ধারাবাহিক – প্রতি শনিবার
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
৯ম পর্ব শুরু ............্্
আমার বাড়ির গেটের সামনে একটা করঞ্জা গাছ আছে।
বসন্তকালে গাছটাতে কোটি কোটি গোলাপি রঙের
ফুলে ভরে ওঠে। অপূর্ব সুন্দর সেই ফুলগুলো। প্রতিদিন লক্ষ-কোটি ফুল ফোটে আবার ঝরে
যায়। তারপরেও অবশিষ্ট ফুল থেকে ফল হয় আর সেই ফল রোজ লক্ষ,কোটি ঝরে পড়ে। বাকি ফলগুলো সারাবছর ধরে অবিশ্রান্ত পড়তেই
থাকে। বছর থেকে বছর ঘুরে আসে,সব পাতা ঝরে যায়। আবার নতুন
ফুল-ফল,পাতায় গাছটা ভরে ওঠে। তখনও শুকনো ডালের আগায় শুকনো
ফলগুলো লেগে থাকে আর টুপটাপ শব্দে মাটিতে পড়ে কিছু কিছু নতুন চারা গাছের জন্ম দেয়,বাকিগুলো এমনিই নষ্ট হয়ে যায়।
সেই মোটা
গুঁড়ির করঞ্জা গাছটা ডালপালা বিস্তার করে শান্ত-শীতল ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে আমার
বাড়িটাকে। আর আশ্রয় দিয়েছে অজস্র পাখিদের।
গাছের ডালের
সঙ্গেই আমার জামাকাপড় শুকোতে দেওয়ার দড়িটা বাঁধা আছে। পাখিগুলো কখনো সখনো ওই দড়িতে
এসেও বসে। গাছের মোটা গুঁড়িতে ছোট ছোট অনেক কোটর আছে যেগুলোতে পাখিরা বাসা তৈরি করে, ডিম পাড়ে।
আমি যখন সবে
সবে পাখির ছবি তুলতে শিখছি। পাখি নিয়ে
কৌতূহল তো ছিলই। তার উপর ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে যাওয়ার অভ্যাসটাও অনেক
দিনের। তখন প্রায়ই খুব ছোট্ট ছোট্ট কতকগুলো পাখিকে দেখতাম,যারা প্রতিদিন ভোর থেকে মিষ্টি সুরে গান করতো। সারাক্ষণ
আমার বাড়ির চারপাশের গাছগুলোতে ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু তখন ছবিতে ওদের ধরে
রাখতে শিখিনি।
এমনিতে এগাছ
ওগাছ ঘুরে বেড়ায় কিন্তু যেই ওদের দিকে
তাকাই,ওরা ঠিক বুঝতে পারে আর তখনই
পালিয়ে যায়। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এত ছোট্ট একটা পাখি,সে অতদূর
থেকে আমাকে দেখবে কি করে! নিশ্চয়ই আমার ভাবনার ভুল। ওরা চঞ্চল,তাই নিমেষে লাফালাফি করে উড়ে উড়ে পালায়। সেটা ঠিকই,কিন্তু
পাখি গবেষকরা বলছেন দেখতে অতটুকু হলেও
ওদের চোখ দুটো ভীষণরকম অনুভূতিপ্রবণ। এমনকি ওদের ব্রেনটাও খুব সংবেদনশীল। রামগাংরা,টুনটুনি ইত্যাদি পাখির থেকেও ছোট্ট পাখি “ফুলঝুরি” আমার এখানে আম কাঁঠাল
অশ্বত্থ গাছে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু খেয়াল করে দেখেছি,ডাক
শুনে ওদের খুঁজে দেখতে গেলেই পালিয়ে যায়।
যাইহোক,পাখিরা
তো চঞ্চল হবেই! চঞ্চলতাই পাখির বৈশিষ্ট্য।
রাম গাংরা বা
বনচড়াই পরিযায়ী পাখি নয়। এরা আমাদের নিজস্ব এবং আবাসিক পাখি। তবে, এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না। অনেক সময় খাবারের অভাব ঘটলেও
জায়গা পরিবর্তন করে।
এরা কখনও একা,কখনও দুজনে, কখনও আবার দল বেঁধে এসে ঘুরে বেড়িয়ে চলে যায়। কিন্তু
সহজে ক্যামেরায় ধরা পড়েতেই চায় না।
২০২০সালে লকডাউনের
ফলে কিছু দিনের জন্যে দূষণ মুক্ত হয়ে,প্রকৃতি যেন একটু নতুন
করে সেজে উঠেছিল। সেই সময় রামগাংরা আবার
আসতে শুরু করলো। রোজই দেখছি কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই ধরতে পারছিলাম
না। তাছাড়া,ওরা আমার টুনটুনি বুলবুলিদের মতো তেমন মিশুকে নয়। দূর সম্পর্কের
প্রতিবেশী যেমন হয় খানিকটা তেমনই।
রামগাংরা বা বন
চড়াই আমাদের দেশের পাখি হলেও কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই ওদের চেনেন না। দেখা তো
দূরের কথা, বেশিরভাগ মানুষ
এদের নামও শোনেননি। তবে যারা চেনেন না বা
দেখেননি দোষ তাদেরও নয়! আসলে,সংখ্যায় এরা এতই কম তাই সেভাবে
চোখে পড়ে না। হঠাৎ দেখা গেল কোথা থেকে যেন সি-চিক,সি-চিক,সি-চিক করে ডাকতে ডাকতে দল বেঁধে হাজির হল,কয়েক দিন
ঘোরাঘুরি করলো আশেপাশে,আবার হঠাৎ কিছুদিনের জন্যে কোথায় যেন
উধাও হয়ে গেল।
একদিন একটু
বেলার দিকে আমি ভিজে জামাকাপড় নিয়ে বাইরে শুকোতে দিতে গিয়ে মনে হল কানে যেন
রামগাংরা-র ডাক এসে পৌঁছল!হালকা করে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি রামগাংরা একা নয়
একেবারে জোড়ায় আগমন। একজন গাছের ডালে আর অন্যজন গাছের কোটরের মুখের সামনে বসে আছে।
ভিজে কাপড়ের বালতি ফেলে রেখে সোজা ঘরে এসে আলমারি খুলে ক্যামেরা নিয়ে হাজির হলাম।
দিনটা ছিল ২০২১সালের ১১ই এপ্রিল। আহাঃ,সেদিনই প্রথম ওদের কত ছবিই তুলেছিলাম। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল সব পাখিরা
আমার কাছে আসে বসে দুটো সুখ দুঃখের কথা কয়,সেটা মনে হয়
রামগাংরা-রা শুনেছিল। তাই হয়তো ওরা দুজনে এসে
বসেছে আমার করঞ্জা গাছে।
কিন্তু না!আমার
জন্যে নয়!
তাকিয়ে দেখি কোটরের ভেতরে দুটো ছোট্ট ছোট্ট ঠোঁটের আগাটা বেড়িয়ে আছে আর রামগাংরা দম্পতি
পালা করে পোকার কুচি, করঞ্জা ফুলের কুচি এনে কোটরের মুখে ঢুকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে
এটাও খেয়াল করেছি,যতক্ষণ আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকছি ততক্ষণ
পাখিটা ওর ঠোঁটে খাবারটা নিয়ে বসে থাকছে। যেই আমি সামনে থেকে সরে যাচ্ছি তখনই
খাবারটা নিয়ে গিয়ে কোটরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। ব্যাপারটা কি বোঝার জন্যে বাড়ির গেটের
ভেতর ঢুকে,লুকিয়ে জানলা দিয়ে দেখে আমি অবাক হলাম। ওরা
বাচ্চার প্রতি এতটাই যত্নশীল যে,কারুর সামনে বাচ্চাকে
খাওয়ায়-না বা কাউকে জানতে দেয়না ওখানে ওর বাচ্চা আছে। সেটা দেখে ভালোলাগার সঙ্গে সঙ্গে এতটুকু একটা প্রাণের
প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা জেগেছিল। মানুষের সংসার,সন্তান পালনের
সঙ্গে পাখিদের সংসারের কোনও পার্থক্য নেই সেটা এবারও অনুভব করলাম।
রামগাংরা বা
বনচড়াইরা পোকা খায় কিন্তু হাত-পা শুঁড়ওয়ালা পতঙ্গ খেতে দেখিনা। শুঁয়োপোকা এদের সব
থেকে প্রিয় খাদ্য। ঠিক যেমন মোটা মোটা চাপড়া-চিংড়ি আমাদের খুব পছন্দের তেমনি সবুজ
শুঁয়োপোকাও ওদের দারুণ পছন্দের। তবে ফুলের কচি কুঁড়ি বা ফলের কচি অঙ্কুরও এদের
খাদ্য তালিকায় আছে। বাচ্চার চোখ ফোটার পর ফুল-ফলের কচি অংশ ঠোঁট দিয়ে আরও কুচি করে
বাচ্চাদের মুখে তুলে দেয়। প্রজাপতি বা মথের লার্ভাগুলো এরা পাতার তলা থেকে খুঁজে
খুঁজে বার করে খায়। ঠোঁটে নিয়ে যখন বসে,ঠিক যেন ম্যাগির মতো ঠোঁটে ঝুলতে থাকে।
করঞ্জা গাছে
প্রচুর সবুজ শুঁয়োপোকা থাকে। সেগুলো
কোনওটা সবুজ রঙের, কোনওটা তুঁতে
রঙের। এমনকি একটু বড় সাইজের মোটাসোটা পোকা পেলে পুরোটা একবারে না খেয়ে সেটাকে পায়ে চেপে ধরে ঠোট দিয়ে টেনে ছিঁড়ে
ছিঁড়ে খেতে দেখেছি। কিন্তু বাচ্চার জন্যে ছোট্ট ছোট্ট পোকা ধরে খাওয়ায়!আমাদের
বাচ্চাকে যেমন করে ছোটবেলায় সাবধানে খাওয়ানো হয় ঠিক তেমন করে। ঠিক মতো নিরীক্ষণ
করলে খুব ভালো লাগে এই পাখির বাবা মায়েদের দেখতে। তখন সময় যেন হাওয়ার গতির মতো উবে
যায়।
রাম গাংরা বা বন
চড়াই পাখির মাথার তালু ও গলা কুচকুচে কালো, চোখের নিচ থেকে প্রায় গলা পর্যন্ত ধবধবে সাদা। তাই বেশির ভাগ সময় ওর
চোখদুটো ছবিতে ধরা পড়ে না চোখের চারপাশে কালো রঙের জন্যে। বুকের দুপাশ সাদা,
গলার কালো রঙটা একেবারে বুকের মধ্যিখান দিয়ে রেখার মতো বয়ে গিয়ে
শেষ হয়েছে তলপেটে। পিঠ ও লেজের আগার উপরিভাগ ঘন-ধূসর,ডানার
উপরের দিকে সাদা সাদা সরু রেখা আছে কয়েকটা। ছোট ঠোঁটদুটো কালো রঙের। ধূসর-কালচে
পা। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে প্রায় একইরকম হলেও গায়ের রঙের সামান্য হেরফের
আছে। চড়াই পাখির মতো দেখতে বলে অনেক জায়গায় এদের বনচড়াই বলে কিন্তু এরা চড়াই
পাখির থেকে আকারে ছোট কিন্তু লেজটা একটু লম্বা।
রামগাংরা আকারে
ক্ষুদ্র হলেও খুব সাহসী আর ততটাই মারকুটে। পাখিদের দলের মধ্যে এসে পড়লে অন্য
পাখিরা ভয়ে সরে যায়। তারা সরে না গেলে রামগাংরা তেড়ে যায় তাদের দিকে। পাখিটার এতই
হালকা ওজন যে পোকামাকড়ের নাগাল পেতে এরা গাছের সরু ডাল বা পাতার আগায় ঝুলে ঝুলে
পাতার তলা থেকে পোকা খুঁজে খুঁটে বার করে নিয়ে এসে খায়।
অন্য সব
পাখিদের মতোই বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এরা বাসা
তৈরি করলেও গাছের কোটরেই ওদের বাসা করতে বেশি দেখেছি। বাড়ির কাঁঠাল গাছেও ওদের
বাসা আছে।
পাখি পরিচিতি : বন চড়াই/ রামগাংরা
(Local Name: Ramganra)
বৈজ্ঞানিক নাম: Parus cinereus
Commonname: Cinereous Tit.
পাখির দৈর্ঘ্য ১২-১৩ সেন্টিমিটারের বেশি
নয়।
পাখির ওজন সাকুল্যে ১২-১৩ গ্রাম ।
রামগাংরা পাখির
কথা বলতে গিয়ে একটা ঘটনা না বললে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এই রামগাংরা
দম্পতি আমার বাড়ির গেটের সামনে করঞ্জা গাছের কোটরে বাসা করেছিল। ওদের ছবি তুলতে
গিয়ে আমি দেখেছি আর এটাও বলেছি যে ওই কোটরের বাসার ভেতর দিন-কয়েকের দুটো বাচ্চাও
ছিল। সারাদিন তারা চিকিস চিকিস করে ডাকছে, আর বাবা-মা সমানে কুচি কুচি,সবুজ সবুজ পোকা ধরে এনে
খাওয়াচ্ছে আবার কখনও করঞ্জার কচি ফুল
ঠোঁটে নিয়ে এসে কোটরে ঢুকে গিয়ে বাচ্চাকে খাইয়ে আসছে। তবে দুজনে একসঙ্গে নয়! একজন
করে বাইরে পাহারা দিচ্ছে। সে এক দারুণ ব্যাপার।
বেশ বারো তেরো দিন বাদে দেখি
বাচ্চা দুটোকে উড়তে শেখাচ্ছে ওদের বাবা-মা। আমি আগে সেভাবে দেখিনি, শুধু ওদের ডাক শুনেছিলাম। এবার বাচ্চা দুটোকে দেখলাম। তারপরেও দিন দুয়েক কেটে গিয়েছে…..
দিনটা ছিল ২৫শে
এপ্রিল শনিবার। পুরো সন্ধে হয়নি বিকেলের আলোর রেশ কিছুটা রয়ে গিয়েছে তখনও। কিন্তু
লাইট পোস্টের আলোগুলো জ্বলে উঠেছে। সেই সময় আমার ছেলে মোটর সাইকেলটা বার করেছে
কোনও কাজে যাবে বলে। হঠাৎই আমাকে ডাকতে
শুরু করলো মা মা ছুটে এসো, দেখো তো
এটা কি পড়ে আছে! এখনই পা দিয়ে মাড়িয়ে ফেলছিলাম। ওমা! পোস্টের আলোয় আমি দেখলাম
ছোট্ট একটা পাখির ছানা কিচ্ কিচ্ করে ডাকছে। আমি তখনই সেটাকে হাতে তুলে নিয়ে দেখি
এ যে রামগাংরা’র বাচ্চাটা!গাছ থেকে পড়ে গিয়েছে। অল্প আলোতেই দেখতে পেলাম ওর ডান
পা-টা নাড়তে পারছে না। সম্ভবতঃ ভেঙে
গিয়েছে,পায়ের আঙুলগুলোও থেঁতে গিয়ে রক্ত ঝরছে আর ঘাড়ের কাছে
একটু কেটে গিয়েছে। পাখির ছানাটাকে হাতে নিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মা গাছের
ডালে বসে অসহায়ের মতো ছানাটার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু ভয়ও পাচ্ছে না সে।
বাচ্চাটাকে
ওখানে ফেলে রাখতে ভয় হল। এমন করে পড়ে থাকলে মরে যাবে,নয়তো পেঁচা বা বিড়াল এসে খেয়ে নেবে।
তাই চটপট তাকে
নিয়ে ঘরে এলাম। ওর অমন অবস্থা দেখে সেই মুহূর্তে কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। কি করলে,কি খাওয়ালে বাচ্চাটা সুস্থ হবে। হাত থেকে নিয়ে টেবিলের উপর
বসালাম বাচ্চাটাকে কিন্তু দেখি,ভয় পেয়ে সে হাতেই উঠে চলে আসছে।
অগত্যা ওটাকে
হাতে নিয়েই একটু দুধ কুসুম কুসুম গরম করে,তাতে হোমিওপ্যাথি Arnika 30 দুটো
গ্লোবিউল দিয়ে গুলিয়ে নিয়ে প্রদীপের সলতে দিয়ে দুধটা মুখে দিতেই সে চনমনিয়ে উঠলো।
কিন্তু বাচ্চাটার ভাঙা পা এবং মাথায় কাটা দেখে সেই মুহূর্তে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম
যে পাখিরা স্তন্যপায়ী নয়,তাই দুধ
তাদের খাওয়ানো চলে না!
