Advt

Advt

moses-old-testament-story-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-মোজেস-ওল্ড-টেস্টামেন্টের-গল্প-নন্দিতা-সাহা

 ধারাবাহিক - প্রতি বুধবার ও রবিবার

(ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে)

moses-old-testament-story-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-মোজেস-ওল্ড-টেস্টামেন্টের-গল্প-নন্দিতা-সাহা

বহু কাল ইজিপ্টে আনন্দে বসবাস করল ইজরায়েলীরা। একসময় অবস্থার অবনতি হল।  নতুন ফারাও ইজরায়েলীদের  তাড়াতে চায় ।  ফারাওর নির্দেশে ইজরায়েলীরা ক্রীতদাসে পরিণত হলতাদের মাথায় কঠিন পরিশ্রমের বোঝা,তাদের পায়ে বেড়িহাড় ভাঙ্গা খাটুনিফারাও  অভিসন্ধি করল, ইজরায়েলীরা  কাজে এত ব্যস্ত থাকবে যে নিজেদের দল তৈরি করতে সময়ই পাবে নাকিন্তু তাতেও শান্তি নেই, ঘুম নেই ফারাও এর চোখেফারাও বিপদের গন্ধ পাচ্ছে,ইজরায়েলীদের সংখ্যা বাড়ছেনির্দয় ফারাও ঘোষণা করলেন,সকল সদ্যজাত ইজরায়েলীদের পুত্র সন্তান জলে ডুবিয়ে মারা হবেতবে কন্যা সন্তানরা বেঁচে  থাকবেতারা হবে পুরুষের  ভোগ্য এবং দাসীর কাজ করবে

কান্নার  রোল উঠলো ইজরায়েলীদের ঘরে ঘরেমহা সঙ্কটময় তাদের জীবনমায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে  পুত্র সন্তানদের ইজিপ্টের সৈন্যরাউঃ কি নৃশংস ভাবে  জলে ডুবিয়ে মারছে তাজা প্রাণগুলোকে। ঘরে ঘরে আতঙ্ক আর্তনাদ হাহাকার!!  ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে মা জেকোবেড  কিন্তু মহা-দুঃসাহসের কাজ করলেন।   তার সদ্যজাত পুত্রকে ইজিপ্টের সৈন্যদের হাতে তুলে না দিয়ে আতুর ঘরের কোণে লুকিয়ে রাখলো।  শিশু কাঁদলে মা তার বুকে চেপে ধরে রাখতেন যাতে শব্দ বাইরে না যায়। কিন্তু কতদিন? ছোট শিশুর কান্না প্রবল হল,কান্নার শব্দ ঘরের বাইরে পর্যন্ত এখন চলে আসে,একবার কারো কানে গেলে —-----------!!!    ভাবতে পারেনা   জেকোবেড। প্রাণাধিক প্রিয় তার  পুত্র।  মা দিশেহারা কি করে বাঁচাবেন পুত্রকে?

একদিন  রাতের অন্ধকারে নীল নদের ধারে গিয়ে নল খাগড়া তুলে আনল। শুকিয়ে ছোট একটি ঝুড়ি বানিয়ে তাতে নিজের ঘুমন্ত পুত্রকে শুয়ে দিল ছেলের কপালে চুম্বন এঁকে দিল,মেয়ে মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে পা বাড়ালো নীল নদীর  পথে। নীলনদের ধারে একটি ঝোপের আড়ালে ঝুড়িটি রেখে মা ছোট্ট মেয়ের হাত ধরে দূরে দাড়িয়ে রইল,মন তার অস্থির কি হয় কি হয়!   মরিয়মের চোখে জল ভাইকে এবার ভাসিয়ে দেবে,ছোট ভাইয়ের সলিল সমাধি হবে।     জেকোবেড  এর   মাথায়  কিন্তু অন্য বুদ্ধি!  পারবে কি ছেলেকে বাঁচাতে? সে যেমনটি ভেবে  রেখেছে তেমনটি কি হবে?

জেকোবেড  জানে ঠিক এই জায়গা টিতে রাজকন্যা আসে দাসী পরিবৃতা  হয়ে স্নান করতেরাজকন্যা তার বাবা ফারাও এর মত নির্দয় নয়  তার মন বড় নরম,মায়া মমতায় ভরা

মা মেয়ে অপেক্ষায়ভোর হতেই রাজকন্যা রোজকারের মত এলো স্নান করতে ,সাথে দাসীরা  সুন্দর ঝুড়িটি চোখে পড়তেই নির্দেশ দিল,ঝুড়িটি নিয়ে এস,দেখি কি আছেঝুড়ির ঢাকনা সরাতেই সুন্দর দেবদূতের মত ফুটফুটে শিশুরাজকন্যার দুই চোখ আনন্দে উদ্ভাসিত হতে হতেই আবার চিন্তার কালো ছায়া ! ইস ! ইজরায়েলী শিশুপ্রাসাদে নিয়ে গেলেই একে হত্যা করা হবেরাজকন্যার বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাসনাহ ! এত সুন্দর, কোমল শিশুটিকে বাঁচাতে হবে, যে কোনও ভাবেই হোক

রাজকন্যার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে ছুটে এলো মা ও মেয়েবুদ্ধিমতী জেকোবেড নিজেকে শিশুটির মা বলে পরিচয় দিল না, রাজকন্যার পায়ে ধরে বলল শিশুটি  তার গর্ভজাত না। জেকোবেডের কেবল একটিই মিনতি ,

_  পরিচয়হীন  শিশুটিকে আমিই রক্ষণাবেক্ষণ করবদয়া  করুন ।  শিশুর মা এলে নিশ্চয়ই তাকে  ফিরিয়ে দেব এই শিশু 

রাজকন্যা জেকোবেড এবং মিরিয়ম এর দিকে তাকাল, কি জানি কি মনে হল! মুখে হাসি ফুটে  উঠল, বললো -

_ ঠিক আছে, বড় হলে একে আমার প্রাসাদে নিয়ে এসোআমি তোমাদের অর্থ দেবএখন শহরের বাইরে চলে যাও

_ আপনি যেমন বলবেন । আমি একে নিয়ে  এখুনি  চলে যাচ্ছি ।

রাজকন্যার   প্রতি  কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠল জেকোবেডের

জেকোবেড ধীরে ধীরে  ছেলেকে বড় করে তুললতার পূর্বপুরুষ আব্রাহাম,আইজ্যাক, জেকবের গল্প শোনায় ছেলেকে, শোনায় ইজরায়েলীদের দুঃখের,সুখের গল্পদেখতে দেখতে ছোট্ট শিশু কৈশোরে পা রাখলমা জেকোবেড ফারাও কন্যার কথামত ছেলেকে নিয়ে এলো প্রাসাদেফারাও কন্যা অমন ছোট্ট শিশুকে কিশোর  বয়সে দেখে  তো  অবাক, যারপরনাই খুশি হল। নিজের সন্তানের মত তাকে বুকে টেনে নিলেন,নাম দিলেন, মোজেস (মুসা ) ।    ফারাও এর বিশাল বিলাস বহুল প্রাসাদে মোজেসের  দিন শুরু হল রাজকীয় ভাবে  আরও রাজপুত্রদের মত   তার আদর তার আপ্যায়নকিন্তু মোজেস -এর চেতনায় ইজরায়েলীরা সব সময় উপস্থিতযত দিন যাচ্ছে ধীরে ধীরে মোজেস আরও অ সহিষ্ণু  হয়ে উঠছেচোখের সামনে ইজরায়েলী দের ওপর ইজিপ্ট সৈন্যদের অত্যাচার মোজেস-এর সহ্যের সীমা  ছাড়িয়ে  যাচ্ছেলুকিয়ে লুকিয়ে সে কাঁদে ভাবে ইজরায়েল ভাইদের এই অত্যাচার থেকে বাঁচাতে হবেকিন্তু কি ভাবে !  সে কি পারবে !  মোজেস কেবল এই কথাই ভাবতে থাকে।

একদিন পথের ধারে এক ইজরায়েল দাসের ওপর সপাং সপাং চাবুকের বাড়ি, পিঠ জুড়ে রক্তের দাগ মোজেস কে রাগে অন্ধ করে দিলদিশাহারা হয়ে মোজেস ইজিপ্ট সৈন্যকে খুন করে মাটিতে  পুঁতে দিয়ে চুপ চাপ প্রাসাদে ফিরলমনে তার ভয়, কেউ দেখেনি তো ! যদি ফারাও জানতে পারে তবে যে বড় বিপদ ! তার সাথে আরও কত ইজরায়েল ভাইদের প্রাণ যাবে, মুণ্ডচ্ছেদ হবে ! ফারাও হয়ত একটি ইজরায়েলীকেও জ্যান্ত রাখবে না

যেমনটা ভয় পেয়েছিল তেমনটাই হলফারাও এর কানে খবর পৌঁছল, বিপদের আভাস পেয়ে মোজেস রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে গেলঅনেক দূরে ফারাও-এর নাগালের বাইরে যেতে হবে, নইলে যে মৃত্যু কিম্বা পায়ে দাসত্বের বেড়ি সারা জীবনের জন্য  দীর্ঘ পথ পার হয়ে  মোজেস এলো মিডিয়ন শহরে  মধ্যাহ্ন    মাথার ওপর গনগনে সূর্য     মোজেস ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিল ছোট্ট এক কুয়োর ধারেশুয়েই ঘুমে কাদা ।

কুয়োর ধারে মোজেস কে দেখতে পেল জিপোরাহকেমন সুঠাম দেহের এক সুপুরুষমুখ খানা বড় ক্লান্ত !  জিপোরাহর   পায়ের  শব্দে ঘুম   ভেঙ্গে গেল     মোজেস   দেখল  কন্যাটি বড় কষ্ট করে জল তুলছে ।    মোজেস  নিজের হাত বাড়িয়ে দিল , জিপোরাহকে কুয়ো থেকে জল তুলতে সাহায্য করল  জিপোরাহর   মন ভরে উঠল । কেবল দেখতে সুন্দর নয় , ভদ্রলোকটির মন ও সুন্দর , সহজ , সরল ।  কুটিরে ফিরে বাবা জেফ্রকে সব জানালএক মুহূর্ত সময়   নষ্ট  না করে জেফ্র  গিয়ে ভিনদেশি মোজেসকে সাদরে আপ্যায়ন করলজেফ্রর   পরিবারে  স্বছন্দে  দিন কাটতে লাগলো মোজেসের।     জিপো রাহ  , মোজেস  একে অপরকে ভালবাসে ।    কিছুদিনের মধ্যেই     জিপোরাহ  এবং মোজেস পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হল ,  নতুন শিশুর আগমনে ঘর ভরে উঠলো     

আড়াল থেকে ঈশ্বর সব দেখছেন,  তিনি যে মোজেসের পূর্বপুরুষ আব্রাহাম আইজ্যাক জেকবকে কথা দিয়েছেন ইজরায়েলীদের রক্ষা করবেন,তারা যে ঈশ্বরের বড় প্রিয়।    অত্যাচারের  হাত থেকে বাঁচাতে হবে, কিন্তু কিভাবে? ঈশ্বর কাকে বেছে নেবেন?  প্রভু  কাকে সেই গুরু দায়িত্ব দেবেন ? কে যোগ্য ?

                                                          

অগ্নি-বলয় এবং মোজেস

 

মোজেস  স্ত্রী পুত্র নিয়ে  জেফ্র-  সাথে থাকে।   বৃদ্ধ  জেফ্রর  সকল কাজ সে-ই দেখাশোনা করে। কখনো মরুভূমির শুকনো মাটিতে ফসল ফলায়, কুটির মেরামতি করে, আবার ভেড়ার দল নিয়ে দূরে দূরে ঘুরে বেড়ায় যদি কোথাও জলের সন্ধান পাওয়া যায় কিংবা গাছ গাছালি কিছু সবুজ দেখা যায়  । প্রতিদিনের মতো সেই দিনও ভেড়ার পাল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছল মাউন্ট হোরেবে।  অপূর্ব সুন্দর দিগন্ত । সৌন্দর্য  উপভোগ করতে করতে হঠাৎ এক আশ্চর্য জিনিস চোখে পড়ল,পাহাড়ের ওপর এক টুকরো অগ্নিবলয় গাছে দাও দাও করে জ্বলছে      অগ্নিশিখা,  অথচ একটিও  পাতা কিংবা ডাল পুড়ে ছাই হচ্ছে না।

মোজেস ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল ,এমনটা তো কখনো চোখে পড়েনি। কি আশ্চর্য আরও কিছুটা এগোতেই বজ্র-নিনাদের মত বাতাসে কার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো !

মোজেস,আর বেশি কাছে এসো না।  তোমার  জুতো  খুলে রাখ কারণ এটি পবিত্র স্থান’’। 

এক ঝটকায় পিছিয়ে গেল মোজেস, জনমানব শূন্য এলাকায় সে একেবারে একা ।  পেছন থেকে গুরু গম্ভীর কণ্ঠস্বর ,

আমি ঈশ্বর । আমি আব্রাহামকে কথা দিয়েছি যে  ইজরায়েলীদের  মুক্ত করবো।  সেই কাজে   তুমি হবে আমার সহায়ক,আমার নির্দেশ মতো তুমি চলবে। ইজরায়েলীদের মিশরীয় অত্যাচার থেকে তুমি নিয়ে যাবে আমার নির্দেশ মতো জায়গা  ক্যানন-  । ’’’

ভীত সন্ত্রস্ত মোজেস  মুহূর্তে  তার চটি জোড়া  খুলে ফেলল ।   থরথর করে কাঁপছে  তার  শরীর  হতভম্ব মোজেস ।  কি করবে  সে ? তবু ভীত কণ্ঠস্বরে বলল,   

_  কিন্তু তারা আমাকে বিশ্বাস করবে কেন? আমি সঠিক মানুষ নই।  আমি কেবল ফসল ফলাই, ভেড়ার দল নিয়ে ঘুরে বেড়াই।  আমি ভীতু আমি দুর্বল, এই কাজ করার যোগ্যতা আমার নেই, প্রভু ।

কিন্তু ঈশ্বর যে তাকেই বেছেছেন অন্য কাউকে যোগ্য বলে মনেই  করেন   না। এই কারণেই যে মোজেসের জন্ম, এই কারণেই   যে     ঈশ্বর    মোজেসকে  সকল বিপদ থেকে বাঁচিয়েছেন    ঈশ্বর  মোজেস কে   সাহস যোগালেন ।   একটি দণ্ড উপহার দিলেন , বললেন,

এই দণ্ড নিয়ে তুমি এগিয়ে যাও , তাদের সামনে তোমার ক্ষমতা দেখাও । তাদের নিরাপদে   ক্যানন    নিয়ে এসো ।    সেইটাই হবে ইজরায়েলীদের  দেশ,আব্রাহাম জেকব- এর দেশ।’’

মোজেস  আবারো কম্পিত কণ্ঠে   বলল,

-- কিন্তু আমার যে কোন ক্ষমতাই নেই প্রভু!  তারা আমাকে কি দেখে বিশ্বাস করবে কেন বিশ্বাস করবে? কেন আমার কথায় তারা মিশর ছেড়ে চলে আসবে  শুধু মাত্র  আমার  হাতে  একটি দণ্ড দেখে ।

 

 ঈশ্বর বললেন,

এই দণ্ড হবে সকল ক্ষমতার উৎস । এই দণ্ড স্পর্শ করে যা নির্দেশ দেবে তাই হবে,এমন কি এই দণ্ড স্পর্শ করলে জল লাল রক্তে পরিণত হবে। আমি স সময় তোমার পাশে থাকবো। তোমার এই জাদু দণ্ডেই তারা তোমাকে বিশ্বাস  করবে।’’

_  প্রভু ,তারা সবাই আপনার নাম জিজ্ঞেস করবে, আমি কি বলব ?

 তাদের বলবে,আমি সেই এক এবং অদ্বিতিয়ম,সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর।  ’’

ঘরে ফিরে   মুসা  অকপটে সব জানালো  জেফ্রকে ।  এবার  তাকে যেতে হবে  মিশরে ।  ঈশ্বরের আদেশ ইসরায়েলীদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে ।   মোজেস অনুমতি চাইলো,“দয়া করে আমায় যেতে দিন “   

ক্রমশ ………

পরের অংশ পড়ুন আগামী রবিবার ।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম পশ্চিমবঙ্গ-র কুচবিহার শহরে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম কবিতার বই ' সুখের ঠিকানা', গল্প সংকলন 'চিরন্তন'। ইংরেজি কবিতার বই  'Bouuet of Poems'  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন। বেশকিছু কিশোর সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। 

স্টেটস্‌ম্যান, সুখবর, সকালবেলা ইত্যাদি খবরের কাগজে গল্প প্রকাশিত হয়েছে।  দেশ,  সানন্দা, প্রসাদ, সারথি পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। 'Times of India'-তে বেশ কয়েকবার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবনের শুরু।বর্তমানে কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখতেই বেশি ভাল বাসেন ।  বহু e magazine এ লেখেন ।