Advt

Advt

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

ধারাবাহিকপ্রতি শনিবার

 

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

ধূসর মাথা হটিট্টি
(Grey headed lapwing)
 চুপিচর, পূর্বস্থলী 

হটিট্টি পাখি

Hottiti

(Lapwing)

২৮তম পর্ব শুরু ………

  প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য রঙ-বেরঙের পাখি প্রজাতি ভেদে প্রতিটি পাখিই একে অন্যের থেকে আলাদা সব পাখিই তার নিজস্ব রূপ-সৌন্দর্য্য, বৈশিষ্ট্য,ক্ষমতা,গুণ নিয়ে বিশ্ব প্রকৃতিকে করেছে অপরূপা

  প্রতিবছর শীত পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেতবে পাখির পরিযানের অন্যতম দুটো কারণ হচ্ছে খাদ্যের সহজলভ্যতা আর বংশবৃদ্ধি উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি সন্তকালে উত্তরে আসে বেশি বেশি করে পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেওয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। শীতকালে বা অন্য সময়ে খাবারের অভাব দেখা দিলে এরা আবার দক্ষিণে ফিরে যায়। আবহাওয়া এবং ঋতুপরিবর্তন পাখি পরিযানের কটি বিশেষ কারণ হিসাবে ধরা হয়। শীতের প্রকোপে অনেক পাখিই পরিযায়ী হয়। তবে খাবারের প্রাচুর্য থাকলে প্রচণ্ড শীতেও এরা বাসস্থান ছেড়ে নড়ে না। এরা জলাশয়ের ধারে কাছে অর্থাৎ উপকূলভাগে থাকে

 শীতকালে এই পরিযায়ী পাখিদের দর্শন পেতে সবাই দলে দলে হাজির হয়ে যায় সেই সমস্ত জায়গায় যেখানে অতিথি পাখিরা এসে পাড়ি জমায় আজ আমি হটিট্টি পাখিদের ধরে এনেছি  এদের মতো এত শান্ত পাখি খুব কমই দেখা যায় পাখিরা সাধারনতঃ চঞ্চল লাফালাফি,ওড়াউড়ি এদের বৈশিষ্ট্য তবে পাখিদের মধ্যে হটিট্টি একটু ব্যতিক্রমী চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পছন্দ করেধারে কাছে কাউকে দেখলে প্রথমে একটু একটু দৌড়ে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করে,শেষে উড়ে পালায় নয়তো ঘাস জমির মধ্যে ঢুকে যায়

ঠিক কত রকমের টিট্টি আছে সেই সংখ্যাটা আমার জানা নেই তবে আমি সব মিলিয়ে চার রকমের হটিট্টি দেখেছি এরা সাধারনতঃ জলের ধারেই থাকে কিন্তু এরা মাঠের পাখিতবে আমাদের দেশে প্রায় পাঁচ রকমের টিট্টি দেখা যায়

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

পাঁচ প্রকার হটিট্টি

১নং হট্টিটি (Red wattled Lapwing)

২নং নদীর টিট্টি(River Lapwing)এবং

৩নং হলদে মুখ টিট্টি (Yellow wattled Lapwing)

 উপরের এই তিন ধরনের হটিট্টিরা পরিযায়ী নয়,আমাদের দেশেরই পাখি কিন্তু স্বভাবে যাযাবর। জলাশয় এবং খাবারের খোঁজে এরা এদিক ওদিক চলে যায়। তবে,আমাদের দক্ষিনবঙ্গে সাধারনত শীতকালে এদের দেখা মেলে।

৪নং হটিট্টি ধূসর মাথা(Grey Headed Lapwing).এরা আমাদের দেশে শীতের অতিথি। চীন,জাপান এসব অঞ্চলে এদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। শীতের দিনে চলে আসে দক্ষিণ এশিয়ায়। শীত শেষ হলে আবার দলে দলে ফিরে যায়

৫নং উত্তুরে টিট্টি(Northern Lapwing).এরাও  আমাদের দেশে শীতের পরিযায়ীএদের জন্ম এবং  বেড়ে ওঠা সবটাই উত্তর ইউরোপ ও সাইবেরিয়া  অঞ্চলে।

 ইংরেজিতে যেমন পাখির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সব পাখিরই আলাদা আলাদা নাম আছে,বাংলায় সেটা নেই তাই সব ল্যাপউইং(Lapwing)এরই একটাই নাম হটিট্টি

 অনেকের কাছে শুনেছি আমাদেরঠাকুরমার ঝুলি” ‘লালকমল নীলকমলরূপকথার গল্পে উল্লেখ আছে যে,রাক্ষস-খোক্কস মারতে লালকমল আর নীলকমল মেঠো পথ ধরে অচিনপুরের উদ্যেশ্যে চলেছিল যাবার পথে হাট্টিমা-টিমটিম পাখিদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছিলখুব সুন্দর পাখিদুটোকে দেখে লালকমল আর নীলকমল একটু এগিয়ে যেতে যেতে দেখতে পেয়েছিল পাখিরা মাঠেতে ডিম পেড়ে রেখেছে!রূপকথার গল্পযেখানে বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার মেলবন্ধন ঘটিয়ে  শিশুদের(সকলের কাছেই)কাছে তা আকর্ষণীয় করে তোলা হয় অনেকের ধারণাঠাকুরমার ঝুলির হাট্টিমা-টিম টিম এবং তাদের ডিমের বর্ণনার সঙ্গে হটিট্টি পাখির অনেক সাদৃশ্য আছে হটিট্টি পাখিরা মাঠেই ডিম পাড়ে! যদিও তাদের শিং নেই! তবে বর্ণনার পাখির সঙ্গে Red Wattle’দের মিল দেখেই হাট্টিমা-টিমটিম আর হটিট্টি কোথাও যেন এক হয়ে গিয়েছেবেঁচে থাকুক রুপকথার গল্পরা,বেঁচে থাকুক হটিট্টিরা(Lapwing)

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

লাল লতিকা

(Red wattled lapwing)

 1 নং পাখি পরিচিতি :বাংলা নাম- হটিট্টি/লাল লতিকাইংরেজি নাম: Red wattled Lapwing. বৈজ্ঞানিক নাম:‘ভানেলাস ইন্ডিকাস’ (Vanellus indicus)

 পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর চুপিচরে বেশ কয়েকবার ছবি তুলতে গিয়ে বিভিন্ন হটিট্টিদের ছবি তুলেছিদুটো লাল লতিকা বা Red wattled lapwing আমার বাড়ির চারপাশে সারা রাত ধরে ডেকে ডেকে ঘুরে বেড়ায় বেশ কিছুদিন ধরে রোজ বিকেলের পর Red wattled lapwingর ডাক শুনতে পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে দেখি ডানলপ বাংলা স্কুলের ছাদে (আমার বাড়ির 50 মিটারের মধ্যেই স্কুল) দুটো লাল লতিকা(Red wattled lapwing) বসে বসে হ....টি..টি,....টি..টি করে ডাকে এমন করে ডাকে বলেই হয়তো পাখির নাম হট্টিটি হয়েছে! যদিও পাখির ডাক নিজের ভাষায় যে যেমন বোঝে তেমনই সে বোঝায়! এদের ডাকের ভাষা ইংরেজরা শোনে ডিড..হি.. ডু..,ইট,ডিড..হি..ডু..ইট ল্যাতিন ভাষায় নাকি শোনায় পি..হুইট, পি..হুইট! আমরা বাংলা ভাষায় শুনি হ....টি..টি, ....টি..টি

 হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চির চেনা আদুরে পাখি লাল লতিকা হট্টিটি/হটটিটি পাখি সারাবছর এখানে মাঠে ঘাটেই এরা থাকে মাঝে মধ্যে খাবারের খোঁজে এদিক ওদিক গেলেও আবার ফিরে আসেএখানেই বংশবিস্তার করে

 এদের বলা হয় মাঠের পাখি। বাসা তৈরির  ক্ষেত্রেও খোলা মাঠ এদের প্রথম পছন্দ। লাল লতিকা (হট্টিটি)র চোখের সামনে উঁচু মাংসল অংশটি টকটকে লাল। লতিকাটির লাল রং দু’দিকে এগিয়ে চোখের চারপাশে একটি বৃত্ত এঁকেছে।

  লাল লতিকার গলা,বুক,মাথার তালু ও ঠোঁটের আগা কালো। ডানা বোজানো অবস্থায় পিঠ ও লেজের উপরিভাগ চকচকে বাদামি,তাতে জলপাই রঙের আভা। ঠোঁট লাল। লম্বা পা দু’টি হলুদ।

 স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। ধূসর বাদামী ডানা,লেজ আকারে ছোট ও কালো। মাথা ঘাড় ও বুকের রঙ কালো। ঘাড় থেকে শুরু করে দেহের দুপাশ বেয়ে নীচ পর্যন্ত অংশ চওড়া সাদা। উপরের চঞ্চু থেকে চোখ পর্যন্ত রঙ লাল। নীচের চঞ্চুর রঙও লাল। চোখের চারিদিকে লাল রঙ থাকে। চঞ্চুর সামনের দিকের সামান্য অংশ কালো

 ফাল্গুন থেকে জৈষ্ঠ্য মাস(মার্চ-জুন)এদের প্রজনন মরসুম এবং ডিম পাড়ার সময়। একসঙ্গে তিন চারটে ডিম পাড়ে

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

নদীর টিট্টি 

(River Lapwing)

2 নং পাখি পরিচিতি : বাংলা নাম- নদীর টিট্টি/টিট্রিভ ইংরেজি নাম: ‘রিভার ল্যাপউইং’ (River lapwing) বৈজ্ঞানিক নাম: Vanellus duvaucelii

 বিভিন্ন ধরনের ল্যাপউইং বা টিটি পাখিদের মধ্যে রিভার ল্যাপউইং হলো আর একটি প্রজাতি। এই পাখিটাকে দেখলে একটু রাগী বলে মনে হলেও, এরা কিন্তু খুবই নিরীহ। খাবারের সন্ধানে পোকামাকড় এর পিছনে দৌডতে হয় বলে,স্বভাবে এদের একটু বেশি চঞ্চল বলে মনে হয়। এরা রিভার ল্যাপউইং নামেই সমধিক পরিচিত।

 শীতের মরসুমে এরা স্যাঁত স্যাঁতে জলাভূমিতে আসে,কুয়াশা ঘেরা জংলা ঘাস জমিতে বিচরণ করে। ডিম পাড়ে মাটিতে। ঝুঁটিওয়ালা সাদা-কালো-ধূসরখয়েরি রঙের মিশেলে খুব সুন্দর দেখতে লাগে পাখিটাকে দেখার দিক থেকে স্ত্রী-পুরুষের তেমন কোনও পার্থক্য নেই।

 এরা খুবই মজাদার একটি পাখি। দিনের বেশীরভাগ সময়ই এরা নিস্ক্রিয় ভাবে থাকে। একমাত্র খাবার খেতে বা বিপদের আঁচ পেলে নড়াচড়া করে মাত্র। নির্বিচারে পাখি শিকার,তাদের ডিম এবং বাচ্চা সংগ্রহ,ক্রমশঃ উপকূলবর্তী মেঠো জমি হারিয়ে যাওয়া,জলাভূমি বুজিয়ে ফেলা,নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে কলকারখানা নির্মাণ ইত্যাদির কারণে এরা সমূহ বিপদের মুখে।

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

হলুদ লতিকা 

(Yellow wattled lapwing)

 ৩নং পাখি পরিচিতি: বাংলা নাম- হলদে মুখ হটিট্টি/ হলুদ লতিকা/হলুদ টিট্রিভ ইংরেজি নাম: Yellow wattled Lapwing. বৈজ্ঞানিক নাম: Venellus Malabaricus.

 ‘হটিট্টিহল আমাদের দেশি মোরগ/মুরগীর আকারে কুক্কুট জাতীয় পাখি ‘Wattle’ হল উপাঙ্গ কুক্কুট জাতীয় পাখির মাথার ওপরে, চোখের পাশে অথবা গলার নীচে যে মাংসল অংশ থাকে তাকে উপাঙ্গ বা Wattle বলা হয়ওই মাংসল অংশটুকু এতই নরম যে লতলত করে নড়ে বাংলায় সেই অর্থেই উপাঙ্গটিকে লতিকা বলা হয় উপাঙ্গ আছে বলেই এদের Red wattled এবং yellow wattled বলা হয়

 এদের ঠোঁটের গোড়ায় হলুদ রঙের ত্রিকোণাকার অংশের জন্যই এমন নাম। দেখলে মনে হয় মাথায় যেন কালো রঙের টুপি পরেছেঠিক তার নীচে দুটো চোখের মাঝখানে,ঠোঁটের ওপর উজ্জ্বল হলুদ রঙের মোটা মাংসল অংশ রয়েছে। মাথার কালো অংশের ঠিক নীচেই সাদা মোটা দাগ থাকে। যা দিয়ে মাথা ও গলা,বুকের অংশ আলাদা করা যায়।

