Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-57th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

পর্ব-- ৫৭

Although  it is a cold evening,

down by one of the fishhouses

an old man sits netting,

his net,in,the gloaming almost invisible.

"হোয়াট  ইজ জার্নালিজম?"

ইজ ইট অ্যা লাক্সারি?

পেরিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর  বিলাসিত  এভিন্যু, গোল খাম্বা----এসময় রাজধানীর  অফিস  আওয়ার  প্রায় শেষ--তাই যানজট বিহীন রাস্তায় লিখিত নিয়ম মেনে গাড়ি চালাচ্ছিল  বাভ্রবি।পাশে বসে অনীতা  --অনীতা গুপ্তা--;অনীতা ইলেকট্রনিক  মিডিয়ার  জন্য  কাজ করে।বাভ্রবির  মত ফ্রি ল্যান্সার নয়।পেছনের সিটি অরুণ আর অমিত--ফটো জার্নালিষ্ট।মুভি ক্যামেরা নিয়ে মাঝে মাঝে রাজধানীর  সবুজ  গাছপালা আর উড়ালপুলের  ছবি তুলছে। উত্তেজনায় মোটামুটি ভাবে সবাই টানটান।অনীতা ইচ্ছে করেই  প্রেস লিখিত  গাড়ি আনে নি।সকাল সকাল--বাভ্রবি বাগানের বেতের চেয়ারে বসে এককাপ  চা খেতে খেতে খবরের  কাগজে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল।খুব,প্রয়োজনীয় আর্টিকেল, এডিটরিয়েল পোষ্ট  এডিটরিয়েল  মার্ক  করে রাখছিল--পরে সময় নিয়ে পড়বে।পায়ের কাছে শরতের  মিষ্টি মিষ্টি প্রথম রোদ--গ্রান্ডি কাঠবেড়ালীর খুনসুটি--সবুজ লন জুড়ে ঘাসজাজিমে শালিক  পাখিদের প্রভাতী বৈঠক।বেশ একটা নিটোল,সুন্দর--শরতের সকাল। কৃষ্ণচূড়ার  মোটা ডালে একটি নাম না জানা পাখি--পাশের বাড়ির বাগানে একটি ময়ূর  চরে বেড়াচ্ছে। গ্রান্ডি অনেক  সময় তাড়া করে তাই ময়ূর গুলো যখন গ্রান্ডি  নাক ডেকে দিবানিদ্রা দেয় সেই  সময়টাই  ওদের বাগানে চরতে  আসে। এরকম  একটি সুন্দর  সকাল--নিরিবিলি সকালে হঠাৎই  পাশের  বেতের টেবিলে রাখা নীরব মুঠোফোন  ভাইব্রেট করে উঠল। অনীতা--গুপ্ত।  প্রথমে তোলে নি। তারপর মেসেজ-"প্লিজ পিক আপ দ্য  ফোন,ইটস আর্জেন্ট।"

--"হাই অনীতা--"

--"হাই--আর য়ূ ফ্রি টুডে?"

--"নট রিয়েলি--বাট হোয়াট  হেপেন্ড? ইফ ইট ইজ আর্জেন্ট--"

--"গতকাল রাতে আগুন লেগে সাউথ দিল্লির  এক বড় ঝুজ্ঞিতে একজন মারা গেছে,বেশ কয়েকজন  আহত--যারা বেঁচে আছে তারা তাদের  সবকিছু হারিয়েছে--নথি পত্র--। এবার  পুলিশ  ওদের উচ্ছেদ করছে জোর করে--সো উই ওয়ান্ট  টু কভার  দ্যাট  স্টোরি--"

--স্টোরি--ওদের  স্টোরি-কাদের? যাদের একবেলা ভাত জোটে না--কেউ  বন্ধুয়া মজদুর--কেউ  আবার  পরিযায়ী শ্রমিক--।পরিযায়ী পাখিদের  মত পরিযায়ী শ্রমিক।নীল আকাশে পরিযায়ী পাখিরা প্রতিবছর শীতকালে  সাইবেরিয়া থেকে এদিকে চলে আসে--কিছুদিনের  জন্য  ঘরবসত করে ;ডিম পাড়ে ,তা দেয়,বাচ্চা উড়তে শেখে --তারপর  তারা আবার  ডানা মেলে উড়ে যায় নিজের দেশে--। পরিযায়ী শ্রমিক--তারা নিজের  নিজের প্রদেশ ছেড়ে এই  ভারতবর্ষেরই বড় নগরী--যেমন রাজধানী দিল্লি,মায়ানগরী মুম্বই--এসব শহরে বাসা বাঁধে:না ঠিক  খড়কুটো না হলেও  প্রায় সেরকমই--যেমন প্লাষ্টিক শীট, তেরপল ইত্যাদি দিয়ে একটা মেক শিফট বাসস্থান  তৈরী করে। এধার ওধার থেকে --বিজলির যুগাড় হো জাতা,হ্যাঁয়--আর পানি তো রাস্তার  কল থেকে মহিলারা  নিয়ে আসে;এটা মহিলাদেরই কাজ। রাজস্থানের  ঊষর মরুভূমিতে মহিলারাই মাথায় করে কাঁখে করে "পীনে  কা পানি"নিয়ে আসে।এই  ঝুজ্ঞী ঝোপড়ি গুলি থেকেই  দিল্লির  বাবুদের বাড়িতে ডোমেষ্টিক  হেল্পার রা যায়-সাফাই  কর্মচারীরা স্কুল,কলেজ,হাসপাতালে সাফাই  করে,কুড়া  কাবড়া ওঠায়--এখান থেকেই  বড় বড়  কনষ্ট্রাকশন সাইটে শ্রমিকের  যোগান হয়--সুতরাং এই  পরিযায়ী শ্রমিক  ছাড়া দিল্লির  জনজীবন  প্রায় অচল।এরা আসে শ্রম  দেয়--আর একসময় বিদায় নেয়--রোগে,পথ দুর্ঘটনায়। মাঝে মাঝেই  চলে উচ্ছেদ অভিযান--রাস্তা বড় করার নামে,উড়ালপুল বানাবার  নামে,মেট্রোরেল  বানাবার  নামে;কোনও  বিদেশী ডিগনিটারিস দের  অভ্যর্থনা জানানোর নামে--খেলা,আন্তর্জাতিক  সামিট উপলক্ষ্য  করে রাজধানীকে সুসজ্জিত  করার  জন্য উচ্ছেদ  হয় এই জুগ্গী নামের আগলি, আনকুথ স্পটগুলো--যেমন  পথ কুকুর দের উচ্ছেদ  করা হয়,তেমনই  পথেই  যাদের ঘরবাড়ি--তাদের কে সরিয়ে নেওয়া হয়--উচ্ছেদ  করা হয়।

--"বাবি,জাষ্ট টেক রাইট টার্ন--"

--"ওকে।"

কিন্ত  এরা কেন আসে?

--"মিলিয়ন ডলার  কোয়েশ্চন।"

--"যদি ওদের  নিজের নিজের প্রদেশে ওরা কর্ম সংস্থানসহ ভাল ভাবে--

--"ভাল ভাবে?"বাভ্রবি নিজের প্রশ্নের  জবাব দিতে গিয়ে নিজেই যেন হোঁচট  খায়।

--"ভাল ভাবে মানে,পেট ভরে দুবেলা খাবার, আর রোগ টোগ হলে ডাক্তার  বদ্যি--বাচ্চাদের  পড়াশোনা--"

--"হ্যাঁ--আর কি চাই--"

--"বাবি নাও টেক লেফট এন্ড--"

