Advt

Advt

bigyanvittik-ekdin-galpo-story-by-sanjay-sarkar-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বিজ্ঞানভিত্তিক-একদিন-সঞ্জয়-সরকার

bigyanvittik-ekdin-galpo-story-by-sanjay-sarkar-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বিজ্ঞানভিত্তিক-একদিন-সঞ্জয়-সরকার

ভোরবেলা সূর্য তখনো পুরোপুরি ওঠেনি, এমন সময় অনন্যার অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে উঠল। সে চোখ মুছে ঘড়ির বাটন চেপে দিল — পাঁচ মিনিটের ‘স্নুজ’। ছোট্ট এই কাজটাই কিন্তু সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের কারণে। ঘড়ির ভেতরে থাকা ইলেকট্রনিক সার্কিট সারারাত ধরে নির্ভুলভাবে সময় গুনেছে একটি ব্যাটারির শক্তিতে।

বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সে বাথরুমে গেল। দাঁত ব্রাশ করল মিঠে মিন্ট-ফ্লেভারের টুথপেস্ট দিয়ে। জানে না হয়তো, এই টুথপেস্টে থাকা ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে — এ তো বিজ্ঞানেরই দান। নলের জলও কিন্তু বিশুদ্ধ করা, জীবাণুমুক্ত — জল পরিশোধনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।

নিচে রান্নাঘরে মা তখন সকালের প্রাতরাশ বানাচ্ছেন। টোস্টার থেকে বেরিয়ে এলো গরম টোস্ট। দুধ ফুটছে গ্যাসে। আর একটি নন-স্টিক প্যানে ডিম ভাজছেন মা। “জানো, এই প্যানে একটা বিশেষ আবরণ আছে যাকে বলে টেফলন,” মা বললেন হেসে, “এইজন্য কিছুই আটকে যায় না।” অনন্যা হেসে মাথা নাড়ল। সে এসব পড়েছে তার বিজ্ঞান বইয়ে।

প্রাতরাশ খেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফোনে আবহাওয়ার খবর দেখল অনন্যা। বলা হয়েছে বিকেলে বৃষ্টি হতে পারে। সে ব্যাগে একটি ছোট ছাতা ভরে নিলো। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস meteorologyঅর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের বিজ্ঞান — এর ফল। আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া গেলো।

স্কুলবাসে চেপে যাওয়ার সময় সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। রাস্তায় যানবাহন চলছে, গাড়ির ইঞ্জিনে পেট্রোল বা ডিজেল পুড়ে শক্তি তৈরি হচ্ছে — এই জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করাকে বলে দহন বা combustion, যা রসায়নেরই একটা শাখা। রাস্তার ট্রাফিক লাইট, সিগন্যাল, এমনকি ব্রিজগুলোর নকশাও তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানের জ্ঞানে।

স্কুলে পৌঁছে প্রথম পিরিয়ডেই ছিল জীববিজ্ঞান। আজ শেখানো হলো মানুষের হৃদপিণ্ড কীভাবে সারা দেহে রক্ত পাম্প করে। “এ তো একেবারে প্রাকৃতিক যন্ত্র!” — ভাবল অনন্যা। তারপরে বিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষক দেখালেন কীভাবে ভিনেগার আর বেকিং সোডা মেশালে গ্যাস তৈরি হয়। ছোট্ট একটি পরীক্ষাগারে যেন এক রসায়ন মেলা বসে গেল!

দুপুরে টিফিন খোলার সময় অনন্যা দেখল, তার খাবার গরম রয়েছে। তার লাঞ্চ বক্সটি এমন এক ধরনের প্লাস্টিকে তৈরি যেটা তাপ ধরে রাখে। জুস খাচ্ছে এমন একটি কার্টন থেকে যেটা বিজ্ঞানের সাহায্যে দীর্ঘদিন তাজা থাকে। তার ব্যবহার করা ন্যাপকিন, সফট টিস্যুগুলোও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তৈরি।

স্কুল ছুটির পর সে তার দিদার সঙ্গে গিয়েছিল একটি ক্লিনিকে। দিদার রুটিন চেক-আপ। ডাক্তারবাবু ব্লাড প্রেশার মেপে দেখলেন, স্টেথোস্কোপ দিয়ে হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনলেন। এইসব চিকিৎসা সরঞ্জাম সবই বিজ্ঞানের দান।

বাড়ি ফিরে সে পড়তে বসল। তার ডেস্কের টেবিল ল্যাম্পটি LED আলো — বিদ্যুৎ কম খরচে বেশি আলো দেয়। সে গুগলে খুঁজে দেখল একটি প্রশ্নের উত্তর — ইন্টারনেট, কম্পিউটার, সার্ভার — সবকিছুই প্রযুক্তিবিদ্যার উপহার।

রাতের খাবারে মা বললেন, “আজ আমি ফ্রিজে রাখা মাছ দিয়ে রান্না করেছি।” হ্যাঁ, ফ্রিজ — ঠাণ্ডার বিজ্ঞান (refrigeration) — এরই চমৎকার প্রয়োগ। খাবার বহুদিন সতেজ রাখে।

ঘুমাতে যাবার আগে অনন্যা জানালার বাইরে তাকাল। আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। সে ভাবল — চাঁদ, তারা, গ্রহ — এসব তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়। টেলিস্কোপ আর রকেট দিয়ে মানুষ আজ মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে!

বিছানায় শুয়ে সে ভাবল, আজ সারাদিনে এত কিছু করল — কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তেই বিজ্ঞান তার পাশে ছিল। দাঁত মাজা, জল খাওয়া, পথ চলা, ক্লাসে শেখা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম — সবকিছুর পেছনে বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে — ছোট থেকে বড় — কোনও না কোনোভাবে যুক্ত। আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন, খাবারের সংরক্ষণ, জ্ঞানার্জন, যাতায়াত, যোগাযোগ, এমনকি বিনোদন — সবকিছুর ভিত্তিতেই আছে বিজ্ঞান। তাই বলা যায়, বিজ্ঞান শুধু বইয়ের বিষয় নয়, সে আমাদের নীরব সহচর — প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

ভোরবেলা সূর্য তখনো পুরোপুরি ওঠেনি,এমন সময় অনন্যার অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে উঠল। সে চোখ মুছে ঘড়ির বাটন চেপে দিল — পাঁচ মিনিটের ‘স্নুজ’। ছোট্ট এই কাজটাই কিন্তু সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের কারণে। ঘড়ির ভেতরে থাকা ইলেকট্রনিক সার্কিট সারারাত ধরে নির্ভুলভাবে সময় গুনেছে একটি ব্যাটারির শক্তিতে।

বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সে বাথরুমে গেল। দাঁত ব্রাশ করল মিঠে মিন্ট-ফ্লেভারের টুথপেস্ট দিয়ে। জানে না হয়তো,এই টুথপেস্টে থাকা ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে — এ তো বিজ্ঞানেরই দান। নলের জলও কিন্তু বিশুদ্ধ করা, জীবাণুমুক্ত — জল পরিশোধনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।

নিচে রান্নাঘরে মা তখন সকালের প্রাতরাশ বানাচ্ছেন। টোস্টার থেকে বেরিয়ে এলো গরম টোস্ট। দুধ ফুটছে গ্যাসে। আর একটি নন-স্টিক প্যানে ডিম ভাজছেন মা। “জানো, এই প্যানে একটা বিশেষ আবরণ আছে যাকে বলে টেফলন,” মা বললেন হেসে, “এইজন্য কিছুই আটকে যায় না।” অনন্যা হেসে মাথা নাড়ল। সে এসব পড়েছে তার বিজ্ঞান বইয়ে।

প্রাতরাশ খেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফোনে আবহাওয়ার খবর দেখল অনন্যা। বলা হয়েছে বিকেলে বৃষ্টি হতে পারে। সে ব্যাগে একটি ছোট ছাতা ভরে নিলো। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস meteorologyঅর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের বিজ্ঞান — এর ফল। আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া গেলো।

স্কুলবাসে চেপে যাওয়ার সময় সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। রাস্তায় যানবাহন চলছে, গাড়ির ইঞ্জিনে পেট্রোল বা ডিজেল পুড়ে শক্তি তৈরি হচ্ছে — এই জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করাকে বলে দহন বা combustion, যা রসায়নেরই একটা শাখা। রাস্তার ট্রাফিক লাইট, সিগন্যাল, এমনকি ব্রিজগুলোর নকশাও তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানের জ্ঞানে।

 

স্কুলে পৌঁছে প্রথম পিরিয়ডেই ছিল জীববিজ্ঞান। আজ শেখানো হলো মানুষের হৃদপিণ্ড কীভাবে সারা দেহে রক্ত পাম্প করে। “এ তো একেবারে প্রাকৃতিক যন্ত্র!” — ভাবল অনন্যা। তারপরে বিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষক দেখালেন কীভাবে ভিনেগার আর বেকিং সোডা মেশালে গ্যাস তৈরি হয়। ছোট্ট একটি পরীক্ষাগারে যেন এক রসায়ন মেলা বসে গেল!

দুপুরে টিফিন খোলার সময় অনন্যা দেখল, তার খাবার গরম রয়েছে। তার লাঞ্চবক্সটি এমন এক ধরনের প্লাস্টিকে তৈরি যেটা তাপ ধরে রাখে। জুস খাচ্ছে এমন একটি কার্টন থেকে যেটা বিজ্ঞানের সাহায্যে দীর্ঘদিন তাজা থাকে। তার ব্যবহার করা ন্যাপকিন, সফট টিস্যুগুলোও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তৈরি।

স্কুল ছুটির পর সে তার দিদার সঙ্গে গিয়েছিল একটি ক্লিনিকে। দিদার রুটিন চেক-আপ। ডাক্তারবাবু ব্লাড প্রেসার মেপে দেখলেন, স্টেথোস্কোপ দিয়ে হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনলেন। এইসব চিকিৎসা সরঞ্জাম সবই বিজ্ঞানের দান।

বাড়ি ফিরে সে পড়তে বসল। তার ডেস্কের টেবিল ল্যাম্পটি LED আলো — বিদ্যুৎ কম খরচে বেশি আলো দেয়। সে গুগলে খুঁজে দেখল একটি প্রশ্নের উত্তর — ইন্টারনেট, কম্পিউটার, সার্ভার — সবকিছুই প্রযুক্তিবিদ্যার উপহার।

রাতের খাবারে মা বললেন, “আজ আমি ফ্রিজে রাখা মাছ দিয়ে রান্না করেছি।” হ্যাঁ, ফ্রিজ — ঠান্ডার বিজ্ঞান (refrigeration) — এরই চমৎকার প্রয়োগ। খাবার বহুদিন সতেজ রাখে।

ঘুমাতে যাবার আগে অনন্যা জানালার বাইরে তাকাল। আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। সে ভাবল — চাঁদ, তারা, গ্রহ — এসব তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়। টেলিস্কোপ আর রকেট দিয়ে মানুষ আজ মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে!

বিছানায় শুয়ে সে ভাবল, আজ সারাদিনে এত কিছু করল — কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তেই বিজ্ঞান তার পাশে ছিল। দাঁত মাজা, জল খাওয়া, পথ চলা, ক্লাসে শেখা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম — সবকিছুর পেছনে বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে — ছোট থেকে বড় — কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন, খাবারের সংরক্ষণ, জ্ঞানার্জন, যাতায়াত, যোগাযোগ, এমনকি বিনোদন — সবকিছুর ভিত্তিতেই আছে বিজ্ঞান। তাই বলা যায়, বিজ্ঞান শুধু বইয়ের বিষয় নয়, সে আমাদের নীরব সহচর — প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখক পরিচিতি –

সঞ্জয় সরকার থাকেন রায়গঞ্জ-এ। ছোট থেকে লেখালেখির অভ্যাস,তিনি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন ও আরো উচ্চ শিক্ষার মধ্যে আছেন। সাহিত্যকে ভালবাসেন তাই সময় পেলেই লিখতে বসে যান।