Advt

Advt

Wrong Number, Story / Galpo, by Shovanlal Adharkar, Tatkhanik digital bangla / bengali online e magazine, রং নম্বর, গল্প

Wrong Number, Story / Galpo, by Shovanlal Adharkar, Tatkhanik digital bangla / bengali online e magazine, রং নম্বর, গল্প


ওই আবার ফোনটা বাজতে আরম্ভ করলো।সেই একই নম্বরটা থেকে ফোন আসছে। ফোনটা ধরলেই একটা অস্পষ্ট গোগানির মত আওয়াজ আসে - অবোধ্য ভাষায় কেউ কিছু জানাবার চেষ্টা করে । প্রথমবার বলেছিলাম , 'রং নম্বর প্লীজ , কিন্তু সেই অবোধ্য স্বর থামেনি - সেই একই সুরে একই কথা বলে যাচ্ছিলো। আমি আবার বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেই কণ্ঠ থামেনি - অবোধ্য ভাষায় বলে চলেছিল।

এর পর থেকে ওই নম্বরটা থেকে ফোন এলেই আমি লাইন কেটে দিচ্ছিলাম । বিরক্তিতে সারা মন ছেয়ে যাচ্ছিলো। এবার রাগ না করে যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আমার নম্বর পেল কি করে? এ শহরে আমি নতুন, নম্বরটাও খুব একটা পুরানো নয়। আমারই কোন পরিচিত বন্ধু মজা করে এমন করছেনা তো? অথবা আমার ছোটদি - যাকে সপ্তাহে অন্তত দুবার ফোন না করলে রাগ করে, এটা ছোটদির তামাশা নয়তো? সুব্রত, রখিন, বুদ্ধদেব, ওমপ্রকাশ কাপুর - ওদের ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম । কিন্তু কেউ আমাকে ফোন করেনি গত কয়েকদিনে । তাহলে?

ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেল । আমি হাঁফ ছেড়ে ‘থ্যাঙ্ক গড' উচ্চারণ করে লেখায় মন দিলাম । কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই আবার বাজতে শুরু হয়ে গেল । আমি রেগে গিয়ে ফোনটা তুলেই চিৎকার করে উঠলাম , " you bloody fool - what do you want ? I told you its’ wrong number কিন্তু সেই একই সুরে অস্পষ্ট অবোধ্য ভাষা ভেসে এলো ।

আমি রাগ করে বোতাম টিপে ফোনটা বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু লেখায় মন বসাতে পারলামনা - কতকগুলো প্রয়োজনীয় ফোন আসার ছিল - প্রকাশকদের ফোন ও আসতে পারে ।

বোতাম টিপে ফোন বন্ধ করলেও মনকে চিন্তা থেকে বন্ধ করতে পারলামনা। কেবলই মনে হচ্ছিল এর মধ্যে কোন রহস্য থাকতে পারে - বার বার কেন একই ফোন থেকে একই গলার স্বরে রঙ নম্বর আসতে যাবে - আর বার বার ‘সরি’ না বলে বিড় বিড় করে কোন আস্পষ্ঠ বক্তব্য বলতে চাওয়া ।

শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম এর একটা শেষ দেখতে হবে - কি যেন অজানা চাপ অনুভব করলাম মনের মধ্যে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল প্রায় ভুলে - যাওয়া স্কুলের বন্ধু ভবতোষ দত্তকে। শুনেছি ও আজকাল পুলিশের একজন হোমরা চোমরা অফিসর, ইদানিং দিল্লি থেকে বদলি হয়ে এসেছে । কয়েকটা ফোন করতেই ওর নম্বরটা পেয়ে গেলাম ।

সামান্য দ্বিধাভরে ওকে ফোন করতেই ওর বাজখাই গলার আওয়াজ পেলাম । আমি নিজের নাম উচ্চারন করার সঙ্গে সঙ্গে একটা ছোটখাটো ভদ্রগোছের গালি দিয়ে বললো, “শালা, কোন বিপদে পড়েছিস নাকি যে এতদিন পরে। পুলিশ বন্ধুকে মনে পড়লো?

ব্যাপারটা ওকে খুলে বললাম । আরো বললাম, ফোন ট্রেস করতে ওর সাহায্য চাই।ও প্রথমে ব্যপারটা হেসে উড়িয়ে দিতে চাইল, কিন্তু আমার আন্তরিকতা দেখে আমার অভিযানে সাহায্য করতে রাজী হলো - তাছাড়া পুলিশোচিত রহস্যের গন্ধও নিশ্চয়ই পেয়ে থাকবে।

পরের দিনই সকাল সকাল ও এসে হাজির হলো - সাধারণ পোষাকে। চা খেতে খেতে ওকে ব্যপারটা আবার খুলে বললাম এবং মনে করিয়ে দিলাম যে এর মধ্যে কোন ক্রিমিনালিটির গন্ধ যেন ও না পায় । ভবতোষ আর একটা গালাগাল দিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করে বললো , ' চল , বেরিয়ে পড়ি ' ; ওর পকেটে রাখা একটা কাগজ বের করে আমাকে ঠিকানাটা পড়তে দিল । কলেজ জীবনে সারা শহর চষে বেড়িয়েছি কিন্তু মনশ্চক্ষে এই ঠিকানাটা দেখতে পেলামনা - অবশ্য বিগত কুড়ি বছরে এ শহরের ইতিহাস - ভূগোল অনেক বদলে গেছে । আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে ও আমাকে আশ্বস্ত করলো , ও জায়গাটা চিনতে পারবে । পুলিশের গাড়ি না নিয়ে ভবতোষ নিজস্ব গাড়িই চালাচ্ছিল । 

