ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি
মঙ্গলবার
৯ম অধ্যায় পড়তে এখানেক্লিক করুন।
১০ম অধ্যায় শুরু
Out of the ash
I RISE--again and again
And fight
নর্থ কাছাড় হিলস এর আকাশ আজ কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে।আজ সকালেই শ্রুবাবতী পাগলাঝোরা এসেছে। তেইশে জানুয়ারি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালনে প্রধান অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্য রাখবে বলে ।মাইবাং এ ও সবাই ওকে বারবার বলেছিল ওখানেই প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে--কিন্ত শ্রুবাবতী পাগলাঝোরা তে ই চলে এলো।
শ্রুবাবতী ঠিক করল অনুষ্ঠান শেষ হলে ও ওনার সাথে দেখা করবে।
কদম,কদম,বঢ়ায়ে যা
খুশিতে গীত গায়ে যা--গানটির সাথেই প্রদীপ জ্বলে উঠল।সিং
সাহেব নেতাজি র ছবিতে স্যালুট করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালেন।
করতালি মুখর প্রাঙ্গণে শ্রুবাবতী আনমনা,সুশীল
বাবুর হাত
মাথায়--বৃদ্ধ মানুষ
টির চোখের কোণে জলবিন্দু--
--নেতাজী,তোমাদের মত স্বাধীন নারীদের জন্য ,স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।আমাদের আরো অনেক দূর যেতে
হবে---কদম,কদম,বড়ায়ে যা---
শান্তিবৌদি সত্যহরিদা মুগ্ধ ভাবে
বললেন--পাগলাঝোরায় এই প্রথম কোনও মহিলা প্রধান
অতিথির ভাষণ
দিলেন----শিবনদা--"তুই ইতিহাস সৃষ্টি করলি
রে--বুড়ি"
সৌমেন মৃদু কন্ঠে--আপনি,এলেন,দেখলেন, আর জয় করলেন---
মাইক্রোফোনে তখন আজাদ হিন্দ্ ফৌজের ,জাতীয় সঙ্গীত বাজছে--জনগণমন
অধিনায়ক জয়
হে--র হিন্দুস্তানী ভার্সন--সব,সুখ চায়ে তু বরখা বরষে—
**********
O,the,mind,mind has mountains;cliffs of fall
Frightful, sheer,no-man-fathomed
Hold them cheap
May who ne'er hung there
বঙ্গপোসাগর থেকে মেঘের দল নেমে এসেছে বরাক
উপত্যকায়।সকাল থেকেই আকাশ মুখ গোমড়া করে
আছে।শ্রুবাবতী তাও বেরিয়েছিল।জানুয়ারির শেষ--এখানেও শীতের কামড় বেশ
তীব্র।আবাল্য পরিচিত
পথ ঘাট--দোকান, রাস্তার মোড়ে একাদশ শহীদ বেদী--১৯
শে মের প্রভাত ফেরি,রাতের মশাল মিছিলে
শহীদ বেদী ঝলসে
ওঠে--;বড় মাঠ সার্কিট হাউস--শ্রুবাবতী
আনমনা--এই সার্কিট হাউস এ কতবার প্রতিবাদ ধর্ণা--আসামের মুখ্যমন্ত্রীর ইন্টারভিউ নেওয়া--ছাত্র
জীবন এক
লহমায় --লাইব্রেরি হল--থেকে বই নিয়ে বেরুতে ই মুখোমুখি
অনিন্দ্য।
--তুমি?
প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!
ভেবেছিলাম এখানেই থেকে
তোমার বাড়িতেই যাব।চলো--
--অনিন্দ্য,চলো না একটু ঘুরে আসি--
অনিন্দ্য অবাক
--শ্রুবাবতীর চোখে চোখ।
--কোথায়?
দুজন দুটি রঙিন ডানার প্রজাপতি--হাঁটতে
হাঁটতে বাচাইর খাল--শষ্য হীন ন্যাড়া মাঠ-হঠাৎই এক চিলতে মরা রোদের টুকরো--কলেজ ছাড়িয়ে আরো
কিছুটা দূর--
--চলো না ঐ মাঠে--
নড়েচড়ে বাঁশের একলা
সাঁকো--দুজন ক্লড মোনের পেন্টিং!