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

ধূসর মাথা হটিট্টি

(Gray headed lapwing)

 হলুদ লতিকা(Yellow wattled)হটিট্টি শুকনো জায়গায় থাকতে ও খাদ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। অন্য হটিট্টিদের মতো ভিজে বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা একদম পছন্দ করে না।। শুকনো জায়গায় বাসা তৈরির জন্য এদের বেশ খানিক পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ করে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর সময় এরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে কারণ,ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার আগে কখনও সখনো জলীয় নরম আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। সেই আবহাওয়া তৈরি করতে এরা জলেতে নিজেদের ডানা ভেজায়। তারপর ভেজা ডানা মেলে ডিমে তা দিতে বসে এভাবেই এরা ডিমকে ছায়া ও আর্দ্রতা দেয়

 কিছু পাখি আছে যারা প্রিকোসিয়াল’(Pricocial) এবং নিডিফুগাস’ (Nidifugous) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত প্রিকোসিয়াহল সেই সমস্ত প্রাণী,যাদের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই চোখ ফোটে,দেখতে পায় এবং স্বাধীনভাবে বিচরণে সক্ষম হয় আর নিডিফুগাসহল,যে সমস্ত পাখির বাচ্চারা জন্মানোর কিছু সময় পরই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নিডিফুগাস প্রকৃতির প্রাণী প্রিকোসিয়াল হয়ে থাকে। তিতির, কোয়েল,হটিট্টিরা এই দুই গোত্রের অন্তর্ভুক্তহটিট্টির ছানা ডিম ফুটে বেরিয়েই দৌড় লাগায়!

 এরা অগোছালোভাবে বাসা তৈরি করে কিন্তু ইনকিউবেশনের পর খোলস ছেড়ে বাচ্চা বেরোবার সঙ্গে সঙ্গেই ডিমের সব খোলা ফেলে দিয়ে বাসা পরিষ্কার করে নেয় বাবা-মা ট্টিটি

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

উত্তরে টিট্টি

(Northan Lapwing)

 4নম্বর পাখি পরিচিতি: বাংলা নাম-ধূসর মাথা হট্টিটি ইংরেজি নাম : Grey Headed Lapwing. বৈজ্ঞানিক নাম : Vanellus cinereus.

 ধূসর মাথা হটিট্টি আমাদের দেশের শীতকালের পরিযায়ী। চীন জাপান এই সব অঞ্চলে জন্মায় এবং বেড়ে ওঠে  শীতের দিনে চলে আসে দক্ষিণ এশিয়ায় মাথা-গলা ধূসর,লাল চোখ হলুদ বৃত্তে ঘেরাউজ্জ্বল হলুদ ঠোঁটের আগার দিকে এসে কালো রঙের ছোপ দেখা যায় ায়ের রঙও হলুদ। সারা শরীর বিভিন্ন রঙের মিশেলে অপরূপ করে তুলেছে হট্টিটি পাখিটাকে। লাল চোখ দুটো আরও সুন্দর। বুকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি নেকলেসের মতো কালচে ধূসর পট্টি আছেপেটের রঙ সাদা পিঠেরঙ বাদামিলেজের গোড়া সাদা,লেজটা কালো

 বিভিন্ন ধরণের হট্টিটি পাখি আছে। এরা সবাই খুব চঞ্চল,খুব ভীতু,তাই দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। পোকা-মাকড়,কুচো মাছ খায়। অত্যন্ত কুঁড়ে তাই বাসা তৈরি করে না,ডিম পাড়ার সময় মাটির ছোট ছোট নুড়ি,গেঁড়ি-গুগলি,সুপারীর খোলা এইসব দিয়ে বাসা বানায় জলাশয়ের পাড়ে মাটিতে। তার উপর ডিম পাড়ে। এরা একসঙ্গে চার-পাঁচটা ডিম পাড়ে। তবে বেশিরভাগ ডিম নষ্ট হয়,নয়তো অন্য পাখিরা খেয়ে নেয়। গড়িয়ে জলে পড়েও যায় কখনও সখনো।

 ধূসর মাথা হটিট্টিরা প্রজনন ঋতুতে এদেশে থাকে না। উত্তর-পূর্ব চীন,জাপানে জলাশয়ের ধারে এরা বংশ বিস্তার করে। শুধুমাত্র শীতের তিনমাস আমাদের এই অঞ্চলে এসে ওঠে,আবার ফিরে যায় নিজের দেশে।

 

pakhi-prakriti-part-28-hottiti-lapwing-pakhi-bird-jana-ajana-feature-knowledge-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-e-magazine-পাখি-প্রকৃতি-শ্রাবণী-চ্যাটার্জী

লাল লতিকা খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত

5 নম্বর পাখি পরিচিতি : বাংলা নাম-উত্তরে টিট্টিসম্ভবতঃ এদের কোনও বাংলা নাম নেই ইংরেজি নাম : নর্দান ল্যাপউইং (Northan lapwing) বৈজ্ঞানিক নাম: Vanallus Vanallus. এরাও আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী জন্ম এবং বেড়ে ওঠা উত্তর ইউরোপ সাইবেরিয়া এইসব অঞ্চলে

  যে জমিগুলোকে সদ্য চষা হয়েছে অথচ চারা লাগানো হয়নি,সেইসব জমিতে ওরা ঘুরে বেড়ায় বা দাঁড়িয়ে থাকে জোড়ায় জোড়ায়সাধারণভাবে এরা খুব সতর্ক। মাটির রঙের সাথে ওদের গায়ের রঙ প্রায় মিশে যাওয়ায় হঠাৎ করে খুঁজে বার করা মুশকিল। হটিট্টি বা টিট্টি প্রজাতির পাখিগুলোর সব কটাকেই দেখলে বেজায় দুঃখী বলে মনে হয়

 দেখতে তুলতুলে আদুরে হটিট্টি নিজেদের প্রয়োজনে  বিভিন্ন রকমভাবে সঙ্গী সাথীদের ডাকাডাকি করতে পারে। এরা সঙ্গীকে খুশি করতে একরকম,বাসা বাঁধা ও ডিম দেয়ার সময় একরকম,আনন্দে একরকম,বাচ্চাদের দিকনির্দেশনা দিতে একরকম এবং সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ভিন্নরকম শব্দে ডাকতে পারে। যা অন্য কোনো পাখির ক্ষেত্রে একেবারেই বিরল।

  হটিট্টিদের খাদ্য তালিকাও বেশ বড় কচি ঘাস, পোকামাকড়,কীটপতঙ্গ, কেঁচো, সাপের ছোট বাচ্চা, ছাড়াও শাকসব্জি, বীজ,ছত্রাক,ব্যাঙ-ব্যাঙাচি সবই এদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত

  এদের দেহের তুলনায় পা অনেক বেশি লম্বা। তাই পা নিয়ে এদের বেশ কিছু সমস্যা থাকে আঙুলের গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে এরা গাছের ডালে বসতে পারে না। মাটির ওপরই চলাফেরা, বাসা বাঁধা , আহার-বিশ্রাম,বংশবৃদ্ধি সবকিছুই করতে হয় রাতে সব পাখিরাই গাছের ডালে বা কোটরে আশ্রয় নেয় কিন্তু হটিট্টিরা মাটিতেই ঘুমোয়হয়তো লম্বা পাদুটোকে উপরের দিকে তুলে রেখে ঘুমোয় কিনা আমার জানা নেই

 পাখিরা প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধবাংলাদেশের শ্যামল সুন্দর প্রকৃতির সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে এখানে দেশি-বিদেশি,আঞ্চলিক-পরিযায়ী সকল পাখির বৈচিত্র্যময় সমাবেশ ঘটেছেতাদের কলধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে পৃথিবীপাখি-প্রকৃতির সম্পর্ক অটুট রাখতেসবুজ সৃজন করে পাখি’-র আলয় গড়ে তোলা দরকার

 

ক্রমশ ……

২৯তম পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার

 লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

বিঃদ্রঃ – ছবি এবং ভি ডি ও লেখিকার নিজের তোলা । 


লেখিকার পরিচিতি –

লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন

লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজি, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায় বর্তমানে বার্ড’স ফটোগ্রাফী এবং পাখি-প্রকৃতি” নিয়ে লেখা শুরু করেছেন