Advt

Advt

sonar-tala-golden-lock-feature-probondho-by-bama-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-সোনার-তালা-বামা-চক্রবর্তী

sonar-tala-golden-lock-feature-probondho-by-bama-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-সোনার-তালা-বামা-চক্রবর্তী

কিশোরগঞ্জে একজন কৃষক ছিল নয়নচাঁদ। সে চাষবাস করত,বাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ছিল,বড় মেয়ের নাম নয়না,সে খুব বুদ্ধিমতী ছিল। একদিন নয়নচাঁদ সকাল বেলা জমিতে গিয়ে হাল দিতে আরম্ভ করলে,হাল দিতে দিতে তার লাঙ্গলে কি যেন লাগল,তারপর সে লাঙ্গলটাকে জোর করে ঠেললে মাটির ভীতর থেকে পেতলের মতো কি যেন একটা বের হল। সে লাঙ্গলটা মাটিতে ফেলে দিয়ে মাটির ভীতর থেকে বের হওয়া বস্তুটির কাছে গিয়ে দেখল মাটির ভীতর থেকে একটা অনেক বড় তালা বেড়িয়েছে। সে তালাটা কে হাতে তুলে নিয়ে গামছা দিয়ে ভালো করে মুছতে লাগল, মুছতে মুছতে দেখল,এটা তো সোনার তালা,যার উপর সুন্দর কারুকার্য করা রয়েছে। নয়নচাঁদ মনে মনে ভাবল এত সুন্দর সোনার তালা,আমি গরীব মানুষ এই তালা দিয়ে কি করব! তার চেয়ে ভাল রাজামশাইকে দিয়ে দেব,রাজা সোনার তালা দেখে খুশী হবেন এবং আমাকে খুশী হয়ে পুরষ্কার দেবেন। এই সোনার তালার স্থান রাজপ্রাসাদে।

এরপর নয়নচাঁদ বাড়ী ফিরে যায়, ফিরে গিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ডেকে সোনার তালাটা দেখায়। ওরা দেখে বলে কি সুন্দর তালা,এতো সোনার তালা, এটাতে তো খুব সুন্দর কারুকার্য করা রয়েছে,এতো সুন্দর তালা আমরা কোনদিন দেখিনি। তখন ওর স্ত্রী জিজ্ঞেস করে - এ তালা তুমি কোথায় পেলে? নয়নচাঁদ তালা কিভাবে পেল তা ওদের বিস্তারে বলল, বলে বলল আমি এই তালাটা নিয়ে রাজপ্রাসাদে যাচ্ছি, রাজামশাইকে দিতে। তখন নয়না বাবাকে বলল,বাবা তোমার রাজা মশাইকে তালাটা দিতে না যাওয়াটাই ভাল। নয়নচাঁদ বলল এতো বড় সোনার তালা রেখে আমি কি করব? তার চেয়ে ভাল রাজামশাইকে দিলে উনি আমাকে পুরষ্কার দেবেন । নয়না বলল,যখন তুমি এই সোনার তালাটা নিয়ে রাজা মশাইকে দিতে যাবে,তখন রাজা মশাই তোমাকে বলবেন এর চাবিটা কোথায়? নয়নচাঁদ হেঁসে বলল দুর বোকা মেয়ে,উনি এরকম কেন বলবেনতখন নয়না বলল, এত বড় সোনার তালার চাবিটাও সোনার হবে এবং বড় হবে, উনি ভাববেন তুমি লোভী, চাবিটা সোনার বলে তুমি দিচ্ছনা। তোমাকে পুরষ্কার না দিয়ে চাবি গোপন করার জন্য তোমাকে দণ্ড দেবেন। নয়নচাঁদ নয়নার কথা শুনল না। ভাবল বোকা মেয়ে। কৃষক সোনার তালা নিয়ে রাজসভায় উপস্থিত হল ।

