Advt

Advt

sheet-galpo-story-by-bimal-gangopadhaya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-শীত-গল্প-বিমল-গঙ্গোপাধ্যায়

 

sheet-galpo-story-by-bimal-gangopadhaya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-শীত-গল্প-বিমল-গঙ্গোপাধ্যায়

কিছুদিন হল বড় শীত করছে, বুঝলে বসন্ত। মনে হয় সব সময়ে গায়ে একটা র‍্যাপার জড়িয়ে রাখি। এই দেখ তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি, ঠোঁট দুটো কাঁপছে। হাত পায়ের আঙ্গুলগুলো কেমন অসাড় লাগছে। তোমরা কেমন ফিনফিনে পাঞ্জাবী পরে দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছ। গঙ্গার হাওয়ায় তোমাদের আরাম লাগছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে গল্প করছ। আর আমার মনে হচ্ছে কতক্ষণে বাড়ি ফিরে গিয়ে দরজা জানলা সব বন্ধ করে বিছানায় জড়সড় হয়ে বসব। আচ্ছা বসন্ত, পোষ মাঘ মাসে কি করব বল তো? বেঁচেবর্তে থাকব তো? নাকি শীতের কামড় সহ্য করতে না পেরে সব কিছুর মায়া ত্যাগ করে...!

কিরণশঙ্করের মনে হল গলা বুজে আসছে। এতদিন এইসব ভেবে ভয় করত। আজ নিজের ভাবনাগুলো মেলে ধরতে গিয়ে বুঝতে পারল ভয়ের সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে দুঃখও জড়িয়ে রয়েছে।

কিরণশঙ্কর স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। আর তাই উদাত্তকণ্ঠে না হলেও বেশ জোরেই হেসে বলল, বয়স বাড়লে এইরকমই হয়, বল? আমার ঠাকুমাকেও দেখেছি সামান্য জ্বরজালি হলেই কেঁদেকেটে এমন কাণ্ড করত যেন বুঝি সব শেষ হয়ে গেল।

বসন্তবিকাশ এমনিতেই কম কথা বলে। দৈবাৎ দুচারটে মন্তব্য করা ছাড়া অধিকাংশ সময়েই সে চুপচাপ বসে সিগারেট খায়। অন্যদের কথা শোনে। কখনও কখনও সদ্য চোখ ফোটা পাখির বাচ্চার মতো অপার বিস্ময়ে সার্কিট হাউসের রাধাচূড়া গাছগুলোর দিকে চেয়ে থাকে।

তবু কেন কিরণশঙ্কর দুঃসহ প্রশ্নগুলো তার দিকেই ছুঁড়ে দিচ্ছে এটা ভেবে অবাক হল। বাকিদের নিশ্চুপ বসে থাকার ভঙ্গিটাও ভাল লাগল না তার। কিরণশঙ্কর আড্ডার মেজাজটাই নষ্ট করে দিচ্ছে। এমন সব কথা বলছে যা ছোঁয়াচে রোগের মতো অন্যদেরও সংক্রামিত করছে। বসন্তবিকাশ ঘাড় না ফিরিয়েও বুঝতে পারল বাকিদের চোখেমুখেও আতঙ্কের ঢল নেমেছে। হয়ত কিরণশঙ্করের মতো তাদেরও শীত করছে।

সে তাই আস্তে করে বলল, ডাক্তার দেখাও। ভেতরে ভেতরে হয়ত শরীর খারাপ করছে। শরীর দুর্বল হলেই মৃত্যু ভয়টয় আসে।

বসন্তবিকাশের কথায় দু-চারজন নড়েচড়ে বসল। খুক খুক করে কাশল একজন। ফস্‌ করে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালার শব্দ শোনা গেল। চোখ থেকে চশমা খুলে খুব সন্তর্পণে রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে একজন আর একজনের হাত ঘড়ির দিকে চেয়ে ইশারায় জানতে চাইল কটা বাজে। এমনি সব প্রাত্যহিক ব্যাপার স্যাপারের মধ্যে দিয়ে বৈকালিক আড্ডাটি স্বাভাবিক হতে শুরু করল।

