Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-69th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-69th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী
পর্ব - ৬৯

Let high noon enter-

the hour of the ghosts.

Once the Romans believed

that noon was the ghost hour,

and I believe it,too,

under that startling sun,

and someday they will come to you,

someday,men bare to the waist,young Romans

at noon where they belong.

দুজনে মুখোমুখি। মারিয়া আর জোসেফ। সন্ধ্যার  আকাশে তখনও  রক্তের আলপনা। পাখিরা কুলায়ে ফিরতে ফিরতে ধরেছে বৈতালিক গান। সন্ধ্যার  হাওয়া আর রক্তিম আলো পিছলে যাচ্ছে পাখিদের ধূসর ডানায়।দুজনে মুখোমুখি। গভীরতম সুখে সুখী। অথবা এক গভীর  দুখের ছায়াপাতের আশঙ্কায় উদ্বেল। এই  পার্কটি ওদের দুজনের খুব প্রিয়।  একদিন এই  পার্কের  বটলব্রাশ ফুলের আনন্দ মাখতে মাখতে জোসেফ আর মারিয়া এক হবার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল---; একদিন এই পার্কের  বর্ষার  নবধারা জলে একই ছাতার নীচে ভিজে যেতে যেতে ভালবাসার  অমৃত পরশে সিক্ত  হয়েছিল---জীবনের আনন্দ মুখর দিনগুলো শীতের  রোদ্দুরের মত,উলের বলের মত এত দ্রুত  ফুরিয়ে যায় কেন? কেন? কেন?--

--"কেন? কেন তুমি জোসেফ কে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছ? কেন? কেন?"

মারিয়া সারার মুখোমুখি--কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল।

সারার  চোখে মুখে এক জয়ের হাসি--না,জয়ের জিগীষা খেলা করছিল।

--"কিঁউ? কিঁউ সারা? তুমি তো ওকে ভালবাসো! তাহলে কেন ওর বিরুদ্ধে তুমি মিথ্যে মামলা আনলে--"

নিষ্ঠুর  হাসিতে সারার মুখটা কুৎসিত  হয়ে উঠল।

--"ভালবাসতাম। পাষ্ট টেনস-- খের--তুমি এসব পাষ্ট,প্রেসেন্ট বুঝবে না--তুমি তো পড়াশোনাই করনি--"

ভয়ংকর  অবজ্ঞার সুরে সারা মারিয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো ছুড়ে দিল।

মারিয়া ম্লান  হেসে বলল--"ঠিক  বলেছ,সারা,আমি পড়াশোনা করিনি। কিন্তু  আমি জানি একবার  যদি কাউকে মন থেকে ভালবাসা যায়,তাহলে তাকে সারা জীবন ধরেই  মানুষ  ভালবাসে। ভালবাসা কি এভাবে বদলে যেতে পারে?"

সারার মুখটা অপমানের জ্বালায় কঠিন  হয়ে উঠল।

--"তুমি,তুমি এর জন্য  দায়ী। তুমি আমার  ছোটবেলার  ভালবাসাকে আমার  কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছ। জোশেফ কে তুমি সিডিউস করেছো। তুমি একটা বেশ্যার মতো শরীরের  টোপ ফেলে--"

মারিয়ার  মুখটা ব্যথায় কেঁপে উঠেছিল--দুহাতে নিজের কান চেপে ধরে বলল

--"দোহাই তোমার,এরকম কথা বলো  না--আমাদের  পবিত্র  ভালবাসাকে এভাবে কলুষিত  করো না--সারা--।"

--"সবাই,সনাতন কাকা ,কাকী  আমাদের  ভালবাসাকে মেনে নিয়েছিলেন,আমার বাড়িতে সবাই  জানতো একদিন  আমাদের  বিয়ে হবে--। জোসেফ  একমাত্র  আমার,আমার। আর কারুর হতেই  পারে না।"

সারার  কথা শুনে ম্লান,করুণ  হাসি ফুটে উঠল মারিয়ার  ঠোঁটের কোণে।

--"ভালবাসায় কি এতো অধিকার বোধ থাকে সারা?লবাসা তো অন্যের মধ্যে নিজেকে বিলীন  করে দেওয়া--। সত্যিকারের  ভালবাসাতো এভাবে জোর করে কেড়ে নেওয়া যায় না। "

এক অভিনব  নিষ্ঠুর,হাসি--না হাসি নয়,এক তীব্র  প্রতিহিংসার  খেলা সারার  সমস্ত  ঠোঁটে,মুখে  ছড়িয়ে পড়ল।

--"তা ,তোমার  মতে,সত্যিকারের  ভালবাসার  মানেটা  সোজা ভাষায় কি?"

