Advt

Advt

ratan-sarkar-hate-chay-story-galpo-by-dr.prakash-adhikary-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রতন-সরকার-হতে-চায়-প্রকাশ-আধিকারী

ratan-sarkar-hate-chay-story-galpo-by-dr.prakash-adhikary-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রতন-সরকার-হতে-চায়-প্রকাশ-আধিকারী
 

ছোট-কাকাদের পাড়ায় নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে আসার পরে ছোট-কাকি আমাদের রান্নার মাসি ও কাজের মাসি দুটোই জোগাড় করে দেন। কাকা-কাকিমারা এ'পাড়ার পুরোনো মানুষ। ওঁরাই এই নতুন ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে প্রোমোটারের সাথে যোগাযোগ করে দিয়েছিলেন। এমন কাকা-কাকিমা থাকা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

        রান্নার মাসিটির নাম স্বপ্না মাসি। বিধবা মানুষ। বছর দুই আগে স্বামী গত হয়েছে। দুই ছেলে। বড়টির দশ-বার বছর বয়স। ছোটটির ছয়-সাত। বড় ছেলেটির মাথায় নাকি একটু দোষ আছে। পড়াশুনো ঠিক মতো পারতো না। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে অসম্ভব গরমের দিনে তার ছিটিয়াল স্বভাবটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নাকি চলে যায়। পড়াশুনো তার আর হয়নি। এখন সে এক ডেকোরেটরের অধীনে কাজ করে। সেই ডেকোরেটরের আবার ক্যাটারিং-এর ব্যবসায়ও আছে। যখন কাজের ডাক পড়ে, বিশেষত শীতকালে, তখন সে ভালোই উৎফুল্ল দিন কাটায়। ছোট ছেলেটি ভালো। সে এখন স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে যায়। ওদের বাবা ভীষণ রাগী মানুষ ছিল। নেশা-ভাঙেও আসক্ত ছিল। বড় ছেলেটিকে দেখতেই পারতো না।

        আমরা এই পাড়ায় এসেছি গত শীতে। নতুন ফ্ল্যাটে শীতকালটা বেশ ভালো ভাবেই কেটে গিয়েছে। ফাল্গুন-চৈত্রও ভালো ভাবেই কেটেছে। গোল বাঁধলো বৈশাখের শেষের দিক থেকে। স্বপ্না মাসির বড় ছেলেটির গরমের সাথে সাথে ছিটিয়াল স্বভাবটাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে স্বপ্না মাসিও মাঝে মাঝে কাজে আসতে পারছে না। রান্নার মাসির কাজে কামাই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমি তো বাড়িতেই থাকি। আমার কর্তা মশাইও বছর তিনেক হলো অবসর পেয়েছেন। তাই, এক-দুদিনের ঠেকা কাজ আমিই সামলে নিচ্ছি। কর্তা মশাই ইদানিং অবশ্য বলছেন, নতুন মাসি রাখবেন কিনা! আমিই বাধ সাধি। কিন্তু হয়েছে কি,এবার তিন-চারদিন অনুপস্থিতির পর স্বপ্না-মাসি গতকাল কাজে এসে জানালো--  আর পারছিনা বৌদি। আমরা তাকে মাসি সম্বোধন করলেও সে আমাদের দাদা-বৌদি বলেই ডাকে। বলে, বড়টা বড় বাড়াবাড়ি করছে। আগে এতটা ছিল না। কী যে হয়েছে! শুধু বলছে, আমাকে একবার সরকার হতে দাও; সরকার হতে দাও। এ আবার কী কথা? হ্যাঁ বৌদি। এখন বড় হয়েছে। আমি ধরে রাখতে পারি? কী যে করি! আমি জানতে চাই, এখন কী করছে? ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাক্তার দেখিয়েছ? মাসি জানায়, বাড়াবাড়ি হলে হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের দেখানো হয়েছে। তেমন কিছু হয় না।

         আমার এক বান্ধবীর বর মনোরোগী ডাক্তার। মাসিকে বলি। দেখাতে পারবে কিনা? প্রয়োজনে আমিই সাথে করে নিয়ে যাবো। মাসি রাজি হয়। বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা বলে পরের দিন সকাল ন'টা-সাড়ে ন'টায় আমাদের গাড়িতে পেছনের সিটে বসিয়ে ওদের নিয়ে যাই। ছেলেটি কেমন যেন উদভ্রান্তের মতো তাকিয়ে ছিল। ডাক্তারবাবু ওকে ওঁনার চেম্বারে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন--  বা:, তুমি তো খুব ভালো ছেলে। তোমার নাম কি?  সে যেন লজ্জা পায়। উত্তর দেয় না। ওর মা ওকে ওর নাম বলতে সাধ্য-সাধনা করে। ডাক্তারবাবু ওর মাকেই বলেন--  থাক থাক; আপনিই বলুন ওর নাম। মাসি জানায়, ওর নাম রতন। ডাক্তারবাবু বলেন, শুধুই রতন? সাথে তো আরও কিছু আছে! তুমিই বলো রতনবাবু। লজ্জা কি? আমরা তোমার নিজের লোক! এইবার রতন যেন একটু সপ্রতিভ হয়ে উঠলো। ডাক্তারবাবুর দিকে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। পরে মাথা নিচু করে বললো--  রতন মান্না। ডাক্তারবাবু ওর ঘাড়ে হাত রেখে সস্নেহে বললেন--  বা:, কী সুন্দর নাম! "আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না" গানটি শুনেছো? ভজহরি মান্না কত সুন্দর সুন্দর রান্না জানতো! রতন কেমন যেন বিস্ময় ভরা চোখে মাথা তুলে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি মনে একটু আশার আলো দেখতে পেলাম। ডাক্তারবাবু আরও নরম সুরে জানতে চাইলেন--  তুমি তো রতন মান্না; তুমি কেন সরকার হতে যাবে? সরকার হয়ে কী লাভ? কী হবে?  রতনের চোখে মুখে একটা অসহায় ভাব ফুটে উঠলো। কিন্তু চুপ করেই থাকলো। ডাক্তারবাবু ওর থুতনিটা বাঁ হাতে আলতো করে তুলে ধরে অন্তরঙ্গ স্বরে জানতে চাইলেন-- বলো রতন, ভাইটি আমার, তুমি সরকার হবে কেন?  রতনের চোখে মুখে আবারও লজ্জা লজ্জা ভাব ছড়িয়ে পড়লো। ঘরে এ.সি. চালানো ছিল। গ্রীষ্মের ভীষণ গরম কোথায় যেন উবে গেছে। স্নেহের আবেশভরা ডাক্তারবাবুর দু'চোখের দিকে চেয়ে থাকে রতন। বলে--  সরকার হলে আমি অনেককিছু, যা ইচ্ছে করতে পারবো। মারতে পারবো।  স্বপ্না মাসি ও আমি চমকে উঠি। ওর মা-র মুখে আতঙ্ক। কিন্তু ডাক্তারবাবু নির্বিকার। ওর হাত ধরে বললেন--  ছি: রতন, তুমি না ভালো ছেলে? অন্যদের মারতে আছে ? শোনো, আমি তোমার বন্ধু, আমাকে মারতে পারবে? এই যে তোমার মা, ঐ মাসি, এঁরা তোমাকে এত ভালোবাসেন। আমার কাছে নিয়ে এসেছেন, সরকার হয়ে তুমি এঁদের মারতে পারবে?

      রতন আবারও মাথা নিচু করে। মৃদু স্বরে বলে, সবাইকে মারবো কেন? আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা যারা বলে!

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

লেখক পরিচিতি : 


জন্ম দিনাজপুর শহরে (১৩৬০ বঙ্গাব্দে)। অবসরপ্রাপ্ত বাণিজ্য বিষয়ের অধ্যাপক। উত্তরবঙ্গের লেখক। উল্লেখযোগ্য বই : " ছোট প্রাণ,  ছোট ব্যথা" ( অণু- কাব্য-গ্রন্থ ) ,"গল্পের আঁকিবুকি" ( গল্প- গ্রন্থ), " The Least Developed SAARC Members:  Bangadesh, Bhutan, Nepal & Maldives"  (প্রবন্ধ-গ্রন্থ ) ইত্যাদি। বঙ্গ ও বর্হিবঙ্গের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন ।