়া সাধারনত গাছের ফুল,ফল,ছাড়াও  এদের খাদ্যতালিকায় আছে ফলের বীজ ও ফলের মিষ্টি রস। সবুজ টিয়ারা পাকা ধানও খেয়ে থাকে। পাকা লঙ্কা বা সূর্যমুখীর বীজও খেয়ে থাকে। কাঁচা লঙ্কা,কুল লঙ্কা,ছোলা এসব টিয়া’-র ভীষন পছন্দের এবং নিত্যদিনের খাবার

 টিয়াপাখি সহজেই পোষ মানে এবং মানুষের কথা নকল করতে পারে। এরা সাধারণত বৃক্ষবহুল এলাকার বাসিন্দা আবাসিক হলেও এরা বৃক্ষচর তাই মানুষের বাড়ি ঘরে এসে বসে না টিয়ার নিচের ঠোঁট অপেক্ষাকৃত ছোট ওপরের ঠোঁট বড়শির মতো নিচের দিকে বাঁকানো ঠোঁটের মধ্যে জিভ ঢোকানো থাকে এদের ঠোঁট এবং নখ অত্যন্ত ধারালোপায়ের চারটে করে আঙুলের দুটো সামনে ও দুটি পেছনে থাকায় এরা অন্য পাখির মতো সামনের দিকে সহজে হাঁটতে পারে না  

তবে,টিয়া কিন্তু খুবই অপকারী পাখিএরা পোকামাকড়,কীটপতঙ্গ কিছুই খায় না  গাছের ফুল,ফল,কুঁড়ি,বীজ ছাড়া ছোলা মটর ধান গম যব সব খায় যেখানে টিয়া পাখি বেশি থাকে সেখানকার গাছে ফুল বা ফল ধরলে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে সেগুলোকে নষ্ট করে দেয় দানা শষ্য অর্থাৎ ভুট্টা-জোয়ারের ক্ষেতে ফুল দেখা দিলেই দলে দলে টিয়া আনাগোনা শুরু করে আর ফুলে ফলে ভরা বড় বড় শীষ কেটে কেটে মাটিতে ফেলে দেয়। চাষিরা অতিষ্ট হয়ে টিয়াপাখি তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে

সাধারণতঃ জানুয়ারি থেকে জুলাই এদের প্রজননকালতখন এরা গাছের কোটোরে,কাঠঠোকরাদের পুরোনো বাসায় অথবা পুরোনো দালানের ফাটলে বাসা করে ডিম দেয়। এদের শক্ত ঠোঁট দিয়ে গাছের মোটা গুঁড়িতে গর্ত করে বাসা বানায়। তবে বিভিন্ন কারণে টিয়া পাখিরা কিছুটা বিপন্ন হয়ে পড়ছে

 আমরা সাধারনতঃ প্রকার টিয়াপাখি দেখতে পাইতবে যত রকমের টিয়াপাখি দেখতে পাই, তাদের মধ্যে সবুজ টিয়াই সবচেয়ে বেশি পরিচিত হিন্দিতে এদের 'তোতা' বলা হয়। তোতা পাখি আতা খেতে খুব ভালোবাসে

আমার দেখা টিয়া পাখিরা,যাদের যেমন দেখেছি প্রায়ই দেখা যায় টিয়াপাখির আবেগঘন দৃশ্য!

মেঘলা দিনে প্রথমে মান-অভিমান,পরে ভালোবাসা ধরা পড়লো আমার বাগানের অশ্বত্থ গাছের মগ ডালে। ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি আনন্দে,উচ্ছাসে মাতোয়ারা। বেশীর ভাগ পাখিই আলিঙ্গনাবদ্ধ সেই আবেগঘন মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি আমি তুলেছি........

 

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

মদনা টিয়া (Red-breasted parakeet)

 মদন টিয়া.

 এটি অত্যন্ত সুন্দর টিয়া। এর ঠোঁট লাল, মাথা বাদামী,পিঠ সবুজ ও বুক লাল। গলায় সুন্দর একটি কালো মালা আছে। মেয়ে পাখির ঠোঁট কালো। এর লেজ লম্বা ও সবুজ। এদেরকে কমবেশি সব জায়গাতেই দেখা যায়। দলবেঁধে তীক্ষ চিৎকার করে আকাশে উড়ে যেতে এদের প্রায়ই দেখা যায়।

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


পাখি পরিচিতি: মদনা টিয়া বা মদন টিয়া

ইংরেজি নাম Red-breasted Parakeet  

বৈজ্ঞানিক নাম (Psittacula alexandri).

 

লালামাথা টিয়া.

