Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-61st-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-61st-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী
পর্ব-- ৬২

Hide me forever I work thrust I must free

Now I all muscles and bones concentrate

What is living from dying?

সে এক বীভৎস  কালিমালিপ্ত  গুপ্ত গহ্বর। কুণ্ডলী পাকিয়ে কয়েকটি সরীসৃপ--অমেরুদণ্ডী  শীতল   ঠাণ্ডা রক্তের কয়েকটি প্রাণী। --"যা--তু ভী বৈঠ  ইধার।"

দশ বছরের  রামদীন কে পশুর মতো ঠেলে দেওয়া হলো সেই  কাল কুঠুরিতে। কেউ  কারুর মুখ দেখতে পাচ্ছে না--গিনিপিগ  নীরবতায় নিথর--কয়েকটি মুখ অথবা মুখের অবয়ব। এই  বিবরে কারা থাকে--মানুষ? নাকি মানুষ ছিল কোনও একসময়--এখন, পোকা অথবা গিনিপিগ। গিনিপিগ শব্দটাই বোধহয় সবচাইতে উপযুক্ত। এরা কে কি কাজ করবে--সেটা নির্ধারণ  হবে ওদের শরীর,এবং কিছুটা কর্ম কুশলতার উপর।

--"কর্ম  কুশলতা? ঠিক  বুঝলাম  না--"

রামদীন হাতের কাজ নামিয়ে রেখে জোরে হেসে উঠেছিল।

--"আরে ম্যাডাম,এটার মানে হচ্ছে এদের  মধ্যে কাউকে দিয়ে ভিক্ষে করাবে, কাউকে দিয়ে চুরি--মানে পকেটমার, ছিনতাই--এসব।

--"তা,তুমি --"

রামদীন চোখের চশমা খুলে কি যেন ভাবল। হয়ত  সেই  গা ঘিনঘিনে শুঁয়োপোকা, কেন্নোর মত বিবরের,গুহার  জীবনটাকে  আবার  মেপে নিতে চাইলো।

--"ম্যাডাম  জি,আমাকে পরের দিন সর্দার তার বসের কাছে নিয়ে গেল।"

বস--একটা আলো আঁধারি গোলকধাঁধা  রচিত সোফায় বসেছিল--;ভাল  করে মুখটা দেখা যাচ্ছিল  না। রামদীন  কে চোখে,কালো কাপড় বেঁধে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল সর্দার  আর তার দুই  চ্যালা।

--"তোমাকে কি পায়দল নিয়ে গিয়েছিল  ওরা?"

--"নেঁহি, ম্যাডাম  জি--এক টেম্পো মেঁ লে গয়ে থে--"

--"তুমে ক্যায়সে পতা? তুমহারা আঁখে তো বন্ধ্  থা--"

--"আওয়াজ  সে পতা চলা--"

--"হুম। ফির--"

বস লোকটা কেউকেটা হবে। অন্তত  রামদীনের  এরকমটাই  মনে হচ্ছিল। একটা দামী কাঁচের  গ্লাসে মদ খাচ্ছিল--সামনে ছিল দামী বিলায়েতি মদের  বোতল।

--"তোমার  কি করে মনে হলো,লোকটা পাওয়ার  ফুল-"?

রামদীন চশমার  কাঁচ  পরিষ্কার  করে হাতের  কাজ সারতে সারতে জবাব  দিল--

--"ম্যাডাম  জি,ও পতা চল হি যাতা হ্যাঁয়।"

একটা লোক,সামনে এসে দাঁড়াল।  ছায়া পড়ল রামদীনের সামনে। বাভ্রবি একটু অবাক  হয়ে তাকালো। লোকটা নিজের  বুট পরা পা রামদীনের সামনে বাড়িয়ে বলল--"এ রামদীন, মেরা শু জরা আচ্ছা সে পলিশ কর দে--"

বাভ্রবি দেখল লোকটার পরনে পুলিশের  পোশাক।রামদীন  তড়িঘড়ি হাতের কাজ ফেলে বলল--"হাঁ,হাঁ,আইয়ে সাব জি। আভি কর দেতা  হুঁ--"

লোকটার বুটের উপর রামদীনের শ্রমিক হাত--;অভদ্রের মত লোকটা পান চিবোচ্ছিল--হঠাৎই  পিচ করে সামনের খোলা রাস্তায় পানের পিক ফেলে খ্যা খ্যা করে দাঁত বের করে হেসে বলল--"আরে রামদীন  ইয়ে ম্যাডাম  জী তেরা পাস--"

ত্রস্তে রামদীন  জবাব দিল  "জুতি  মেরামত  কে লিয়ে আয়ী হ্যাঁয় সাবজি।"

--"ও--"বলে একবার বাভ্রবির আপাদমস্তক দেখে হাতের লাঠি ঠুকে ঠুকে চলে গেল।

লোকটার  তাকানো,এটিটিউড--সব মিলিয়ে বাভ্রবির  লোকটাকে ভীষণই  খারাপ  একটা লোক বলে মনে হলো।

--"রামদীন,তুমনে উসকো বুট পলিশ কিয়া--তুমে প্যাইসা নেঁহি দিয়া--তুমনে মাংগা কিঁউ নেঁহি?

