লেখক - বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
না. এ অযোধ্যা রাম জন্মভূমি অযোধ্যা নয়। নয় এ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র অযোধ্যা। এ হল বাঁকুড়া জেলার এক প্রাচীন জনপদ।
একসময়কার সংস্কৃত শিক্ষার কেন্দ্র এক পবিত্র ভূমি এই অযোধ্যা।
এখানে রয়েছে এমন সব মন্দির,যা শুধু স্থানীয় মানুষজনের কাছে পবিত্র বলে নয়,পুরাকীর্তি হিসেবেও আদৃত।
এখানে রয়েছে তৎকালীন সময়ে এখানকার জমিদার,যাঁরা বন্দ্যোপাধ্যায় উপাধি নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠা করা মন্দির,যা এখানকার পুরাকীর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা। তার মধ্যে রয়েছে পাশাপাশি তৈরি ১২টি শিবের মন্দির। ইটের তৈরি,পলেস্তারায় ঢাকা এই বারোটি শিব মন্দিরের সবকটিই দক্ষিণমুখী। পঞ্চরথ দেউল রীতিতে তৈরি এই মন্দিরগুলি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ ফুট এবং উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। পূর্বকোণে ইটের তৈরি গিরি গোবর্ধন মন্দির। পশ্চিমমুখী এই মন্দিরটির নির্মাণশৈলীও চমৎকার। শ্রীকৃষ্ণের গিরিগোবর্ধন ধারণের যে কাহিনি প্রচলিত,সেই সুপরিচিত কাহিনির অনুসরণে মন্দিরের চালা। মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে গিরি গোবর্ধনধারী শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে মন্দিরটি প্রায় ১৫ ফুট করে। রয়েছে ঝুলন মঞ্চ, দোল মঞ্চ প্রভৃতি। এর উত্তর পশ্চিম কোণের রাসমঞ্চ। এই রাসমঞ্চটি সতেরোটি চূড়াযুক্ত এবং অষ্টকোণা বিশিষ্ট। প্রতিটি দিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ ফুট এবং উচ্চতায় প্রায় ২৫ ফুট। একসময় রাস উৎসবের সময় গিরি গোবর্ধন বিগ্রহকে এখানে রাখা হতো।
জানা যায়,আনুমানিক ১৬০ বছরেরও কিছু সময় আগে বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বংশের চার ভাই গঙ্গাধর কৃষ্ণমোহন,রামমোহন এবং লালমোহন তাঁদের জননী রঙ্গমণির নামে এই রাসমঞ্চটি নির্মাণ করেন। এখানকার বাকি পুরাকীর্তিগুলিও তাঁদেরই তৈরি। এখানেই একটি পিতলের রথও আছে। যেটির উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট। ১৮৬৭ সালে এই রথটি নির্মিত। রথের গায়ে নানা দেবদেবীর মূর্তি। দশাবতার প্রভৃতি রয়েছে। সবমিলে প্রাচীন ইতিহাস যেমন এখানে রয়েছে,একইসঙ্গে রয়েছে মন্দিরের পবিত্রতা,বাংলার প্রাচীন শিল্প এবং তার অভিনবত্বও।
খলাপুর-আদ্রা শাখার রেলপথে বিষ্ণুপুরের পরের স্টেশন রামসাগর স্টেশনে নেমে দ্বারকেশ্বর নদী পার হয়ে প্রায় ৫ কিমি উত্তরে গেলে পড়বে এই অযোধ্যা।
এখানেও ইচ্ছে হলে সকাল সকাল কলকাতা থেকে বেরিয়ে আবার রাতের মধ্যে কলকাতায় ফিরে আসা সম্ভব। অন্যথায় বিষ্ণুপুরে আছে থাকা খাওয়ার জন্য বেশকিছু হোটেল।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক পরিচিতি -
জন্ম,বেড়ে ওঠা,শিক্ষা কলকাতায়।
সুদীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ভ্রমণ সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আদ্যোপ্রান্ত বোহেমিয়ান। সারা জীবন জড়িয়ে থেকেছেন 'বর্তমান পরিবারের'সঙ্গে। সাপ্তাহিক বর্তমান সহ শরীর ও স্বাস্থ্য, সুখী গৃহকোণ,আজকাল বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন। বিশেষ করে সাপ্তাহিক বর্তমানের অত্যন্ত জনপ্রিয় পুজোর ভ্রমণ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে লিখেছেন। এই লেখার জন্য তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন মন্দির কেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। তারই ফলশ্রুতি এই বই। এতদিনের ভ্রমণ অভিজ্ঞ তার ফসল।
ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে