Advt

Advt

nandan-kanan-garden-of-eden-story-from-old-testament-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-নন্দন-কানন-নন্দিতা-সাহা

nandan-kanan-garden-of-eden-story-from-old-testament-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-নন্দন-কানন-নন্দিতা-সাহা

ঈশ্বর তাঁর স্বর্গে অপূর্ব এক বাগান তৈরি করলেন. অপূর্ব সুন্দর স্বর্গ উদ্যানের নাম দিলেন নন্দনকানন {ইডেন গার্ডেন}। নানা রঙ্গের ফুল,ফল গাছ। তাদের নানা আকার। প্রজাপতি,মৌমাছি উড়ে বেড়ায়,কাঠবিড়ালি ছুটে বেড়ায়,হরিণ দৌড়ে বেড়ায় ।

বাগানের নানা বৃক্ষর মধ্যে,ঠিক মাঝখানে দুটি বৃক্ষ রোপণ করলেন,একটি  জ্ঞান বৃক্ষ[  ট্রি অফ নলেজ অফ গুড এন্ড ইভিল]  অন্যটি জীবন বৃক্ষ {ট্রি অফ লাইফ}

ঈশ্বর তাঁর প্রিয় মানুষ কে এনে রাখলেন বাগানে। এইখানে সে ঈশ্বরের সামনে ঘুরে বেড়াবে,খেলবে,হাসবে,এখানে তাঁর অবাধ বিচরণ। প্রভু তাঁর  আদরের মানুষের নাম দিলেন,আদম। ঈশ্বর আদম কে বললেন,“এই বাগানে তোমার অবাধ বিচরণ। সব গাছের ফল যে কোন সময় তুমি খাবে। কিন্তু  ওই যে  বিশেষ  গাছটি!   জ্ঞান বৃক্ষ!  এর ফল কোন দিন খাবে না।  ওটি নিষিদ্ধ ফল।  যদি খাও তবে তোমার মৃত্যু অবধারিত ।

ঈশ্বর তাঁর সাধের নন্দন কাননে সকল  প্রাণীদের  জায়গা দিলেন। তারা ঘুরে বেড়ায়,খায়,নিজের মত থাকে। কিন্তু তারা কেউ আদমের উপযুক্ত নয়। আদম সারা বাগানে  একা-একা ঘুরে বেড়ায়,বড্ড মনমরা,আদমের মুখে হাসি নেই। ঈশ্বর অনুভব করলেন আদমের এই একাকীত্ব ঘোচাতে হবে। আদমের একটি সাথি চাই  যার  সাথে সে খেলবে,ঘুরবে,হাসবে,আনন্দে থাকবে। কিন্তু কি করে সেই সঙ্গী বানাবেন? ঈশ্বর গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। অবশেষে তাঁর মুখে হাসি ফুটল।

ঈশ্বর তাঁর প্রভাব বিস্তার করে আদমকে ঘুম পাড়িয়ে  দিলেন। গভীর ঘুমে  আচ্ছন্ন  আদম। ঈশ্বর আদমের বুকের বাঁ দিকের একটি পাঁজর খুলে,ক্ষত জায়গাটি ভরে দিলেন। সেই পাঁজর দিয়ে সৃষ্টি করলেন এক নারী। আদম কে উপহার দিলেন।  ঘুম ভেঙ্গে  আদম ভারি খুশি। আদম সেই নারীর নাম দিলেন,ইভ। এবার ইভের সাথে তাঁর আনন্দে দিন কাটে। আদমের সর্বক্ষণের সঙ্গী হল ইভ।  আদম –ইভ।

নন্দন কাননে তারা যত্র তত্র ঘুরে বেড়ায়. তাদের শরীর নগ্ন,উন্মুক্ত। তাদের মন সহজ,সরল,পবিত্র। লজ্জা,ভয়,সঙ্কোচ কিচ্ছুটি নেই,চোখে মুখে কেবল প্রশান্তি। দুজনেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য। দুটি নর নারী সৃষ্টি করে ঈশ্বরও  তৃপ্ত  আনন্দিত। সুখে দিন কাটে আদম ইভের।

হঠাৎ একদিন —----------!!!!!!

 স্বর্গ হইতে বিদায়

হঠাৎ একদিন —-------------!!  এক সরীসৃপ ইভের কাছে এসে  হিস  হিস  করে বলল,ওই যে লাল টুকটুকে ফল দেখছো!  ওটা দারুণ সুস্বাদু। ওটা জ্ঞান বৃক্ষর ফল ।  ওটা খেলে তুমি অনেক কিছু জানবে,বুঝবে  এবং তুমি ঈশ্বরের সম্মান  জ্ঞানী  হবে। তোমার অনেক ক্ষমতা হবে।

ইভ ছুটে গেল জ্ঞান বৃক্ষের কাছে. সত্যি ভারি সুন্দর দেখতে ফল. ইভ হাত বাড়াল,টুক  করে একটি ছিঁড়ে,চারিদিক দেখে নিলো। এইবার একবার ঘ্রাণ নিলো,তাঁর পরই এক কামড়! ওহ !! কি স্বাদ !! মুখ একেবারে মিষ্টি  রসে ভরে গেল। গলা ছেড়ে ডাকল,আদম,আদম!!ইভের  ডাকে  ছুটে  এলো আদম ।

- দ্যাখো,কি সুন্দর,কি সুস্বাদু!

আদমের মুখের সামনে  জ্ঞান বৃক্ষের ফল তুলে ধরল ইভ। আদম ও  কামড় দিল, মুখ তাঁর রসে ভরে গেল। ঠিক যেন অমৃত !!

কিন্তু  মুহূর্তে দুইজনের সেই অনাবিল আনন্দ,শান্তি কেমন যেন মিইয়ে গেল। নিজেদের দিকে তাকিয়ে অবাক!  ছি ছি কি লজ্জা! তারা উলঙ্গ!! দুজনেই ছুটে গেল গাছের আড়ালে,লুকতে  চাইছে! গাছের বাকল দিয়ে নিজেদের উন্মুক্ত দেহ ঢাকার চেষ্টা করছে ।

nandan-kanan-garden-of-eden-story-from-old-testament-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-নন্দন-কানন-নন্দিতা-সাহা

ঈশ্বর তখন প্রতিদিনকার মত বিকেলের মিষ্টি আলোয় বেরিয়েছেন,একবার তাঁর সাধের কানন ঘুরে দেখবেন,দেখবেন আদম - ইভ কে। ঈশ্বর কে দেখেই আদম -ইভের বুকের ভেতর দুরুদুরু শুরু হল। সেই প্রথম ভয়,প্রথম লজ্জা,সঙ্কোচ, অপরাধ  অনুভব করল। ভয়ে তারা গাছের আড়ালে লুকল। ঈশ্বর তাদের এমন অদ্ভুত আচরণে অবাক হয়ে যান। আগে তো ওরা এমনটা  করেনি! আজ কি এমন হল! ঈশ্বর তাদের কাছে ডাকলেন,আদম ইভ তোমরা এভাবে লুকিয়ে থেক না,নিজেদের প্রকাশ করো ।

কম্পিত পায়ে দুই জনেই এসে দাঁড়াল,ভীত সন্ত্রস্ত। তারা জঘন্য অপরাধ করেছে. ঈশ্বরের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে,প্রভুর অবাধ্য হয়েছে। বলল -

_ আমরা উলঙ্গ ছিলাম,নগ্ন। তাই আমরা গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম।

_ কে তোমাদের বলল তোমরা নগ্ন! তোমরা কি সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছ?

ঈশ্বর ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর গভীর

_   কেন এমন করলে! আমি তো তোমাদের জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেতে না করেছিলাম,তবুও!! লোভ!  কে তোমাদের  প্রলুব্ধ করল! কে তোমাদের  বিপথে ঠেলে দিল !!

