Advt

Advt

samson-and-Delilah-from-old-testament-story-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-স্যামসন-ও-ডেলাইলা

ধারাবাহিক প্রতি  বুধ ও রবিবার

(ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে)

samson-and-Delilah-from-old-testament-story-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-স্যামসন-ও-ডেলাইলা

মোজেস জেসুয়া কেই উপযুক্ত মনে করেছে| জেসুয়া কর্মক্ষম ,সাহসী,বুদ্ধিমান,নির্ভীক।সবাই তাকে দলনেতা হিসেবে সাদরে গ্রহণ করল|জেসুয়া তার সমস্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়াল। একে একে আই , জেরিকো, ক্যাননের প্রতিটি  শহর দখল করল| গোটা ক্যানন তার হস্তগত হল ।  প্রভুর প্রতিশ্রুত জায়গায় গড়ে উঠল ঈশ্বরের জন্য পবিত্র ঘর| সেই ঘরে থাকবে পবিত্র সিন্দুক , যার ভেতরে প্রস্তর  খন্দে খোদাই করা আছে  দশটি উপদেশ , টেন কমান্ডমেনডস । এবারে ইজরায়েলী দের  শান্তির জীবন ।

জেসুয়ার পর রাজা হল গিডিয়ন|

গিডিয়ন এর  মৃত্যুর পরও বহু যুদ্ধ হল,বহু রাজা এলো একের পর এক। আবার  ইজরায়েলীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত,শত্রু বেষ্টিত হতে লাগলো তারা। ফিলিস্তিনিরা হল অন্যতম শত্রুদীর্ঘ সময় ইজরায়েলী রা ফিলিস্তিনের অত্যাচার সহ্য করার পর ঈশ্বর তাদের দিকে আবার চাইলেন।  তিনি বেছে নিলেন স্যামসন কেইজরায়েলী দের  উদ্ধার কর্তা হবে স্যামসনবলিষ্ঠ  ইহুদি যুবক স্যামসন  অসীম শক্তির অধিকারী ইচ্ছে করলে সে পাহাড়ও  সরাতে পারে,বট বৃক্ষ সমূলে  উপড়ে ফেলতে পারে| ঘূর্ণি ঝড়ের মতো শক্তি তার শরীরে| তার সামনে ফিলিস্তিনিরা তুচ্ছ মাত্র |ফিলিস্তিনিদের রাতের ঘুম কেড়ে নিলো   স্যামসন| সকল ইজরায়েলীদের  আগলে রেখেছে স্যামসন| ফিলিস্তিনিরা বড় দুশ্চিন্তায় পড়ল, ওদের আশংকা স্যামসনের  নেতৃত্বে ধীরে ধীরে  ইজরায়েলীরা  শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেবেফিলিস্তিনিরা তখন তাদের দাসে  পরিণত হবে| স্যামসন  কে সরাতে হবে বন্দী করতে হবে। কিন্তু উপায়? তার শক্তির সাথে কেউ যে পেড়ে ওঠে না!! তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করবে কে? কি ভাবে?কার সেই সাহস,সেই ক্ষমতা 

ফিলিস্তিনিরা যখন স্যামসনকে মারার চক্রান্ত করছে সেই সময় অপরূপ সুন্দরী,ডেলাইলার সৌন্দর্যে স্যামসন  আপ্লুত।  আপ্লুত  কেবল সৌন্দর্যেই নয়,স্যামসন যে ডেলাইলাকে ভালবাসে মন প্রাণ দিয়ে| হোক না ফিলিস্তিনিরা ওর শত্রু কিন্তু ডেলাইলা তার প্রিয়তমা,তার পানি গ্রহণ করতে অসুবিধা কোথায়! পবিত্র নিষ্পাপ সহজ সরল ডেলাইলা যে নিজেকে   স্যামসন  এর হাতেই  সঁপে  দিয়েছে। ফুলের মত অমন নরম স্নিগ্ধ ডেলাইলাকে কেবল ফিলিস্তানি বলে স্যামসন  ত্যাগ করতে পারবে না ,কোন মতেই  না।

স্যামসন ভেসে গেল প্রেমের জোয়ারে,কখনো নদীর পারে,ঝরনার ধারে নানা রঙের ফুলের বাগিচায় কখনো গৃহের চার দেওয়ালের মাঝে তাদের প্রেম ঘন মুহূর্ত কেটে যায়। ডেলাইলার বড় ভয় যে  বীর  শ্রেষ্ঠ স্যামসনকে সে স্বামী হিসেবে বরণ করেছে চিরকাল কি সেই শক্তি তার থাকবে! কখনো যদি শরীরের সব শক্তি হারিয়ে যায়,যদি দুর্বল হয়ে পড়ে স্যামসন !!   ভেবে পায় না   ডেলাইলা। ভালবাসার মানুষটি কে নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা  তার|এই অসীম শক্তির উৎস কি?দুশ্চিন্তায় কাতর   ডেলাইলার মনে কত কি সন্দেহ ঘুরপাক খায় |

অবসর সময়ে স্বামীর কাছে নিজের মনের এই প্রশ্ন ভয় সন্দেহ অকপটে প্রকাশ করে   ডেলাইলা। স্যামসন হাসিমুখে স্ত্রী কে কেবল ভরসা দেয় সাহস যোগায়,বলে,তার শক্তি কোনদিনও ফুরিয়ে যাবে না   কারণ এই শক্তির উৎস কারো জানা নেই তাই সে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ইজরায়েলীরাও  সম্পূর্ণ নিরাপদ  ।                              

ডেলাইলা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বামীর বুকে, তার চোখে অনুনয় যদি সে জানতে পারতো শক্তির উৎস তবে সে নিশ্চিন্ত হতে পারতো নইলে অহরহ এক ভয় এক আশঙ্কা তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে বিচলিত করছে,হয়তো সেই আতঙ্কর অন্ধকারে সে তলিয়ে যাবে কোনদিন|দুশ্চিন্তায়  ভাবনায় ধীরে ধীরে হয়তো তার রূপ গুন মিষ্টি কণ্ঠস্বর সব উধাও হবে| ডেলাইলা  প্রবল আগ্রহে জানতে চায় তার প্রিয়তমার শক্তির উৎস|স্যামসন যতই বোঝায় ততই স্ত্রী আরও অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে, তার কালো ভোমরার মতো দুই চোখে জল,থরথর করে কাঁপে ফুলের পাপড়ির মতো নরম   ঠোঁট,লাল টুকটুকে গালে টসটস ডালিমের রস ঝরে পড়ে দুই চোখ থেকে,পরম স্নেহে  ভালোবাসায় দুই হাতে চোখের জল মুছিয়ে দেয় স্যামসন। কি করবে ? বলে দেবে ? বললে দোষ কোথায় ? সে যে তার প্রেমিকা,তার সবচাইতে ভালোবাসার একজন। ভবিষ্যতে সেই তো হবে স্যামসন এর  অর্ধাঙ্গিনী।

শেষমেশ প্রকাশ করলো শক্তির রহস্য। একেবারে নিশ্চিন্ত  দুই চোখ এবার শান্ত ধীর। গভীর  ঘুমে আচ্ছন্ন  স্যামসন এর  মাথা নিজের কোলে নিয়ে বসে রইল অনেকক্ষণ।

এবার ধীরে ধীরে মুখে একটা  ক্রূর   হাসি ফুটে উঠলো  ডেলাইলার।  রাত যেই গভীর হল  শ্বাপদের  মতো নিঃশব্দে পৌঁছল ফিলিস্তিনি শিবিরে। বিষাক্ত দুই  চোখ হায়নার মতো জ্বলজ্বল করছে,সাপের মতো  হিসহিসানি তার মুখে। এইবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ডেলাইলা , এতদিনের প্রচেষ্টা সফল।

ফিলিস্তিনি সৈন্যদের খবর দিতেই তারা  স্যামসন  কে বন্দি করল। কিভাবে? স্যামসন এর পাহাড় সমান  শক্তি কোথায়? সে   এখন দুর্বল ভঙ্গুর সে এখন নগণ্য সাধারণ-এর থেকেও সাধারণ এক নাগরিক। তার শরীরের সমস্ত শক্তি  যে  শয়তানী, বিশ্বাসঘাতিনী  ডেলাইলা   নিংড়ে নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কিভাবে!! ফিলিস্তিনির সৈন্যদের চোখে প্রশ্ন সন্দেহ,এক সাধারণ ফুলের মত নরম সুন্দরী নারী সে কিনা স্যামসন কে দুর্বল করেছে! সমস্ত শক্তি নিংড়ে নিয়েছে! এও কি বিশ্বাসযোগ্য! এই নারী আবার তাদের কোন বিপদে ফেলবে না তো?

samson-and-Delilah-from-old-testament-story-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-স্যামসন-ও-ডেলাইলা

এতক্ষণে সত্যি  উন্মোচিত হল। প্রেমের অভিনয়ে সফল সেই সুন্দরী নারী  নিজের বাহুডোরে বেঁধে দুই চোখের সম্মোহনী মায়াজাল ছড়িয়ে বিশ্বাসঘাতিনী জেনে নিয়েছে স্যামসনের  শক্তির উৎস তার মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল। চুলের গোঁড়ায় সেই অদমনীয় অজেয় শক্তি লুকিয়ে। মায়াবিনী ঘুমন্ত স্যামসনের সমস্ত চুল আলগোছে কেটে দিয়েছে,স্যামসন জানতেও পারেনি। এখন সে নির্জীব  অতি সাধারণ এক ব্যক্তি সহজেই তাকে শেকল দিয়ে বাধা যাবে  ।

আর দেরি নয়, ডেলাইলা  পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল ফিলিস্তিনি সৈন্যদের। বেদনায়  কাতর   স্যামসন   শৃঙ্খলাবদ্ধ হল , দুই চোখ উপড়ে ফেলা হল। সে যাকে সবচাইতে ভালবেসেছিল ভরসা করেছিল যার চিন্তা ক্লিষ্ট কাতর দুই চোখ  স্যামসনের  এর বুকে অস্থিরতা ঢেউ তুলেছিল সেই    সর্বনাশী কেবলমাত্র টাকার লোভে এমন আচরণ!! ছিঃ ছিঃ।

