ধারাবাহিক – প্রতি শনিবার
১৩তম
পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার
অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
১৪তম
পর্ব শুরু ……
“কোকিলের কুহু তান” (Cuckoo)
স্ত্রী কোকিল
……………………………………..
আমার বাগানের আতা-নোনা গাছে একটা স্ত্রী কোকিল এসে পাকা
ফলগুলো খুব আরাম করে মনের আনন্দে খাচ্ছে দেখে ঘর থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে বাগানে
বেরিয়ে পড়লাম। স্ত্রী কোকিলকে সকলে আদর করে কোকিলা বলেও ডাকে। আতা ফল দেখতে ভারী সুন্দর। ফলের ভেতরটা তার থেকেও বেশি সুন্দর
দেখতে। ছোট ছোট অনেকগুলো কোয়া,একটার গায়ে আরেকটা জুড়ে জুড়ে প্রকোষ্ঠ মতো করে সাজানো থাকে। স্ত্রী-কোকিলটা পাকা আতার ভেতরে
ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়ে একটা করে কোয়া বার করে আনছে আর সেটা শেষ করে আবার আতার
ভেতরে ঠোঁট ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এমন দৃশ্য সচরাচর সকলে যে দেখতে পায় তা কিন্তু নয়। বেশ অনেক্ষণ ধরে সময় নিয়ে কোকিলা আতাটা খাচ্ছিলো।
আমিও সুযোগ বুঝে দু-একটা ছবি তুলবো বলে ক্যামেরা খুলে সবে একটা ছবি তুলেছি কি তুলিনি,কোকিলা রেগে আগুন হয়ে উঠলো। তাকানো দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি সে কি বলছে…..মুখে কিছু
না বলেও,অনেকেই অনেককিছু বলে দেয়। কোনও কোনও সময় আমার মায়ের মুখের ভাব দেখলেই আমি বুঝে যেতাম মা খুব রেগে আছে!সামলে নিতাম নিজেকে। আবার অনেক সময় আমার শাশুড়ি মায়ের লাল গোল গোল চোখ দেখেই ধরে নিতাম সেই মুহূর্তে
কোনও কিছু তাঁর অপছন্দের তালিকায় আছে। ঝড় ওঠবার আগেই শান্ত করে নিতাম তাঁকে। চোখের চাহনি আর মুখের অভিব্যক্তি
দেখে আমি পড়ে নিতাম সেই মুহূর্তে কোন বাক্য আমার উদ্দেশ্যে ধেয়ে আসতে পারে।
সে যাইহোক, কোকিলা ঠোঁট না খুলেই বললো উঁহুঁনঃ
….খাওয়ার সময় বিরক্ত করো না তো.......
কিন্তু আমিও নাছোড়,
ছবি না তুলে আমি ফিরে যাবো না।
বিরক্ত হয়ে কোকিলা বললো,তুমি আমার ছবি তুলবে তোলো কিন্তু আগে মুখের খাবারটা শেষ
করতে দাও…..
আমি কোকিলার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ছবি তুলছি দেখে সে রেগে
গিয়ে বললো ….আমার ঠোঁটে নোনা ফলের কোয়া রয়েছে,অসাবধান হয়ে পোজ দিতে গেলে
ওটা পড়ে যাবে। তাছাড়া, মুখে খাবার নিয়ে ছবি তুললে কাউকেই দেখতে ভালো লাগে না।
কি হলো! কথা শুনছো
না দেখছি! ঠিক আছে, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ করো। তবে আমি জানি ছবিটা কারুর পছন্দ হবে
না। আর পছন্দ না হলে আমারও কোন দোষ থাকবে না। এবার ভেবে দেখো,আমার এমন ছবি তুমি তুলবে কি না! এই কথা বলে সে আবার আতা খাওয়ার দিকে মন দিলো। ও জানেই না যে আমি আগেই ওর কয়েকটা
ছবি তুলে নিয়েছিলাম।
প্রায় প্রতিদিনই এমন
কত ঘটনাই ঘটে!
একদিন যা হলো,বলবো কি একেবারে যেন সিনেমা দেখছি মনে হলো। লোকেশন তো রয়েইছে আমার বাগান,সজনা গাছ আর আশপাশের দু-একটা অন্য গাছপালা। কোকিল হিরো,স্ত্রী কোকিল/কোকিলা হিরোইন আর বাকি পুরুষ
কোকিলদুটো ভিলেন।
সিনেমার বিষয়-বস্তু একটু সংক্ষেপে বলে নিই…..
"বসন্ত
সখা"-র রাজত্বে রাজকুমারী কোকিলা
আদরনীয়া হইয়া বিচরণ করিয়া থাকে। ইহার কারণ স্বরূপ বলা যাইতেই পারে যে, বৎসরান্তে দিন কয়েকের জন্যে একজন
স্ত্রী সখির সঙ্গ লাভের হেতু একাধিক পুরুষ সখা কাতর হইয়া আত্মজনের সহিত সম্মুখ সমরে লিপ্ত হইয়া ওঠে। প্রেম নিবেদনের নিমিত্ত বিজয়ী প্রেমিক ছুটিয়া আসে। সেই দৃশ্য
রাজকুমারী কোকিলার নিকট বড়োই প্রেমময়……..
এতক্ষণে সবাই বুঝে গিয়েছেন নিশ্চয়ই মাথাটা আমার
নেহাত খারাপই হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, সেটাই হয়েছে। দিনরাত যা দেখি তাতে মাথা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। আর সেইজন্যেই না পারছি কাব্য বা কবিতা লিখতে আর না পারছি ওদের
নিয়ে গল্প লিখতে!
এমন অবস্থায় মাঝে মাঝে আখতার বাঈয়ের (বেগম আখতার)গানটা গেযে উঠতে ইচ্ছে জাগে “কোয়েলিয়া
গান থামা এবার,তোর ওই কুহু তান,তোর ওই কুহু
তান ভালো লাগে না আর”……
এই জায়গায় এসে থমকে গিয়ে এবার নিশ্চয়ই অনেকেই ভাববেন কি হল ব্যাপারটা!আর তখনই সমস্ত কথা খুলে বলতে হবে তোমাদের। বলতে আমার অসুবিধে নেই। আমি তো বলবো বলেই লেখা শুরু করেছি। ঠিক আছে ধন্দে না রেখে বলেই ফেলি।
বসন্তের শুরু থেকে পুরুষ কোকিল সেই যে ডাক,মানে চিৎকার করে প্রেম-নিবেদন করতে শুরু করে, যত দিন যায় তা আরও দ্বিগুন-চতুর্গুন হয়ে ওঠে। সারাদিন
ধরে একজন কোকিলাকে ঘিরে চার পাঁচজন কোকিল দাপিয়ে বেড়ায়। সেইসময়ে, অর্থাৎ প্রজনন কালে ওদের এই চিৎকারে কান মাথা ঝালাপালা হয়ে যায়। দিনেরবেলা তো বটেই রাতের বেলাতেও সেই একইরকম চিৎকার চলে। সেই একই ডাক -কু কু উ…..কু কু উ….কু কু উ…কু কু উ….কু উ…কু উ।
কোকিলের পঞ্চম সুর তখন
সপ্তমে উঠে যায়। আর যদি পূর্ণিমা তিথি চলে তাহলে তো আর কথাই নেই!কান আর ঘুম দু’য়েরই দফা-রফা। আর পুরুষ কোকিলের চিৎকার সহ্য হলেও
স্ত্রী কোকিলের খ্যিইঁ…খ্যিইঁ খ্যিইঁ চিৎকার আরও অসহ্য করে তোলে। তখন মনে হয় যিনি বলেছিলেন “কোকিলের কুহু স্বর সু-শীতল মনপ্রাণ” তাঁকে যদি একবার এখানে এনে বসিয়ে রাখতে পারতাম তবে তিনি আর কখনও এমন
‘কলি’মন থেকে অন্ততঃ লিখতে চাইতেন না।
অঘ্রান মাসের শেষের দিক থেকেই শুরু হয়ে যায় স্ত্রী কোকিলকে খুশি করার জন্যে পুরুষ কোকিলদের অস্থির আবেদন। দিন রাত চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে
পাড়া মাথায় করে তোলে। খুব ঘন হয়ে
কাছে এসে বসার চেষ্টাও করে বার বার। যদিও তাতে স্ত্রী-কোকিলের কোনও হেলদোল নেই। সে পাত্তাই দেয় না! উল্টে সে প্রতিটা পুরুষ কোকিলকে নাচিয়ে বেড়ায়।
তা বলবো কি ভাই,কোকিলাকে নিয়ে কদিন ধরে
পুরুষ কোকিলগুলোর মধ্যে বেদম মারপিট
চলছে তো চলছেই!