শান্ত  অথচ দৃঢ় সুরে মারিয়া বলল

--"যাকে সত্যিকারের  ভালবাসা যায়,তার জন্য  নিজের  জীবন পর্যন্ত  দেওয়া যায়--"

--"আর সেই ভালবাসার মানুষটি কে বাঁচাবার জন্য, সেই মানুষ টিকে ছেড়ে দেওয়া ও যায়?"

মারিয়া কিছু না বুঝে অবাক  হয়ে সারার  কুৎসিত--হ্যাঁ,সারার   সুন্দর  মুখটাকে তখন  মারিয়ার  ভীষণ ভীষণ কুৎসিত  লাগছিল।

--"মানে,মাই ডিয়ার--তুমি তো জোসেফ  কে ভীষণ ভালবাস? তাই না?"

সারার কথার লুকোনো অর্থ না বুঝেই  মারিয়া সরল বালিকার  মত মাথা নেড়ে বলল

--"হ্যাঁ,বাসি।"

--"গুড! তুমি ওর জন্য  সব করতে পারো,তাই না?"

--"পারি। নিজের প্রাণ--"

বাধা দিয়ে সারা হেসে বলল

--"তোমার প্রাণ নিয়ে আমি কি করব মারিয়া ডিয়ার--"

প্রশ্ন  বোধক চোখে মারিয়া সারার  দিকে তাকালো  --"?"

আবার  সেই  নিষ্ঠুর  হাসি খেলা করে গেল সারার  চোখে,মুখে--

--" তুমি জোসেফ  কে চিরদিনের  জন্য  ছেড়ে দাও--"

মারিয়া যেন সারার  কথার অর্থ  বুঝতে পারে নি --সে তাকিয়েই রইল--

--"তুমি জোসেফ কে ডিভোর্স  দাও--এবং ওর জীবন  থেকে সরে যাও--। আমি কথা  দিচ্ছি তাহলে আমি জোসেফের  উপর থেকে সমস্ত  ফলস্ কেস তুলে নেবো। আর জোসেফ  আর আমি একসঙ্গে ঘর বাঁধব।"

মারিয়া  এবার  নিজের  মুখ নিজের দুটি করতলে চেপে নির্বাক কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সন্ধ্যার  আলো মিলিয়ে গেছে --বটল ব্রাশের  লাল ফুল গুলো কেমন শুকনো রক্তের  মত দেখাচ্ছে--দূরে একফালি চাঁদের  আভাস--পার্কের বেঞ্চ  গুলো আস্তে আস্তে খালি হয়ে আসছে--; জোসেফ  মারিয়ার ভিজে চোখের জলে নিজের শুকনো ঠোঁট  ভিজিয়ে নিয়ে বলল

--"এ তুমি কি করলে মারিয়া--আমার  জন্য  আমাকেই ছেড়ে দিলে--"

মারিয়া এবার  দুহাতে জোসেফ  কে জড়িয়ে ধরে বলল--"আমার  যে এছাড়া আর কোনও  উপায় ছিল না --। আর কোনও  উপায় ছিল না--"

--"কিন্তু আমি কিভাবে বেঁচে থাকব? এক মিথ্যে ভালবাসার  নাটকের হিরো--না,না,ভিলেন হয়ে এক সর্বনাশীর সাথে সারাজীবন  কাটাবো-বলো,মারিয়া,বলো--আমি কিভাবে--"

--"তোমাকে তোমার,মা,বাবার জন্য, নিজের  মিথ্যে দুর্নাম থেকে মুক্তি পাবার  জন্য  এটা মেনে নিতেই  হবে।"

সন্ধ্যার  বাতাসে কিছু রিক্ত পাতা ঝরে পড়ল ওদের  উপর--। ওরা এক যুগ্ম মিথুন-মূর্তির ন্যায় একে অন্যকে জড়িয়ে ,একে অন্যের  চোখের জলে সিক্ত  হতে থাকল---

ক্রমশ …………

৭০তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)