দূর দক্ষিণের এক গ্রাম—জুঝারপুর প্রতি বছর কার্তিক মাসে
এক অসাধারণ কালী পূজার জন্য প্রসিদ্ধ। গ্রামের মানুষদের বিশ্বাস,এই পূজা করলে মা
কালী তাঁদের রক্ষা করেন এবং গ্রামের শস্য,মাটি ও মানুষের
জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনে।
গ্রামের বিশেষ আকর্ষণ হল,এখানে ১৪ হাত
লম্বা কালী প্রতিমা গড়া হয়। অমাবস্যার রাতেই শুরু হয় উৎসবের রোমাঞ্চ। ডুমরাডাঙ্গি
গ্রামে রাত জেগে মা কালীকে ভক্তরা গান
শুনায় ও পূজা দেন। গ্রামের কিশোর-যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলেই মেলায় অংশ নেন,আর আশেপাশের গ্রামের মানুষও ভক্তি প্রকাশ করতে আসে।
উৎসবের ভোর ও আচার-অনুষ্ঠান রাতের পর্ব শেষে,পরের ভোরে মা
কালীকে বাঁশের ওপর তুলে গ্রামবাসীরা জুঝারপুর মন্দিরে আনা হয়। গ্রামের প্রতিটি
মানুষ উত্সাহের সঙ্গে এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়। হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়,
ধানক্ষেত,বিল ও মাঠের মধ্যে দিয়ে জুঝারপুর গ্রামের মায়ের মন্দির পর্যন্ত যাওয়ার পথে মণ্ডপ সাজানো হয়। ঢিবির ওপর
পুরাতন প্রকাণ্ড বট ও পাকুড় গাছের ছায়া,যা মায়ের জন্য পবিত্র
আশ্রয় হিসাবে বিবেচিত।
সকালের আলো উঠার আগে,যখন সূর্য
কুয়াশার মধ্যে চুপচাপ উদয় হয়,তখনই মা কালী-র আবির্ভাব ঘটে।
গ্রামের মানুষ মনে মনে প্রার্থনা করে,“মা, আমাদের রক্ষা করো। আমাদের জীবন আনন্দময় করো।”
সকালের
পূজা ও মেলা
মায়ের আগমনের পর সকালেই শুরু হয় পূজা। শত শত মানুষ মিলে
মন্ত্রপাঠ ও প্রার্থনা করে। দিনভর চলে মেলা—যেখানে জিলাপি,বাদাম,মোগলাই,ঘুগনি ইত্যাদি নানা ধরণের খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হয় সেখানে। শিশুদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের
খেলনা ও হরেক মাল,আর বয়স্কদের জন্য আয়োজন থাকে লটারি ও ভাগ্য
পরীক্ষার।
মেলাটি শুধু ভক্তি ও আনন্দের জায়গা নয়,এটি গ্রামের
মানুষের মিলন মেলা। কেউ বন্ধু,কেউ প্রতিবেশীর সঙ্গে আনন্দ
ভাগ করে নেয়, কেউ আবার নতুন পরিচয় গড়ে তোলে।
---
সন্ধ্যা
ও সমাপ্তি
সন্ধ্যা হতে হতে উৎসবের সমাপ্তি হয়। রাত ৯টার দিকে
পুকুরে মা কালী-র বিসর্জন দেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে
দেখে কিভাবে মা কালী শান্তভাবে পুকুরের জলে মিশে যান।
বিসর্জনের পর,সবাই ঘরে ফিরে, নিজের
জীবনে মা কালী-র আশীর্বাদ অনুভব করে।
একদিনের মেলা হলেও,গ্রামের মানুষ মনে রাখে সেই আনন্দ,ভক্তি ও ঐক্য। ছোট থেকে বড় সবাই মিলেমিশে মা কালী-র প্রতি ভালোবাসা ও
বিশ্বাস প্রকাশ করে।
শেষ
কথা
জুঝারপুর গ্রামের কালী পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়,এটি গ্রামের
মানুষের আস্থা, ভক্তি ও একতার প্রতীক। প্রতি বছরের কার্তিক
মাসে,এই পূজা আবারও জীবন্ত হয়ে ওঠে—আলো,গান,মেলা,ভক্তি ও আনন্দে।
লেখক পরিচিতি –
সঞ্জয় সরকার থাকেন রায়গঞ্জ-এ। ছোট থেকেই লেখালেখির অভ্যাস, তিনি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন ও আরো উচ্চ শিক্ষার মধ্যে আছেন। সাহিত্যকে ভালবাসেন তাই সময় পেলেই লিখতে বসে যান।
.jpg)