রাজামশাই সোনার তালা দেখলেন এবং তালা কোথায় পেল তা বিস্তারিত শুনে রাজা বললেন সব তো শুনলাম,তালাটা সত্যি সুন্দর,এই রকম তালা আমার কাছে নেই, কিন্তু এর চাবিটা কোথায়? নয়নচাঁদ হেঁসে বলল,রাজামশাই,আমি শুধু তালাটা পেয়েছি। তখন রাজসভায় উপস্থিত লোকেরা বলল, ব্যটা চোর, সোনার লোভে চাবিটা দিচ্ছেনা। তখন রাজা বললেন যাও গিয়ে চাবিটা নিয়ে এসো! রাজার কথা শুনে নয়নচাঁদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল ও বিলাপ করতে লাগল নয়না ঠিক বলেছিল, আমি ওর কথা শুনলাম না ! আমি ওর কথা শুনলাম না, বলে কাঁদতে লাগল । রাজা জিজ্ঞেস করল, নয়না কে,আর সে কি বলেছিল? নয়নচাঁদ কাঁদতে কাঁদতে বলল, নয়না আমার মেয়ে,ও বলেছিল,তুমি রাজা মশাইকে তালাটা দিতে যেও না,তুমি তালা দিতে গেলে,উনি তোমার কাছে চাবি চাইবেন। তুমি যদি চাবি দিতে না পার তাহলে তোমাকে লোভী,চোর বলবেন,তোমাকে পুরষ্কারের বদলে দণ্ড দেবেন । কেন যে ওর কথা শুনলাম না। একথাবলে কাঁদতে লাগল। তখন রাজা মশাই বুঝতে পারলেন নয়না বুদ্ধিমতী,তাই ওর বুদ্ধির পরীক্ষা নেওয়া উচিৎ । বললেন তুমি চাবি দিতে না পারলে তার পরিবর্তে তোমার মেয়েকে একটা কাজ করতে হবে,সে যদি ঐ কাজটি করে দেয় তাহলে তোমাকে দণ্ড দেওয়া হবে না। তুমি রাজ ভাণ্ডার থেকে এক সের চাল ও ডাল নিয়ে বাড়ী যাও,তোমার মেয়েকে বলবে ওগুলো দিয়ে আমার সমস্ত সৈনিকদের জন্য রান্না করে দিতে।

নয়নচাঁদ রাজার কথা মতো চাল ডাল নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল আর সেটা স্ত্রীর হাতে দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। এটা কি করে সম্ভব,এতটুকু চাল ডাল দিয়ে এত সব সৈনিকদের জন্য রান্না কি করে সম্ভব! নয়না বাবার মুখে সব কথা শুনে বাবাকে বলল,বাবা তুমি চিন্তা করোনা,দাড়াও দেখি কি করা যায়,রাজা তোমার সঙ্গে চালাকি করছেন,একথাবলে নয়না চাল ডাল বাছতে লাগল আর ভাবতে লাগল। ভাবতে ভাবতে ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো,তখন ও নয়নচাঁদকে নিজের কানের ছোট পেতলের দুল খুলে দিল আর বলল বাবা এই দুল দুটো নিয়ে রাজার কাছে যাও এবং বলবে ওনার কারিগর দিয়ে দুল দুটো দিয়ে হারি ও কড়াই বানিয়ে দিতে। নয়নচাঁদ বলল,এটা কি বলছিস,এটা কি সম্ভব,এইটুকু দুল দিয়ে হারি কড়াই কক্ষনো বানানো যায়? তখন নয়না  বাবাকে বলল তুমি রাজা মশাইকে বলবে আমাদের বাড়িতে এত বড় বড় হারি কড়াই নেই যাতে এত সৈনিকদের রান্না করা যেতে পারে। নয়নচাঁদ মেয়ের কথামতো দুল দুটো নিয়ে রাজার কাছে গেল এবং মেয়ের বলা কথাগুলো রাজামশাইকে বলল । রাজামশাই ওর কথা শুনে বুঝতে পারল,এতটুকু দুল দিয়ে কখনো হারি কড়াই বানানো সম্ভব নয়,তেমনি এক সের চাল ডাল দিয়ে এত সৈনিকের রান্না করাও সম্ভব নয়। রাজামশাই বুঝতে পারলেন নয়না সত্যি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। তখন উনি নয়নচাঁদ কে বলল - আগামী কাল তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসবে, তারপর আমি তোমাকে সোনার তালার পরিবর্তে পুরষ্কার দেব।

রাজার কথা মতো নয়নচাঁদ পরের দিন নয়না কে নিয়ে রাজসভায় উপস্থিত হল। তখন রাজা ঘোষণা করলেন আজ থেকে আমাদের রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে নয়না কে নিযুক্ত করা হল ।         

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ-এ। প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা কিষানগঞ্জেই। আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকা এবং ই-ম্যাগাজিন www.tatkhanik.com - অণুগল্প, ছোট গল্প এবং প্রবন্ধ লেখেন। ওনার প্রথম গ্রন্থ ‘নবরত্ন’(গল্পগুচ্ছ) । বই পড়া, ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।