Advt

Advt

Chena Chena Sur, Achena Gaan, Story - Galpo, 2nd Part, by Shovanlal Adharkar, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e magazine, চেনা চেনা সুর, অচেনা গান

Chena Chena Sur, Achena Gaan, Story - Galpo, 2nd Part, by Shovanlal Adharkar, Tatkhanik digital bengali online, bangla web, e magazine, চেনা চেনা সুর, অচেনা গান

 

১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

২য় পর্ব শুরু ……………

এরপর মিশ্র-দা একেবারেই থেমে গেলেন-যেন আর গল্পই নেই। আমি ওঁর মুখের দিকে উন্মুখ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম,এমন সময় আমাদের গাড়ির ড্রাইভার গাড়ির নিচ থেকে মুখ বাড়িয়ে জানালো,প্রায় ঠিক করে ফেলেছে,আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমাদের যাত্রা আবার শুরু করা যাবে। আমি তখন গল্পে এতই মগ্ন ছিলাম যে ভাবছিলাম গাড়িটা যেন এখুনি ঠিক না হয়,কেননা ঠিক হলেই মিশ্র-দা গল্প থামিয়ে দেবেন,অথচ মিশ্র-দার মুখের দিকে চেয়ে বলতেও সাহস হচ্ছিল না ওঁকে তাড়া দেবার।

অনেকক্ষণ এভাবে কাটার পর আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। বলে উঠলাম, “তারপর কি হ’ল দাদা?”

আরও খানিকটা সময় পরে গভীর রাতের ফিসফিসানি হাওয়ার স্বরে মিশ্র-দা বলে উঠলেন,“তার আর পর নেই ভাই;তারপরই সব শেষ”।

আবার অনেকক্ষণ এক অসহনীয় স্তব্ধতায় ছেয়ে গেল সেই নক্ষত্রালোকিত নির্জন ‘জাতীয়-সড়ক’।

বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার উন্মুখ দৃষ্টির পানে চেয়ে খুব ধীরে ধীরে রাত-শেষের হালকা হাওয়ার স্বরে বলে উঠেছিলেন মিশ্র-দা, “মার্থা খ্রিসমাসের ছুটি কাটিয়ে আর ফিরে আসেনি-এক প্রলয়ঙ্কর সামুদ্রিক-ঝড়,ভূমিকম্প আর সুনামি প্রায় একসঙ্গে এসে ওদের পুরো গ্রামটাই পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল-তুমিও হয়ত খবরে পড়ে থাকবে”।

আমার মনে পড়ে গেল, সত্যি তো কয়েক বছর আগে এই ভয়াবহ খবরটা খবরের কাগজে পড়েছিলাম বটে,কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ততক্ষণ কোন ঘটনার গভীরতা মনে দাগ কাটেনা বা দীর্ঘস্থায়ী হয়না।

আমাদের ড্রাইভার সর্দারজী বলে উঠল,“চলিয়ে সাব গাড্ডী তৈয়ার”।             

আমার মনে হল নক্ষত্র ভরা স্বল্প-আলোকিত আকাশের নিচে যেন ড্রাইভারের গলার স্বরটা ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে ভেসে এলো।

এর কিছুদিন পরে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল-আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম,আর ভাল লাগছিলনা, আর তার কিছুদিন পরে মিশ্র-দাও ছেড়ে দিলেন একই কারণে। কিন্তু আমাদের ফোনে যোগাযোগ কখনও বিচ্ছিন্ন হয়নি। উনি আমাকে প্রায়ই বলতেন,নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আমাদের লাইনে অনেক শিক্ষকের প্রয়োজন; আমাকে ‘বায়ো-ডাটা’ পাঠাতে বলতেন। কিন্তু আমি তেমন ‘গা-না-করায়’ উনি আর এগোননি। পরে অবশ্য জেনেছিলাম উনি একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভিজিটিং প্রফেসার’ হিসাবে যোগ দিয়েছেন। এই সময় থেকেই আমাদের যোগাযোগ কমতে থাকল-কেননা ওঁর কখন ক্লাস থাকত আমার জানা না থাকায় টেলিফোন করে ওকে বিব্রত করতে ইচ্ছা করত না। এই ভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের যোগাযোগ কমে এসেছিল-কেবল একবারই একটা ‘সেমিনারে’ হঠাৎ দেখা হয়েছিল-কিন্তু আমার মনে হয়েছিল কোথায় যেন কিছু হারিয়েছেসেই সদা-হাস্যময় মুখটি আর দেখা গেলনা। আর উনি কথায় কথায় যে শব্দটা ব্যবহার করতেন সেই,”স্যর-স্যর” শোনা গেলনা। মনে হচ্ছিল সর্বদাই উনি যেন কোন ভাবের ঘোরে রয়েছেন-এই জগতের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ যেন ক্ষীণ হয়ে গেছে।

বেশ কিছুদিন ধরে টেলিফোন করে কোন উত্তর পেলাম না। বাড়ির ফোনেও যোগাযোগ হলোনা-পরপর কয়েকবার ফোন করেও যখন কোন উত্তর পেলাম না তখন চেষ্টা করতে লাগলাম জানাশুনো অন্যদের কাছে; কেউ কোন খবর দিতে পারল না-এমন কি ওঁর বিশ্ববিদ্যালয়েও খোঁজ করেছিলাম-ওরা বলল উনি নাকি একদিন হঠাৎ পদত্যাগ-পত্র পোষ্টে পাঠিয়ে দিয়ে ছিলেন,তারপর আর ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি;ওর শেষ মাসের মাইনেটাও বাড়ির ঠিকানায় পোষ্টে পাঠানো হয়েছিল-কিন্তু সেই ‘মনি-অর্ডার’ও ফেরত এসেছিল। এমনই রহস্যময় মানুষ। আমি মনে মনে ভাবলাম, সেটা মিশ্র-দার পক্ষে খুবই সম্ভব,কেননা উনিই একবার কথায় কথায় বলেছিলেন ওঁর নিজের এক জ্যাঠামশাই নাকি হঠাৎ একদিন সন্ন্যাসী হয়ে গৃহত্যাগ করেছিলেন,আর কোন যোগাযোগই রাখেননি সংসারের সঙ্গে।

পুরানো দিনের স্মৃতি চর্চায় এতই মগ্ন ছিলাম যে ডানপাশে বসা গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা সহ-যাত্রীর অস্তিত্বও যেন ভুলে বসেছিলাম। হঠাৎ-ই তাঁর উপস্থিতি যেন টের পেলাম ওঁর হালকা কাশির শব্দে। সহজাত সচেতনতায় একটু সরে বসলাম- ভাবলাম অনিচ্ছাকৃত-ভাবে আমার ‘ধড়াচূড়া’ ওঁর কোন অসুবিধা সৃষ্টি করছে না তো?

ভদ্রলোকও যেন সচকিত হয়ে অস্পষ্টভাবে বলে উঠলেন,“ইটস্ ওকেআমি বুঝতে পারলাম ইনি সাধারন গেরুয়াধারী সন্নাসী নন-শিক্ষিত আর মার্জিত মানুষকিন্তু মনে সামান্য খটকা লাগতে ছাড়ল নাবাচনভঙ্গি বা সুর যেন কেমন চেনা চেনা লাগছিলভাবলাম,মনের ভুলে এমন অবস্থা কখনও কখনও হয়ে থাকে

যাহোক,এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিটের অস্বস্তিকর বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতা শেষ পর্যন্ত শেষ লোপাব্লিক এড্রেস সিস্টেমে ভেসে এল গতবাঁধা ঘোষণা,“দয়া করে শুনবেন,যাত্রীগণ দয়া করে সিট-বেল্ট বেঁধে নিন আমরা একটু পরেই বিমান বন্দরে নামব ইত্যাদিসিট বেল্ট আমাদের বাঁধাই ছিল-শুধু সিট গুলো সোজা করে বসলাম

দেখতে দেখতে  আমাদের পায়ের নিচে মাঠ-ঘাট, গাছপালা অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হতে লাগলএকসময় সামান্য ঝাঁকা দিয়ে আমাদের বিমান মাটি স্পর্শ করে তীব্র গতিতে দৌড়াতে লাগল; ধীরে ধীরে সে দৌড়ের গতি কমে শেষে একসময় বিমানটি থেমে গেল ‘‘সিটবেল্ট খোলার সঙ্কেত  জ্বলার আগেই কিছু ধৈর্যহীন যাত্রী টক টক আওয়াজ করে বেল্ট খুলে দাঁড়িয়ে পড়ল

ককপিট থেকে আবার অনুরোধের ঘোষণা আসায় কিছু যাত্রী বসে পড়লোসেই অবসরে একজন  হোস্টেস এগিয়ে এসে আমাদের পাশের গেরুয়াধারীকে বিনীতভাবে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করলহাতের ছোট ব্যাগটা তুলে নিয়ে ভদ্রলোক হোস্টেস এর পিছে পিছে এগিয়ে চললেনকিন্তু কিছু লোক সবার আগে বেরুবার চেষ্টায় দরজার দিকে ধেয়ে যাচ্ছিলোহোস্টেস মেয়েটি এগিয়ে যাচ্ছিলো আর গেরুয়াধারী মৃদুকন্ঠে,”স্যার,স্যার,প্লীজ বলে এগিয়ে যাচ্ছিল

এবার আমার কানে এসে বাজলো সেই চেনা স্বর-সেই কোনদিন না-ভোলা স্বর,‘স্যর স্যরস্থান কাল অবস্থা ভুলেগিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম, “মিশ্রদা মিশ্রদা

আমার স্ত্রী আর আশে-পাশের যাত্রীরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল

লেখক পরিচিতি 

শোভনলাল আধারকার-এর স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ লেখা। ওই সময়েই শুকতারাতে অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টিদিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

পঞ্চাশটির বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।

দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিকএর জানা-অজানা’ কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশ” ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।