ইভের ছোট্ট উত্তর -

_ ওই সরীসৃপ! সেই আমাকে বলেছে লোভ দেখিয়েছে,পথ ভ্রষ্ট করেছে। বলেছে এটি সুস্বাদু ।

ঈশ্বরের বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস। আর কিছু করার নেই। প্রভু ক্ষুব্ধ,বিরক্ত,সরীসৃপকে অভিশাপ দিলেন,চিরকাল সে মাটির ওপর এমন ভাবেই বুকে ঘষে চলবে।  শিরদাঁড়া  সোজা করে উঠে  দাড়াতে   পারবে না। চিরকাল মনুষ্য জাতির শত্রু হয়ে থাকবে। তাঁর কোন মিত্র থাকবে না ।

কিন্তু   আদম -ইভ! তাদের কি শাস্তি হবে?ঈশ্বর যে তাদের পরম যত্নে নিখুঁত ভাবে বানিয়েছেন. প্রভু যে তাদের বড় ভালবাসেন। কিন্তু শাস্তি তো তাদের পেতেই হবে। আর এই বাগানে নয়,এই মুহূর্তে তাদের এই স্থান ত্যাগ করতে হবে। তারা চলে যাবে ওই নীচে,পৃথিবীতে,নরক  কুণ্ডে। স্বর্গের দ্বার তাদের জন্য রুদ্ধ।

প্রভু তাঁর প্রিয় ইভকে অভিশাপ দিলেন,নারীর  গর্ভে সন্তান থাকবে দশমাস।  চিরকাল সন্তানের জন্মদানের সময় অসম্ভব যন্ত্রণা ভোগ করবে। প্রভু আদম কে অভিশাপ দিলেন,পুরুষদের চিরকাল রৌদ্র,বৃষ্টি ঝরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল   ফলাতে  হবে।

আর তো এদের বিশ্বাস করা যাবে না! তারা যে এখন দোষে গুনে ভরা পাপী মানুষ। স্বর্গে তাদের জায়গা নেই। অভিশাপ মাথায় নিয়ে দুজন নন্দন কানন থেকে পৃথিবীর  দিকে পা বাড়াল। এরফলে স্বর্গ থেকে চিরকালের জন্য বিতাড়িত হল।  আর তারা ফিরে যেতে পারল না,পৃথিবী তাদের বাসস্থান হল।

তাদের একেবারে অন্যরকম জীবন শুরু হল পৃথিবীতে। কেবল  নিশ্চিন্তে  খেলে  বেড়ান নয়। কঠিন পরিশ্রম করে কঠিন মাটিতে ফসল ফলাতে হয় আদমকে, ইভের সারাদিন কেবল সংসারের কাজ। নিজের হাতে খাবার বানাতে হয়,গাছের ছাল ছাড়িয়ে পরিধান তৈরি করতে হয়। সারাদিন পর ইভের ক্লান্ত দেহ লুটিয়ে পড়ে।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম পশ্চিমবঙ্গ-র কুচবিহার শহরে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম কবিতার বই ' সুখের ঠিকানা', গল্প সংকলন 'চিরন্তন'। ইংরেজি কবিতার বই  'Bouuet of Poems'  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন। বেশকিছু কিশোর সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। 

স্টেটস্‌ম্যান, সুখবর, সকালবেলা ইত্যাদি খবরের কাগজে গল্প প্রকাশিত হয়েছে।  দেশ,  সানন্দা, প্রসাদ, সারথি পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। 'Times of India'-তে বেশ কয়েকবার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবনের শুরু।বর্তমানে কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখতেই বেশি ভাল বাসেন ।  বহু e magazine এ লেখেন ।  

natun-bachhar-short-story-galpo-by-nandita-saha-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-নতুন-বছর-নন্দিতা-সাহা