ধারাবাহিক – প্রতি বুধবার ও রবিবার
(ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে)
বেশ কিছু সময় কেটে গেল,জেকবের
মনের মাঝে সেই ছোটবেলার দিনগুলি উকি দেয় । খুব
ইচ্ছে হয় তাঁর যমজ ভাই ইসাউ কে
দেখতে !
কেমন সুন্দর থাকত বাবা মায়ের সাথে ! ইসাউ !
কেমন হয়েছে সে ! নিশ্চয়ই সুপুরুষ , বলিষ্ঠ ।
নিশ্চয়ই তার অনেক সন্তান সন্ততি !
সে কি এখনও তার ওপর রেগে আছে ! একবার যদি দেখা হত , ভাই কে
জড়িয়ে ধরত ! ইস! একবার যদি দেখা হত! কি ভালই না লাগতো। জেকব তাঁর এক বিশ্বস্ত
অনুচরকে ঠিক করল । কিছু লোক নিয়ে দূত যাবে ইসাউ র
কাছে , তাকে জেকবের কথা জানাবে ।
জেকব তাঁর দাদাকে দেখার জন্য উদগ্রীব ।
রওনা হোল দূত । কিন্তু খুব
শিগগিরি তারা ফিরে এলো। জেকব কে খবর দিল , ইতিমধ্যে
ইসাউ তাদের শিবিরের দিকেই আসছে । তার সাথে প্রায় চার শো লোক । ভয়ে থর থর করে কেঁপে
উঠল জেকব। আর নিস্তার নেই । বোঝাই যাছে ইসাউর রাগ এখনো কমেনি । এবার ইসাউ কেবল জেকব নয়, তাঁর
পুরো পরিবার,সন্তানদের,লোকজন দের
হত্যা করবে। দুশ্চিন্তায় কাতর জেকব,নিদ্রাহীন।
কি করে সবাই কে বাঁচাবে ! ইসাউর সাথে যে
লোক বল ও প্রচুর। দুশ্চিন্তায় ,মৃত্যু
ভয়ে আতঙ্কিত । এবার আর রক্ষে নেই ।
জেকব বুদ্ধি করে কিছু উপহার
পাঠাল। ভেড়া , উট , দুধেল গাই
, মাল বহন কারী শক্তিশালী গাধা
। উপহার নিয়ে জেকবের দূত রওনা হোল । রাতের অন্ধকারে জেকব তাঁর স্ত্রী সন্তান দের
একটি পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে নিজে প্রহরায় রত ।
গভীর রাতে সবাই ঘুমে বিভোর ।
এমন সময় কে অজানা, অচেনা অতর্কিতে আক্রমণ করল ।
ভীষণ শক্তি নিয়ে জেকব ঝাঁপিয়ে পড়ল । এই আক্রমণকারীকে সে
কিছুতেই তাঁর পরিবারের কাছে , পৌছুতে
দেবে না। সারা রাত চলল ধুন্ধুমার লড়াই । সূর্যোদয়ের সাথে সাথে লড়াই
শেষ , অথচ জেকব তার মুখ দেখতেই পারল না । কে ? কে তাকে
আক্রমণ করেছে ?
এইবার জেকব কে অবাক করে সে
বলল ,
“তুমি
ঈশ্বরের সাথে লড়াই করেছ । এবং জিতেছ । আজ থেকে তোমার নাম , ইজরায়েল ।
তোমার জাতিকে ইজরায়েলী নামেই জানবে
জগতবাসী । ’’
জেকবের গলায় তখন নরম সুর ।
বুঝতে বাকি নেই ইনি কোন সাধারণ মানুষ নন । ইনিই ঈশ্বর। দেবদূত । জেকবের বিশ্বাস স্বয়ং ঈশ্বর এসেছিলেন । জেকবের ঈশ্বর দর্শন হোল
। জেকব আপ্লুত । ঠিক এই মাটির ওপর দাড়িয়ে প্রভু তাকে আশীর্বাদ করলেন । এখানেই তাঁর
ঈশ্বর দর্শন হয়েছে । জেকবের দুই চোখে আনন্দের অশ্রু ধারা । জেকব জায়গাটির নাম দিল, “পেনিয়াল “, ঈশ্বরের
মুখ [ ফেস অফ গড ] ।
সূর্য মাথার ওপর উঠল , জেকব
দেখতে পেল ঐ দুর থেকে এগিয়ে আসছে সৈন্য সামন্ত নিয়ে তাঁর ভাই ইসাউ। জেকব তাঁর
স্ত্রী লেহা, রাচেল , জোসেফ , এবং
সন্তান দের নিয়ে এগিয়ে গেল। ইসাউ কাছে আস তেই জেকব দাদার পায়ের কাছে মাথা নত করে বসল,তাকে কুর্নিশ জানাল । ইসাউ র দুই চোখে জল । জড়িয়ে ধরল ভাই কে ।
অবশেষে দুই ভাইয়ের সব রাগ
ভুলে মিলন মেলা । চারিদিকে আনন্দ লহরি । ইসাউ
তো জেকবের সাথে এত লোকজন , নর নারী , ছোট ছোট
বাচ্চা , কিশোর ,কিশোরী
দেখে অবাক । এরা কারা !! খুশিতে ডগমগ জেকব স্ত্রী সন্তানদের সাথে দাদার পরিচয় করিয়ে
দিল। কিন্তু ইসাউর চোখে
প্রশ্ন , এত উপহার সামগ্রীই বা
কেন ! তাঁর তো এখন অনেক আছে। এখন সেও ধনী । কিন্তু জেকব ছাড়ার
পাত্র নয় , উপহার তাকে গ্রহণ করতেই হবে
। চারিদিকে খুশির
আমেজ । বহু বছরের তিক্ততার সম্পর্ক ধুয়ে মুছে গড়ে
উঠল অটুট বন্ধন।
ক্রমশ ………
পরের অংশ পড়ুন আগামী বুধবার ।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি -
স্টেটস্ম্যান, সুখবর, সকালবেলা ইত্যাদি খবরের কাগজে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, সানন্দা, প্রসাদ, সারথি পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। 'Times of India'-তে বেশ কয়েকবার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবনের শুরু।বর্তমানে কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখতেই বেশি ভাল বাসেন । বহু e magazine এ লেখেন ।
.jpg)

.gif)