Advt

Advt

jacob-from-old-testament-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-জেকব-গল্প-ওল্ড-টেস্টামেন্ট-থেকে-নন্দিতা-সাহা

ধারাবাহিক প্রতি রবিবার

(ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে)

jacob-from-old-testament-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-জেকব-গল্প-ওল্ড-টেস্টামেন্ট-থেকে-নন্দিতা-সাহা

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রেবেকার কোল আলো করে এলো জেকব- ইসাউ, যমজ দুই ছেলে। জেকব - ইসাউ একেবারে হুবহু এক  দেখতে। কিন্তু দেখতে একরকম হলে কি হবে স্বভাবে তাদের একেবারেই মিল নেই । যমজ হলেও ইসাউ জ্যেষ্ঠ পুত্র । সে বড় বন্য,খামখেয়ালি, ঘরে তাঁর মন  টেকে না । যখন তখন সে শিকারে যায়,খেলতে যায়,হই হুল্লোড়ে মত্ত। জেকব   কিন্তু একেবারে অন্য ধাতুতে গড়া । সে শান্ত  ধীর স্থির  ঘরেই সে স্বছন্দ বোধ করে,মায়ের হাতে হাতে কাজ করে,রান্না করে,কুয়ো থেকে জল তুলে আনে। সে মায়ের বড় বাধ্য। জেকব মায়ের প্রিয়। কিন্তু আইজ্যাকের প্রিয় তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে ইসাউ।

চঞ্চল ইসাউ যখন তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সেদিন ক্লান্ত দেহে ঘরে ঢুকেই ছোট ভাইকে বলল,বড্ড খিধে পেয়েছে, কিছু খাবার দাও। ভাই জেকব দাদার মুখের দিকে চাইল।  চোখ মুখ  ক্ষুধায় কাতর! জেকব সুযোগটা ছাড়বে না,এটি সুবর্ণ সুযোগ।  নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ সন্তান পিতার সম্পত্তির অধিকারী হয়। ইসাউ তাঁর পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী,এটি তার জন্মগত অধিকার। জেকব কথাচ্ছলে বলে বসল,খাবার দেব,যদি তুমি তোমার উত্তরাধিকার অধিকার আমাকে দাও। ইসাউর তখন ক্ষিদেয় দিশেহারা অবস্থা। জেকবকে ছেলে মানুষ ভেবে বলল, ঠিক আছে,তাই সই,এবার  আগে  তোমার হাতে  তৈরি  সুস্বাদু খাবার  তো  দাও ।

জেকব ছুটে এলো মায়ের কাছে সুসংবাদটা দিতে । রেবেকার দুই চোখে আনন্দ । যমজ হলেও রেবেকা যে জেকবকেই বেশি ভাল বাসে!  হবেই বা না কেন,জেকব মায়ের পাশে পাশে থাকে, তাকে সাহায্য করে , মায়ের অনুগত । কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট না , নিশ্চিন্ত না রেবেকা ।  রেবেকা  জানে মৃত্যুর আগে আইজ্যাক তাঁর প্রিয় ইসাউ কে  মহামূল্যবান দুটি বর  দেবে । কিন্তু কি সেই আশীর্বাদী বর!   নিশ্চয়ই  ইসাউর তাতে মঙ্গল হবে,শক্তিশালী হবে সে,হবে ধনী।  তবে জেকব!! জেকবের কি হবে !! সে কি দীনদরিদ্র হবে !! চিন্তায়  দিন কাটে রেবেকার ।

আইজ্যাকের এখন শরীর জরা জীর্ণ ।  শেষ  সময় আসন্ন । সে কেবল শুয়েই থাকে । দুর্বল শরীর। আইজ্যাক সেদিন প্রিয় ইসাউ কে কাছে  ডেকে  নিলো, বলল,