রামদীন  এবার  হাসল-

--"ম্যাডাম  জি আপকো তো পতা চল গিয়া কি ও পাওয়ারফুল হ্যাঁয়--"

বিরক্ত  সুরে বাভ্রবির  জবাব দিল--"কৌন  হ্যাঁয় ও--"

"হাসল রামদীন। বীট কনস্টেবল সাব--"

--তুম লোগো নে হি উসকো বড়ায়া--শর পেঁ চড়ায়া--"

রামদীন  এবার  দীর্ঘশ্বাস  ফেলে বলল

--"এইসা হি তো চল রঁহা হ্যাঁয়--ও যো বস থেঁ,ও কোঈ নেতা লৌগ হি থে--

সর্দার  ওর সাথে স্যার  স্যার বলে কথা বলছিল। সেই  নেতা অথবা নেতার কোনও  ধামাধরা--সেই  লোকটা রামদীনের গা,হাত পা টিপে টিপে দেখে বলল--""এটাকে দিয়ে ভিক্ষে করানো যাবে না--এতো হাট্টাকাট্টা শরীরে ভিক্ষে  চাইলে কেউ  ভিক্ষে দেবে না--। এটাকে দিয়ে চুরি করা--"!

--"তারপর? তুমি--?"বাভ্রবির  প্রশ্নের  উত্তরে  এবার  হাসল রামদীন।

--"আমি,আমার  মা,বাবুজি কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমি চোর হবো। কিন্ত  হলাম। দিল্লির  বিভিন্ন  বাসে উঠিয়ে দিতো--টুক করে ভিড় বাসে যাত্রীদের  পকেট  থেকে পার্স উঠিয়ে নিতাম--"

--"কেউ ধরতে পারত না?"

--"সহজে পারত না--আমার  পাশে আরও এক,দুজন থাকতো--যাদের  হাতে হাতে সেই  পার্স,পাচার হয়ে যেতো। এভাবেই  কেটে গেল দীর্ঘ  দশ টি বছর! দুবার ধরা পড়েছি--কয়েক মাসের হাজতবাসের পর ছাড়া পেয়ে ডেরায় পৌঁছে গিয়েছি। এভাবেই  হয়ত কেটে যেতো আমার  জীবন। পাক্কা চোর হয়ে উঠেছিলাম আমি। আমাকে একটি বাইক কিনে দিয়েছিল ওরা--সেই  বাইক নিয়ে আমি তখন শুধু পকেট মার নয়--মহিলাদের  গলা থেকে চেন টেনে নিতাম। মদ খেতে শিখেছিলাম। একেবারেই  নরকের  কীট হয়ে উঠেছিলাম। বলছিলাম  কি ম্যাডাম,এভাবেই  হয়ত  রামদীন  চোরের জীবন কেটে যেতো--কিন্ত  একদিন সব ওলটপালট হয়ে গেল--আমি মারিয়ার দেখা পেলাম--আর রামদীন  চোর থেকে  মানুষ  হয়ে গেল ম্যাডাম  জি--"

--মারিয়া?"

--"হ্যাঁ,ওড়িশার  কেওনঝাড়ের মেয়ে মারিয়া--আদিবাসী--মেয়ে ঈশ্বর  যেন কালো পাথর কুঁদে মারিয়াকে তৈরি করেছেন। ঐ যে আপনারা কি বলেন না--প্রস্তর- শিল্প! মারিয়া যেন এক প্রস্তর শিল্প!

আমি তখন বাইক নিয়ে দিল্লির  অলিতে  গলিতে মহিলাদের  গলার  চেন,ইত্যাদি চুরি করছি--হঠাৎই  একদিন রাত তখন আটটা হবে--নন্দনাগরির একটি গলিতে মারিয়া হেলে দুলে চলছিল--ওর গলার চেনটা রাস্তার  আলোয় ঝকঝক করছিল--আমি সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর চেনে হাত দিতেই  ও আমার  দিকে ফিরে তাকালো--তারপর  ম্যাডাম জি বিশ্বাস  করবেন না--ফিক করে হেসে বলল--"চেইন চাইয়ে? রুখ ! মেঁ নিকাল দেঁতি হুঁ--!"

আমি স্তম্ভিত  হয়ে তাকিয়ে রইলাম! ও ধীরে সুস্থে চেনটা খুলে আমার  হাতে দিয়ে বলল--"লে যা--লাগতো হ্যায় তেরা জরুরত মুঝসে জ্যাদা হ্যাঁয়!

আমার  গালে যেন ঠাস করে একটি চড় পড়ল। আমার  চোখের কোণে জল জমে উঠেছিল---

ক্রমশ …………

৬৩তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)

২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)