আমার ছোটবেলায় আমাদের বাড়ীর উত্তর দিকে বিঘা-
বিঘা চাষের জমি ছিল। যেখানে নানা রকম ফসল চাষ হত,বাকি তিন দিকে ঘন বসতি ছিল যেখানে দুটো স্কুল কিছু সরকারি বিভাগের অফিস ছিল। চারিদিকে গাছপালা, নানা রকম ঝোপঝাড় ছিল যার জন্যে সন্ধ্যার পরেই রাতে অনেক জোনাকি উড়ে বেড়াত,যা দেখে আমি ও আমার মতো অনেকেই খুব খুশী হতাম । জোনাকির জ্বলা ও নেভা
দেখতে
বেশ আনন্দ পেতাম। জোনাকির জ্বলার ও নেভার জন্যই
মনে হয়
জোনাকি একটা জনপ্রিয় পতঙ্গ ।
কিন্তূ আজ আর চাষের জমি নেই সেখানে বড় বড় বাড়ী ঘর তৈরি হয়ে গেছে গাছপালা অনেক কাঁটা পরেছে আজ আর রাত হলে ছোটবেলার মতো জোনাকি দেখতে পাওয়া যায় না । যদি কোন দিন লোডশেডিং হয় তাহলে দু-একটা জোনাকি দেখা যায় । জোনাকি এমন একটা জীব যা জ্বলে ও নেভে । তাই ভাবলাম আজ এই লুপ্তপ্রায় পতঙ্গটির সম্বন্ধে কিছু কথা লিখি যাতে এই লুপ্তপ্রায় জীবটির বিষয়ে বেশী করে চর্চা হোক এবং এদের রক্ষার চেষ্টা করা হোক ।
পৃথিবীতে জোনাকির প্রায় দুই হাজার প্রজাতি রয়েছে, জোনাকি পৃথিবীতে ডায়নোসরের যুগ থেকে রয়েছে, জোনাকির জ্বলাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বায়োলুমিনস বলা হয়। জোনাকি কেন জ্বলে? জোনাকির জ্বলার কারণ কি? জোনাকি কলিয়প্যটেরা সমূহের লাম্পপ্রেডি পরিবারের সদস্য। জোনাকি জ্বলে দুটো ক্যামিক্যালের জন্য যা ওর পেটে থাকে এবং ঐ ক্যামিক্যাল দুটো অন্য কোন জীবের পেটে থাকে না । কিন্তূ আজ আমরা জোনাকির শত্রু হয়ে চলেছি, আজ গাছপালা কাটা হয়ে যাচ্ছে,ঝোপঝাড় পরিষ্কার হয়ে গেছে যা ছিল জোনাকিদের বাসস্থান। প্রকাশ প্রদুশনের জন্য জোনাকিরা রাস্তা হারাচ্ছে, আজ প্রকাশ প্রদুশনের জন্য পৃথিবী থেকে তাঁদের মতো জ্বল জ্বল করা পতঙ্গ জোনাকি লুপ্তপ্রায়, এরকম যদি চলতে থাকে তা হলে কয়েক বছরের মধ্যে জোনাকি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে শুধু একটা গল্পের বিষয় হয়ে থেকে যাবে তাই আজ পৃথিবীর তারাদের রক্ষার জন্যে যারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমার এই লেখা তাঁদের সম্মান জানানোর জন্য ।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি ঃ-
জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ । প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিশানগঞ্জেই । আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকা, উত্তরবঙ্গ সংবাদে অনুগল্প, ছোট গল্প লেখালেখি করেন । সঙ্গীত, বই পড়া, ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।