Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-72nd-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-72nd-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী
পর্ব ৭২ 

How intensely people used to feel!

Like metal poured at the close of a proletarian novel

Refined and glowing from the crucible,

I see those hearts, I'm afraid ,still.

একদিন, ক্রিসমাস  এর পবিত্র  রাতে ধর্ষিতা হল মারিয়া। কিন্তু, সেটা  তো অনেক পরের  কথা। তার আগে--তো অনেক জল বয়েগেছে,মহানদীর বুকদিয়ে--। জোসেফ-এর আত্মহত্যার  খবর পেয়ে ছুটতে ছুটতে যখন এলো মারিয়া--তখন জোসেফকে কবর দেওয়া হয়ে গেছে। সারাকে পুলিশ  কাষ্টডিতে নিয়েছিল--কিন্তু  সে জামিনে মুক্ত। এবং জামিনে  মুক্ত  হয়ে সে জোসেফের  পরিবারের  সঙ্গে সমস্ত  সম্পর্ক  ছেড়ে দিয়েছিল। সনাতন  এবং তার স্ত্রীর  তখন শুধু পুত্র  শোক নয়--নিজেদের  দুবেলা খাবার  জোটানোই সমস্যা। মারিয়া আর সারা আবার  মুখোমুখিসারা রাগে ফুঁসছিল।

-"ভালবাসার  এই  প্রতিদান দিল জোসেফ? আমাকে একদিনের  জন্য  হলেও জেলের ভাত  খেতে হল--"

মারিয়ার  দুচোখে জল।

--"সারা,আমি তোমার  জন্য  জোসেফকে,আমার  ভালবাসাকে ছেড়ে চলে গেলাম-; কই,তুমি তো তাকে --তোমার  আমার  দুজনের  ভালবাসাকে ধরে রাখতে পারলে না--।" মারিয়ার  চোখের কোণ বেয়ে মুক্তোদানা অশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে--

সারার মুখ রাগে গনগনে আগুন।

--"লাভ,মাই ফুট। আজ বুঝতে পারছি জোসেফ  আমাকে কোনও  দিনই ভালবাসে নি। ছোটবেলা থেকে আমার  সঙ্গে ভালবাসার  নাটক করেছে।"

ফিকে হেসে জবাব  দিল  মারিয়া -

--"তুমি একটা গোটা পরিবারকে নষ্ট  করে দিতে পার না--এই  দুই  বৃদ্ধ, বৃদ্ধার খাওয়া পরা কি করে জুটবে?"

-"এটা আমার  ভাববার বিষয় নয়,এমনিতে  আমার  অনেক  ঝামেলা হচ্ছে,আইন আদালত  জামিন- এর জন্য  প্রচুর  টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে--গেট লস্ট।"

মারিয়া শ্রান্ত হয়,মরিয়া হয়ে জোসেফের  অফিস  এ দেখা করেছিল। কিন্তু  ওরা বললেন--"আইনত যেহেতু তুমি আর জোসেফের  স্ত্রী নও তখন তোমার  কিছুই  পাওনা নেই।  সারা would be wife--"

--"কিন্তু, সারার সাথে ওর শাদী হয় নি।"

--"ঠিক।  কিন্তু  ওরা রেজিস্ট্রী ম্যারেজের জন্য  যে যৌথ এপ্লিকেশন  করেছিল,তাতে সারা হয়ত কিছুটা আর্থিক  সাহায্য  পেতে পারে।"

মারিয়া কিছুতেই  সেই  অসহায় বৃদ্ধ  দম্পতিকে ছেড়ে যেতে পারল না।

মারিয়ার গল্প  বলতে বলতে রামদীনের  চোখ উজ্জ্বল  ;

--"ম্যাডাম  জী,এয়সী আওরৌত ম্যাঁয়  নে কভি নেহি দেখা। "

বাভ্রবি একটু হেসে বলেছিল -

--"তোমার কি মারিয়ার  সাথে ঐ যাকে বলে-লাভ অ্যাট ফার্স্ট  সাইট-হয়েছিল?"

রামদীন  ও হেসে ফেলেছিল।  আজকাল  বলিউড  ফিল্মের দৌলতে এই  আংরেজি শব্দবন্ধ  সকলের  কাছেই প্রায় সুপরিচিত।

রামদীন  আবার  পুরনো কাহিনীর খেই ধরেছিল,বলতে শুরু করেছিল---

মারিয়া আবার  জোসেফের  অফিস  পাড়ায় চায়ের দোকানে কাজ নিলো। মোটামুটি ভাবে তিনটি,প্রাণীর খাওয়া পরা চলে যাচ্ছিল।  মারিয়া মাঝে মাঝেই  ওদের সেই  প্রিয় পার্কটাতে গিয়ে বসে। বাগান বিলাস,কৃষ্ণচূড়া আর বটলব্রাশের সাথে কথা বলে--না,মারিয়া তার জোসেফের  সাথে কথা বলে---

"তুমি কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে জোসেফ?"

--"দেখো,একদিন  তুমি এই  কৃষ্ণচূড়া ফুলের গুচ্ছ  আমার মাথায় পরিয়ে তোমার  মোবাইলে আমার  ছবি তুলেছিলে;সে ছবি আমি বাঁধিয়ে  রেখেছি জোসেফ--।"

আর সেই  পার্কে বসেই একদিন --জোসেফের  মৃত্যুর  ঠিক  একমাস পর ,মারিয়ার হঠাৎই মাথাটা ঘুরে গেল--। ওকে পড়ে যেতে দেখে সবাই  যখন  কাছাকাছি হেলথ  সেন্টারে নিয়ে গেল --

একদিন একটা লাল গোলাপ  হাতে জোসেফের  সমাধির পাশে মারিয়া---। মারিয়ার  চোখে জল। ফুলটি জোসেফের  নাম লেখা ফলকটির পাশে রেখে ফিসফিস  করে বলল -

--"জোসেফ,আমি মা,আর তুমি বাবা হতে চলেছ। তুমি আমার  সঙ্গে আছো তো জোসেফ?"

প্রেমের কাছে নবাবের  বেগম আর সাধারণ  পিয়নের  স্ত্রীর  কোন  তফাত নেই। বাভ্রবির  চোখের সামনে ভেসে উঠল ভাগীরথীর অপর পারে খোশবাগের সিরাজউদ্দৌলার কবর--আর রাতের অন্ধকারে একটি মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া লুৎফা বেগমের  ছবি। সবাই  ভুলে গেলেও সিরাজের ভালবাসা কে ভুলতে পারেনি লুৎফা। ভালবাসা বুঝি এমনই  হয়। কবরের  উপর দিয়ে বয়ে গেল এক ঝলক গন্ধবহ--সেই  হাওয়ায় জোসেফের  উৎফুল্ল  গলা শুনতে পেলো মারিয়া

--"তুমি সত্যি বলছ মারিয়া? আমরা মা,বাবা হতে চলেছি?"

মারিয়াকে জড়িয়ে ধরল জোসেফ--জোসেফের  গায়ের গন্ধ, হাতের স্পর্শ  জড়িয়ে ধরল মারিয়াকে--

মারিয়া আবার  কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

--"জোসেফ, তুমি কেন চলে গেলে?" আমি এই লড়াই  একা লড়াই কি করে? বল,বল!"

--"ওঠো বেটি,ওঠ যা--এয়সা মত রোনা।"

একজন বৃদ্ধা মহিলা,দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছেন মারিয়া কে। তাঁর হাতে একটি সাদা গোলাপের  তোড়া--

মারিয়া আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। মহিলা সেই  সাদা গোলাপের  তোড়া নিয়ে এসে দাঁড়ালেন একটি সমাধির পাশে। গোলাপের তোড়া রেখে মাটিতে চুমু খেয়ে বললেন-

--"ডিয়ার হ্যারি,আই লাভ ইউ। ভেরি সুন আই উইল বি উইথ ইউ।"

মারিয়ার  পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললেন-

--"আমার  হাজব্যান্ড, হ্যারি-দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে ঐ সমাধিতে শুয়ে আছে। আর আমি ওর জন্ম দিনেআমাদের  বিয়ের তারিখে ওকে ফুল  দিতে আসি। আজ ওর জন্ম দিন। চলো বেটি,যদি আপত্তি না থাকে আমার  সাথে এক কাপ কফি খাবে চলো।" সুন্দর  একটি ছিমছাম  রেস্তোরায় ঢুকতে ঢুকতে বললেন--"এটা আমার  আর হ্যারির  খুব প্রিয় রেস্তোরা।"

--"ম্যাডাম রোজি, গুড ইভনিং--হাউ আর ইউ-"

ওয়েটার রেস্তোরার  দরজা খুলে দিতে দিতে অভিবাদন  জানালো--

রোজি হেসে গুড ইভনিং বলে মারিয়া কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন---।

মারিয়ার  জীবনের  আরেকটি নতুন  অধ্যায়ের  দরজা খুলে গেলো--

 

ক্রমশ …………

৭৩তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)