আর
কোকিলা?.....
সে প্ৰথমে এসে আতা গাছের পাতার আড়ালে বসলো। তারপরেই তিনটে কোকিল ছুটে এসে ডাকাডাকি
করতে করতে কোকিলাকে খুঁজতে লাগলো। ঠিক তখনই
কোকিলা নিজেকে আড়াল করতে ছুটে গিয়ে বসলো সজনা গাছের ঘন পাতার আড়ালে। আবার তাকে
দেখতে পেয়েই ছুটে এলো নায়ক কোকিল। কোকিলা আতা গাছের ডাল ছেড়ে বেরিয়ে সোজা এসে আমার রান্নাঘরের চালে বসে মজা দেখতে লাগলো। আমিও দেখছি আর ছবি
তুলছি। ভাবছি কে জেতে
কে হারে!
এ পর্যন্ত ঘটনাটা বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু কোকিলাকে দেখতে না পেয়ে একজন
গিয়ে অশ্বত্থ গাছের পাতার আড়ালে আড়ালে তাকে খুঁজতে লাগলো। তা দেখে বাকি দুজন সেখানে গিয়ে হাজির
হতেই তিনজনের মধ্যে যা বেদম মারপিট শুরু হলো,বলা যায় তা যে
কোনও সিনেমার নায়ক আর ভিলেনের মারপিটের দৃশ্যকে হার মানাবে।
এতক্ষণ গল্পকথায় কোকিল চেনা হলো। এবার আসি আসল কথায়….
কোকিলরা
বাসা বাঁধে না,কাকের বাসায় ডিম পাড়ে এটা সবাই
জানে। কিন্তু কোকিলরা সারা জীবনের জন্যে “জোড়”বাঁধে না এটা
হয়ত অনেকেরই জানা নেই।
একটা পুরুষ কোকিলকে যদি কোনও স্ত্রী কোকিল পছন্দ করে তবে তারা দুজনে মাত্র কয়েকটা
দিন একসাথে থাকে। তবে দম্পতি হয়ে নয়। অর্থাৎ
এরা শর্তসাপেক্ষে সহবাস” (live togethar) করে। একসাথে দুজনে ঘুরে-বেড়িয়ে,নেচে-গেয়ে,আদর-সোহাগ ক’রে। তারপর,স্ত্রী পাখির ডিম পাড়ার সময় হলে কাকের বাসা খুঁজে তাতে ডিম পেড়ে
রেখে দিয়ে যে সময়মতো চলে যায়। যে কদিন তারা একসঙ্গে থাকে সেই ক’দিন পুরুষ কোকিলের কাজ হলো স্ত্রী-কোকিলকে সঙ্গে নিয়ে মনের
আনন্দে ঘুরে বেড়ানো। সময় মতো স্ত্রীপাখির ডিমকে নিষিক্ত করা। পুরুষ কোকিলের সব থেকে যেটা বড় কাজ সেটা হলো, স্ত্রীর ডিম পাড়ার সময় হলে
কাকের বাসার ধারে কাছে গিয়ে চেঁচানো। যাতে কাক নিজের বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে তাকে তাড়া করে আর সেই সুযোগে স্ত্রী পাখি কাকের বাসায় ডিম
পেড়ে পালাতে পারে। এর পর আর দু'জনে একসাথে থাকে না। “শর্ত সাপেক্ষে সহবাস” পর্ব শেষ হয়ে যায়।
পুরুষ কোকিলের কান ঝালাপালা করা চেঁচানিতে যদি স্ত্রী কোকিল
দয়া করে তার কাছে আসে,তখন তাকে খুশি
করার জন্যে কোকিলপুরুষ মরিয়া হয়ে অনেক কিছুই করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্ত্রী’-র যদি সেসব
পছন্দ না হয় তখনই সে উড়ে চলে যায় অন্য কোনও কোকিলপুরুষের কাছে।
এই তো সেদিন দুপুরে দুটো
কোকিলের (স্ত্রী- পুরুষ)প্রেম নিবেদন এবং প্রত্যাখ্যান দেখলাম। সামনের আম গাছটায় বসে চেঁচাচ্ছিল বেচারা। হঠাৎ একটু মোলায়েম গলার স্বর শুনে
তাকিয়ে দেখি কোকিলা কাছাকাছি একটা ডালে এসে বসেছে। বেশ গদ-গদ হয়ে শ্রীমান মুখে করে কি যেন একটা নিয়ে গুটিগুটি তার কাছে এগিয়ে এসে বসলো। কোকিলা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শ্রীমান বুঝেছে তার মুখের ওই উপহার
শ্রীমতীর পছন্দ হয়নি। সে মরিয়া
হয়ে উঠে মুখের খাবার ফেলে দিয়ে উড়ে চলে গেল। আমিও নিজের কাজে গিয়ে মন দিলাম। মনে মনে বললাম, ঠাকুর ওর সঙ্গিনীটা
আজই জুটিয়ে দাও। অন্ততঃ দু’ দিন আমার কানটা
একটু শান্তি পাবে।
খানিকবাদেই আবার নরম ক্লুক…ক্লুক….ক্লুক ডাক শুনে তাকিয়ে দেখি সে গিয়ে বেশ বড়সড়
একটা কিছু মুখে করে নিয়ে এসে কোকিলাকে খাওয়াবার চেষ্টা করছে,সে গ্রহণ করলেই
‘জোড়’হবে। মুখের খাবার নিয়ে শ্রীমান আরও একটু কাছে ঘেঁষে বসার
চেষ্টা করতেই কোকিলা খ্যিইঁক…খ্যিইঁক… খ্যিইঁক …শব্দে চিৎকার করে
উড়ে চলে গেল। তাই দেখে আমার
খুব রাগ হচ্ছিলো ওই স্ত্রী কোকিলটার উপর। তারপর ভাবলাম
যাক গে যাক,ওদের ব্যাপার ওরা
বুঝবে,আমি রাগ করে কি করবো!
কাকের বাসায় কোকিল ছানা কেন!!!!….
সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই হরমোনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রয়েছে। হরমোনের সঠিক নিঃসরণ ব্যতীত কোনও প্রাণী নিজের ইচ্ছায় কিছুই
করতে পারেনা।
স্ত্রী কোকিল কাকের বাসায়
ডিম পেড়ে দিয়ে চলে গেল। বাচ্চা ফুটলে কাক না হয় তাকে নিজের সন্তানের সঙ্গে বড়ো করে তুললো। কিন্তু ভাববার বিষয় হলো,কেন বাবা-মা হিসাবে সন্তান পালনের কোনও
দায়িত্ব তারা পালন করে না!
বিশেষজ্ঞদের মতে এর আসল
কারণ হলো কোকিলের বাসা বানানোর বুদ্ধি নেই!তারা ডিমে তা দিতে
পারে না!সর্বোপরি ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোলে তাদের খাবারটুকু যে যোগাড়
করে আনতে হবে,সেই অনুভূতিটুকুও
কোকিলের নেই। এই সব কাজের জন্য শরীরে যে ‘প্রোল্যাকটিন’নামক হরমোনের প্রয়োজন হয়,তা অন্য পাখিদের শরীরে থাকলেও স্ত্রী-কোকিলের শরীরে সেটা
তৈরিই হয় না। সেই জন্যে প্রাকৃতিক নিয়মে স্ত্রী কোকিল ডিম পাড়লেও তার মধ্যে মাতৃত্ববোধ জাগ্রত
হয় না।
কাক ও কোকিলের প্রজনন
মৌসুম প্রায় একই সময়ে,ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে জুলাই-আগষ্ট পর্যন্ত স্থায়ী
হয়। প্রজনন সময়ে কাক
নিজের বাসা বানানো শুরু করলেই কোকিল তার বাসার আশেপাশে লুকিয়ে ঘোরাফেরা করে আর কাকের
খুঁটিনাটি প্রতিটা পদক্ষেপ দূর থেকে নজরে রাখে।
বাসা তৈরি করার পর কাক
প্রতিদিন একটা করে ডিম পাড়ে। এভাবে পাঁচদিনে পাঁচটা ডিম দেয় প্রতি প্রজনন মৌসুমে। ঠিক এই সময় কোকিল তক্কে তক্কে থাকে। কাক বাসা ছেড়ে বেরোলেই সে চুপি চুপি
বাসায় ঢুকে গিয়ে ডিম পেড়ে দিয়ে পালিয়ে আসে। তবে সেদিকে কোকিলের বুদ্ধি বেশ পাকা। কোকিলা কোনও একটা কাকের বাসায় সব
ডিম পাড়ে না। পরপর দু-তিনটে কাকের বাসায় একটা করে মোট দুটো কি তিনটে ডিম দেয়। কিন্তু ডিম পেড়ে পালিয়ে যাবার সময় কাকের বাসা থেকে,কাকেরই একটা-দুটো ডিম মুখে নিয়ে বাইরে
ফেলে দেয়!যাতে কাক ফিরে এসে মিলিয়ে দেখতে পায় তার পাড়া ডিমগুলো সংখ্যায়
ঠিকই আছে। স্ত্রী কোকিলকে
এই শয়তানীর কাজটুকু করার জন্যে পুরুষ কোকিল কাককে ব্যস্ত রাখে।
কাক কোকিলের ডিম দেখতে
একরকম হলেও কোকিলের ডিম আকারে একটু ছোট। তাই কোকিলের ডিম ফুটতে ১২-১৫দিন সময় লাগে কিন্তু কাকের ডিম ফোটে ১৮-২০ দিনে। ঝোপের আড়াল থেকে কোকিল এই সময় বাচ্চাদের
নজর রাখার জন্যে কাকের বাসার দিকে তাকিয়ে থাকে আর কাক তাকে দেখতে পেলেই তাড়া করে। কিন্তু ততক্ষণে কাকের যা সর্বনাশ
হবার তা হয়ে গিয়েছে।
কাকের বাসায় কোকিল ছানা
জন্ম নেয়,কাকের ছানার সঙ্গেই বেড়ে ওঠে। তবে সে শুধু নিজেকে নয় সঙ্গী কাকের
ছানাকেও রক্ষা করে বিপদের হাত থেকে। অন্যান্য শিকারি পাখিরা কাকের ছানা
শিকার করতে বাসায় ঢুকতে এলে,ভয় পেয়ে কোকিল ছানা এক প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত রস নিঃসরণ করে,আর সেই দুর্গন্ধে
তারা পালিয়ে যায়।
কোকিলের ছানা আগে জন্ম
নেয় বলে তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। ১২-১৫ দিনেই বেশ বড়সড় এবং মোটাসোটা হয়ে যায়। ক্রমশঃ গায়ের লোম গজিয়ে উঠলে কাক
বুঝতে পারে যে এটা তার বাচ্চা নয়! বিশেষ করে স্ত্রী কোকিলের ছিট ছিট
পালক আর ধূসর গায়ের রঙ দেখে সহজেই চিনতে পারে,আর তখনই তাদের তাড়িয়ে দেয়। তবে কোকিলছানা ততক্ষণে খুঁটে খেতে
শিখে যায়।
কোকিল বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত পাখি। সারা পৃথিবী জুড়েই এরা বসবাস করে। কোকিল কুকুলিডি (Cuculidae) পরিবারের অন্তর্গত,এশিয়ান কোয়েল (Asian
koel) নামে পরিচিত। আকারে অনেকটা কাকের মতো কিন্তু গঠনে
কাকের থেকেও সরু এবং
লম্বা লেজ থাকে। এরা cuckoo পরিবারেরই অন্তর্ভুক্ত সদস্য। কীটপতঙ্গ,শুঁয়োপোকা, সব রকমের রসাল ফল ছাড়াও বট,ডুমুর,পাকুড় ইত্যাদি এরা খেতে বেশি পছন্দ করে। কোকিলের
বহু প্রজাতি আছে,‘চোখ গেল’‘বউ কথা কও’এবং ‘পাপিয়া’-রাও কিন্তু কোকিলেরই
প্রজাতির পাখি।
পাখি পরিচিতি: কোকিল (Cuckoo) ইংরিজি নাম Asian koel. বৈজ্ঞানিক নাম: Eudynamys scolopaceus
.
পুরুষ কোকিল : Asian koel Male.
পুরুষ
পাখির রঙ কুচকুচে কালো হলেও উজ্জ্বল
সবুজের আভা বের হয় শরীর থেকে। ঠোঁটের রঙ
সাদা আর চোখের তারা টকটকে লাল রঙের হয়।
স্ত্রী কোকিল : (Asian koel female).
স্ত্রী কোকিল গাঢ় বাদামী রঙ,দেহের উপরে ও
নীচে সাদা রঙের ছিট ছিট দাগ থাকে। স্ত্রী পাখির ঠোঁট সাদা ও চোখ রক্তিম-লাল রঙের
হয়। দেহের বর্ণের জন্যে ছোট থেকেই স্ত্রী ও পুরুষ কোকিল চিহ্নিত হয়ে যায়।
কোকিলের মধুর গান
বসন্তকালকে মুখরিত করে রাখে। এরা বাসা পরজীবী, অর্থাৎ পরের বাসায় ডিম পাড়ে, তাই এদের আরেক নাম পরভৃত। কোকিলকে নিয়ে যুগে যুগে বহু কবি,সাহিত্যিক,পদকর্তা,গীতিকার অসংখ্য
শ্রুতিমধুর রচনা সৃষ্টি করে গিয়েছেন। কোকিলের মধুর সুর কেমন যেন তন্ময় করে দেয়। গ্রীষ্মের
দুপুরে একা কোকিলের ডাক পরিবেশকে স্মৃতিমেদুর করে তোলে। কোকিলের কিছু প্রজাতি অধুনা
অবলুপ্ত। পক্ষীবিজ্ঞানীরা বেশ আশঙ্কিত,যে হারে জঙ্গল সাফ হয়ে চলেছে তাতে পরবর্তীকালে কোকিলের অস্তিত্ব সংকট হতে বেশি
সময় নেই। প্রকৃতি থেকে পাখি যাতে হারিয়ে
না যায় তার জন্যে মনুষ্যকুলকে সচেষ্ট হতে হবে। তারজন্যে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করে পাখিদের বিচরণ ভূমি ও তাদের
আশ্রয় ফিরিয়ে দেওয়া আশু প্রয়োজন।
ক্রমশ ………
১৫তম পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার ।
বিঃদ্রঃ – সব ছবি এবং ভি ডি ও লেখিকার নিজের তোলা ।
লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে আছে। যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন।
লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজিন, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে। বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায়। বর্তমানে বার্ড’স ফটোগ্রাফী এবং “পাখি-প্রকৃতি” নিয়ে লেখা শুরু করেছেন।