Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-70th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-70th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

পর্ব - ৭০

For months my hand had been sealed off

in a tin box. Nothing was there but subway railings.

Perhaps  it is bruised,I thought,

and that is why they have locked it up.

--"ম্যাডাম জী,খানা বহুত হি আচ্ছা থা--"শীতের দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামছে;লন থেকে রোদ পিছলে গেছে;ধূসর কুয়াশা ডানায় নেমে আসছে সন্ধ্যা। কৃষ্ণচূড়ার  ছায়ায় কালশিটে দাগ। বিড়িং তার ছানাপোনা নিয়ে নিজের বিছানায়--গ্র্যান্ডি তাকিয়ে আছে বাভ্রবির  দিকে

--"অন্ধকার  হয়ে আসছে বাপু,চলো এবার  ঘরে চলো--"। লিভিং রুমের দেয়াল  ঘড়িতে শব্দ  করে পাঁচটা বাজল। বাভ্রবির  সামনে রামদীন, মারিয়া জোসেফ--এবং সেই  পার্ক।

--"রেস্তোরার  রোদ্দুরে শেড--রামদীন  এর পরিতৃপ্ত মুখ দেখতে দেখতে বাভ্রবির  চোখের কোণ অকারণেই ঝাপসা।

প্রেম আর না-প্রেমের খেলায় কেন বারে বারে না-প্রেমই জিতে যায়? কেন? কেন?

রামদীন  মুখ মুছে উঠে দাঁড়াল।  রোদের সিলেটে এক ন্যুব্জ, আদি কবি বাল্মীকির ছায়া পড়ল তমসার  জলে! তখন সূর্য  অস্ত যাচ্ছিল--তমসার  জল রক্ত গোলাপ  লাল। এক ক্রৌঞ্চ মিথুন আমগাছের ডালে ভালবাসার আনন্দে বিভোর। পৃথিবী সুন্দর, ক্রৌঞ্চ  মিথুনের রাগিণী সুন্দর,সূর্যের হোলিখেলা সুন্দর,তমসার জল সুন্দর—হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে সুন্দরের আরোহণ,অবরোহণ। হঠাৎই এক নিষ্ঠুর শিকারির তীক্ষ্ণ  শর নেমে এলো--ভালবাসার  খেলায় মগ্ন ক্রৌঞ্চ মিথুনের একজন ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে লুটিয়ে পড়ল তমসার তীরের বালুকণায়। শুভ্রবালুরাশি লাল  হয়ে উঠল অসহায় প্রেমিকের লাল  রুধিরে--প্রেমিকা তার প্রেমিকের নিথর দেহটি ঘিরে অসহায়,করুণ,আর্তনাদ করতে করতে ঘুরপাক খেতে লাগল। বাল্মীকির চোখে জল--তারপর  সেই  জল থেকে জ্বলে উঠল আগুন। সেই  নিষ্ঠুর  শিকারির  উদ্দেশ্যে বাল্মীকির  মুখ থেকে উচ্চারিত  হল প্রতিবাদ--পৃথিবীর  প্রথম  কবিতা--"মা নিষাদ--"। পৃথিবীর  প্রথম কবিতা শোক থেকে নয়,আগুন  থেকে জন্ম  নিয়েছে।

মারিয়া আর জোসেফ এর প্রেম কে হত্যা করল সারা নামের  একটি নিষ্ঠুর  তীরন্দাজ। বাভ্রবির  চোখে বাল্মীকির ছবি--সন্ধ্যার  ছায়া ঘনিয়েছে  আশ্রমের  শান্ত  কুটিরে--দীপ জ্বালিয়ে সন্ধ্যা বন্দনার আয়োজন করবেন--তমসার  তীর থেকে মুখ  প্রক্ষালন করে ফিরে আসছেন--এক নারী যেন ক্রন্দসী লক্ষ্মী প্রতিমা ।

--"কে তুমি মা--!"

--"প্রণাম  মহর্ষি।আমি সীতা--।স্বামী পরিত্যক্তা এক অভাগিনী রমণী মাত্র ।"

ধিক!সেই  পুরুষ কে যে তার পূর্ণগর্ভা স্ত্রী কে এভাবে পরিত্যাগ  করতে পারে। কে সে অর্বাচীন  পুরুষ?"