মেঘভাঙা আলো
দুজনের শরীরে
--আমার সময় ফুরিয়ে
আসছে--এবার হয়তো
পাকাপাকি ভাবেই কলকাতা
বাসী--
আমাদের একটা বোঝাপড়া--
অনিন্দ্য একটি টকটকে লাল পুলওভার --পরেছে জীনসের সাথে ভাল লাগছে
--তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে--
কলেজে বুঝি এমন ই সেজেগুজে যাও--ছাত্রীরা
প্রেমে পড়ে যাবে--শ্রুবাবতী র সুরে হালকা আমেজ--অনিন্দ্য র চোখের কোল নরম হয়ে এলো।স্বপ্নিল গলায়
--শ্রুবা,তোমার পেছনে মেঘ
থমকানো আকাশ, মুখে দিনান্তের শেষ
রশ্মিরেখা--খয়েরি পাড়
মাষ্টারড রং
এর তাতের শাড়ি--কালো
চোখ দুটি
টলটল জলভরা মেঘ--কবিতার মতো দাঁড়িয়ে আছো তুমি--আমার শ্রুবাবতী
জীবন তো কবিতা নয় অনি--
যতদিন তুমি আছো আমার জীবন কবিতা
সেখানেই তো আমার ভয় অনি--
যদি কোন দিন এই কবিতা ম্যাড়ম্যাড়ে টানটান গদ্য হয়ে যায়?-আর কোন শিল্প না থাকে?কঠিন বাস্তব জীবন যদি আমাদের সব রস নিংড়ে নেয়
যদি একসাথে থাকতে থাকতে পরতে পরতে পেঁয়াজ এর খোসার মতো জীবন টা
শূন্য হয়ে
যায়--অনিন্দ্য আমি সেই রিক্ত জীবন সহ্য করতে পারব
না--একটা অভ্যাস এ
পরিণত জীবন--আমাকে
ক্লান্ত করবে
আর আমার সেই ক্লান্তি একদিন তোমাকে ও
ক্লান্ত করবে--
--আমাদের ভালবাসা কী
মিথ্যে শ্রুবাবতী?
শ্রুবাবতী চোখ তুলে অনিন্দ্য র দিকে তাকালো
--না অনিন্দ্য মিথ্যে নয়--ভীষণ সত্যি--আর তাই এই ভালবাসাকে আমি
দৈনন্দিন টানাপোড়েন ,সংসার, জীবন যাপন এর
মধ্যে টেনে আনতে চাই না--
--শ্রুবা,আজ থেকে অনেকদিন আগে,তোমাদের বাড়িতে
অষ্টমীর সন্ধীপুজোর প্রদীপের আলোয় এক কিশোরী
মুখ আমি আবিষ্কার করেছিলাম--ষোড়ষী সেই মুখ আজ ও আমার অন্তর জুড়ে--
---কিশোর সেই মুখ আমার ও হৃদয় জুড়ে
অনি--
দুটি মানুষ চুপচাপ;নীরব
কিছুটা সময় থমকে আছে একলা বাঁশের সাঁকো
জুড়ে--হঠাৎই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি
নেমে এলো—
**********
Music pours over the sense
Music sees more than I
একটি অনির্বচনীয় আলো--ঘুম ঘুম চোখের তারায়-ভোর--সারারাত বৃষ্টিপাত ক্লান্ত আকাশ এখন সূর্য ওঠার প্রস্তুতি
নিচ্ছে--ভোরের হাওয়ায় পাখিদের উৎসব।শ্রুবাবতীর চোখের পাতায়,ঘুম আঠার
মতো লেপ্টে আছে--ঘুমের মধ্যেই শুনতে পাচ্ছিল বাজারের মসজিদ থেকে ভেসে আসা
ভোরের আজান--আবাল্য অভ্যাস-আজান
শুনতে শুনতে আবার গরম
কম্বলের উষ্ণ আরামে ঘুমিয়ে পড়া--;আজ ও সেই অভ্যাস বশে শ্রুবাবতী
কম্বল টাকে ভাল করে
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পাশ ফিরতেই হাল্কা ভোরের হাওয়ায় ভেসে এলো
মহিলাদের বৃন্দ গানের সঙ্গে বড় বড় ঝাঝর করতালের মিঠে বোল
ননী খাইলো কে রে বাছা,ননী খাইলো
কে?
আমি তো না খাইছি ননী খাইয়াছে বলিয়া
বলাই যদি খাইতো তবে থইতো আধা
ছাদা
তুমি তো খাইয়াছো ননী ভান্ড করছো হুদা
হস্তে বাড়ি নন্দরাণী গেলা রে খেলায়
লম্ফ মারি উঠে গোপাল কদম ডাল বাইয়া
নাম নাম নাম রে বাছা নাম একবার
ইবার নামিলে দিমু গলার
মণিহার--
মনে পড়ল আজ আকাশ দের বাড়িতে
সূর্য ব্রত।
গতকাল রাঙামাসীমা এসে সবাই কে নিমন্ত্রণ করে গেছেন।
আকাশ এখন হায়দরাবাদ এর কোথাও তাঁবু তে জীবন
মাপছে--বেশ কয়েক দিন আগেই ওর চিঠি
পেয়েছে।--ফিল্ড ওয়ার্ক--সন্ধ্যার আকাশ এ তারাদের মাপজোখ।--আকাশ বেশ ভাল লিখেছে--তারা
পড়া!
সূর্য কে কেন্দ্র করেই জীবন--তাই শীত
ভোরে সকাল থেকেই প্রদীপ জ্বালিয়ে সূর্য আরাধনার শুরুয়াত!সূর্য
ঠাকুর অস্তাচলে যাবার পর প্রদীপ ফুলমালা--ইত্যাদির পুকুরের জলে বিসর্জন!
শ্রুবাবতীর ঘুম চোখের তারায়
বছর ছয়ের
একটি মেয়ে-শাড়ি পরে মাঘ মাসের ভোরে মাঘ মন্ডল
ব্রত করছে--গোবর নিকোনো উঠোন জুড়ে আলপনা আঁকা--
ছোট্ট মেয়েটি আর তার
ঠাম্মি-এমনধারা সংলাপে ব্যাস্ত--
ও বুড়ি,মন্ত্র পড়
--উঠো,উঠো,সূরযাই গো ঝিকিমিকি দিয়া
বামুন বাড়ির মাইয়া গুলি
তোমার পানে
চাইয়া
--তোমায় পূজি কী ফল পাই-
মনের মতো সোয়ামী পাই
ঘরগেরস্ত ,শাউড়ি পাই
--দুর--তোমার মন্তর গুলো ভাল না
--কেন লা?
মাইয়া মানুষের তো এসবের ই
দরকার।
--না--আমি বলব
তোমায় পূজি কী ফল পাই
পরীক্ষায় ভাল ফল চাই
--চুপ,চুপ--ভুল মন্তর পড়লে ঠাকুর গোঁসা করেন--
কোনরকম পুজো শেষ করেই শ্রুবাবতী শাড়ি
জ্যাকেট ছেড়ে ব্যাগ
কাঁধে-স্কুল--
ঠাম্মির কথা মনে হতেই শ্রুবাবতীর চোখের কোলে জল--
সূর্য তখন পুকুরের জলে ঝিকিমিকি ছায়ায়-
আকাশ দের বাড়ির উঠোনে তখন
গোপালের গোষ্ঠ লীলা
গান শুরু হয়েছে
--এই মাটিতে হয় না
খেলা
উটিল টিলার মাটি—
ক্রমশ …………
১১তম অধ্যায় পড়ুন আগামী
মঙ্গলবার।
লেখিকার পরিচিতি –
জন্ম-কলকাতা য় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে
যুক্ত
প্রকাশিত অডিও ভিডিও
সিডি--দিল্লি হাটার্স –এর তিন কবি