লেফ্ট এন্ড--এ গাড়ি পার্ক  করে ওরা চারজন যখন নেমে এলো গাড়ি থেকে তখন এক অগ্নিদগ্ধ  ভুষুন্ডীর  মাঠের মুখোমুখি ওরা।মাঝে মাঝে ধোঁয়া র কুন্ডলি --মাটির ফেটে যাওয়া হাড়ি-চুলোর কালো হয়ে যাওয়া ইঁট--,আধপোড়া  প্লাস্টিকের  বোতল,পুড়ে যাওয়া হাওয়াই চপ্পল--একটা গোটা আপেল--আধপোড়া--একটি ২০ ২২ বছরের  মেয়ে ছেঁড়া শাড়ির ঘোমটার  আড়াল  মুছে মন কেমন করা শূন্য  দৃষ্টিতে ঐ আধপোড়া আপেলের দিকে তাকিয়েছিল--নির্নিমেষ।ফটো জার্নালিষ্ট  এর ক্যামেরার  ভিউ  পয়েন্ট  এখন ঐ শূন্য, বোবা মুখে।বাভ্রবি আর অনীতা পায়ে পায়ে --

--"তোমার নাম কি?"

---"মায়া।" প্রায় অস্ফুটে উচ্চারণ করে মেয়েটি।

--"কোথা থেকে এসেছে?"

--এখানে অনেকদিন থেকে আছি--"

--"এখানে আসার আগে কোথায় ছিলে?"

--"বিহারে--"

--"এখানে কি শুধু বিহারের শ্রমিকরাই থাকে,নাকি--

--"না,বিহার,পশ্চিম বাংলা,উড়িষ্যা--"

--"হুঁ।তোমাদের  ঝুজ্ঞীতে কাল রাতে হঠাৎই  আগুন  কি করে লাগল?"

মায়া এবার  হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল

--"পতা নেঁহি। কৌঈ দিন সে হামে ইয়ে জাগা খালি করনে কে লিয়ে কুছ লোগ ধমকি দে রঁহে থে--কাল হম,সব শো রহে থে--আচানক--আগ--আগ চিল্লানে কে আওয়াজ  সে মেরা নিঁদ টুটি--তব তক--আগ পুরি জুগ্গি মে ফেল গিয়া--"

তারপর  কিছুক্ষণ চুপ । আবার  কেঁদে ওঠে--পোড়া আপেলের দিকে তাকিয়ে কেমন শান্ত  হয়ে  যায় মায়া।

--"আমার তিনবছরের ছেলে রাতে এই আপেল টা খাবে বলে   হাতে নিয়েছিল-আমি এতো রাতে ওকে আপেল টা খেতে দেবো না বলে রেখে দিয়েছিলাম--বলেছিলাম কাল সুবা উঠকে খা লেনা--"

--"তোমার  ছেলে এখন কোথায়,?"

জিজ্ঞেস  করতেই  আবার  কান্নার  দমকে  ভেঙ্গে পড়ল মায়া--

-"পতা নেঁহি। "উসকা  কোঈ খবর  নেঁহি মিলা--কৌঈ লোগ বল রহা হ্যাঁয় কি মেরা বাচ্চা  ঘায়েল হো উসকো  হাসপাতাল লে গয়ে--"

--"তো তুম চলা যাও- পতা নেঁহি হ্যাঁয় কৌনসা হাসপাতাল?"

মাথা নেড়ে --"না",বলে মায়া।

বাভ্রবির সামনে একটি অগ্নিদগ্ধ  জুগ্গির ধ্বংসাবশেষ।একটি শোকাহত মা--যার তিন বছরের  আহত শিশু লা-পতা--

--"হোয়াট  ইজ জার্নালিজম! ইজ ইট এ লাক্সারি?"মুভি ক্যামেরার  ভিউ পয়েন্ট  সরে গেলে বাভ্রবির মুখ ,শরীরের  পেশী শক্ত  হয়--সে মায়াকে বলে

--"তুম চলো মেরা সাথ। মেঁ পঁতা করতি হুঁ--ঘায়েলো কো কৌনসা হাসপাতাল  লে গয়ে--"

অনীতা আস্তে বাভ্রবির  পিঠে হাত রাখে--বাভ্রবি গাড়ি স্টার্ট  দিলে অগ্নিদগ্ধ  জুগ্গির  কুৎসিত  ধোঁয়ার কুন্ডলি সরে গিয়ে রাজধানীর  উচ্ছ্বসিত  ফোয়ারাগুলি প্রতিভাত  হতে থাকে—

ক্রমশ …………

৫৮তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)