Advt

Advt

rankini-debir-mandir-vramon-travel-feature-by-biswajit-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রঙ্কিনী-দেবীর-মন্দির-ঝাড়খণ্ড

 

rankini-debir-mandir-vramon-travel-feature-by-biswajit-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-রঙ্কিনী-দেবীর-মন্দির-ঝাড়খণ্ড

ঝাড়খণ্ডে তো বটেই, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা থেকেও বহু মানুষ, বহু ভক্ত পুজো দিতে আসেন ছাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার ঘাটশিলা লাগোয়া জাদুগোড়ায় অবস্থিত এই মা রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরে। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই মন্দিরের দেবী কখনও কাউকে খালি হাতে ফেরান না। বহু মানুষেরই মনোস্কামনা পূর্ণ হয়েছে এখানে মানত করে বা পুজো দিয়ে। 

অমর কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'রঙ্কিনী দেবীর খাঁড়া' গল্পটি আজও  অনেকের গায়ে কাঁটা দেয়।

বর্তমান রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরটি বিরাজ করছে ঘাটশিলা থেকে ৪-৫কিমি দূরে রাতমোহনা থেকে প্রায় ৩০-৪০ মিনিটের পথ গেলে জাদুগোড়ায় যে পাহাড় রয়েছে,সেই পাহাড়ে মা রঙ্কিনী দেবী মা কালীর এক অবতার এবং প্রধানত পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক অত্যন্ত জাগ্রত দেবী বলে পরিচিত। শুধুমাত্র ভূমিজ উপজাতির মানুষই এই মন্দিরে পুরোহিত হতে পারেন। এখানকার মানুষজন প্রতিদিন পরম ভক্তিভরে এই দেবীকে পুজো করেন। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর সময় প্রায় মেলা বসে যায়। হাজার হাজার মানুষ তখন এখানে পুজো দিতে আসেন।

জনশ্রুতি অনুযায়ী মাতা রঙ্কিনী এখানে এই জঙ্গলে অধিষ্ঠান করতেন। একদিন এক স্থানীয় আদিবাসী একবার একটি মেয়েকে এক রাক্ষসকে হত্যা করতে দেখেছিলেন। কিন্তু এই দৃশ্য দেখে তিনি মেয়েটির খোঁজ করতে গেলে অবাক করা এক কাণ্ড ঘটে। অনেক চেষ্টা করেও তিনি মেয়েটির আর দেখা পাননি। সেই রাতেই ওই আদিবাসী মানুষটিকে দেবী রঙ্কিনী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, ওখানে দেবীর একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। সেইমতো পাহাড়ের গুহায় এই মন্দির নির্মাণ করা হয়। যদিও ঠিক কোন সময় মূল মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা সঠিক জানা যায় না। তবে বর্তমান যে মন্দিরটি রয়েছে সেটি নির্মিত হয়েছে ১৯৫০ সালে।

দক্ষিণ ভারতীয় শিল্প শৈলীতে এই মন্দিরটিতে যাওয়ার পাহাড়ি পথটিও বেশ রোমাঞ্চকর। রাস্তার এক ধারে মন্দির আর অন্য ধারে রয়েছে মানত করার গাছ। এই গাছে লাল কাপড়ে নারকেল বেঁধে ভক্তরা মনোস্কামনা জানান। মন্দিরের অভ্যন্তরে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলির মতো গোপুরম রয়েছে। এই গোপুরমে দেবী রঙ্কিনীর বিভিন্ন রূপ চিত্রিত। মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের ঠিক উপরেই দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য খোদাই করা আছে। রয়েছে আরও বহু দেবদেবীর মূর্তি। এখানে মূল মন্দিরের বাঁ দিকে গণেশ মন্দির আর ডানপাশে শিব মন্দির।

কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন মা রঙ্কিনী দেবী দুর্গারই এক অন্য রূপ। শোনা যায়, সুপ্রাচীন এই মন্দিরে একসময় নিয়মিত নরবলি হতো। ইংরেজ শাসন ব্যবস্থায় তাদেরই হস্তক্ষেপে সেই কুপ্রথা বন্ধ হয়।

রঙ্কিনী মন্দির যাওয়া যায় তিনভাবে। এক, ঘাটশিলা থেকে অটো বা গাড়ি নিয়ে গিয়ে ঘুরে আসা যায়। দুই, ঘাটশিলা থেকে ৫ কিমি দূর জাদুগোড়ার পথে এক অপূর্ব সুন্দর পর্যটনস্থল রাতমোহনা থেকে। তিন, রঙ্কিনী মন্দির থেকে নিকটতম আর একদম নতুন এক অপূর্ব সুন্দর পর্যটনস্থল শঙ্করদা থেকে। এখান থেকে রঙ্কিনী মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৮ কিমি। কলকাতা থেকে টাটাগামী যে কোনও ট্রেনে (স্টিল এক্সপ্রেস, ইস্পাত এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেন যাচ্ছে ঘাটশিলার ওপর দিয়ে টাটানগর) এসে নামতে হবে ঘাটশিলা। আর রাতমোহনায় থাকতে চাইলে ঘাটশিলা থেকে অটোতে যেতে হবে প্রায় ৫ কিমি। আবার শঙ্করদাতে থাকতে চাইলে ভালো হবে টাটানগর নামা। টাটা থেকে মাত্র ১৭-১৮ কিমি পথ শঙ্করদা। এক অপূর্ব স্পট এই শঙ্করদা। টাটানগর থেকে গাড়ি নিয়ে আসতে হবে। ঘাটশিলা থেকে রঙ্কিনী মন্দিরে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩৫-৪০ মিনিট। রাতমোহনা থেকে সময় লাগে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট। আর শঙ্করদা থেকে লাগে মিনিট দশ-পনেরো। শঙ্করদাতে থাকা খাওয়ার জন্য রয়েছে উইক এন্ড রিসর্ট (০৯২৩৪৬৪৩৫৪০, ০৮৭৫৭৭৮০৯১০)। রাতমোহনাতে আছে রিসর্ট রাতমোহনা ইন (০৮৪০৯২১১৫৫৫), ঘাটশিলাতে আছে জে এন প্যালেস (০৮৭৫৭৪৪৩৫৪০,০৮৯৬৯৬৫৪৭১৮), সুহাসিতা রিসর্ট ০৯৭৭১৮৩১৮৭৭, গাড়ির জন্য যোগাযোগ ০৭০০৪৩০৭৮০৪, ০১৭০৯০৪১৫০৬, রামকৃষ্ণ মঠের গেস্ট হাউস সহ বিভিন্ন হোটেল।

 লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক পরিচিতি -

জন্ম কলকাতায়। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করেন। সাপ্তাহিক বর্তমানে ভ্রমণ নিয়ে নিয়মিত লেখেন। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে এবং তথ্য সংগ্রহে আনন্দ পান     

ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে