কর্ণাটক তথা ভারতের অন্যতম পবিত্র এবং জাগ্রত দেবীর মন্দির এই চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির। কর্ণাটকের মাইসোর থেকে প্রায় ১৩ কিমি দূরে চামুণ্ডি পাহাড়ের শীর্ষে এই মন্দির। একসময় দেবী চামুণ্ডেশ্বরী কর্ণাটকের ভক্তজনের নাদা দেবী নামে পূজিতা হতেন। নাদা দেবী কথার অর্থ সমগ্র রাজ্যের দেবী। পরবর্তী কালে স্থানটির নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় মহিযুরু,যার অর্থ মহিষের স্থান। এরও পরে ব্রিটিশরা এর নামকরণ করেন মাইসোর,কন্নড় উচ্চারণে যা হয়ে দাঁড়ায় মাইসুরু।
এখানেই চামুণ্ডী পাহাড়ের শীর্ষে প্রায় ৩৮৪৯ ফুট (কারও
কারও মতে ৩৩০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই সহস্র বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে পূজিতা
হচ্ছেন দেবী দুর্গা।
এখানে মায়ের নাম চামুণ্ডেশ্বরী। মায়ের প্রাচীন নাম ছিল
মহাবলাদ্রী শিখর।
দ্বাদশ শতাব্দীতে হোয়সল রাজারা এই মন্দির নির্মাণ করেন।
সপ্তদশ শতাব্দীতে বিজয়নগরের রাজারা মন্দিরের শিখরটি তৈরি করেন। ১৬৫৯-এ এক হাজার
ধাপ সম্বলিত সিঁড়ি তৈরি হয় পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছনোর জন্য। ৭০০ ধাপ সিঁড়ি চড়ার পর
দেখা মেলে গ্রানাইট পাথরে নির্মিত শিবের বাহন নন্দী মূর্তির। কাছেই এক শিবমন্দির।
নন্দী মূর্তিটি প্রায় ১৫ ফুট উঁচু এবং ২৪ ফুট লম্বা।
মন্দিরের সাততলা গোপুরমটি অপূর্ব শিল্পশৈলীতে নির্মিত।
মন্দিরের দু'পাশে রয়েছে দ্বারপাল। দরজাটি রুপোয় মোড়া। প্রবেশপথের ডানদিকে গণেশমূর্তি।
সামনেই দেবীর পদচিহ্ন। সোনার চামুণ্ডেশ্বরী দেবী হলেন ওদিয়ার রাজবংশের গৃহদেবতা।
তিনি দেবী দুর্গারই এক রূপ।
মন্দিরের নীচেই মহিষাসুর মূর্তি। এখনও উৎসবের সময় দেবীর
বিগ্রহকে কৃষ্ণ রাজা তৃতীয় আয়েদার দান করা বিশেষভাবে নির্মিত সিংহাসনে বসিয়ে
ঘোরানো হয়। মন্দিরে বিশেষ কিছু উৎসব
সাড়ম্বরে পালিত হয়। যেমন,অসধা শুক্রভারা,নবরাত্রি,অম্যানভারা বর্ধনাথি। প্রত্যেক শুক্রবার করে এখানে বিশেষ পুজো হয়। লক্ষ
লক্ষ পুণ্যার্থী ওই দিন মাকে দর্শন ও পুজো দিতে ভিড় করেন।
অন্য একটি উৎসব এখানে মহা সমারোহে পালিত হয়। তা হল
চামুণ্ডী জয়ন্তী।
মহারাজের দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনের বার্ষিক উৎসব
এটি। তবে এখানকার সবচেয়ে আকর্ষক উৎসব হল নবরাত্রি মাইসোর দশেরা। কর্ণাটকের ভাষায়
যাকে বলা হয় নাদা হাব্বা।
নবরাত্রির সময় দেবীমূর্তিকে ন'রকম সাজে সজ্জিত
করা হয়। এবং নবদুর্গা নামে পূজিতা হন দেবী। এর মধ্যে সপ্তম দিনটিতে দেবীকে
কালরাত্রি বলে পুজো করা হয়। স্টেট ট্রেজারি থেকে ওই সময় দেবীকে সমর্পণ করা
মাইসোরের মহারাজের সমস্ত অলঙ্কার এনে তা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।
অন্য একটি মন্দির,যেটি পাহাড়ের নীচে উথানাহাল্লি
নামে এক স্থানে অবস্থিত,যাকে জ্বালা মালিনী,শ্রীত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির বলা হয়,এই
ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী,দেবী চামুণ্ডেশ্বরীর বোন, যিনি অসুর নিধনে দেবীকে সাহায্য করেছিলেন। অসুরের নাম ছিল রক্তবীজ।
এই মন্দির ভক্তজনের দর্শনের জন্য খোলা থাকে সকাল সাড়ে
৭টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত, বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা,
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। শুক্রবার মন্দির
খোলে ভোর ৫টায়।
মন্দিরে পুজো বা মন্দির সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য যোগাযোগ
দ্য এগজিকিউটিভ অফিসর, শ্রীচামুণ্ডেশ্বরী মন্দির,চামুণ্ডী
হিল,মাইসোর-৫৭০০১০
হাওড়া থেকে সরাসরি মাইসোর বা মহীশুর আসছে ট্রেন। এছাড়াও
ট্রেন আছে চেন্নাই,
তিরুপতি থেকেও। তবে কলকাতা থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের
সুবিধা হবে সরাসরি ট্রেনে বেঙ্গালুরু এসে সেখান থেকে বাসে যাওয়া। একটু সময় পরপরই
বেঙ্গালুরু থেকে বাস আসছে। বাসে সময় লাগে কমবেশি ঘণ্টা তিনেক। মাইসোর শহর থেকে বাস
আসছে চামুণ্ডী পাহাড়। দূরত্ব প্রায় ১৩ কিমি।
এখানে থাকার জন্য রয়েছে কর্ণাটক পর্যটন উন্নয়ন নিগমের
হোটেল মৌর্য হোয়সালা। এছাড়াও আছে বেশ কিছু হোটেল,গেস্ট হাউস,যাত্রী নিবাস।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক পরিচিতি -
জন্ম,বেড়ে ওঠা,শিক্ষা কলকাতায়।
সুদীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ভ্রমণ সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আদ্যোপ্রান্ত বোহেমিয়ান। সারা জীবন জড়িয়ে থেকেছেন 'বর্তমান পরিবারের'সঙ্গে। সাপ্তাহিক বর্তমান সহ শরীর ও স্বাস্থ্য, সুখী গৃহকোণ,আজকাল বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন। বিশেষ করে সাপ্তাহিক বর্তমানের অত্যন্ত জনপ্রিয় পুজোর ভ্রমণ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে লিখেছেন। এই লেখার জন্য তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন মন্দির কেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। তারই ফলশ্রুতি এই বই। এতদিনের ভ্রমণ অভিজ্ঞ তার ফসল।
ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে