যদিও এই মন্দির গুজরাতে অবস্থিত,আরও বেশি করে বললে গুজরাত-রাজস্থান সীমান্তে অবস্থিত। তাই রাজস্থানের মাউন্ট আবু থেকে এই মন্দির ঘুরে নেওয়াই অপেক্ষাকৃত সুবিধার।
অম্বাজি মন্দির নিয়ে কিংবদন্তীও কম নেই। এক একটি
কিংবদন্তী আবার এক একরকমের।
কেউ কেউ বলেন,সীতাদেবীকে উদ্ধার করার সময়
শ্রীরামচন্দ্র এবং রামানুজ লক্ষ্মণ এখানে আসেন। আবার এও প্রবাদ শ্রীকৃষ্ণের পালক
পিতা মাতা নন্দ এবং যশোদা এখানেই শ্রীকৃষ্ণের মস্তক মুণ্ডন করেছিলেন।
মূল জাতীয় সড়ক থেকে কাছেই এই আরাসুরি অম্বাজির মন্দির।
মন্দিরটি চূড়া অবধি উচ্চতা ১০৩ ফুট। অতীতের মন্দিরস্থলেই বর্তমানে তৈরি করা হয়েছে
বিরাট শ্বেত পাথরের মন্দির। মন্দিরের আরাধ্য দেবী দুর্গা। মন্দিরের দ্বিতলে তাঁর
অবস্থান। তবে এখানে কোনও বিগ্রহ নেই। রয়েছে সোনার বিশ্বশ্রী যন্ত্র। এটি সোনায়
মোড়া। একটি বিশাল গুহার মতো অংশে রয়েছে এই বিশ্বযন্ত্র। বিশ্বযন্ত্রটি এমনভাবে
তৈরি বা সজ্জিত,
দেখে মনে হয় মাতৃমূর্তি। বিশেষত্ব হল, এখানে
বিভিন্ন দিনে ভিন্ন রূপদান হয় মাতৃমূর্তির। কখনও তিনি মা সরস্বতীরূপে সজ্জিতা,
কখনও আবার মা মহিষাসুরমর্দিনী,কখনও দেবী
মহাকালী,আবার কখনও দেবী কাত্যায়নী। এমনকী স্কন্ধমাতা,মহাগৌরী,মহালক্ষ্মী প্রভৃতি রূপেও সজ্জিত করা হয়
দেবীকে। মন্দিরের মণ্ডপে রয়েছে দেবীর বাহন সিংহের মূর্তি।
মন্দিরে সর্বক্ষণ জ্বলছে অনির্বাণ দীপশিখা। মন্দিরের
পিছনেই রয়েছে পবিত্র দেবকুণ্ড। মন্দির খোলা থাকে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা। দুপুর
১টা থেকে দুপুর ২টো। আবার বিকেল ৪টে থেকে সাড়ে ৪টে। এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা
পর্যন্ত।
এই মন্দির থেকে ৩ কিমি দূরে গহ্বর পাহাড়। কথিত,এখানেই নাকি
সতীর হৃদয় গড়েছিল। একারণে একে অনেকেই অন্যতম সতীপীঠ বলে মনে করেন। সমতল থেকে প্রায়
১০০টির মতো সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছতে হয় মূল মন্দিরে। বর্তমানে রোপওয়ে চলাচল করছে। সকাল
৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই রোপওয়ে চলাচল করে। পাহাড় শীর্ষে রয়েছে মন্দির।
রয়েছে মাতা অম্বার পায়ের ছাপ এবং রথের চাকার দাগ।
মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে শ্রী আরাসুরি অম্বাজি
মাতা দেবস্থান ট্রাস্ট,বানসকাঁথা-৩৮৫১১০,www.ambajitemple.in.
আমেদাবাদ জয়পুর রেলপথে আবু রোড স্টেশন থেকে প্রায় ১৫-২০
কিমি দূরত্বে এই মন্দির। ট্রেন যাচ্ছে ৬৫ কিমি দূরের পালানপুর, ১৮০ কিমি দূরের
আমেদাবাদ থেকেও। তবে তুলনামূলকভাবে যাওয়া সুবিধা এবং দূরত্ব কম আবু রোড থেকে
(প্রায় ৪৭ কিমি)। এখানে থাকার জন্য বাসস্ট্যান্ডের কাছে আছে কমিটির জগৎ জননী
পথিকাশ্রম, অম্বিকা বিশ্রাম গৃহ এবং বেশকিছু হোটেল,লজ ও ধর্মশালা।
লেখক পরিচিতি -
জন্ম,বেড়ে ওঠা,শিক্ষা
কলকাতায়।
সুদীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ভ্রমণ সাংবাদিকতার সঙ্গে
যুক্ত। কিন্তু আদ্যোপ্রান্ত বোহেমিয়ান। সারা জীবন জড়িয়ে থেকেছেন 'বর্তমান
পরিবারের'সঙ্গে। সাপ্তাহিক বর্তমান সহ শরীর ও স্বাস্থ্য,
সুখী গৃহকোণ,আজকাল বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন।
বিশেষ করে সাপ্তাহিক বর্তমানের অত্যন্ত জনপ্রিয় পুজোর ভ্রমণ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে
লিখেছেন। এই লেখার জন্য তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন
মন্দির কেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। তারই ফলশ্রুতি এই বই। এতদিনের ভ্রমণ
অভিজ্ঞ তার ফসল।