ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম এই আদি শঙ্করাচার্য মন্দির। কলহন,আবুল ফজল,পণ্ডিত আনন্দ কওল প্রমুখ ঐতিহাসিকদের লেখায় এই মন্দিরের বিবরণ পাওয়া যায়।
যদিও নাম আদি শঙ্করাচার্য মন্দির কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি শিবমন্দির,প্রায় হাজার বছর আগে আদি শঙ্করাচার্যে পদাপর্ণের পর মন্দিরের নাম হয় আদি শঙ্করাচার্য মন্দির। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০-তে এই মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। বর্তমান মন্দিরটি নবম শতকে নির্মিত। পণ্ডিত আনন্দ কওলের মতে,এই মন্দিরের প্রকৃত নির্মাতা সন্দীমন (২৬২৯ থেকে ২৫৬৪ খ্রিষ্টপূর্ব)। পরবর্তীকালে এই মন্দিরের সংস্কার করেন রাজা গোপাদিত্য (৪২৬ থেকে ৩৬৫ খ্রিষ্টপূর্ব) এবং রাজা ললিতাদিত্য (৬৯৭-৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছাড়াও তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের পুত্র ঝালুকা প্রমুখ। এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মন্দিরের ছাদ নষ্ট হলে সেটি পুনর্নির্মাণ করেন জৈন-উল-আবেদিন। আর এর চূড়ার সংস্কার করেন কাশ্মীরের গভর্নর শেখ গুলাম মহিউদ্দিন (১৮৪১-১৮৪৬)।
শ্রীনগর শহরের পূর্বে গোপাদ্রি পাহাড়ে প্রায় ১১০০ ফুট উচ্চতায় এই শিবমন্দির অবস্থিত। প্রথমে এই পাহাড়ের নাম ছিল জেঠলাড়াক। পরবর্তীকালে এর নাম হয় গোপাদ্রি। এখানে এক সুন্দর পরিবেশে রাজা সন্দীমন গড়ে তুলেছিলেন এই মন্দির। কথিত,একসময় এখানে সোনা ও রুপোর প্রায় ৩০০ ছোট বড় দেবমূর্তি ছিল। ডোগরা রাজা গুলাম সিং এই মন্দিরের পাথরের সিঁড়ি তৈরি করেন। প্রায় ২৬৬টি ধাপ সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছতে হয় মন্দিরে। মন্দিরের দেওয়াল খোদিত আছে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলের পার্সি লিপি,মন্দিরটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। কথিত,এখানকার শিবলিঙ্গটি আনা হয়েছিল নর্মদা নদী থেকে। মূল মন্দিরের কয়েকটি সিঁডির নীচেই রয়েছে উপাসনা কক্ষ। স্বয়ং শঙ্করাচার্য এখানে বসে ধ্যান করেছিলেন।
সাম্প্রতিক অতীতে একজন নেপালি সাধুর সহযোগিতা ও উদ্যোগে স্বামী শিবব্রতানন্দ সরস্বতী এই মন্দিরের চূড়ার সংস্কার করেন। কাশ্মীরে শিখ রাজত্ব চলার সময় থেকেই এখানে ভক্ত সমাগম বৃদ্ধি পায়। সেই সময় থেকেই এখানে শ্রাবণ পূর্ণিমায় উৎসব শুরু হয়।
অষ্টম শতকে এখানে আসেন আদি শঙ্করাচার্য। ১৯৬১ সালে দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য এখানে আসেন। তিনি এখানে আদি শঙ্করাচার্যের একটি মূর্তি স্থাপন করেন। প্রতিদিনই এখানে ভক্তির সঙ্গে শিবলিঙ্গের পুজো হয়। হয় অভিষেক,অলংকারা বা সাজশয্যা,নৈবেদ্যম বা ভোগদান হারাতি সহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান। আদি শঙ্করাচার্য মন্দির যাওয়ার জন্য প্রথমে আসতে হবে জম্মু। কলকাতা থেকে সরাসরি জম্মু যাচ্ছে ১৩১৫১ জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস,১২৬৬১ হিমগিরি এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেন। সরাসরি কলকাতা থেকে যাওয়ার সুযোগ না পেলে যাওয়া যেতে পারে দিল্লি হয়েও। দিল্লি থেকে জম্মু যাচ্ছে ১২৪৭৫ হাপা-জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস,১২৪৭৭ জামনগর জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস,১২৪৭১ স্বরাজ এক্সপ্রেস,১২৪৭৩ সর্বোদয় এক্সপ্রেস,১২৯১৯ মালওয়া এক্সপ্রেস,১২৫৪৯ দুর্গ-জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস প্রভৃতি। ট্রেনে দিল্লি থেকে জম্মুর দূরত্ব ৫৮৪ কিমি। জম্মু থেকে বাস,শেয়ার গাড়ি প্রভৃতি যাচ্ছে শ্রীনগর,দূরত্ব ৩০৫ কিমি। সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। তবে সঠিক অর্থে শ্রীনগরের সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন হল উধমপুর। ১২৪৪৫ উত্তর সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস সকাল পৌনে সাতটায় জম্মু ছেড়ে সকাল ৮টা ৫মিনিটে এবং ০৪০৩৩ দিল্লি সরাইকেল্লা-উধমপুর এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ২০মিনিটে জম্মু ছেড়ে সকাল সাড়ে ৮টায় পৌঁছয় উধমপুর। তবে জম্মু থেকে যাওয়াই সুবিধা।
শ্রীনগরে রয়েছে প্রচুর হোটেল। এর মধ্যে আছে জম্মু কাশ্মীর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের তিনটি হোটেল। এক,হোটেল কাশ্মীর রেসিডেন্সি। দুই,হোটেল কংপোষ এবং তিন, হোটেল হিমাল,এগুলির সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর ২৪৫৭৯২৭,২৪৫৭০৩০।
এখানে রয়েছে কলকাতার বাঙালি দ্বারা পরিচালিত হোটেল শবনম। এখানে সম্পূর্ণ বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। ফোন ৯৮৩০১২৪২৫৩,৯৪৩৩০৩৮৩৬৭ (এগুলি কলকাতার নম্বর) এবং ০৯৫৯৬৫৩৭২১০ (এটি শ্রীনগরের নম্বর)। হোটেল সহবাস,হোটেল গ্রান্ড হামজা,হোটেল গউসিয়া,হোটেল ইরাম,হোটেল জালভিউ,হোটেল ডিপ্লোম্যাট। শ্রীনগরের এসটিডি কোড ০১৯৪।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক পরিচিতি -
জন্ম,বেড়ে ওঠা,শিক্ষা কলকাতায়।
সুদীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ভ্রমণ সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আদ্যোপ্রান্ত বোহেমিয়ান। সারা জীবন জড়িয়ে থেকেছেন 'বর্তমান পরিবারের'সঙ্গে। সাপ্তাহিক বর্তমান সহ শরীর ও স্বাস্থ্য, সুখী গৃহকোণ,আজকাল বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন। বিশেষ করে সাপ্তাহিক বর্তমানের অত্যন্ত জনপ্রিয় পুজোর ভ্রমণ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে লিখেছেন। এই লেখার জন্য তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন মন্দির কেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। তারই ফলশ্রুতি এই বই। এতদিনের ভ্রমণ অভিজ্ঞ তার ফসল।
ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে