Advt

Advt

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

১০ম পর্ব শুরু ……

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

মাছরাঙা কথা

(Kingfisher)


 ছোটবেলায় বাবার কাছে অঙ্ক করতে বসতাম। মাথায় গাঁট্টা, পিঠে কিল এ তো  প্রতিদিনের    বরাদ্দ ছিলই।  তাছাড়া,অঙ্ক করতে দিলে এমন ভাব করতাম যেন, ওঃ এইটা! "এ তো বাঁয় হাতো কা খেল"!  তারপর অনেক চেষ্টা করেও যখন অঙ্ক মেলাতে পারতাম।না! তখন নানা অজুহাত দিতাম।  বাবা শুধু  আমার কেরামতি দেখতেন। তারপর একদিন বুঝিয়ে বললেন, "আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস  সফলতা  আনতে পারে না"।

 আসল ঘটনাটা তাহলে বলি. ..

 দিন কয়েক আগে গিয়েছিলাম আমার দাদার বাড়ি। আমি যেখানেই যাই ক্যামেরাটাও আমার সঙ্গে যায় ।  সে যাইহোক, দাদার বাড়ির উল্টো দিকেই খুব ছোট্ট একটা পুকুর আর আম,কাঁঠাল,সুপারি,নারকেল গাছে ঘেরা একটা বাড়ি আছে। ফলের গাছগুলোর মাঝে আছে নানান ফুলেরও গাছ। সারাদিন অজস্র পাখি আসে সেখানে। পাখির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে বাগানখানা। বাগান থেকে  আমগাছের একটা ডাল লম্বা হয়ে বেরিয়ে এসেছে রাস্তার দিকে। আমগাছ আর নারকেল গাছের মাঝখান দিয়ে ইলেকট্রিকের  ওভারহেড লাইনের  তার গিয়েছে। 

   চোখে পড়লো একটা সাদাবুক মাছরাঙা (white bellied kingfisher) অনেকক্ষণ ওই তারটাতে বসে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আর বার বার বিভিন্ন   ভঙ্গিমায়   ঘুরে  ফিরে  কি যেন একটা দেখছে।  ওকে দেখে  মনে হচ্ছিলো সেই মুহূর্তে ও যেন ভীষণ খুশি হয়ে উঠেছে। আসলে,খুশির বিষয়টা  সকলের মধ্যেই সমান আলোড়ন তোলে। অনেক সময় চোখ মুখ দেখেও  খুশির  আন্দাজ করা যায় ।

  দেখে অবাক হয়েছিলাম,আমগাছের উল্টোদিকে বাড়ির নিকাশি নালার (আধা জল,আধা শুকনো)ভেতর দিয়ে একটা হেলে সাপের বাচ্চা এঁকে বেঁকে চলেছে আর পাখিটা সেটাকেই ধরবে বলে  লক্ষ্য রাখছে। সাপটা যেমন যাচ্ছে পাখির দৃষ্টিও তেমনই ঘুরছে  আর  সে ততটাই খুশি হয়ে উঠছে।  শুধু সঠিক পজিশন মতো সেটাকে ধরতে পারার জন্যে অপেক্ষা করছিল। তবে  দেখলাম, শিকারটা ধরার ব্যাপারে  পাখিটা  খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিল । তাই একেবারে আলজিভ বার করে হেসে অস্থির!  হাঃ হাঃ হাসি থেকে একেবারে অট্টহাসি যাকে বলে। তাতেই বোধহয় ওর চোখটা হাসছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সাপটাকে সে ধরতে পারেনি।

 ঘটনা আরও একটু আছে। তবে মাছরাঙার মতো ধৈর্য রাখতে হবে।

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

মাছরাঙা শিকার দেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে

 সাপের বাচ্চাটা না পেয়েও মাছরাঙাটা একটুও ধৈর্য হারায়নি। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক উড়ে বেড়িয়ে আবার  পুকুরের ধারে আমগাছের ডালে গিয়ে বসলো। খানিক পরে  পুকুরে একটা মাছ ভেসে উঠতে দেখে সে আবার  ছুটে গেলো, কিন্তু সেই মুহূর্তে বাগানের নারকেল গাছ থেকে একটা শুকনো নারকেল ধপাস করে জলে পড়লো। আমিও চমকে উঠলাম ছবি তুলতে তুলতে। মাছটাকে আর দেখতে পাইনি। মাছরাঙাটা যখন উঠে এলো তখন দেখি ওর মুখে একটা জলের মাকড়সা!

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

 সাদা বুক মাছরাঙা মাছ ধরতে না পেরে মুখে জলের মাকড়সা ধরে এসে বসেছে।


মাছরাঙা  গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত পাখি। নদী-নালা,ঝিল-বিল,হাওর-বাওড় বা চাষের জমির আশেপাশে এদের বসে থাকতে দেখা যায়।  সাধারণতঃ স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকমের হয়।

পাখি পরিচিতি:  মাছরাঙা (Kingfisher)

 সারা পৃথিবীতে বহু রকম প্রজাতির মাছরাঙা রয়েছে। তারমধ্যে সাত-আট রকমের মাছরাঙা  আমাদের এই অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায়। আর একটু খেয়াল করলেই বাড়ির চারপাশে কমপক্ষে  চাররকম  মাছরাঙা দেখতে পাওয়া যাবেই যাবে।  অসম্ভব উজ্জ্বল রঙের সুন্দর পাখি ‘মাছরাঙা’  সহজেই সকলকে  আকৃষ্ট  করে। এদের মধ্যে সকলেরই দেহের তুলনায় মাথা বড়। লম্বা, ধারালো এবং সূচালো ঠোঁট।  ছোট লেজ।  দেহের রঙ খুবই উজ্জ্বল। প্ৰতিটি মাছরাঙা আলাদা আলাদা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত।

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


সাদা বুক মাছরাঙা। (White breasted kingfisher)

 সাধারণ মাছরাঙা (Common kingfisher),

সারস ঠোঁট / মেঘ হও মাছরাঙা (Stork billed kingfisher)

ঝুঁটি ওয়ালা মাছরাঙা (Crested kingfisher)

দাগযুক্ত মাছরাঙা/ পাকড়া মাছরাঙা  (Pied kingfisher)

ম্যানগ্রোভ  মাছরাঙা  (Collared Kingfisher)

খয়রাপাখ/ কমলা মাছরাঙা (Brown Winged Kingfisher)

কালোমাথা মাছরাঙা (Black Capped Kingfisher)

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

আট রকম প্রজাতির মাছরাঙা 

 প্ৰতিটি মাছরাঙা পাখিই অসাধারণ সুন্দর দেখতে। এদের মধ্যে মেঘ হও মাছরাঙা আকারে বেশ একটু বড় আর ডাকটাও একটু অন্যরকম। মেঘ হও মাছরাঙা’র আরেক নাম গুড়িয়াল।  এরা  রোজ এসে আমাদের ছাদের কার্নিশে অথবা আম গাছে বসে থাকে। এখন এই সময় ওদের ডাকটা শুনলেই আমার মনে হয় যেন বলছে,‘মেঘ হও,মেঘ হও’ তবে গলায় যত জোর,ততটাই কর্কশ স্বর।

 পাতি মাছরাঙার (Common Kingfisher) দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ফেরানো যায় না! অসাধারণ সুন্দর রঙের মিশ্রণ সারা শরীর জুড়ে। মাছরাঙাদের শরীরের তুলনায় লেজটা ছোট আর ঠোঁট দুটো খুব লম্বা।

ঝুঁটি ওয়ালা মাছরাঙা (Crested kingfisher) এবং দাগযুক্ত মাছরাঙারাও (Pied kingfisher) কম যায় না! সাদা- কালোর মিশ্রণে এদের গায়ের রঙও কম উজ্জ্বল নয়।

 মাছরাঙা মাছ শিকারি পাখি হলেও সবসময় যে তারা শুধু মাছই খায় তা কিন্তু  নয়। সাপ,ব্যাঙ, ইঁদুর,পোকামাকড়,বিছে সব কিছুই আছে ওদের খাদ্য তালিকায়। তাই জলের ধার ছাড়াও,ধান ক্ষেতের ধারে,ইলেকট্রিক পোলে,বাঁশের খুঁটিতে গাছের নিচু ডালেও মাছরাঙাকে বসে থাকতে দেখা যায়। এদের শরীরের তুলনায় ঠোঁট দুটো বেশ লম্বা এবং সুচালো।

 এদের  মাছ শিকার করার পদ্ধতিটা কিন্তু দেখার মতো ! তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে   মাছরাঙা পাখিরা নদী বা বিলের ধারে,যে কোনও গাছের ডালে বা বাঁশের খুঁটিতে মাছ শিকারের আশায় বসে থাকে। উঁচু থেকে মাছ দেখতে পেলেই ক্ষিপ্র গতিতে  ধাক্কা মেরে জলের ভেতর পর্যন্ত ঢুকে গিয়ে তাকে তুলে নিয়েই প্রথমে আকাশে উড়ে যায় তারপর এসে বসে। এরপর জ্যান্ত  মাছটাকে কব্জা করার জন্যে বারকয়েক তাকে আছাড় মেরে মেরে তার হাড়গোড় ভেঙে দিয়ে সেটাকে নরম করে ফেলে  এবং শেষে  শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে আবার লুফে নিয়ে খায়। ইঁদুর,ব্যাঙ টিকটিকি নিয়েও একই পদ্ধতিতে খায়।

  আমার শ্বশুরবাড়ির বাগানের শেষে একটা পুকুর আছে। সঙ্গে বাঁশবাগানও আছে। বাঁশগাছ হেলে পড়েছে পুকুরের দিকে। প্রায়ই দেখা যায়  বাঁশগাছে  মাছরাঙা বসে থাকে,জলের দিকে মুখ করে। দিন কয়েক আগে  একটা পাতি মাছরাঙার কাণ্ড দেখলাম! বসে থেকে থেকে সাঁই করে গিয়ে পুকুর থেকে একটা সিলভার কার্পের বাচ্চা ধরে নিজে এসে বসলো আমাদের আমগাছে। মাছটাকে নিয়ে আমগাছের ডালে আছড়াতে  লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ সেটাকে উল্টে পাল্টে  আছড়ে আছড়ে গিলে নিলো। সেদিনই দুর্ভাগ্য বশত: সকালে থেকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। আকাশটা বেজায় মুখ ভারী করে রয়েছে। তাছাড়া ক্যামেরাটাও সঙ্গে ছিল না! শতবার আফসোস করেছি এই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে না পেরে।

  পূর্ব-স্থলী (পূর্ব বর্ধমানে) পাখিরালয়ে মাঝে মাঝেই পরিযায়ী পাখিদের ছবি তুলতে যাই,ওখানকার মাঝি ভাইয়ের সঙ্গে নৌকায় চেপে। সেখানে খুঁটির উপর মাছরাঙাকে অপেক্ষা করতে সব সময়ই দেখা যায়। মার্চ থেকে জুলাই এদের প্রজনন সময়। সেদিন কোনও একটা পাখির জন্যে আমরা নৌকায় অপেক্ষা করছিলাম। খুঁটির উপর একটা পাতি মাছরাঙা বসেছিল।  অনেকক্ষণ ধরে দেখতে দেখতে খেয়াল করলাম সে ভীষণ রকম ব্যস্ত হয়ে বার বার খুঁটি থেকে মাটিতে নেমে,বিলের পাড়ের একটু তফাতে ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ছিল!কারণটা মাঝিকে  জিজ্ঞাসা করতেই সে জানালো  মাছরাঙা  পুকুর পাড়ে গর্ত খুঁড়ছে বাসা  তৈরি করার জন্যে।

  সাধারণ পাখিদের মতো গাছের ডালে বা ঝোপের মধ্যে নয়,এরা বাসা তৈরি করে মাটিতে গর্ত করে! নদী বা পুকুরের খাড়া পাড়ে ঠোঁট দিয়ে অনেক লম্বা গর্ত করে তার ভেতর বাসা তৈরি করে এরা ডিম পাড়ে। কিছুক্ষণ গর্ত করার পর ক্লান্ত হয়ে গেলে সে উড়ে গিয়ে কোনও গাছের ডালে বসে এবং তখন সঙ্গী পাখিটি উড়ে এসে একইভাবে গর্ত করে। তাতে  ৫-৭টা  ডিম পাড়লেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুটোর বেশি ডিম বা বাচ্চা বাঁচে না। হয় সাপে খেয়ে নেয় নয়তো গর্তে জল ঢুকে গিয়ে বাচ্চা মরে যায়। আজকাল  পুকুর বুজিয়ে বাসস্থান গড়ে ওঠার ফলে মাছরাঙারাও ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হতে চলেছে।

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

সজনা গাছে পুরুষ পাখি পাখা মেলেছে

 আমার বাগানের সজনা গাছটা ঘিরে প্রায় সারাদিনই পাখিদের আনাগোনা চলে। যে যখনই সুযোগ পায় এসে একটু বসে যায়। যদিও গাছটা পড়শির,তবুও সেটা আছে আমার বাগানের ধারেই। আর ডালপালা এমনভাবে ছড়ানো যে পাখি এসে বসলে,বাড়ির বারান্দা বা উঠোন থেকে পরিষ্কার দেখা যায়।

 প্রেমের ব্যাপারে মানুষ  বা  পাখি কেউই কম যায় না। সেখানেও হিরো-হিরোইন আর তার মাঝে একজন ভিলেনও থাকে। কখনও সে প্রেম চোপড়ার মতো হিরোর কাছে মারও খায়। দুজনে দারুণ  মারপিট হয় আবার কখনও হিরোইন সুযোগ বুঝে ভিলেনের সঙ্গেই ঘর বাঁধে।

 প্রজনন কালে  পুরুষ  মাছরাঙাকে তার সৌন্দর্য  প্রদর্শন করতে হয়। পাখা খুলে  নেচে কুঁদে সঙ্গিনীর মনোরঞ্জন করতে হয়। যেমনটি সিনেমায় হয় আর কি! মানুষের জায়গায় পাখি। বাকি সব একই।  সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী পাখি ঘর বাঁধে নয়তো চলে যায়! এর সত্যি মিথ্যে জানি না। তবে আমার সজনা গাছে মাছরাঙাকে পাখা মেলে নাচতে দেখেছি। আবার পছন্দ না হওয়ায় সঙ্গিনী উড়ে যাবার পর, বিরহ বিধুর পুরুষ পাখিকেও দেখেছি। তবে,সম্ভবত: পাখি সমাজে স্ত্রী পাখিদের কদর একটু বেশি। তাই  নেচে-গেয়ে স্ত্রী-পাখির মনোরঞ্জন করে  তবে পুরুষ-পাখিকে যোগ্য বলে  নির্বাচিত হতে হয়।

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


 দুপুরের দিকে পাখির নাচ দেখলাম কিছুক্ষণ। দুজনে দুটো ডালে বসে আছে। যদিও স্ত্রী-পুরুষ আমি চিনিনা। কিন্তু ক্লিইঁ ক্লিই ক্লিইঁ…… ক্লওঁ ক্লওঁ  ক্লওঁ . ডাক শুনেই  ধারণা করে নিয়েছি যে এরা নিশ্চয়ই হিরো-হিরোইন।  সবে  মাছরাঙার নাচটা  শুরু হয়েছে,দেখি পাখি ফুড়ুৎ! মানে সখী উড়ে চলে গেল।  আর নাচ থামিয়ে  সখাও পিছনে ছুটল। তাই দেখে আশা ছাড়তে পারলাম না। আমিও ক্যামেরা নিয়ে পিছনে ছুটলাম। সঙ্গিনীটাকে দেখতে পাইনি। আমাদের বাগান থেকে একশো দেড়শ মিটারের মধ্যেই এখানে একটা বিল (জলাশয়) আছে।

  মা গো মা!  আমি কি ওদের সঙ্গে ছুটে পারিবিলের ধারে এসে দেখি,মাছরাঙাটা  মনের দুঃখে  বাঁশের  খুঁটির উপর মাথা নিচু করে বসে আছে!  আমি ক্যামেরাটা ওর দিকে ঘোরাতেই,ও সাঁই করে পিছন ফিরে গেল আর পিছন ফিরেই ক্লওঁ  ক্ল. ক্নওঁ  ক্ল. চ্যাঁ চ্যাঁ করে কি সব বলছে.... 

  ওর কথা যেটুকু বুঝলাম সেটুকুই বলছি।ও বলল,মুখ দেখাতে পারবো না গো!

  আমি বললাম আঃ মোলো! অত  লজ্জা পাওয়ার মতো এমন কি ঘটলো! এ তো হামেশাই হয়! আমাদের সমাজে এখনও প্রতিদিন অনেক মেয়েকেই পাত্রী নির্বাচনের পরীক্ষা দিতে হয়। আমাকেও তো কতবার তোর মত পরীক্ষা দিতে হয়েছে! আমি তো লজ্জা পাইনি!

 মাছরাঙা বলল প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে আমাকে বলল,তুমি একটু ভালো করে চেয়ে দেখো......। আমি ক’দিন ধরে কত কষ্ট করে নিজেকে সাজিয়েছি জানো। "ইউ কাট" হেয়ার স্টাইল করেছি,পাখনা দুটোকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছি ভাঁজে ভাঁজে। তাও কিনা আমায় পছন্দ করলো না!

আমি বললাম মন খারাপ করিস না। এর থেকেও ভাল সঙ্গিনী তুই পাবি। যাক  সে কথা!  মুখটা আমার দিকে  ঘোরা  তো দেখি!

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী


  কিন্তু কে কার কথা শোনে!পিছন ফিরেই বসে রইলো। অগত্যা কি করবো! পিছন ফেরা দুটো ছবিই তুলে নিয়ে চলে এলাম। জানি না ভালো লাগবে কিনা! তবে পিছনের পালকের রঙটা ভারী সুন্দর।

 পাখি হল বিশ্ব প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। গাছ-গাছালি এবং জলাশয় কমে যাওয়ায় আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেমন মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে তেমনি মাছরাঙা পাখিরাও বিলুপ্তির পথে। জলাশয়গুলোর উপরে জাল বিছানোর জন্যে হয়তো মাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে কিন্তু মাছরাঙারা প্রতিদিন গণ্ডায় গণ্ডায় জালে আটকে মরে যাচ্ছে।

pakhi-prakriti-part-10-machranga-kingfisher-jana-ajana-feature-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

জেলেদের জালে আটকে পড়ে মৃত মাছরাঙা 

  মাছরাঙা পাখি সকলেই খুব ভালো করে চেনেন। তাই তাদের সম্বন্ধে জানানো ছাড়াও আমার প্রধান উদ্দেশ্য ‘মাছরাঙা’-দের বাঁচানো অর্থাৎ তাদের অবলুপ্তির থেকে ফিরিয়ে আনা। জেলেদের পাতা মরণ-ফাঁদে (জালে) আটকে পড়ে ওদের মরে যেতে দেবেন না। বড়োই করুণ সেই দৃশ্য!   

ক্রমশ ……… 



বিঃদ্রঃ – সব ছবি এবং ভি ডি ও লেখিকার নিজের তোলা । 

লেখিকার পরিচিতি –

লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন

লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজি, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায় বর্তমানে বার্ড’স ফটোগ্রাফী এবং পাখি-প্রকৃতি” নিয়ে লেখা শুরু করেছেন