চালতা
পাড়া গ্রামে এক কাঠুরিয়া থাকে,সে কাঠ কেটে জ্বালানীর জন্য
কাঠ বিক্রিকরে জীবিকা উপার্জন করে,সেই
টাকায় তাঁর পরিবারে স্ত্রী,দুই ছেলে ও মেয়ের লালন পালন করে।
তাঁর ছেলে বিভাস অনেক পড়াশোনা করেছে।
আজ সে অনেক বড় এক কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েছে কোম্পানির ডায়রেকটারের পি.এ
পদের জন্যে। কোম্পানির ডাইরেকটার
বিভাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি
তো অনেক লেখাপড়া করেছ,তুমি কি
লেখাপড়া করার জন্য ছাত্রবৃত্তি পেতে?
বিভাস বলল
- না ।
- - তবেঁ
তোমার পড়াশুনার সম্পূর্ণ খরচ ?
- আমার বাবা দিতেন ।
– তোমার বাবা কি কাজ করেন ?
- আমার
বাবা কাঠ কাটে, খড়ি বিক্রি করেন ।
- তুমি
কি কখনো বাবাকে কাঠ কাটতে সাহায্য করেছ?
- - না
বাবা বলেন তুমি শুধু মন দিয়ে লেখাপড়া কর,তোমাকে
এসব করতে হবে না। তাই আমি কখনো কাঠ কাটিনি ।
- - ঠিক
আছে আজ তুমি বাড়ী যাও,বাড়ী গিয়ে তোমার বাবার দুই হাত জল
দিয়ে ধুয়ে দিও আর আগামী কাল আমার সঙ্গে এসে দেখা করবে ।
বিভাস
নমস্কার জানিয়ে খুশী হয়ে ওনার অফিস থেকে
বেড়িয়ে এলো এবং খুশী মনে বাড়ীর দিকে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবল
চাকরীটা তাহলে পেয়ে গেলাম শুধু বাবার হাত দুটো ধুয়ে দিতে হবে,এটা
আবার এমন কি কাজ ! তারপর বাড়ী ফিরল, বাড়ী ফিরে
দেখল বাবা কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটছে ।
বিভাস
বাবাকে বলল - তুমি
এখানে এস।
- কি
হল?
- একটু
দাড়াও,একথা
বলে বিভাস এক ঘটি জল নিয়ে এসে বাবার হাত দুটোকে আস্তে আস্তে জল
দিয়ে ধুতে শুরু করলে,দেখল বাবার হাতটা কাঠ কাটতে কাটতে
শক্ত হয়ে গেছে,কোথাও ফোসকা পরে আছে,কোথাও
কাটা,সেখানে
জল পড়তেই বাবার কষ্ট হচ্ছিল তা বাবার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল। বাবার হাত ধোয়াবার
সময় বাবার হাত ও মুখের কষ্ট দেখে বিভাসের চোখে জল আসে, ও
ভাবতে লাগল আজ পর্যন্ত আমি কোনদিন বাবার হাতটা কেন দেখলাম না, কাঠ
কাটার পর ওনার হাতের কি অবস্থা হয়েছে!
।
বাবার হাত
ধোয়ানোর পর বলল – বাবা,তুমি বস,বাকি কাঠগুলো আমি কেটে
দিচ্ছি । বাবা অনেক নিষেধ করল কিন্তু বিভাস আজ আর বাবার কোন কথা শুনল না । আজ প্রথম
দিন কাঠ কাটল, তারপর বাবা,মা
ও বোনের সঙ্গে বসে নানা রকম গল্প করল, এতদিন
শুধু পড়াশুনা করত, এভাবে কোনদিন পরিবারের সকলের সাথে গল্প করেনি। খাওয়া দাওয়ার পরে মায়ের সঙ্গে আজ বিভাস বাসন
মাজল,
মার নিষেধ ও শুনলনা
অথচ মায়ের সঙ্গে বাসন মাজার সময় ছোট বেলার কিছু কথা বলে দুজনেই হাসাহাসি করছিল। রাতে বিভাসের ঘুম আসছিল না, বাবা
মায়ের সঙ্গে কাটানো সময়টা দারুণ ভালো লাগল,ভাবল আজ
পর্যন্ত আমি পরিবারের সকলের সাথে পরিবারের
কাজে কেন সহযোগিতা করিনি! শুধু নিজেই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি।
পরের দিন সে কোম্পানিতে
যায় এবং ডাইরেকটরের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করে । ডাইরেকটর
বললেন কাল তুমি তোমার বাবার হাত জল দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিলে?
প্রশ্ন
শুনে বিভাসের চোখে জল নেমে এলো - বলল
হ্যাঁ,
গতকাল আমি একটা নতুন জীবনের দেখা পেয়েছি, মনে
হল আমি ওনাদের অনেকটা কাছে পৌঁছে গিয়েছি।
ডাইরেকটর বললেন - আমার এমন একজন পি.এ-র
দরকার ছিল, আজ থেকে তোমাকে আমার পি.এর পদে নিযুক্ত করলাম ।
আমার মনে হয় ছেলে-মেয়েদের
উচ্চ শিক্ষিত করার সঙ্গে সঙ্গে ওদের বাবা-মায়েরা
কিভাবে লালন পালন করছেন সেটার
সম্মুখীন হতে দেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে যে কোন পরিস্থিতির
সম্মুখীন সহজভাবে হতে পারে । কয়েকদিন আগে আমাদের দেশে একজন ক্রিকেটারের বাবা নিজের
জমি বিক্রি করে ছেলেকে খেলা শেখাবার ব্যবস্থা করেছিলেন একথা
হয়তো তুমি নিশ্চই খবরের কাগজে পড়ে থাকবে।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি ঃ-
জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ । প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিশানগঞ্জেই । আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকা, উত্তরবঙ্গ সংবাদে অনুগল্প, ছোট গল্প লেখালেখি করেন । সঙ্গীত, বই পড়া, ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।