ইজরায়েলীদের একমাত্র ভরসা স্যামসন বন্দী ফিলিস্তিনিদের কারাগারে। বড় অসহায়  ইজরায়েলীরা । যে স্যামসনকে তারা ভরসা করেছিল সে আজ অন্ধ,কঠিন  শেকলে  তার দুই হাত দুই পা বাঁধা,সে আজ সকলের উপহাসের পাত্র।  তাকে লাথি মেরে  চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে  ফিলিস্তিনিরা।

ফিলিস্তিনি শিবিরে আনন্দ  উৎসব। তারা জয়ী তারা এবার উৎসব করবে। সবাই বন্দি স্যামসন  কে দেখতে চায় ,বীরশ্রেষ্ঠ  স্যামসনের  ন্যুব্জ অবস্থা সমস্ত ফিলিস্তিনিরা দেখতে চায়। আয়োজন শুরু হল, কাতারে কাতারে লোক সবাই সমবেত স্টেডিয়াম চত্বরে।এইবারে টেনে  হিঁচড়ে   অন্ধ   স্যামসন  কে পশুর মত  টেনে আনার পালা। আবাল বৃদ্ধ বণিতা ওকে দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে, কেউ পাথর ছুড়ে মারবে একদা ফিলিস্তিনিদের ত্রাস স্যামসনের  দিকে, স্টেডিয়াম লোকে লোকারণ্য।

স্যামসন  কে নিয়ে আসা হল। বড় ক্লান্ত কণ্ঠে   স্যামসন  কেবল এতোটুকু সহায়তা চাইল  তাকে যেন বড় মোটা থামের কাছে দাঁড় করানো হয়, সেই থামে সে কিছুটা হেলান দিতে পারবে। তেমনটাই করা হল , যাক কিছুটা দয়া দেখানো হল।স্যামসন  শৃঙ্খলিত পায়ে এসে দাঁড়ালো দুই থামের মাঝে ,দুই হাত তার ঠাওর করে নিলো দুই হাতের পাশে দুটি বিশাল থাম। চারিদিকে তখন উল্লাস খাদ্য খাওয়া সুরাপান গান নাচ হুল্লোড়।

samson-and-Delilah-from-old-testament-story-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-স্যামসন-ও-ডেলাইলা

স্যামসন    মস্ত থাম দুই হাতে   সমস্ত  শক্তি  দিয়ে আঁকড়ে ধরল। সে  জানে, প্রথম   সারিতে বসে ফিলিস্তিনি শাসক  বৃন্দ,মন্ত্রী  ,সৈন্য এবং অতিথিরা । পেছনে সারিবদ্ধ সাধারণ ফিলিস্তিনিরা বসে আছে।

স্যামসন উচ্চস্বরে ঈশ্বরকে স্মরণ করলো, “ হে সর্বশক্তিমান শেষবারের মতো আর একবার আমার সকল শক্তি ফিরিয়ে দাও। ফিলিস্তিনিদের সাথে আমারও মৃত্যু হোক।’’ স্যামসন জানে তার চুল ধীরে ধীরে অনেকটাই গজিয়েছে সেই সাথে শক্তিও অনেকটা ফিরে এসেছে। ফিলিস্তিনিদের মারার এমন সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করবে না সে। প্রবল শক্তিতে দুই হাতে বিশাল থাম দুটো টেনে মাটিতে ফেলল,স্টেডিয়ামের ছাদ ভেঙ্গে পড়ল। অতর্কিতে ছাদের তলায় সহসা   চাপা পড়লো ফিলিস্তিনিরা। দেহ গুড়িয়ে  গেল। সাধারণ  মানুষ , শাসক সৈন্য সকলেই মরল,গুড়িয়ে  গেল স্যমসন নিজেও। ফিলিস্তিনিদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হল  ইজরায়েলীরা,আবার তারা উঠে দাঁড়ালো নতুন জীবন শুরু হল আনন্দ নিরাপত্তা নিয়ে।

ক্রমশ ………

পরের অংশ পড়ুন আগামী রবিবার ।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম পশ্চিমবঙ্গ-র কুচবিহার শহরে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম কবিতার বই ' সুখের ঠিকানা', গল্প সংকলন 'চিরন্তন'। ইংরেজি কবিতার বই  'Bouuet of Poems'  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন। বেশকিছু কিশোর সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। 

স্টেটস্‌ম্যান, সুখবর, সকালবেলা ইত্যাদি খবরের কাগজে গল্প প্রকাশিত হয়েছে।  দেশ,  সানন্দা, প্রসাদ, সারথি পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। 'Times of India'-তে বেশ কয়েকবার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবনের শুরু।বর্তমানে কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখতেই বেশি ভাল বাসেন ।  বহু e magazine এ লেখেন ।