জুলাই ২৫, ২০২৫.
মাননীয়
সম্পাদক
তাৎক্ষণিক সাহিত্য পত্রিকা
নতুন দিল্লী, ভারত।
মাননীয়েষু,
'কলমের সাত
রঙ' পত্রিকার নববর্ষ ১৪৩২ সংখ্যাটি হাতে পাওয়ার পর মনে হল, প্রবন্ধ
দিয়ে পড়া শুরু করি ; এর একটা কারণ হল, প্রবন্ধের
বই বিশেষত: ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশ ও
মনোবিজ্ঞানের উপর লেখার প্রতি আমার একটা বাড়তি টান আছে। সেই মতো পত্রিকার পাতা
ওলটাতে ওলটাতে, হঠাৎ করেই সুস্মিতা নাথের 'ঘরে ফেরা' গল্পটির
উপর চোখ আটকে গেল। গল্পটির পড়া শেষ না করে থাকতে পারলাম না। ঘরে কেন ফিরতে পারছিল
না গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি তা একদম শেষে প্রকাশ করেছেন লেখিকা। নিজের জায়গা, বাড়ি
থাকা সত্ত্বেও সেই বাড়ি যা আমরা খুঁজে চলি অনবরত নিজের মধ্যে, সেই
বাড়ির খোঁজ মিলেছে অবশেষে। লেখিকার ভাষায় বলি,-' ঘর তো
শুধু চার দেওয়ালের ভেতরটা নয়, ঘর শুধু
পরিবারও নয়, ঘর এমন এক নিরাপদ জায়গা
যেখানে প্রিয় মানুষেরা সমস্ত শক্তি দিয়ে আগলে রাখে। এই মুহূর্তে মেয়েটির গর্ভের
চেয়ে আদর্শ ঘর আর কি হতে পারে?' - এই ভাবনা
মন কে বিশুদ্ধ করে, এক নতুন ভাবনার জন্ম দেয়
মনের মধ্যে। দ্বিতীয় গল্পটি হল শোভনলাল আধারকার-এর 'কুন্তী '। লেখকের
বড় গুণ হল সমদর্শীতা। কুন্তীর বর নিতাইয়ের তাড়ি, দেশি মদ
খাওয়ার ও জুয়ার আড্ডায় যাওয়ার নেশা আছে, কিন্তু কুন্তী
জানে মেয়েদের পিছনে ঘোরা বা বদনাম পাড়ায় যাতায়াতের দোষ নিতাই কে দেওয়া যায়
না।অন্যদিকে জমির মালিক, সুদখোর
বৃন্দাবন ঘোষালের নজর ছিল সদ্য বিধবা কুন্তীর প্রতি। সেই বৃন্দাবন ঘোষালের সহৃদয়
মনের পরিচয় পায় সমাজ তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর লিখে
যাওয়া উইলের মধ্য দিয়ে। নন্দিতা সাহা-র 'পরী দেখা' গল্পটির
মধ্যে একটা টানটান উত্তেজনা আছে যা পাঠক কে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাধ্য করে।
লেখিকার সাবলীল ভাষা গল্পটির আর এক আকর্ষণ। অনন্ত কৃষ্ণ দে-র 'ঠোঙা' গল্পটির
মধ্যে একটি মানবিক আবেদন আছে। নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে যদি একটু সময়
গরীব, অনাথ শিশুদের পাশে থাকা যায়, তাহলে যে
একটা অপার্থিব আনন্দ পাওয়া যায়, তা এই
গল্পটির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন লেখক। যূথিকা চক্রবর্তী-র 'গোলু' গল্পটি
পড়তে পড়তে গোলুর জন্য মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। মনে রাখতে হবে, এই খারাপ
লাগাটা লেখিকার লেখনীর গুণ। তিন ভাইয়ের সংসারে গোলুই একমাত্র কন্যা সন্তান। অষ্টম
শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় চেহারা 'গোল ' হয়ে
যাওয়ার কারণে চিন্তিত বাবা-মা গোলুকে
নিঃসন্তান পিসি-পিসেমহাশয়ের কাছে গরমের ছুটিতে পাঠিয়ে দেন। হাড়কিপটে
পিসি-পিসেমহাশয়ের কাছে প্রায় একমাস থাকাটা
গোলুর কাছে এক বড় শিক্ষা যা পড়তে পড়তে সন্তানের পিতা আমারও চোখে জল এসে যায়।
সুদেষ্ণা মিত্রর 'হে অতীত কথা কও' গল্পটি
প্রাপ্ত বয়স্কদের গল্প। প্রাপ্ত বয়স্ক মানে বয়সে প্রাপ্ত হওয়া নয়, মনের দিক
দিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। আমাদের সকলেরই 'স্মৃতি
সতত সুখের' কিছু স্মৃতি জমা থাকে মনে।
এই গল্পে সেইসব স্মৃতি বা আনন্দ- ভালোলাগা- আক্ষেপের কিছু ছবি ধরা পড়েছে। একটা
অসাধারণ গল্প লেগেছে 'বনস্থলী
বিদ্যাপীঠ' গল্পটি, লিখেছেন অভিজিৎ
মুখোপাধ্যায়। সত্যিই তো আমরা পেশার
ভিত্তিতে মানুষকে সম্মান দিই, করি; অথচ সেটা
হওয়া উচিত নয়, কাম্যও নয়। পেশার কারণে নয়, প্রত্যেক
মানুষেরই সমাজে সমান সম্মান পাওয়ার যোগ্য- মূল এই উপজীব্য টি উঠে এসেছে অভিজিৎ
বাবুর লিখিত একটি কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে।
দীপ্ত বিভু ঘোষের 'সেদিন দুজনে' গল্পটি এক
গরীব ছেলের সাথে ধনী অথচ কিপটে বাবার কন্যার প্রেমের গল্প। সরস, ছোট এই
গল্পটি পড়ে মজা ও আনন্দ দুই পেয়েছি। কিশোর ঘোষালের ' অদ্বিতীয়া' গল্পটি
নারীর সমানাধিকারের গল্প। সমাজে কেন কেবল একটি ষষ্ঠী থাকবে যেখানে কেবল পুরুষেরাই
পূজিত হবেন! তাই জামাইষষ্ঠীর পাশাপাশি 'মেয়েষষ্ঠী
'পালন করেছেন সদ্যবিবাহিতা মঞ্জরীর শাশুড়ি। প্রদীপ মাশ্চরক-র 'দ্বিধা' গল্পটিও
বেশ ভালো লেগেছে। এক মাতাল ও ওয়াগন ব্রেকারের স্ত্রী মোতিয়া এক বৃদ্ধাকে দেখাশোনার কাজ করে।এই
বৃদ্ধা কে সেবা -শুশ্রূষা করতে করতেই মোতিয়া তাঁর মধ্যে তাঁর নিজের মাকে খুঁজে
পায়। আর এই জেগে ওঠা মানবিক সত্ত্বা তাঁকে
এক দুষ্কর্ম করা থেকে বিরত রাখে। স্মিতা দত্ত-র 'ডিপ্রেশন' গল্পটিতে
বয়স্ক মানুষদের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এই গল্পটি
আমাদের এক অবহেলিত সমস্যার প্রতি মনোযোগী
হওয়ার কথা বলে।
যাঁরা এই লেখাগুলো পড়েননি,অনুরোধ
রইল পড়ে ফেলার। এই গল্পগুলো যে পাঠকের
মনের প্রসারতা বাড়াবে, সেবিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ।
শেষে, পত্রিকা
কর্তৃপক্ষ কে ধন্যবাদ জানাই এ ধরনের গল্প নির্বাচন করার জন্য। আর লেখকদের
প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা,অতি যত্ন,পরিশ্রম ও
মননশীলতা সহকারে এই ধরনের গল্প লিখে পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য।
আমি পত্রিকার সব
লেখাগুলোই পড়েছি। এখানে আজ কেবল
পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পগুলো নিয়েই একজন পাঠক হিসেবে আমার ভালোলাগার কথা জানালাম, পরে সুযোগ
পেলে পত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য লেখাগুলোর বিষয়ে বলার ইচ্ছা রইল।
প্রশান্ত দাস
মহাবীর এনক্লেভ,পালাম,
নতুন দিল্লী- ১১০০৪৫।