Advt

Advt

rupantar-upanyas-story-galpo-part-6-by-nalinaksha-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রূপান্তর-নলিনাক্ষ-ভট্টাচার্য

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি রবিবার

rupantar-upanyas-story-galpo-part-6-by-nalinaksha-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রূপান্তর-নলিনাক্ষ-ভট্টাচার্য
পর্ব - ৬

ছয়

বুড়ো শিবতলার মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন সুধাময়ী। ফিরবার পথে বেঁটে বোসের বউ সুলতার সঙ্গে দেখা। সুলতা চণ্ডীতলার বাজারে ইলিশ মাছ উঠেছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন সব বিক্রি হয়ে গেছে। কাজেই গোমড়া মুখে ফিরছিলেন। সুধাময়ীকে পেয়ে একরকম টানতে টানতেই নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। পানের বাটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,“কতকাল দিদি তোমার হাতের পান খাইনা। সাজ দিকিন দু’খিলি পান দরদ দিয়ে।”

সুধাময়ী সুবীর বোসের বউয়ের আতিথেয়তা দেখে একটু অবাক হলেন। গত বছর বাবলু ক্লাসে সেকেন্ড হবার পর থেকেই বোস গিন্নির মুখ ভার। তার ছেলে ফেল করেছে সেটা যেন সুধাময়ীরই দোষ। পান মুখে দিয়ে সুলতা গলা খাটো করে বললেন,“তোমারতো এবার পোয়াবারো,কি বল দিদি? তোমার কর্তাকে বোলো আরেকটু শক্ত হতে। হারু ঘোষ শেষ পর্যন্ত পঞ্চাশ হাজার দিয়ে দেবে। ও ব্যাটার কি টাকার কোন মা বাপ আছে?”

সুধাময়ী চোখ কপালে তুলে বললেন,“এ কি বলছ তুমি খোকনের মা। হারু ঘোষ ওনাকে টাকা দিতে যাবেন কোন দুঃখে?”

সুলতা চোখ টিপে বললেন,“আমার কাছে লুকিয়ে লাভ কি বলো দিদি? আমিতো সবই জানি। ভয় নেই আমি কাউকে কিচ্ছু বলবনা। টাকা পেলে চুপি চুপি আমাকে একদিন পেট ভরে মিষ্টি খাইয়ে দিও কিন্তু।”

সুধাময়ী বিরক্ত হয়ে বললেন,“রহস্য কোরনা খোকনের মা,তোমার কথার মাথা-মুন্ডু কিছুইতো বুঝতে পারছিনা। এসব কথা শুনলে কোত্থেকে?”

সুলতা এবার মুখ হাড়ি করে বললেন,“আ মরণ! শোন কথার ছিরি। বলি এ পাড়ায় জানতে কার বাকি আছে হারু ঘোষ চন্ডীতলার রাস্তায় তোমার কর্তাকে ধরে হাতে দশ হাজার টাকা গুঁজে দিতে চেয়েছিল। তোমার কর্তা রাজি হননি,বলেছেন পঞ্চাশ হাজারের কমে উনি স্বাক্ষর সংগ্রহ বন্ধ করবেননা।”

সুধাময়ী কপালে হাত দিয়ে বললেন,“ওমা একি কথা! এ কখনো সত্যি হতে পারেনা। উনি রেলে চাকরি করে সারাজীবন এক পয়সা ঘুষ নিলেননা, আজ বুড়ো বয়সে হারু ঘোষের কাছ থেকে টাকা ঘুষ নেবেন? কারা রটায় এসব কথা বলতে পার খোকনের মা?”

সুলতা গালে হাত দিয়ে বললেন,“আমার কি দোষ বল দিদি, সবাই বলাবলি করছে তাই ভাবলাম তোমাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিই কথাটা। তা তুমি যখন বলছ তোমার কর্তা ঘুষ নেননা তখন কথাটা মিথ্যেই হবে হয়ত।” সুলতা উঠে দাঁড়ালেন। “ যাই গিয়ে রান্না বসাই। দেখ আমার কপাল। ইলিশ এসেছে শুনে ছুটে গেলাম চন্ডীতলা, গিয়ে দেখি বাজার ফাঁকা। এখন কচু ঘেচু রাঁধতে বসি আর কি।”

সুধাময়ী উঠে দাঁড়ালেন। এতক্ষণে বোস গিন্নির আতিথেয়তার অর্থভেদ করতে পেরে তিনি মনে মনে হাসলেন। “ যাইগো খোকনের মা, আমারও ঘরে গুচ্ছেক কাজ পড়ে রয়েছে,” বলে সুধাময়ী উঠে পড়লেন। হাই তুলে তিন তুড়ি মেরে সুলতা বললেন, “ এস দিদি।”

rupantar-upanyas-story-galpo-part-6-by-nalinaksha-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রূপান্তর-নলিনাক্ষ-ভট্টাচার্য

