Advt

Advt

Probohaman-story-upannyas-19thpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার

Probohaman-story-upannyas-19thpart-by-manisha-kar-bagchi-tatkhanik-digital-bengali-online-bangla-web-e-magazine-প্রবহমান

 

১৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  ।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

১৯তম পর্ব শুরু ………………

থেমে থাকুক না কিছুটা সময়

বিয়ের পর ভোর রাতে বাড়িশুদ্ধ মানুষকে কাঁদিয়ে, পাঁজর ভর্তি একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে পাড়ি দিলাম এক আকাশ দূরত্ব, একটি অচেনা মানুষের হাত ধরে। আমার কিচ্ছু জানা নেই এরপরের জীবনের গতি কোন দিকে মোড় নেবে। আমিহীন বাড়িতে আগের মতই ফুল ফোটে, ফল হয়, পাখি ডাকে । সারারাত জোছনায় ডুবে থাকে গোবরে নিকানো উঠোন। শিউলি ঝরে আগের মতই। সবকিছু ঠিকঠাক। আমার মনের খবর কেউ জানে না। তুমিও না। ব‌উ ভাত হয়ে গেল। হয়ে গেল ফুলসজ্জাও। কোথায় ফুল? কোথায় সজ্জা? কোথায় আমি? দুচোখে জলের ধারা ছাড়া আমার আর কিছুই মনে নেই। গুমরে কাঁদে বারবার হৃদয়ের অতৃপ্ত আকুলতা। কেঁপে উঠে কেঁদে ওঠে অকূল পারাবার। একান্ত গোপনে গভীর ক্ষত বুকে এক চিলতে বেঁচে থাকা। 

তখন কত‌ইবা বয়স হবে। সংসার জালে আবদ্ধ হয়ে দম বন্ধ হবার উপক্রম। শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ। বড় সংসার। মনে যত‌ই ঝড় উঠুক সবকিছু এক পাশে রেখে কর্তব্য করে যেতে হবে। হাসিমুখে তাল মিলিয়ে চলতে হবে সকলের সাথে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের এই শিক্ষা সেই ছোট্ট বেলা থেকেই দেওয়া হয়। সুতরাং জীবনের ঠেলা গাড়ি ঠেলতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি আমার। 

বিয়ের পর প্রথম  শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি এলাম। সবাই এলো দেখা করতে। ভেবেছিলাম তুমিও আসবে। এলে না। আমার বান্ধবী রমা বলল তুমি এসেছিলে তার কাছে আমার বিয়ের পরের দিন। আমার বিয়ের সব খবর তুমি নিয়েছিলে। রমা আমাকে বলল তোমাকে চেনা যাচ্ছিল না। উস্কোখুস্কো চুল। চোখ দুটো লাল। তুমি ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেনা। এক রাতে মানুষের এমন পরিবর্তন হতে পারে তার জানা ছিল না। তুমি ভীষণ কেঁদেছিলে সেদিন।  কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলে,

---রমা আমি বুঝতে পারিনি এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে হয়ে যাবে। আমি তো অপেক্ষা করছি কবে সেই মধুর লগ্ন আসবে যখন আমি তাকে বুকে জড়িয়ে বলব "তোমাকে ভালোবাসি খুব"।

--- বললে না কেন অনিকেত দা? সে তো দিনরাত সেই মুহূর্তটির‌ই স্বপ্ন‌ দেখেছে।

--- এই মাত্র তো আমার ট্রেনিং শেষ হলো। হাতে কিছু পয়সা আসবে। তার জন্য একটি  বাঁধব একটি ছোট্ট বাসা। তার হাত ধরে সেই বাসার গৃহ প্রবেশ করব। কতো স্বপ্ন ছিল আমার।

--- তাকে সে কথা বলতে পারতে?