কিরণশঙ্করের কিন্তু মন খারাপ হয়েই রইল এবং যথারীতি শীত বোধও হতে লাগল। সে অন্যদিনের মতো বহুমুখী আলোচনায় উৎসাহ বোধ করল না। অনেক কথাই তার কানের পাশ দিয়ে চলে গেল। আবার কিছু কথা তার দুর্বোধ্যও মনে হল। একসময় সে উঠে দাঁড়াল, আজ চলি।

কিরণশঙ্কর বাড়ির গলির মুখে যখন, তখনই লোডশেডিং হয়ে গেল। সে অভ্যস্ত চোখে গলিটুকু পার হয়ে এসে দরজায় কড়া নাড়ল। তার বউ মনোরমা দরজা খুলে দিল। হ্যারিকেনের অপ্রচুর আলোতেও কিরণশঙ্কর স্পষ্ট দেখতে পেল মনোরমার সারা মুখ জুড়ে খুশি খুশি ভাব। উঠোনটুকু পার হতে হতে সে কোণের ঘরে রত্নার গলা পেল। মনে হল যেন অনিমেষও রয়েছে ঘরের মধ্যে। নিচু গলায় কথা বলছে দুজনে।

প্রতিদিনের মতো কিরণশঙ্কর  হাত পা মুখ ধুল কলতলায় গিয়ে। পোশাক বদলে নিল। তারপর অন্ধকার ঘরে চৌকির বিছানার ওপর বসল জড়োসড়ো হয়ে।

অবসরপ্রাপ্ত যে কোন মানুষের মতোই কিরণশঙ্করের সময় এবং চিন্তাভাবনা দুই-ই অঢেল। তবে বয়সের ভারে চিন্তাভাবনার স্রোত মন্দা হয়ে যায়। কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে সুরু করলে, ভাবনাগুলো 'যাচ্ছি-যাব'-র মতো একই জায়গায় ঘুরপাক খায়। কিরণশঙ্করের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার সাংসারিক সমস্যা সরু সুতোর গিঁটের মতো জটিল, অস্বস্তিকর। এসব সমস্যা একার দ্বারা সামলানো সম্ভব নয় জেনেও প্রতিনিয়ত তাকে এগুলি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়।

এ ব্যাপারে মানুষ একজন মানসিক সঙ্গী খোঁজে। তার প্রেরণা চায়। কিরণশঙ্করের কখনই মনে হয় না তার স্ত্রী এমন একজন সঙ্গী হতে পারে। কারণ কোন বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণ বা তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তার স্ত্রী কখনওই একমত হয় না। এমনকি যুক্তিতর্ক দিয়েও সে তার মতামতগুলিকে তার স্ত্রীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে না।

কিরণশঙ্করের মনে হয় এটা তার জীবনের বড় ব্যর্থতা। আর এরজন্যই সংসারে সে মূলত একা। তার অস্তিত্ব অসাড় জড় পদার্থের মতো বা ঐজাতীয় কিছু।

তার মেয়ে রত্না বিবাহের পরেও শ্বশুরবাড়ী যায় না। রত্নার স্বামী, অনিমেষ, যার উপস্থিতি সে কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে ঢোকার সময় টের পেয়েছে, ছেলে হিসাবে ভাল। কিরণশঙ্কর যতদূর জানে। পেশায় সরকারী কর্মচারী। দেখতেও মন্দ নয়। অনিমেষের ব্যবহার মার্জিত এবং এখনও সে রত্নার এই সীমাহীন ঔদ্ধত্যকে সহ্য করে। কিরণশঙ্করের বহুদিনই মনে হয়েছে অনিমেষের মেষ বা তুলা রাশি। কোন রকম জোর খাটানোয় তাই সে অনাগ্রহী।

রত্না যে কি চায় কিরণশঙ্কর নিজেও জানে না। কোনদিন এ ব্যাপারে রত্নার সঙ্গে কথাও হয়নি তার। বিয়ের ছ'মাসের মধ্যেই রত্না একদিন হুটপাট চলে এলো স্বশুর বাড়ি থেকে। শ্বশুরবাড়ির কারোর বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই। অনিমেষও আসত তখন ঘনঘন। ব্যাপারটা তাই কিরণশঙ্করের কাছে মোটেই বিসদৃশ মনে হয়নি। অনেক মেয়েলী ব্যাপার আছে যা সে জানে না, হয়ত তেমন কোন অসুবিধার জন্যই রত্না মায়ের কাছে এসে রয়েছে, এমনি ভাবত সে। তারপর যখন রত্নার অবস্থান দীর্ঘ হতে লাগল, সে শঙ্কিত হল। আর তখনই মনোরমাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল রত্না তার শ্বশুর বাড়িতে যেতে অনিচ্ছুক। কারণ জায়গাটা তার মোটেও পছন্দ হয় না।

ব্যাপারটা কিরণশঙ্করকে এমন অবাক করে দিয়েছিল যে সে কোনরকমে মনোরমাকে জিজ্ঞেস করেছিল – জায়গাটা পছন্দ নয় মানে ! শাশুড়ি কি অত্যাচার করে? মারে টারে? একটু থেমে বলেছিল, নাকি অনিমেষের মেয়েছেলেঘটিত অন্য কোন রোগটোগ আছে?

কিরণশঙ্করের কথায় মনোরমা বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, অতশত জানি না। ও যখন চাইছে না এখন, থাকুক না এখানে। অসুবিধেটা কি?

কিরণশঙ্কর '' বলে চুপ করে গেছিল। কিন্তু মনোরমার নির্লিপ্ততায় তার কেমন যেন মনে হয়েছিল, মনোরমা কিছু আড়াল করতে চাইছে। ব্যাপারটা কেবলমাত্র পারিবারিক নয়। এর সঙ্গে সামাজিকতার প্রশ্নটাও জড়িয়ে রয়েছে। কিরণশঙ্কর তাই বিচলিত হয়ে উঠেছিল, বিবাহিত মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে না গিয়ে বাপের বাড়িতে থাকবে, আত্মীয় পরিজনেরা বলবে কি?

-  এতে বলাবলির কি আছে? মনোরমা যেন জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েই ছিল, জানবে যুগ অনেক পালটে গেছে। যে যার নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। এখন আর কেউ কারোর ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাতে যায় না।

সেই থেকেই রত্না আছে। বিয়ের আগের মতোই মায়ের হাতে হাতে ঘর সংসারের কাজকর্ম করে। মাঝে মধ্যে মা মেয়েতে সিনেমায় যায়। দুপুরে পাশের ঘরে শুয়ে মা মেয়ের হাসির শব্দও শুনতে পায় কিরমশঙ্কর। রত্নাকে তার অসুখী মনে হয় না। কখনও সখনও দু-চারজন প্রতিবেশী আসে। আসে রত্নার দু-একজন বান্ধবীও। তাদের সঙ্গে হাত পা নেড়ে হেসে হেসে কথা বলে যখন রত্না, কিরণশঙ্কর লক্ষ্য করে দেখেছে রত্নার চোখেমুখে লজ্জা সংকোচ বা ঐ জাতীয় কোন অনুভূতির ছাপই থাকে না। কিরণশঙ্করের বরং প্রায়শই মনে হয় রত্নার সিঁথির সিঁদুরটুকু, দৃষ্টি এড়িয়ে গেলে, এখনও বুঝি বা তাকে আগের মতোই এ বাড়িতে মানিয়ে যায় বেশ। যখন অনিমেষ আসে, রত্নার সঙ্গে সঙ্গে মনোরমাকে ভারি সুখি-সুখি দেখায়। অনিমেষকে সামনে বসিয়ে রত্না একদিন হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানও গাইছিল।

দৃশ্যটা কিরণশঙ্করকে তৃপ্তি দিয়েছিল। কিন্তু পরমুহূর্তেই যখন তার মনে পড়েছিল, রত্নার বিধবা শাশুড়ি তার একটি মাত্র ছেলের বিয়ে দিয়ে হয়ত এখন এই সন্ধ্যাবেলায় যক্ষের মতো ছেলের বাড়ি আগলে বসে রয়েছে একা, রাগে তার সারা শরীর দপদপ করে উঠেছিল। সে মনোরমাকে আড়ালে ডেকে বলেছিল, এখনও মেয়েটাকে পাঠাচ্ছ না। এর ফল ভোগ করতে হবে একদিন।