সেদিন সন্ধ্যায় ভিতরের ঘরে ফরাসের উপর বসে দুটো বড় গ্লাসে হুইস্কি ঢালতে ঢালতে হিরণ্ময় তালুকদার বেঁটে বোসকে বললেন,“যত পারুন টেনে যান বোস বাবু। অবিনাশবাবু যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন তাতে দেশে মদ খাওয়া শিগগিরই উঠে যাবে মনে হচ্ছে।” চাবি দিয়ে বোতল খুলে পরিমাণ মত দুই গ্লাসে সোডা ঢাললেন সুবীর বোস। তারপর চুমুক দিয়ে মুখটা বিকৃত করে বলল,“আরে রাখুন মশাই। বলে হাতি ঘোড়া গেল তল,ভেড়া বলে কত জল। গান্ধী যা করতে পারলনা তা করবে অবিনাশবাবু? পৃথিবিতে যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন মদও থাকবে।” গ্লাসে বড় চুমুক দিয়ে বেঁটে বোস সামনে রাখা প্লেট থেকে এক খাবলা চানাচুর মুখে পুরে দিলেন।

আসুন তালুকদার বাবু এবার খেলা শুরু করা যাক।”

কিন্তু তালুকদারবাবু দাবার ছক পাতবার কোন আগ্রহ দেখালেননা। গ্লাসে আলতোভাবে চুমুক দিয়ে বললেন,“না মশাই আমার আবার দুটো একসঙ্গে চলেনা। আগে এটা শেষ করেনি।” তারপর চোখ বুজে আরও একটা চুমুক দিয়ে বললেন,“হারু ঘোষ জিন্দাবাদ! অবিনাশবাবু মুর্দাবাদ!”

বোসবাবু আরেকটা বড় চুমুক দিয়ে বললেন,“কী হল তালুকদার মশাই, এত তাড়াতাড়ি নেশায় ধরল আপনাকে? এযে অবিশ্বাস্য। আপনিতো শুনেছি একাই বোতল ফাঁক করে দিতে পারেন।”

তালুকদারবাবু চোখ বুজে ধীরে ধীরে মাথা দোলাতে লাগলেন। “ নাহে ভায়া, নেশার কথা কী বলছ? সবেতো গ্লাসে ঠোঁট ছোয়ালাম। আমি বলছিলাম হারু ঘোষ যদি লুকিয়ে চুরিয়ে দু’এক বোতল বিদেশি মাল না রাখত আমাদের জন্য তবে তো সেই কলকাতায় ছুটতে হত। এরকম সজ্জন লোকের পিছনে লাগতে আছে? ছি-ছি।”

হ্যা হ্যা করে হেসে উঠলেন বোস বাবু। “ যা বলেছেন, অবিনাশবাবু লোকটা এক্কেবারে রসকষহীন। আমার সঙ্গে এতকাল দাবা খেলে এলেন, কী বলবো আপনাকে একটা পান পর্যন্ত কোনদিন মুখে দিতে দেখিনি। এরকম বেরসিক লোকের সঙ্গে খেলে মশাই আরাম নেই।”

আধ ঘন্টা পরে দু’জনে মিলে যখন বোতলটা শেষ করলেন তখন দু’জনই বেহোশ। ফরাসের উপর গড়াগড়ি খেতে খেতে তালুকদারের পা গিয়ে ঠেকল বোসের ভুড়িতে। বোস পা ধরে এক হ্যাঁচকা টান দিয়ে বললেন, “ আমার গায় পা দিওনা বলে দিচ্ছি, আমি কিন্তু পা ভেঙে দেব।”

ছিপছিপে চেহারার তালুকদার তড়াং করে লাফ মেরে উঠে বসে দু’খানা পা-ই বোসের ভুড়ির উপর চাপিয়ে দিয়ে বলল, “ কী বললিরে শ্লা, আমার ঘরে আমার কেনা মাল খেয়ে কিনা বলে পা ভেঙে দোব। ভাঙ শালা, দেখি তোর কত হিম্মত।”

দু’চার মিনিটের মধ্যে বেঁটে বোস আর ঢ্যাঙা তালুকদার জড়াজড়ি করে গড়াতে লাগল ফরাসের উপর। দু’জনের মুখ থেকেই বেরোল অজস্র কুৎসিৎ গালিগলাজ যা তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় পরস্পরের প্রতি কোনদিনই ব্যবহার করার সাহস পাননি বা প্রয়োজন বোধ করেননি। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই হারু ঘোষের দোকানের সামনে দিশি মদ খেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল দুটো লোক। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বাবলু বড় বড় চোখ মেলে দৃশ্যটা উপভোগ করছিল। রান্নাঘর থেকে সুধাময়ী এসে সশব্দে জানলাটা বন্ধ করে দিলেন।

 ক্রমশ …………

৭ম পর্ব পড়ুন আগামী রবিবার

লেখক পরিচিতি      

জন্ম এবং শিক্ষা কলকাতায়;কর্মজীবন দিল্লিতে,কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে। গল্প লেখার শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে আসছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ইংরেজিতে চারটি উপন্যাস ও একটি গল্প সংকলন এবং বাঙলায় চারটি উপন্যাস ও দু’টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি থেকেও ওঁর কয়েকটি ইংরেজি গল্প প্রচারিত হয়েছে। দেশ,আনন্দবাজার,সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, পরিচয়, কালি ও কলম(বাংলাদেশ) এবং দিল্লি ও কলকাতার অনেক সাহিত্য পত্রিকায় গল্প লেখেন নলিনাক্ষ বাবু দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘ কলমের সাত রঙ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন।