ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ৬৩
They
might ignore me immediately
In my
moon suit and funeral veil.
I am no
source of honey
So why
should they turn on me?
Tomorrow I will be sweet God ,I will set them free.
আজকের গোটা দিনটাই যেন অন্যরকম। রঞ্জা বউদির বাড়িতে
খোলা টেরেসে একা দাঁড়িয়েছিল বাভ্রবি।রাত প্রায় ১১টা বাজে।ভেতরের ঘরে রঞ্জা বউদি রূপালীকে খাবার দেবার
আগে কিছু মেডিসিন দিচ্ছে।প্রায়
একমাস হতে চলেছে--রূপালী ধীরে ধীরে
বেরিয়ে আসছে ট্রমা থেকে। রঞ্জাবতী--মানে রঞ্জাবৌদি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন--।
আজকের দিনটি একদম অন্য রকম। টেরেসের খোলা হাওয়া--শরতের আকাশে একফালি চাঁদ--দুর্গা পূজা,লক্ষ্মীপুজোর
পর চাঁদ ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে--';এবার দীপাবলিতে
পুরোটাই মিলিয়ে যাবে। যুধাজিত আর সুজয়দা দুজনেই যুধাজিতের
এক সহকর্মী--না দুই সহকর্মীর বিয়ে
এটেন্ড করতে গেছে। দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে।
দুজনেই যুধাজিতের ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপক। মহিলা
বিধবা,আর পুরুষ ডিভোর্সি। দুজনেরই আগের
বিয়ের ছেলে, মেয়ে
রয়েছে। রাজেশ--রাজেশ ভোঁসলে! ভীষণই স্মার্ট;এবং
বাভ্রবির মনে হয়েছে কিছুটা ধান্দাবাজ! যুধাজিতের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে দেখেছে
যুধাজিত এ ব্যাপারে সহমত নয়। বাভ্রবি আর
এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। রাজেশের ছেলে আর রূপালীর ছেলে এক বয়সী।
--:তো,মনের মিল না হলে তো ডিভোর্সই বেটার--রাজেশের বউ এবং
শ্বশুর বাড়িরই প্রবলেম।"
--"সে তো
তুমি ওর মুখ থেকে শুনেছো--"
--"তাছাড়া,--"
যুধাজিত একটু বিরক্ত হয়েই বলেছিল--"তাছাড়া কি?"
বাভ্রবি নিজেকে সামলে নিয়ে
বলেছিল
--"না,কিছু
না--"
--"তো,তুমি
বিয়েতে যাবে না?"
-"না,আমার একটু অন্য
কাজ--"
--"তোমার ও
কিন্তু নিমন্ত্রণ ছিল--"যুধাজিত স্পষ্টতই
বিরক্ত।
বাভ্রবি হেসে জবাব দিয়েছিল--"নিমন্ত্রণপত্রটা ওরা দুজন তোমাকে অফিসে দিয়েছে--এবং আমাকে একবার ফোন কিংবা মেসেজ ও করেনি--।"
--"তো?"
বাভ্রবি এবার জোরে হেসেই জবাব দিয়েছিল
--"তো,আমি না
গেলে ওরা খুব আপসেট হবে বলে মনে হয় না-ইউ গো--এনজয়। আমার আজ রঞ্জাবৌদির বাড়ি
যাবার আছে।"
--"রঞ্জা বৌদির
বাড়ি? কিন্তু সুজয়দার ও তো
সস্ত্রীক --"যুধাজিতের যুগল-ভুরুতে
প্রশ্ন
--"হ্যাঁ,কিন্তু রঞ্জাবৌদি ও যেতে পারবে না--"
--"কেন?"
--"আজ
রঞ্জাবৌদির ছোট্ট ক্লিনিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠান--আর তারপর সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে রূপালীর জন্ম দিন উপলক্ষে একটি ছোট খাটো ঘরোয়া আড্ডা রেখেছেন।"
--"তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং--"যুধাজিতের
গলায় কি একটু শ্লেষের সুর?
--"তা বৌদির
ক্লিনিক কোথায় হচ্ছে?"
--"উনি একটা
এন জি ওর সঙ্গে কাজ করছেন। তারা এখানকার
মহল্লা--মানে এই বস্তি অঞ্চলে কাজ
করে--তো,বৌদির ক্লিনিক কাটোরিয়া সরাইতেই
।উনি অলরেডি ওখানে দুবেলা আসা যাওয়া
করছেন।"
--"হুঁ।
সমাজসেবা!"
বাভ্রবি একথার কোনও
জবাব দেয়নি। যুধাজিতই আবার প্রশ্ন
করেছিল
--"রূপালী
এখন তো ভালই আছে। ওর জবানবন্দীর ভিত্তিতে সপ্তর্ষিকে একরাত পুলিশ কাষ্টডিতে
থাকতে হয়েছে। অবশ্য এখন জামিন পেয়ে গেছে। ওর লিভ ইন পার্টনার খুব চেষ্টা
করেছে ওর বেইল এর জন্য। আমাদের
ডিপার্টমেন্টে ও এসেছিল।"
বাভ্রবি মনে মনে হাসল।
যুধাজিত ফের বলল--"যাই বলো,রূপালী
এটা ঠিক কাজ করে নি। আফটার অল দীর্ঘ ২৫ বছরের
দাম্পত্য জীবন--;এখন ও তো
আইনত ওদের ডিভোর্স হয় নি।" এবারে একটু হেসেই জবাব দিয়েছিল
বাভ্রবি।
--"সেই তো! ২৫ বছরের সুখী দাম্পত্য জীবনের
সুখ ভুলে গিয়ে একজন স্বামী তার জীবন সঙ্গিনীকে ডিচ মেরে পরকীয়া প্রেমে
লিপ্ত হতে পারে--আর সেই সঙ্গিনী দুঃখে,শোকে
আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারে--তাতে কোনও
দোষ নেই। দোষ শুধুমাত্র অন্যায়ের
প্রতিবাদ করায়। সাবাস
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।"
এবারে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যুধাজিত
জবাব দিয়েছিল--"না,মানে আমি
ঠিক সেভাবে বলতে চাইনি--" বাভ্রবি
ওকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল
--"তবে,ফর
ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন, রূপালী ওর
স্বামী সপ্তর্ষির বিরুদ্ধে ডিভোর্স এর মামলাও করেছে। তবে ভরণপোষণ অবশ্যই
দিতে হবে। কারণ ও কোনও চাকরি করে
না-। বাই দ্য ওয়ে,তোমার কলিগের
কবে ওর প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স
হলো? খোরপোষ -"
যুধাজিত এবার
হেসেই বলল--"আরে ডিভোর্স না
হলে ও আবার বিয়ে করছে কি করে?তবে ওরা
দশ বছর সেপারেটেড ছিল,সুতরাং এমনিতেই আগের বিয়েটা নাকচ হয়ে গেছে। খোরপোষ টোষ দিতে
হয় নি।"
--:বাহ্--তাহলে
আরকি--ভালই হলো।--" জানালার বাইরে
মাধবীলতার ফুলে একটি সুন্দর প্রজাপতি মধুপান করছিল। সেদিকে তাকিয়ে
হঠাৎই যেন মনে পড়ে গেল বাভ্রবির--জিজ্ঞেস
করল--"আচ্ছা,তোমাদের আরেক কলিগ,নন্দিনী ব্যানার্জির
কি খবর?" যুধাজিতের ভ্রূ আবার
কুঞ্চিত--"হঠাৎ নন্দিনীর খবর
কেন জানতে চাইছো?"
--:"না,এমনি
জিজ্ঞেস করছি। সে ও নিশ্চয়ই আসছে বিয়েতে--"
যুধাজিত টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে আনমনেই জবাব দিল--"না। সি ইজ নাউ আউট ওব দ্য
কান্ট্রি--ও দুবছরের জন্য জার্মানীতে আছে--"
হাসল
বাভ্রবি--"আমার ও মনে হচ্ছিল ও এই বিয়েটা এটেন্ড করবে না!"
-"তোমার ও মনে হচ্ছিল, কেন?"
বাভ্রবির চোখের সামনে আল্পস পাহাড়ের চুড়ো;সুন্দর কাঁচ ঘেরা একটি ট্রেনে ওরা পাহাড়ে উঠে
যাচ্ছে--সামনে পেছনে ইঞ্জিন--অসাধারণ বরফ
মোড়া আল্পসের চুড়ো--গরনারগ্রাট ওদের
গন্তব্য স্থল। সত্যিই যেন পৃথিবীর স্বর্গ। মাঝে মাঝে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে
একটি ষ্টেশনে --সবাই নেমে গিয়ে ভিউপয়েন্টে দাঁড়িয়ে অপরূপ সৌন্দর্য
দেখে এবং ছবি তুলে আবার ট্রেনে উঠে
পড়ছে--এই জুন মাসেও বরফের পাতলা ফ্লেকস গুলো ঝরে পড়ছে---। যুধাজিতের সঙ্গে একটি কনফারেন্সে এসেছিল বাভ্রবি;অধ্যাপক ভোঁসলে আর এসিট্যান্ট অধ্যাপক নন্দিনী ব্যানার্জি এবং কয়েকটি ছাত্র ছাত্রীও এসেছে--;সবাই দারুণ
এনজয় করছিল;হঠাৎই এরকম একটি ভিউপয়েন্টে মুভি ক্যামেরা
ঘোরাতে ঘোরাতে বাভ্রবির ক্যামেরার
লেন্স স্থির হয়ে গেল একটি যুগল মূর্তিতে;হুডি থাকা
সত্ত্বেও বাভ্রবির চিনতে অসুবিধে হলো
না--বরফের কুচি মেখে জড়াজড়ি করে যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে--তারা রাজেশ এবং
নন্দিনী---।
ক্রমশ …………
৬৪তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত
গ্রন্থ
২--দেবী দহন--(কবিতা