বৈদেহীর ঠোঁটের  কোণে এক চিলতে তেতো হাসি? আধো অন্ধকারে বাল্মীকির  নজরে পড়ল না। সীতাকে নিরুত্তর  দেখে দীর্ঘশ্বাস  ফেলে বাল্মীকি বললেন -

--"হায় অভাগিনী নারী। যে স্বামী তোকে এভাবে অরণ্যে ছেড়ে দিয়ে গেছে,সেই  স্বামীর  প্রতি তোর এখনও  এতো প্রেম যে তাঁর নামটাও তুই  মুখে আনতে পারছিস না মা! চল মা আমার  কুটিরে চল।তোর সন্তান  এই অরণ্যের  নির্জনতায় জন্ম  নেবে।"

প্রেম-এবং না-প্রেমের  এই অভিনব খেলা।

রামদীনের  মুখে ও মারিয়ার  প্রতি এক অপূর্ব  প্রেমের ছবি দেখে পুলকিত  হয়েছিল বাভ্রবি।

এক সপ্তাহ  সময় চেয়েছিল মারিয়া সারার  কাছে।

আর এই  এক সপ্তাহ--মানে সাতটি দিন যেন মারিয়া আর জোসেফের কাছে ছিল একযুগের মতো। ওরা প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করছিল। জোসেফ কে এতো হাসিখুশি আগে কেউ  কখনও দেখেনি। অফিসের সবাই  জোসেফকে ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কেউ  বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে জোসেফের মত একজন সৎ,আদর্শবাদী যুবক ধর্ষণের  মত এরকম  একটা জঘন্য  কাজ করতে পারে। এভাবেই  কেটে গেল একসপ্তাহ।  সারা ডিভোর্স  পেপার  রেডি করে মারিয়া আর জোসেফ  কে ডেকে পাঠালো;

মারিয়া প্রথমে সাইন করল। জোসেফের  মুখ বেদনায় নীল। সারার দিকে করুণ মুখ তুলে বলল

--"সারা,প্লিজ, আরেকবার  ভেবে দেখতে রিকোয়েস্ট  করছি--।"

সারা জোসেফের  হাতে কলম তুলে দিয়ে  ওর গলা জড়িয়ে  ধরে বলল--"কাম অন জোসেফ। আমরা ছোটবেলা থেকে একে অপরকে ভালবাসি--;আমরা আবার  এক হবো। তুমি মিছেমিছি  ড্রামা করছো কেন?"

মারিয়া চোখ নীচু করে দাঁড়িয়ে ;জোসেফ দীর্ঘশ্বাস  ফেলে নিজের কবরনামায় সাইন করে দিল।

সারা কাগজটি হাতে নিয়ে মারিয়ার  দিকে তাকিয়ে বলল--"মারিয়া,শর্ত মাফিক  তুমি আজই  তোমার  বাবার  বাড়ি--সুন্দর গড় চলে যাবে।"

মারিয়া তেমনই মাথা নীচু করে বলল

--"হাঁ,সারা,মুঝে ইয়াদ হ্যাঁয়,মেঁ চলি যাউঙ্গি। আজ রাত ন বাজে,ট্রেন  --।"

সারার  সমস্ত  শরীর জুড়ে বিজয়িনীর  হাসি।

বাভ্রবি রামদীনকে কাটোরিয়া সরাই  এ ওর বাড়ি--না,বাড়ি না বলে ডেরা বলাই ভাল--ডেরার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলেছিল

--"কিন্তু  সারা তো বিজয়িনী হতে পারল না। "

রামদীনের  মুখে বিচিত্র  হাসি।

--"সেটা বুঝতে পারলে কি সারা এসব কাজগুলো,করতে পারত?"

সেদিন রাতের ট্রেনে মারিয়া কে তুলে দিতে এসে অনেক ক্ষণ  জোসেফ  মারিয়ার  হাত নিজের হাতে ধরে রাখল। মারিয়ার  চোখের কোণে জল টলটল ।তবু সেই  জল চেপে,রেখে হাসি মুখে ফিসফিস  করে বলল--"আমাদের  ভালবাসা তো বেঁচে থাকবে জোসেফ।  যতই আমরা আলাদা থাকি না কেন--আমরা তো মন প্রাণে একই হয়ে আছি।"

ট্রেন ছেড়ে দিল---জোসেফ  যতক্ষণ  ট্রেন চোখের আড়ালে চলে না গেল--ততক্ষণ  তাকিয়ে থাকল--দূরের লাল ডিসট্যান্ট  সিগন্যাল  এর দিকে---।

-"ম্যাডাম  জী উসি রাত  মেঁ ঘর যাকে জোসেফনে  স্লিপিং পিল  খাকে সুইসাইড  কিয়া---। মারিয়া সুন্দর গড় পৌঁছকে বারবার ফোন লগা রহি থী---রিং হো রহা থা-পর কিসি নে  উঠায়া  নেহি--।"

কাটোরিয়া সরাই  এর ডেরায় --"নমস্তে" বলে ঢুকে গেল রামদীন--কিছুটা শুকনো শীতকালীন  বাতাস বয়ে গেল---।

ক্রমশ …………

৭১তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)