ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
"Life,
friends is boring.we must not say so.
After
all, the sky flashes, the great sea yearns
We
ourselves flash and yearn,
And
moreover my mother told me
'Ever to
confess you're bored means ypu have no
Inner
Resources. "
এখন ভোর! আস্তে আস্তে
রাতের পেট কেটে জন্ম নিচ্ছে একটি সদ্যোজাত ভোর! অজস্র
থিকথিকে রক্তমাখা একটা নবভোর ধীরে ধীরে পৃথিবীকে নতুন আলোয় ভরিয়ে তুলছে। বারান্দার খোলা হওয়ায় আলসে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল বাভ্রবি। কত,কত দিন পর
আজ এরকম ভোরের মুখোমুখি।
প্রকৃতিকে নিয়ে
আমেরিকান এয়ার লাইনস-এর
উড়োজাহাজটি নিশ্চয়ই এখন অনেকটা আকাশ পেরিয়ে গেছে। বাভ্রবি গতকাল এয়ারপোর্ট থেকে
ফিরে আর ঘুমোতে যায়নি। তিনটেতে প্রকৃতির
প্লেন টেক অফ করেছে--মেসেজে মা মেয়ের কথোপকথন চলেছে--। বাভ্রবির মনটা কেমন খালি খালি লাগছে। হার্ভার্ড-এর মত
একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকান স্কলারশিপ
নিয়ে পড়তে যাওয়াটা অবশ্যই
ক্যারিয়ার এর পক্ষে অনেকটাই দামী। তাই
আর বাভ্রবি বাধা দেয়নি। যুধাজিত
অবশ্যই খুঁত খুঁত করছিল।
--"কেন
ভারতবর্ষে কি ভাল ইউনিভার্সিটি নেই? প্রকৃতি
তো সেখান থেকেই --"
--"ওর নিজের
ইচ্ছে--ও স্কলারশিপ পেয়েছে--উই সুড নট
রেষ্ট্রিকট হার লাইফ।"
এখন ভোর--পাখিরা কলরব করছে।
-"ডাকে পাখি,না ছাড়ে
বাসা
খনা বলে তাকেই ঊষা-"
এখন ঊষা। প্রত্যুষ। আজ
বুধবার। বাভ্রবির ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।
--"মঙ্গলে
ঊষা,বুধে পা
যথা ইচ্ছা তথা যা--"
ঠাম্মির কথা মনে পড়ল। বাভ্রবি
যখন প্রথম হোস্টেলে পড়তে যাবে,ঠাম্মি
ওকে পাঁজি দেখিয়ে ঊষা যাত্রা
করিয়েছিলেন।
--"সব কিছুতে
ওমন হাইসো না--খনার প্রবচন মানন লাগব।"
বাভ্রবি দু হাতে মুখ
ঢেকে--"কই ঠাম্মি,হাসছি নাতো।"
দিদি দুষ্টুমি করে
বলত--"নাগো ঠাম্মি,বনু মিছা কথা কয়। ঐ দেখো
হাসতাছে।"
আজ সবকিছুই কেমন স্মৃতির
আঁচল।
খনা। এই বিদুষী মহিলার জিভ তার স্বামী এবং শ্বশুর মিলে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিল!
বাভ্রবি শিউরে উঠল। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।
তানিয়া--তানিয়ার সেই
নোটবুক।
এখন ঊষা।
মেঘ-কলোনির বাড়ি গুলো ডিঙিয়ে সূর্য হাঁটছে
দীর্ঘ ধনুক হাতে হাওয়ারা শিকারে বেরিয়েছে
প্রান্তর থেকে প্রান্তরে
ধ্বনিত হয়ে চলেছে কত শব্দহীন শব্দ এবং
প্রতীক।
আর এই সব নিয়ে জেগে উঠছে
চরাচর জুড়ে
একটি ভোরবেলা--
এবার পাখিরা আকাশ
জুড়ে ডানা মেলেছে। পাখিদের বন্দনা গানে ভরে উঠছে ভোরের আকাশ। সবাই
ঘুমোচ্ছে। যুধাজিত আর প্রাকৃত এয়ারপোর্ট
থেকে ফিরেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর বাভ্রবি বসেছিল তানিয়া--তানিয়া সেনের নোটবুক
বা জবানবন্দি নিয়ে। লক্ষ্নৌ এর মেয়ে তানিয়া-তানিয়া সেন। বাবা সরকারি
অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মী। মা হোম মেকার। এক বড় দাদা আর ও-চারজনের সুন্দর সংসার। তানিয়া লিখছে -
:"আমাদের
পূর্ব পুরুষ --"মোদের গরব মোদের আশা,আ-মরি
বাংলাভাষা-"এই বিখ্যাত গানের রচয়িতা শ্রদ্ধেয় অতুলপ্রসাদ সেন -এর একই
বংশজাত এবং সেই সময় থেকেই আমার
পূর্ব সূরীরাও লক্ষ্নৌ প্রবাসী।"
বাভ্রবির মনটা উদাস হয়ে
গেল।এমন একটি পরিবারের মেয়েকে এরকম
ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার হতে হলো? ভোরের হাওয়ায় একটু ভাল করে হাঁটবে বলে বাভ্রবি
তাড়াতাড়ি ট্রেক সুট পরে রাস্তায়। আসবার
আগে ছোট্ট নোট ছেড়ে রেখে এলো
যুধাজিত কে। আর সেই নোটের উপর
নিজের মোবাইল ও চাপা দিয়ে এলো। মোবাইল হাতে আজকের
এই পাখিডাকা ভোরের আমেজটাকে কিছুতেই
নষ্ট করতে মন চাইল না। গ্রান্ডি ওর সঙ্গ ধরছিল--অনেক কষ্টে ওকে গেটের ভেতর ঢুকিয়ে গেট বন্ধ
করল বাভ্রবি। গ্রান্ডি চোখ পিটপিট করে কিছুক্ষণ দেখল,তারপর
সুন্দর সবুজ ঘাসের উপর টানটান
হয়ে শুয়ে পড়ল। গেটের বাইরে
আসতেই বোগোনভেলিয়া বলল--"হ্যালো! সুপ্রভাত।"
ময়ূর দম্পতি কেকা রবে বলল--"ভেরি গুড
মর্নিং-"
বোগেনভেলিয়ার নীচে শুয়ে
ছিল পথ-কুকুর--বাভ্রবি যাকে আদর করে ডাকে-আহ্লাদী-,সে ল্যাজ
নাড়তে নাড়তে ছুটে এসে বাভ্রবির পায়ে
আদর করে বলল--"গুড মর্নিং মাম্মা।"
আহ্লাদী কে একটু আদর করে
বাভ্রবি হেসে বলল--"এই দুষ্টু,আমার
বেড়াল ছানা গুলো কে তাড়িয়ে বেড়াস কেন
রে?"
আহ্লাদী কাঁচুমাচু মুখে
জবাব কই
ন্ নাতো। আমি তো তাড়াই না--এট্টু
ভয় দেখাই--।"
--"তাই?"
আহ্লাদী আরও একটু আদর খেতে খেতে বলল--"হে হে তাই
তো। নইলে ঐ পুঁচকে গুলো আমাকে মানবে কেন?"
বাভ্রবি হাসল--সেই তো!পৃথিবীর
সবাই শুধু মান্য হতে চায়। ভয় দেখিয়ে পৃথিবীর আলো হাওয়া অরণ্যের উপর
দখল নিতে চায়। ভূগর্ভ কে খোকলা করে মণি,মুক্তো,হীরে,সোনা
একত্রিত করে বলতে চায়--"দেখো--আমি
কতো বড়--আমার হাতে কত শত ধ্বংস করার
অস্ত্র, পৃথিবীর যাবতীয় মূল্যবান সম্পদ
আমার এই হাতের মুঠোয়--"
আহ্লাদী আস্তে আস্তে আবার শুয়ে পড়ল। বাভ্রবি ভাবল--এরা তো নিজের পেট ভরা খাবার
টুকুই চায়। সুসভ্য মানুষের মত ধন
সম্পদ জমিয়ে রাখে না--বংশ পরম্পরায়!
অনেকেই হাঁটতে বেরিয়েছেন। জগিং করতে করতে কেউ কেউ
হাত নেড়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন। ভোর এখন,অনেক
টাই সকাল। বাভ্রবি হাঁটার গতিবেগ বাড়াতে
বাড়াতে স্টেডিয়ামের দিকে মোড় ঘুরতেই রূপালীর
সঙ্গে দেখা। একা একা আনমনে হাঁটছিল
রূপালী। বাভ্রবিকে দেখতেই পায়নি-এমনটাই
মনে হলো বাভ্রবির। কাছে গিয়ে আস্তে ডাকল-"রূপালী!
গুড মর্নিং।"
রূপালী ঘাড় ঘুরিয়ে একটু
ম্লান হাসির সঙ্গে বলল
--"গুড
মর্নিং বৌদি! সারপ্রাইজ। আপনি আজ মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন?"
বাভ্রবি চলতে চলতে
বলল--"আমার কথা ছাড়--তুমি আজ একাএকা
হাঁটতে বেরিয়েছো? সপ্তর্ষি কোথায়? সেমিনার টেমিনারে ,নাকি?"
রূপালীর ঠোঁটে শাণিত হাসি।
--"সেমিনার? সপ্তর্ষির ওসবের
জন্য সময় আছে নাকি? সে এখন
তার নতুন প্রেমিকার কাছে গেছে।"
স্তম্ভিত বাভ্রবির
মুখ থেকে স্খলিত প্রশ্ন
--"মানে?"
--"বৌদি আপনি
জানেন না? সপ্তর্ষি আর আমি এখন একসঙ্গে
থাকি না। সপ্তর্ষি তার হবু স্ত্রীর সাথে
বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। আমি আর আমার ছেলে
এখানে আছি।"
বাভ্রবির সকালটা কেমন পাঁশুটে,তেতো হয়ে
গেল---
ক্রমশ …………
৫২তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত
গ্রন্থ
১--সাপ শিশির
খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)