গিয়েছিলাম পুরুলিয়া। বানসা পাহাড়ের পাদদেশে (মেনরোড থেকে ৫০ মি.ঢুকলেই) আমাদের আস্তানা গাড়া হয়েছিল। সেখানে মেন রোডের পাশেই একটা শিমুলগাছ আছে। আর তাতে আছে ছোট বড়ো অনেকগুলো কোটর। অনেকক্ষণ আগে থেকেই কানে আসছিল অসংখ্য টিয়া পাখির ডাক। গাছের দিকে চোখ পড়তেই দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম ঝাঁক ঝাঁক টিয়াপাখি গাছ আলো করে বসে আছে জোড়ে বা বেজোড়ে। তাদের অবাক করা সুন্দর রঙ, তাতে সদ্য কুয়াশা ভাঙা রোদ পড়েছে। দেখে মন ভরে গেলো।

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

স্ত্রী লাল মাথা টিয়া

 খুব সামনে থেকে দেখলাম টিয়াপাখির জৈবিক ক্রিয়া, সঙ্গী নির্বাচন এবং সঙ্গী বা সঙ্গিনী পছন্দ না হলে তাকে ছেড়ে আবার অন্যের কাছে গিয়ে প্রেম নিবেদন করে তাকে খুশি করতে। দেখলাম ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় মুখ ভার করা সঙ্গিনীকে যদিও সবটাই হয়তো আমার কল্পনা প্রসূত।

 লাল মাথা টিয়া স্ত্রী পাখির থেকে পুরুষ পাখির চেহারা একদম আলাদা। পুরুষ টিয়ার মাথা গোলাপি রক্ত বর্ণ। গলায় মালার মতো কালো রেখা। পিঠের রঙ  সবুজ কিন্তু তাতে হলদে আভাযুক্ত। ডানা দুটো সবুজ। ডানার গোড়ায় রয়েছে খয়েরি-লাল পট্টি যা স্ত্রী পাখির নেই। নীলাভ-সবুজ লম্বা লেজ। সেই লেজের সবচেয়ে লম্বা পালকের প্রান্তটা সাদাটে মতো। পেটের দিকটাও হলুদাভ-সবুজ। ঠোঁটের উপরের অংশ কমলা-হলুদ, নিচের ঠোঁট কালো। পা সবুজাভ।

 স্ত্রী পাখির মাথা ধূসর রঙের। ঘাড়ে হলুদাভ গলা বন্ধনী। উপরের ঠোঁট বাটনা হলুদ রঙের। নিচের ঠোঁট কালচে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি কিঞ্চিৎ নিষ্প্রভ। এদের লেজ খুব লম্বা। শাল শিমুল,বট গাছের কোটরে এদের মনোরম আস্তানা।

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

লালমাথা টিয়া (Plum-headed parakeet male, female)

 পাখি পরিচিতিলালমাথা টিয়া

ইংরেজি নাম:Plum-headed Parakeet.

বৈজ্ঞানিক নামঃ Psittacula cyanocephala.

 

চন্দনা টিয়াঃ

 চন্দনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় টিয়াপাখিএটি সারা পৃথিবীর মধ্যেও অনেক বেশী জনপ্রিয়। এর ঠোঁট গাঢ় টুকটুকে লাল। মাথার পিছনে ঘাড়ে ও ডানার উপরের দিকে মোটা লাল দাগ পাওয়া যায়।

চন্দনা টিয়া সাধারণ সবুজ টিয়াদের চেয়ে আকারে খানিকটা বড়ো। চন্দনা টিয়ার ইংরেজি নামের সঙ্গে গ্রিসের মহাবীর আলেকজান্ডারের নাম জড়িয়ে আছে। আলেকজান্ডার অসংখ্য চন্দনা টিয়াকে পাঞ্জাব থেকে ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি সম্মানিত ব্যক্তিদের রাজকীয় পুরস্কার বা প্রতীক হিসেবে চন্দনা টিয়া দেওয়ার প্রচলন করেছিলেন। তখন থেকে এই টিয়ার ইংরেজি নাম হয় Alexandrine Parakeet.

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

চন্দনা টিয়া  (Alexandrine parakeet)

পাখি পরিচিতি: চন্দনা টিয়া

ইংরেজি নাম: Alexandrine Parakeet or Alexandrian Parrot.

বৈজ্ঞানিক নাম: Psittacula eupatria.

সবুজ টিয়া..