মনোরমা যেন কিছুই বুঝতে পারেনি এমনি অবাক গলায় বলেছিল, মেয়েটা গান গাইলেও তোমার খারাপ লাগে? গঙ্গার ধারে আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে এলেই তো পারতে।

সেই থেকেই কিরণশঙ্কর জানে, বাড়িতে তার থাকা নিছক থাকতে হয়, তাই থাকা। তার ভালোলাগা মন্দলাগা, বুদ্ধি পরামর্শ, সব কিছুই অর্থহীন হয়ে গেছে তার বুকের কাছের মানুষজনের কাছেও।

সে তাই বিকেল হতে না হতেই বেরিয়ে পড়ে। তারপর গঙ্গার ধারে বসে যখন তারই মতো আরও অনেকজনের সঙ্গে গল্প করে, সার্কিট হাউসের বাগানের বেড়ার গা ঘেঁসে টুকটুক করে হেঁটে বেড়ায়, ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও একটা দুটো সিগারেট খায়, তখন তার মনে হয় বেঁচে থাকা মন্দ কি ! অন্তত এই বিকেলটুকুর লোভেও বেঁচে থাকা যায়।

কিন্তু কিছুদিন হল তার শীত করছে যখন তখন। বৈকালিক আড্ডাতেও তাই সে সহজ স্বাভাবিক হতে পারছে না। বাড়ি ফিরে বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসলেও আরাম পাচ্ছে কই?

আজও সে অন্ধকার ঘরে বসে প্রতিদিনের মতোই দুর্বল চিন্তায় আচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে যখন, তখনই তার ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কে যেন ডাকল, বাবা?

চকিতে সোজা হয়ে বসল কিরণশঙ্কর। দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে অনিমেষ, আজ আমি যাচ্ছি। বাড়িতে মা একলা। মায়ের শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না।

কিরণশঙ্কর অনিমেষের মুখের দিকে তাকাল, আবার আসছ কবে?

অনিমেষ অস্ফুট গলায় 'দেখি' বলেই কিরণশঙ্করের পায়ের ওপর ঝুঁকে পড়ল। প্রণাম করবে বলে।

কিরণশঙ্কর অনিমেষের মাথায় হাত রাখল, সাবধানে যেও। তারপর যেন নিজেকে শুনিয়ে বলছে এমনভাবে বলল, বাড়ি ফিরতে তোমার যত রাতই হোক, দেখবে তোমার মা খাবার আগলে বসে থাকবেন ঠিক। তোমাকে কড়া নাড়তেও হবে না, মা ঠিক বুঝে যাবেন তুমি বাড়ি ফিরেছ।

অনিমেষ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। অনিমেষের এই নিশ্চুপ ভঙ্গিতে কিরণশঙ্কর সাহস পেল যেন, শুনেছি তোমার মা খুব কষ্ট করে মানুষ করেছেন তোমায়। তাই না?

-  লোকের বাড়ি রান্না করে মা আমার কলেজের মাইনে জুগিয়েছে। অনিমেষ আস্তে করে বলল।

তোমাকে ঘিরেই তো মায়ের যাবতীয় স্বপ্ন ছিল। এইটুকু বলে কিরণশঙ্কর যখন দেখল অনিমেষ অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রয়েছে তার মুখের দিকে, তখন বাকী কথাটুকু ভরিয়ে দিল তীব্র শ্লেষে, বৃদ্ধ বয়সে ছেলে বউয়ের কাছ থেকে একটু সেবাযত্নের লোভও হয়ত ছিল মনে মনে।

-  ওঃ !

কিরণশঙ্কর দেখল অনিমেষ দুহাতে তার মুখ ঢেকেছে। মাথা নাড়ছে বিকারগ্রস্ত মানুষের মতো।

রাতে খেতে বসে মনোরমার মুখ গম্ভীর, কি বলেছ তুমি অনিমেষকে?