আমার ছেলে বলল
মা তুমি দুধ কেন দিলে? দুধ যে ওর
পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ওকে ছাতু গুলে দিতে
পারো। আমি তাই করলাম। একটু ছাতু গুলে আঙুলের আগায় নিয়ে একটু একটু করে ওকে
খাওয়ালাম। পাখিটা বেশ ঝিমিয়ে পড়ছিল। আমি সমানে চেষ্টা করে চলেছি কি করে ওকে জাগিয়ে
রাখা যায়।
ওরা পাখি,তাই মানুষের চিকিৎসা ওদের ওপর তো প্রয়োগ করা চলে না। কিন্তু
কি করবো ভেবে উঠতে না পেরে,যদি কিছু দিয়ে ওর কষ্টের একটু
উপশম হয় এই ভেবে আমি ‘আই ড্রপ’ দিয়ে পায়ের আঙুলগুলো ধুয়ে দিয়েছি। তারপর ‘ড্রেসিন’
নামে একটা মলম ছিল,সেটা ওর পায়ে লাগিয়ে দিয়ে একবার মনে মনে
স্বভাব রীতিতে বলে নিলাম ঠাকুর রক্ষা করো।
এমন করে আরও
দুবার ছাতু-গোলা আর তাতে দু-দানা Arnika30 দিয়ে
খাওয়ানোর পর ছানাটা ডাকতে শুরু করলো,বাইরে থেকে ওর মায়ের ডাক শুনতে পেলাম বার কতক। তারপর ওর মায়ের ডাকটা থেমে
গিয়েছিল। কিন্তু বাচ্চাটা যেন মায়ের ডাকটাই শুনতে চাইছিল। আমি অপারগ, তবুও আমি আমার ঠোঁটটা চেপে ওইরকমই আওয়াজ করবার চেষ্টা করলাম যতবার,বাচ্চাটা
ততবার সাড়া দিলো। বুঝলাম এ যাত্রায় সে বেঁচে গিয়েছে। খানিকটা হলেও ওর বিপদ কেটেছে।
রাতে আবার একটিপ ছাতু-গুলে আঙুলের ডগায় নিয়ে দিলাম,ঠোঁট দিয়ে
খেলো। ঠিক করলাম ভোর হলেই ওকে কোটরে দিয়ে দেবো। অনেক রাতে আমরা ঘুমোতে যাই। রাতেও
দু’একবার বাচ্চাটার আওয়াজ শুনেছি।
ভোর পাঁচটা থেকে
আবার ওর মায়ের ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। ডাকটা শুনে ঘরের ভেতর থেকে বাচ্চাটাও সাড়া
দিচ্ছিল। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। মায়ের কাছে তার বাচ্চাকে পৌঁছে দেওয়া আমার
একান্ত দায়িত্ব। সেদিন আমরা পুরো পরিবার বাচ্চাটাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা
করেছিলাম।
সকাল সাড়ে
পাঁচটায় কত্তা মশাইকে সঙ্গে নিয়ে,একটা লম্বা বড় টুল নিয়ে পাখির ছানাটাকে গাছের কোটরে ওদের বাসায় ঢুকিয়ে
দিয়েছিলাম। আমি টুল থেকে নেমে আসতেই
রামগাংরা-মা কোথা থেকে ছুটে এসে কোটরে ঢুকে পড়লো আর সম্ভবত রামগাংরা-বাবা
গাছের ডালে বসে রইলো। সেই দৃশ্য দেখে মনে খুব শান্তি পেয়েছিলাম। তারপর সারাদিন
আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
পরের দিন সকাল
থেকে পাখির বাচ্চা বা তার মা-বাবা কারুরই
ডাক শুনতে পাই নি! বুঝলাম, রামগাংরা
দম্পতি ওদের ছানা দুটোকে নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে আর এখানে আসেনি। শূন্য কোটরটা
পড়ে আছে।
তা থাক,বাচ্চাটা বেঁচে গিয়েছে বলে মনে একটা ভালোলাগা অনুভব করেছিলাম। বেশ কিছুদিন
বাদে আবার রামগাংরা পাখিরা ফিরে এসেছে।
ক্রমশ …………
১০ম পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার ।
বিঃদ্রঃ – সব ছবি এবং ভি ডি ও লেখিকার নিজের তোলা ।
লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে আছে। যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন।
লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজিন, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে। বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায়। বর্তমানে বার্ড’স ফটোগ্রাফী এবং “পাখি-প্রকৃতি” নিয়ে লেখা শুরু করেছেন।