Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-55th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

পর্ব-- ৫৫

You nod assent.Autumn turns windy,huge,

A clear vase of dry leaves  vibrating  on and on.

We sit,watching .When I next speak

Love buries itself in me,up to the hilt.

বৃষ্টি পড়ছে আকাশ জুড়ে--আর সে যেন ধরে আছে সেই  মেঘের  দড়ি; ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়িগুলো ছুটছে--নীচে জল ছলছল,জল ছুঁই ছুঁই  ব্রিজ। বৈভব আর আমি সেদিন  লং ড্রাইভে--বৈভব গাড়ি চালাচ্ছিল--না পক্ষীরাজে  করে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চলছিল--জানি না;আমি শুধু সেদিন  এক গভীরতম প্রেমের  বেদনায় (হ্যাঁ,একসাথে,বেদনা এবং আনন্দে) ডুবে গিয়েছিলাম।

পাদদেশে জলকেলি

তার ওপারে অবারিত  আকাশ করিডোর

আমরা দুজন  মুখোমুখি

হাতে হাত,মনে মন---

--"তোমার  সাথে বৈভবের  প্রথম পরিচয় কোথায় হয়েছিল?"

তানিয়া সেনের সাথে এভাবেই  ফোনালাপ  বাভ্রবির। ওর নোট বুকটা পড়তে পড়তে মিসিং লিঙ্ক  গুলো খুঁজে নেবার  চেষ্টা--।

কোথায়? এক সমুদ্র  সৈকতে।

--"সমুদ্র  সৈকতে? লক্ষনৌ আর কানপুর--মিলে গেল কিনা সমুদ্র  সৈকতে?"

দুজনেই  হেসে উঠল।

--"আচ্ছা,তুমি এখন সম্পূর্ণ  সুস্থ  তো?"

--"হ্যাঁ,দিদি,আমি এখন পুরোপুরি ফিট।"

--"হোয়াট এবাউট  বৈভব? এন্ড  হিজ বস --"

--"ওরা এখন দিল্লিতে আছে--পুলিশ কাষ্টডিতে জামিন হয় নি।তবে হয়ত হয়ে যাবে।"

--"হুঁ। তুমি--"

--"আমি এখন লক্ষনৌ তে আছি--আমার  বাবা মার কাছে। দে আর ইন ডিপ শক।"

--:খুব স্বাভাবিক। তুমি কি দিল্লি আসবে?"

কিছুক্ষণ  চুপ  করে রইল তানিয়া। তারপর  ফোনে একটি দীর্ঘশ্বাস  ফেলার চাপা শব্দ।

--"তোমার  শ্বশুর  বাড়ি কানপুর, কিন্ত  বৈভব এর অফিস  তো দিল্লিতে--"

এবার  তানিয়ার গলা শুনতে পেলো বাভ্রবি।

--"হ্যাঁ,ওর ,মানে বৈভবের অফিস এবং কোম্পানির  দেওয়া  কোয়ার্টার  তো দিল্লিতেই-।"-

--"তুমি তো সে কোয়ার্টার  এ আসো নি,তাই  না?"

--"না। মধুচন্দ্রিমার পর আসার কথা ছিল--। কিন্ত--"

--"হ্যাঁ,তার আগেই  তো ঘটে গেল--"এবার তানিয়ার গলায় চাপা কান্নার আওয়াজ--মুঠো ফোন এর ভেতর থেকে বাভ্রবির  কানে এসে বেদনা হয়ে বাজল।

আস্তে বাভ্রবি বলল--"প্লিজ, তানিয়া,কেঁদো না--"

--"দিদি,আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম! তুমি যদি না আসতে--"

বাভ্রবি চুপ করে থাকল। তানিয়া নিজের মনেই  বলল--"আমি ভাবতেই পারছি না--যাকে আমি ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম--মন থেকে সবটুকুই  দিয়েছিলাম--সে আমাকে এতটা ঠকাতে  পারল?"

--"মানুষ  কে চেনা সত্যিই  বড় মুস্কিল।"

--"সমুদ্র  সৈকতের সেই  দেখা---"

--"কোন সৈকত?"

--"গোপালপুর অন সী

উথাল  পাথাল  সমুদ্র তানিয়া ওর স্কুলের ছেলেমেয়েদের  নিয়ে এক্সকারশনে এসেছিল। আরো কয়েক জন শিক্ষক, শিক্ষিকাও ছিলেন। সেখানে খুব নাটকীয় ভাবে বৈভবের সঙ্গে  পরিচয়।

--"তুমি স্কুলে পড়াতে? কই,নোটবুকে তো সেকথাগুলো লেখো নি?"

আবার  একটি দীর্ঘশ্বাস  ফেলে ,একটু সময় নিয়ে তানিয়ার গলা

--"না,ঐ নোটবুকে আমি খুব সংক্ষেপে  সেটুকুই  লিখেছি--যা না লিখলেই  নয়। কারণ, আমি জানতাম  আমাকে মেরে ফেলার  একটা চেষ্টা হবে--যদি আমি ওদের সব কথা মেনে না নিই--"

--"সব কথা--মানে,--"

--"মানে ওদের  লাইফ স্টাইল,ওর বস,বসের বউ নীলম--"

--"তুমি কি হানিমুনে যাবার  আগেই  এই  ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলে?"

এবার  ও একটু সময় নিল তানিয়া।

--"পুরোটা বুঝতে পারিনি। তবে ওর বস,বসের বউ এবং আরো কয়েকজন, কলিগ --যারা কানপুরে আমাদের  বিয়ের অনুষ্ঠান  এটেন্ড করেছিল--তাদের  কথাবার্তায়  আমার  সন্দেহ  হয়েছিল--"

--"তোমার  ইনলস--"

এবার  তানিয়া খুব জোরের সঙ্গেই  বলল

--"না,দিদি,তারা কিছুই  জানতেন না--;এমন কি আমার ননদ,মানে বৈভবের ছোট বোন--যে একটি মাল্টি ন্যাশনাল-এ চাকরি করে,সেও জানতো না--"

বাভ্রবি একটু সন্দেহের  সুরে বলে -

--"হাউ কাম তানিয়া--একটি মানুষ তার এই  চারিত্রিক  বৈশিষ্ট্য  কি করে ওর নিজের  লোকদের  কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারে--তাও দিনের  পর দিন--?"

তানিয়া এবার বিষণ্ণ  হাসল। অন্তত  ওর গলার  সুরে সেটাই  মনে হলো বাভ্রবির।

--"দি,লোকটা ভীষণই চালাক। আমি নিজে একবছরের  ওপর ওর সাথে মেলামেশা করেও তো বুঝতে পারিনি। তাছাড়া--"

--"তাছাড়া?"

তানিয়া এবার  গাড় গলায় বলল

--"তাছাড়া, লোকটার  অনেক গুণ ও আছে--অন্যের  বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে--"

তারপর  একটু চুপ  করে থেকে বলল--"আমি তো সেই  গুণ দেখেই মজে গিয়েছিলাম--"

হ্যাঁ,মজেই গিয়েছিল তানিয়া--। গোপাল পুর ওন সী-র সমুদ্র  সৈকত  অসাধারণ। বে অফ বেঙ্গল  যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য  উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে এই  সমুদ্র  সৈকতে। একটু,নির্জন,নিরালায়  সমুদ্র  আর আমি মুখোমুখি। আমার  সমুদ্র  স্নানের তৃষা নেই, ছিল না--কিন্ত  সমুদ্র  সেদিন  যেন তার সমস্ত  অস্তিত্ব  --তার মন,মেধা সৌন্দর্য, শরীর দিয়ে আমায় হাতছানি দিচ্ছিল--"আয়! আয়! আয় না--এই  মেয়ে ভয় কি তোর--"তানিয়া নামের  মেয়েটা  সমুদ্র  পুরুষের  সঙ্গে লিপ্ত হতে হতে অনেকটা গভীরে চলে গিয়েছিল--খোলা আকাশ  আর উদ্দাম সমুদ্র  যেন বারবার  তানিয়া কে ডাকছিল

--"আয় আমরা মিলিত হই--"মিলিয়ে গিয়েছিলাম  আমি--তলিয়ে গিয়েছিলাম  আমি--সমুদ্র আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে  জড়িয়ে ধরেছিল---আমার দম বন্ধ  হয়ে আসছিল--আর তখন কেউ  আমার লম্বা চুলের গোছা  ধরে টানছিল---একদিকে সমুদ্র  আর একদিকে দুটি হাত---আমার  চোখের পাতা জড়িয়ে আসছিল--গভীরতম আশ্লেষে---

ক্রমশ …………

৫৬তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)