গঙ্গাজলকে
কেন অমৃত বলা হয় ? আমরা জানি গঙ্গাজল পচে না বা খারাপ
হয় না,
কেন হয় না সেই সম্বন্ধে কিছু কথা । হিমালয়ের কোল গঙ্গোত্রী
থেকে বেড়িয়ে গঙ্গা হরিদ্বারে অলকনন্দা নদীতে মিলিত হয়। অলকনন্দা পর্যন্ত পৌঁছাবার
সময় রাস্তায় এমন কিছু শিলা এই জলে গুলে যায়, যার ফলে
গঙ্গার জল কখনো পচে না ।
প্রত্যেক
নদীর নিজস্ব জৈবিক সংরচনা থাকে যার ফলে বিশেষ ধরনের পদার্থ জলে মিশে থাকে এবং এর ফলস্বরূপ বিশেষ ধরনের জীবাণু উৎপন্নও করে, আবার
কিছু বিশেষ ধরনের জীবাণুকে উৎপন্ন হতেও দেয় না । বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে পাওয়া গেছে
গঙ্গার জলে এমন কিছু জীবাণু রয়েছে যা গঙ্গার জলকে লম্বা সময় পর্যন্ত পচতে দেয় না ।
বৈজ্ঞানিকরা
বলছেন হরিদ্বারে গোমুখ-গঙ্গোত্রী থেকে আসা গঙ্গাজলের গুনমানের উপর কোন রকম
দুস্প্রভাব না পরার কারণ হচ্ছে হিমালয় পর্বতে উৎপন্ন অনেক জীবনদায়ী জড়ি-বুটি এবং
নানান খনিজ পদার্থ ও লবণের স্পর্শ বা মিশ্রণ । বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে এও পাওয়া
গিয়েছে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী থেকে বেড়িয়ে আসা গঙ্গার জল খারাপ না হওয়ার আরও কয়েকটি
কারণ রয়েছে, গঙ্গার জলে ব্যাকট্রিয়া ফোঁস নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়, যা জলের
মধ্যে রাসায়নিক ক্রিয়ার দ্বারা উৎপন্ন হওয়া অবাঞ্ছনীয় পদার্থকে খেয়ে ফেলে যার
জন্যে জলের শুদ্ধতা বজায় থাকে । গঙ্গার জলে গন্ধক বা সালফার প্রচুর পরিমাণে থাকে
যার জন্য গঙ্গার জল খারাপ হয় না, তাছাড়া কিছু ভূ-রাসায়নিক
ক্রিয়া নিরন্তর চলতে থাকে যার ফলে গঙ্গার জলে কোনদিন পোকা জন্মায় না সেই জন্য
গঙ্গাজল সবসময় পান করার যোগ্য পাওয়া যায় ।
বৈজ্ঞানিক
পরীক্ষায় এও পাওয়া গেছে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করলে ও গঙ্গাজল পান করলে ডায়রিয়া,প্লেগ,ম্যালেরিয়া
ও ক্ষয় রোগের জীবাণু নষ্ট হয়ে যায় । ইংল্যান্ডের সুনামধন্য ডাক্তার সি. ই. নেলসন
গঙ্গা জল নিয়ে রিসার্চ করার
সময় লিখছিলেন গঙ্গা জলে যেসব জীবাণু পচন ধরায় সেগুলো পাওয়া যায় না এবং এই কথা
মহর্ষি চড়ককে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন যে গঙ্গা জল সত্যি-সত্যি পথ্য। কানাডার
বৈজ্ঞানিক ডাক্তার এম. সি. হেমিলটন গঙ্গার শক্তিকে স্বীকার করে বলেছিলেন এই জলে
অপূর্ব গুন কোথা থেকে এবং কেমন করে আসে তা আশ্চর্যের বিষয় ।
আয়ুর্বেদাচার্য্য গণনাথ সেন,বিদেশী যাত্রী ইভন বতুতা, ইংরেজ সেনার ক্যাপ্টেন মুর, বিজ্ঞানবেত্তা ডাক্তার রিচারডসন ইত্যাদি সকলে এই জল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবাই একই কথা বলেছেন এই নদী ও নদীর জল অপূর্ব,এই নদীতে সাতার কেটে স্নান করলে বিশেষ লাভ হয়। গঙ্গার জল নিজের খনিজ গুনের কারণে এত বেশী লাভকারী,এই নদীতে শুধু ভারতীয়রা নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকেরা স্নান করতে আসে এবং কিছু দিনের মধ্যে সুস্থ ও রোগ মুক্ত হতে দেখা গিয়েছে । বিদ্বানরা গঙ্গা জলের পবিত্রতার বর্ণনা নিজেদের রচনার মধ্যে আত্মার সঙ্গে করেছেন । ভৌতিক বিজ্ঞানের কয়েকজন শিক্ষকও গঙ্গা জলের অদ্ভুত শক্তি ও প্রভাব কে শিকার করেছেন ।
লেখিকারঅন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি ঃ-
জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ । প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিষান গঞ্জেই । আঞ্চলিক
বার্ষিক পত্রিকা, উত্তরবঙ্গ সংবাদে অণুগল্প, ছোট গল্প লেখালেখি করেন । সঙ্গীত, বই পড়া, ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।