 এর সবুজ রঙ অনেক বেশী সুন্দর। যেন কচি পাতার সবুজ রঙে এর পুরো দেহ আবৃত। এর ঠোঁট টুকটুকে লাল। গলায় গোলাপী একটা রিঙ রয়েছে। এর লেজ অনেক লম্বা ও সুচালো।

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


 সেদিন আকাশ ছিল কিছুটা মেঘ-রোদ্দুর মেশানো। বাড়ি থেকে যখন বেরোলাম তখন সিনেমা হলের ২য় শো শুরু হবার সময়। যাইহোক, নিরাশ হতে হয়নি। হঠাৎ দেখলাম সিনেমার শুটিং চলছে বাড়ির কাছের শিমুল গাছে। সম্ভবতঃ, সিনেমার নাম "সবুজ টিয়ার ভালোবাসা" অন্ততঃ, ক্যামেরায় চোখ দিয়ে তাই বুঝলাম। তবে সম্পূর্ণ না জেনেই ক্যামেরা তাক করেছিলাম,কাঠঠোকরার ছবি তুলতে। কিন্তু যা দেখলাম চোখ সার্থক হলো।

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

সবুজ টিয়া (Rose-ringed parakeet) প্রজনন মৌসুমে

পাখি পরিচিতি: সবুজ টিয়া

ইংরেজি নাম: Rose-ringed Parakeet

বৈজ্ঞানিক নাম:Psittacula krameri.

নিকোবর টিয়া..

টিয়া বা তোতাপাখির বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির মধ্যে 'নিকোবর তোতা (Nicobar parakeet)একটি প্রজাতি।

ভীষন চিৎকার করে ডাকে। যে গাছেই ফল দেখতে পায় ঝাঁক বেঁধে সেখানেই গিয়ে হানা দেয় বসে বসে সমস্ত ফলগুলো খেয়ে শেষ করে তারপর অন্য গাছে চলে যায়

  বর্ষায় কদম,শীতে করঞ্জা,জারুল,মেহগনি, গ্রীষ্মে শিমুল পলাশ যে ফুলই ফুটুক,তার পাপড়ি থেকে শুরু করে বীজ পর্যন্ত সব খেয়ে উজাড় করে দেয় এরাসারাবছর ধরেই টিয়াদের প্রতিদিনের ভোজন উৎসব চলে

  কিছুদিন আগে একদল "নিকোবর তোতা" পাখি এসেছিল আমার বাড়ির কাছাকাছি আমড়া গাছে দেখি খুব আরাম করে বসে খাচ্ছে। তবে মুখ দেখে মনে হলো ভাবছে "কি টক রে বাবা"!

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

নিকোবর টিয়া / তোতা (Nicobar parakeet)

পাখি পরিচিতি : নিকোবর টিয়া / নিকোবর তোতা

ইংরেজি নাম : Nicobar parakeet.

বৈজ্ঞানিক নাম : Psittacula caniceps.

 

 গাছের নাম টিয়া...... নাকি টিয়া পাখির গাছবলতে পারবো না! শীতের কুয়াশামাখা মেঘলা দিনে টিয়া পাখিরা অফুরান আনন্দে মেতে ওঠে। তার উপর ওদের খন সঙ্গী- সঙ্গিনী খুঁজে ঘর বাঁধার সময়। এমনই একদিন বিকেলবেলা দেখি পাতাবিহীন শিরীষ গাছটাতে সারি সারি টিয়া বসে আছে।

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


  পাখিদের নানান কীর্তিকলাপ,আনন্দ উচ্ছ্বাস,প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে বলেছি অনেক কথা কিন্তু পাখিদেরও মন খারাপ হয়! মন খারাপ করে বসে থাকা একটা চন্দনার সঙ্গে আমার একদিন দেখা হয়েছিল..

 সেদিন সকালটা ছিল বেশ সুন্দর আকাশটা ছিল নীল ঝলমলে রোদ চারিদিক সোনালী করে তুলেছে একঝাঁক টিয়া চেঁচামেচি করতে করতে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যাচ্ছে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসছে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছি টিয়া পাখির আসা-যাওয়া হঠাৎই দেখি একটা চন্দনা পাখি ঝুপ করে (আমার হাত ছয়েকের মধ্যে)মাটিতে এসে বসলো সামনে অত সুন্দর একটা পাখি এসে বসতে আমি অবাক হলাম

 চন্দনাটা কিন্তু বসেই আছে উড়ছে না খুব ভালো করে খেয়াল করলাম ও উড়তে পারে না! আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতেই চন্দনাটা আবার উড়ে গিয়ে সামান্য তফাতে বসলো মনে মনে বললাম,আহা রে! এত রূপ নিয়ে পাখিটা গাছে না বসে রাস্তায় এসে বসেছে কেন!

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


 আমার মনে হলো একরাশ দুঃখ ওর মনে জমা হয়ে আছে। অন্য চন্দনা পাখির থেকে এই পাখিটা যেন একটু আলাদা বলে মনে হলো ভালো করে নিরীক্ষণ করে দেখলাম ওর ওড়ার পালকদুটো ছাঁটা আছে লেজের পিছনের পালকও কয়েকটা কাটা কাটা! খুব ভালো করে দেখে আমি অনুভব করলাম ওর উড়তে না পারার ুঃখটা। ওরা যে জোড়ায় জোড়ায় অথবা দল বেঁধে থাকতে ভালোবাসে সঙ্গীবিহীন জীবনে কেউই বেঁচে থাকতে চায় না।

 ওকে দেখেই আমার মনে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠলো। মনে হলো পাখিটা কোন খাঁচার বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এসেছে ক্ষনিকের জন্যে মুক্তির নিঃশ্বাস নিতে। হয়তো ওড়ার আকাশ খুঁজে নিতে বেরিয়ে পড়েছে। হয়তো মনে মনে খুঁজে চলেছে তার সঙ্গী-সাথীদের। বসে বসে ভাবছে কেমন করে সেই ঠিকানা খুঁজে পাবে সে! কিন্তু শত চেষ্টা করেও পাখিটা না পারছে বেশি দূরে উড়ে যেতে,আবার না পারছে কোনও উঁচু ডালে গিয়ে বসে একবারের জন্যও জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দটুকু নিতে।

 পাখিটা খুব মন মরা হয়ে বসে বসে হয়তো এটাই ভাবছে, মানুষ বড়ো স্বার্থপর। তা না হলে বনের পাখিকে কেউ খাঁচায় ভরে! কেউ পেটের ক্ষিধে মেটাতে ধরে এনে বিক্রি করে দিয়েছে আর কেউ বা শখ মেটাতে তাকে কিনে এনে লোহার খাঁচায় বন্দি করেছে।

আমার আশঙ্কা খানিক পরে সত্যি হলো।

 কিছুক্ষণবাদে দেখলাম জনা তিন-চারেক পুরুষ-মহিলা ছোটাছুটি, খোঁজাখুঁজি করছে। ওরা উদ্ভ্রান্তের মতো বলছে.এদিকে, না না ওদিকে গিয়েছে মনে হয়। আরেঃ আরেঃ ওই তোওই দেখ,ওইখানে বসে রয়েছে ভাগ্যিভালো বেশি দূর যায়নি বাবা!

 তাই দেখে থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, কিছু খুঁজছেন? ওরা বললো আমাদের টিয়া পাখিটাকে খুঁজছি। জানিনা কি করে খাঁচাটা খুলে পালিয়ে এসেছে। সেই কখন থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি রাস্তায় খবর পেলাম সে নাকি এদিকেই এসেছে!.....

pakhi-prakriti-part-20-tiya-parrot-parakeet-psittaciformes-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

স্ত্রী নিকোবর টিয়া (Nicobar parakeet female)

 যা মনে করে করুক, এই ভেবে আমি বলেই ফেললামখোলা আকাশের পাখি,খাঁচায় কি তার মন বসে খাঁচা খুলে যখন বেরিয়েই পড়েছে,থাক না ও নিজের মতোন। দিন না ওকে ছেড়ে! অমন সুন্দর পাখিটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে খাঁচায় বন্দি করে কি লাভ হবে বলুন?

 কথাটা শুনে আমার মুখের দিকে এমন করে একজন তাকালো যাতে মনে হলো ওরা ভাবছে আমি অন্য কোনও গ্রহ থেকে এসে পড়েছি!

 ওরা তখন সবাই ব্যস্ত পাখিটাকে ধরে নিয়ে যাবার জন্যে। কথা বলা বা শোনার মতো সময় কারোর নেই কজন তার মধ্যে থেকে বলে উঠলো সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে ওকে কিনেছি কি এমনি এমনি উড়িয়ে দেবার জন্যে.....?

 যাদের পাখি তারা খাঁচা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। দেখে অবাক হলাম যে ওরা খাঁচার দরজাটা খুলে দিয়ে পাখিটাকে আয় আয় করে ডাকতে লাগলো ানিক বাদে পাখিটা নিজে থেকেগিয়ে খাঁচায় ধরা দিলো আর পাখির মালিক খাঁচার দরজাটা বন্ধ করে দিলো খুব খারাপ লাগলো আমার পাখিটাকে দেখে খুব কষ্ট অনুভব করলাম।

 "পাখি-প্রকৃতি একে অন্যের শোভা ও সৌন্দর্য".অহেতুক ওদের এভাবে আটকে না রাখাই ভালো।

 

 ক্রমশ ………

২১তম পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার ।

 

  বিঃদ্রঃ – ছবি এবং ভি ডি ও লেখিকার নিজের তোলা । 


লেখিকার পরিচিতি –

লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন

লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজি, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায় বর্তমানে বার্ড’স ফটোগ্রাফী এবং পাখি-প্রকৃতি” নিয়ে লেখা শুরু করেছেন