কিরণশঙ্কর এ প্রশ্নের কোন জবাব দিল না। চুপচাপ খেতে লাগল।

-  যাবার সময় অনিমেষ কি অসভ্যের মতো ব্যবহার করল রত্নার সঙ্গে।

কিরণশঙ্কর যেন মজা পেয়েছে, আর রত্না কি করল?

-  বেচারি সেই থেকে শুধু কেঁদেই চলেছে। আমি ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না।

পরদিন বৈকালিক আড্ডায় কিরণশঙ্কর যখন নানাবিধ আলোচনায় হাসছিল, কখনও বা চটুল মন্তব্যও করছিল, স্বল্পভাষী বসন্তবিকাশ হঠাৎই তার দিকে চেয়ে বলল, শরীর কেমন আছে? শীত শীত ভাবটা কমেছে?

কিরণশঙ্কর হাসল, অপেক্ষাকৃত কম মনে হচ্ছে। ডাক্তার টাক্তার বোধহয় দেখাতে হবে না।

এরপর সার্কিট হাউসের বাগানের গা ঘেঁসে টুকটুক করে হাঁটতে হাঁটতে কিরণশঙ্কররা যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিল।

প্রতিদিনের মতোই দরজা খুলল মনোরমা। কড়া নাড়া মাত্রই। তারপর কিরণশঙ্কর হাত মুখ ধুয়ে বৈকালিক পোশাক বদলে আলো জ্বেলে তার নিজের ঘরের চৌকিতে বসল। বেশ আরাম করে। আর বহু পুরনো একটা ভঙ্গিতে মনোরমাকে ডাকল, একটু চা হবে নাকি ব্রাহ্মণী?

চায়ের কাপ হাতে মনোরমা ঘরে ঢুকতেই কিরণশঙ্কর ইশারায় তাকে নিজের পাশের জায়গাটুকু দেখাল – বস না, এইখানে।

কিরণশঙ্করের নির্দেশ মতো মনোরমা বসল। মনোরমার মুখখানি ভারি। থমথমে। সামান্যক্ষণ নিশ্চুপ বসে থেকে সে তার বুকের মধ্যে থেকে একটি পোস্টকার্ড বার করে এগিয়ে দিল কিরণশঙ্করের দিকে।

কিরণশঙ্কর চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। তারপর পোস্টকার্ড লেখা দুকলমের ছোট্ট চিঠিখানা পড়ল বেশ কয়েকবার। তাদের একমাত্র ছেলে, সনৎ, লিখেছে দিল্লী থেকে।

মনোরমা আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, ও কি কোম্পানির ফ্ল্যাট পেয়েছে?

কিরণশঙ্কর মাথা দোলাল, কিনেছে। ওনারসীপ ফ্ল্যাট।

-  তার মানে?

কিরণশঙ্কর হাসবার চেষ্টা করল, তোমার ছেলে রাজধানীতে নিজের বাড়ি কিনেছে। পাকাপাকি ওখানেই থাকবে বলে।

এরপর কিছুক্ষণ দুজনেই মাথা নামিয়ে বসে রইল চুপ করে। একসময় কিরণশঙ্কর তার স্ত্রীর পিঠের ওপর হাত রাখল আলতো করে, তোমার কি শরীর খারাপ করছে?

মনোরমা এ কথার কোন জবাব দিল না।

অমন জড়োসড়ো হয়ে বসে আছ কেন? কিরণশঙ্কর বলল, তোমার কি শীত করছে?

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

লেখক পরিচিতি –

লেখালেখির শুরু নব্বই দশকে। বর্তমানে সাতটি গল্প সংকলন এবং তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক হিসেবে সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন।

একটি বানিজ্যিক লিটল মাগাজিনের নিয়মিত লেখক।  ২০১৬ সালে কলকাতা লিটল ম্যাগাগিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র দ্বারা সেরা গল্পকারের পুরস্কার  লাভ করেন। 

' সাইন্যাকস'  পত্রিকা এবং 'অনুভব' সাহিত্য পত্রিকাদ্বারা  সেরা গল্পকার হিসেবে সম্মানিত।

 

shimultala-story-galpo-by-bimal-gangopadhaya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-শিমূলতলা-গল্প-বিমল-গঙ্গোপাধ্যায়