--- ভেবেছিলাম তাকে সারপ্রাইজ দেব। ভেবেছিলাম ওকে কিছু বলব না, কাকুকে গিয়েই বলব, " কাকু মৃণ্ময়ীর দায়িত্ব নিতে চাই আমি"। কাকু অমত করতেন না আমি জানি। উনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। কাকুর সঙ্গে কথা বলে তার পর বাবাকে পাঠাব ভাবছিলাম। এর মধ্যে খবর পেলাম সবকিছু শেষ। শেষ হয়ে গেছে সবকিছু। আমার সমস্ত আশা আজ নিরাশায় ডুবে গেছে রমা। আমি এখন কেমন করে বাঁচব বল? কি করি কিছু বুঝতে পারছি না। নিজেকে কি দিয়ে বোঝাই?

--- নিজেকে শক্ত কর অনিকেত দা। তোমার কিছু হলে সে বাঁচবে না। তুমি জানো না তার কি পরিস্থিতি। উঠে দাঁড়াও। নতুন করে বাঁচো। 

--- আমি চাই সে ভালো থাকুক। নতুন জীবনে সুখী হোক। তুমি তাকে বলে দিও আমার কথা যেন চিন্তা না করে। তাকে বলো আমি ভালো আছি। সে ভালো থাকলে আমি আরও ভালো থাকব।

--- ঠিক আছে আমি বলব।

---সে ভালো থাকুক। সে ভালো থাকুক বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে তুমি। আর কিছু বলতে পারছিলে না।

 বুঝতে পেরেছি কী ভীষণ কালবৈশাখী ঝড় গেছে তোমার বিস্তির্ণ উঠোন জুড়ে। তুমি ধীর স্থির শান্ত তাই তুমি দাঁড়িয়ে আছ, ভেঙ্গে পড়োনি এখনও। আমি এখন পাথর। সুখ দুঃখের উর্দ্ধে। জানি না সবকিছু ঠিক হবে কিনা। রমা বলেছিল সময়ের সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। জানি না কতটুকু ঠিক হবে তবে এই মুহূর্তে আমি বলছি, হে ঈশ্বর সময় কে থামিয়ে রাখো না কিছুটা সময়। আমি ফিরে যাই আমার ভালোবাসার কাছে। তার যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখটি দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে একবার একটু আদর করি। পরম আদরে মুছিয়ে দিই তার সুনামি প্লাবিত চোখ দুটি। কেউ কথা শোনেনি আমার। কেউ না। ঈশ্বর ও না। ভাগ্যের পরিহাস স্বীকার করা ছাড়া কিইবা উপায় আছে। চিৎকার করে খুব কাঁদলাম। শুনেছি কাঁদলে নাকি দুঃখ হালকা হয়। আমার দুঃখ? সে তো অথৈ সমুদ্র।

ক্রমশ ……………

১৯তম পর্বটি পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার ।

লেখিকার পরিচিতি –

মনীষা কর বাগচী বিয়ের পর দিল্লিতে আসেন। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সবুজে শ্যামলে ঘেরা নদীয়া জেলার মাঝেরগ্রাম নামক একটি গ্রামে।

স্কুল থেকেই লেখা লিখি শুরু  নিজের মনেই লিখে যেতেন কত কিছু। আজ সে সব লেখাগুলোও  হারিয়ে গেছে। লেখার অনুপ্রেরণা জোগান সেজোকাকা কবি নিশিকান্ত বাগচী

দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়।  প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন  শ্রদ্ধেয় কাকু বিরাট বৈরাগ্যের সহায়তায় হরিচাঁদ ঠাকুরের গান লিখেছেন।  

এ পর্যন্ত লেখিকার নিচের আটটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

১ নীল দিগন্ত 

২ চোখের কোণে জল

৩ নূতন ভোর

৪ বসন্তরেণু

৫ শিউলি বেলার সুর

৬ বিবর্ণ বনলতা

৭ তপন বাগচী গভীর অনুধ্যান

৮ স্বপ্ন সফর (গল্প ব‌ই)

দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পথে।

১ শিমুলরঙা সূর্য

২ দেখা হত যদি