আমার মৃত্যু আসন্ন । তুমি আমার জন্য কচি হরিণের মাংস রেঁধে নিয়ে আসো,বড্ড খেতে ইচ্ছে করছে । সেটি  খেয়ে   তৃপ্ত  হয়ে  আমি তোমাকে দুটি বর  দেব । তুমি যাও ইসাউ, জংগল থেকে   একটি  কচি হরিণ  নিয়ে এস ।

আড়াল থেকে রেবেকার কানে পৌঁছুল কথাগুলো।   আর দেরি নয় , রেবেকা চটজলদি একটি ছক কষে ফেলল । ছুটে গিয়ে জেকব কে বলল,

_ শিগগির আমাদের গোয়াল ঘর থেকে একটি ছোট্ট শাবক নিয়ে এস । আমি রান্না করে দিচ্ছি, তুমি বাবাকে নিয়ে দাও । সে তোমাকে বর দান করবে , সে দুটি   অতি  মূল্যবান , ঈশ্বর বাক্য সম  শক্তি শালী।

জেকব মহা চিন্তায় পড়ল।    কি করে সম্ভব ! সে পিতার সাথে ছলনা করবে ! তাকে ঠকাবে !!  এ যে অন্যায় !!  বাবা যে অভিশাপ দেবে !! তখন !!  ছেলের কপালে চিন্তার ছায়া দেখে রেবেকা বলল ,

_ সেই অভিশাপ আমি মাথা পেতে নেব । তোমাকে যা বললাম তুমি তাই কর জেকব,এতে তোমার মঙ্গল হবে ।

তবু জেকবের মনে দ্বিধা ।  তাকে স্পর্শ করলেই তো বুঝে যাবে বাবা   । তাঁর  শরীরের   ত্বক নরম,মোলায়েম । ইসাউর ত্বক খরখরে,রোমশ ।

কিন্তু রেবেকা কোন কথা শুনতে রাজি নয় । সে  চায়   তাঁর প্রিয় জেকব সেই মহামূল্যবান বর দুটির অধিকারী হোক । আর সময় নষ্ট না করে রেবেকা মাংস  রান্না করে জেকবের হাতে দিল , জেকব কে পরিয়ে দিল ইসাউর পোশাক  ।

জেকব সুস্বাদু মাংস নিয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়াল  ।  চমকে উঠল আইজ্যাক,এত শীঘ্র !! সত্যিই কি ইসাউ ? কাছে টেনে নিলো পুত্রকে , তাঁর পোশাকের ঘ্রাণ নিলো ।  সত্যি ই প্রিয় ইসাউর শরীরের ঘ্রাণ । কোন সন্দেহ রইল না  আইজ্যাকের মনে । 

কিন্তু জেকবের মনে শান্তি নেই । সে যে চরম মিথ্যাচার করছে নিজের বাবার সাথে । এ  যে অন্যায় !  জেকবের মুখে কথা নেই , কি চাইবে সে  তবু  জেকব   চুপ করেই রইল , মায়ের  কথাই বা অমান্য করে কি করে ? মা যে তাকে বড্ড ভালবাসে , সব সময় জেকবের  মঙ্গল চিন্তায়  অস্থির   ।  তৃপ্তির সাথে সুস্বাদু মাংস খেয়ে আইজ্যাক পরম স্নেহে জেকবের মাথায় হাত রাখল ।  বয়সের  ভারে তাঁর হাতের চামড়া  কুঁচকে  গেছে হাত থর থর    কাঁপে  । ধীরে ধীরে কম্পিত গলায় বলল ,

_ তুমি হবে তোমার জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ । সবাই তোমার অনুগত হবে , চারিদিকে হবে তোমার জয়-জয়কার । যারা   তোমায় ভালবাসবে তারা হবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য ।   যারা  তোমার   বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদের ওপর নেমে আসবে ঈশ্বরের অভিশাপ ।  আমার এই কথার এতটুকু  নড়চড় হবে না ।

জেকব   চলে যেতেই ইসাউ এসে ঢুকল বাবার ঘরে।    ইসাউর কণ্ঠস্বরে চমকে উঠল আইজ্যাক, সে কি এইমাত্র তুমি খাবার নিয়ে এলে , আমি তোমাকে বর দান করলাম !! সে তবে কে ? জেকবের চালাকি !! আইজ্যাকের বুকে কান্না উথলে উঠল । ইসাউর দুই চোখে জল, ইসাউ বাবার দুই পা জড়িয়ে ধরল ,

_ কিছু বর আমাকে ও  দাও , পিতা আমার জন্য কি কিছুই বাকি নেই !!

_ আর যে কিছুই নেই তোমাকে দেবার   । সব তো দিয়ে দিলাম ।

এইবার ইসাউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । আইজ্যাক ধীরে ধীরে ক্ষীণ, ভারাক্রান্ত মনে বলল, তুমি তোমার ভাইয়ের অনুগত হবে , তাকে অনুসরণ করবে , সাহায্য করবে ।   পরে   তুমি নিজেকে মুক্ত করে স্বাধীন জীবন কাটাবে ।

ইসাউ রাগে   কাঁপতে কাঁপতে  ছুটে বেরল ঘর থেকে । প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে   ।  জেকব তাকে এবং বাবা কে ঠকিয়েছে । জেকব কে হত্যা করাই এখন তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ।

রেবেকার কানে  পৌছতেই সতর্ক হোল সে ।   জেকব কে   বাঁচাতে  হবে । জেকব কে পালাতে হবে , নইলে যে কোন সময় ইসাউ তাকে হত্যা করবে । সে হতে দেওয়া যায় না । রেবেকা জেকব কে ডেকে বলল ,

তোমার   খুব বিপদ , প্রিয় পুত্র !

তবে !!   কি করব ?

গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে  থাকবে চুপি চুপি   তুমি পালিয়ে যাও ।

 

কিন্তু   কোথায়ে ? আমি তো কোন দিন বাইরে যাইনি , একা !

তুমি   মেসোপটেমিয়া   যাও ।  সেখানে তোমার মাতুলালয় ।  নিজের পরিচয় দিয়ে মামা লাবানের  বাড়িতে  থেকো।

রাতের অন্ধকারে ক্যানন ছেড়ে  ভীত সন্ত্রস্ত জেকব মেসোপটেমিয়ার উদ্দেশে রওনা হোল । সেখানে তাঁর মাতুলালয়। মায়ের   কথামত   মামা লাবানের   বাড়ি তেই সে থাকবে ।   যতদিন ইসাউ র রাগ না কমে জেকব ফিরবে না । গৃহত্যাগ করার সময় সে বাবার সমনে গিয়ে দাঁড়াল ।  আইজ্যাক তাকে আশীর্বাদ করল, “ তুমি এই ক্যাননের উত্তরাধিকার হও । ক্যাননের রাজা  । ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন । ’’

ক্রমশ ………

পরের অংশ পড়ুন আগামী রবিবার ।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম পশ্চিমবঙ্গ-র কুচবিহার শহরে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম কবিতার বই ' সুখের ঠিকানা', গল্প সংকলন 'চিরন্তন'। ইংরেজি কবিতার বই  'Bouuet of Poems'  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন। বেশকিছু কিশোর সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। 

স্টেটস্‌ম্যান, সুখবর, সকালবেলা ইত্যাদি খবরের কাগজে গল্প প্রকাশিত হয়েছে।  দেশ,  সানন্দা, প্রসাদ, সারথি পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। 'Times of India'-তে বেশ কয়েকবার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবনের শুরু।বর্তমানে কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখতেই বেশি ভাল বাসেন ।  বহু e magazine এ লেখেন ।  

natun-bachhar-short-story-galpo-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-নতুন-বছর-নন্দিতা-সাহা