উত্তর কলকাতার এক পরিচিত মোড়ে এসে গাড়ি ঢুকলো ছোট রাস্তায়, তারপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম - ডাইনে - বামে গলি , উপগলি , তস্য উপগলিতে। একটা উপ - গলিতে দুজন পাশা - পাশি চলা যায়না , একজনকে কাৎ হয়ে দাড়ালে অন্যজন যেতে পারেন । মুহূর্তে আমরা বুঝলাম যে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আমরা তিন শতাব্দী পেরিয়ে অধুনিক শহর কলকাতা ছেড়ে যব চার্নকের সুতানুটী গ্রামে পৌঁছে গেছি। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে একা ছেড়ে দিলে আমি এ গলি থেকে বেরতে পারব না। শেষ পর্যন্ত দুজনকে জিজ্ঞেস করে আমাদের ঈপ্সিত ঠিকানায় এসে পৌছলাম। একটা ছোট টিনের চালের একতলা বাড়ি কোন সদর দরজা জাতিয় কিছু নেই - সোজা ঘরের ভিতর। কাগজে লেখা নম্বরটা মিলিয়ে নিয়ে ভবতোষ দরজার কড়া নাড়ল। কোন সাড়া না পাওয়ার আরো কয়েকবার সামান্য জোরে কড়া নেড়েও কোন আওয়াজ না পেয়ে দরজার সামান্য ধাক্কা নিতেই দরজাটা খুলে গেল। একটা তীব্র স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ নাকে এলো। ভবতোষ আমার দিকে চেয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকের উপর রাখল । আমি আরো অন্ধকারে চোখকে অভ্যস্ত করে নিচ্ছিলাম । একটা ছোট ঘর পেরিয়ে আর একটা ছোট ঘরে আসতেই গন্ধটা আরো তীর হয়ে নাকে ঝাপটা মারলো যেন। ঘরে কোন আলো ছিলনা - কোনে একটা ছোট ঘুলঘুলি দিয়ে বাইরের আলো চুইয়ে ঢুকছিল, তাতে ঘরটা আলোকিত না হলেও অন্ধকার কমে এসেছিল, অথবা আমার চোখ ততক্ষনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল ওই আলোতে।

ঘরের মধ্যে আসবাব বলতে কেবল একখানা কাঠের তক্তাপোষ আর ঘরের কোনে রাখা একটা ছোট জলচৌকি যাতে রাখা আছে একটা জলের কুজো। তক্তপোষে শুয়ে ছিলেন কঙ্কালসার এক অশীতিপর বৃদ্ধ কোঠরাগত চোখে আমাদের দিকে চেয়ে বিছানায় রাখা ছোট লাঠিটা হাতে নিয়ে দুবার আঘাত করলেন তক্তপোষে। একটি অল্পবয়সী মেয়ে এগিয়ে এলো - বোধহয় আমাদের আসার আওয়াজ শুনেই ঘরে ঢুকেছিল আমাদের পেছনে পেছনে। বৃদ্ধ এক অবোধ্য অস্পষ্ট গোঙানির স্বরে কিছু বললো মেয়েটিকে। আমার মনে পড়ে গেল টেলিফোনের কথাগুলি আর আমার অকারণ অসন্তোষ প্রকাশ ।

মেয়েটি আমাদের দিকে চেয়ে বলল, 'উনি আপনাদের বসাতে আর জল দিতে বলছেন আমাকে। মেয়েটি জলচৌকি থেকে কুজোটা নামিয়ে আমাদের বসতে অনুরোধ করলেন। আমি বিছানার কোনাতেই বসে ভবতোষকে জলচৌকিতে বসতে ইসারা করলাম।

তারপর ওদের কথোপকথন দেখতে লাগলাম, মেয়েটি ভদ্রলোকের কানের একেবারে কছে মুখ নিয়ে বলতে লাগল আর ঘাড় নেড়ে অস্পষ্ঠ গোঙানির ভাষা শুনতে লাগল। কয়েক মিনিট এভাবে চলার পর মেয়েটি আমাদের দিকে ফিরে বলতে লাগল, 'উনি বলছেন, দুবছর হোল ওঁর ছেলের কিডনির অপারেশন হয়েছিল, ওঁরই একটি কিডনি দেওয়া হয়েছিল । তারপর চাকরী নিয়ে চলে যায় - আরব দেশে কোথাও। মাসে মাসে টাকা পাঠাত , কিন্তু একবছর হলো , কোন খবর নেই টাকাও আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

এবার মেয়েটি আমাদের দিকে চেয়ে বললো , ' আমি দিনে দু'তিন বার এসে দেখে যাই , খাবার আর জল রেখে যাই । ওঁর ছেলে যাবার সময় একটা কম দামী মোবাইল ফোন রেখে গিয়েছিল - মাঝে মাঝে কথাও বলতো কিন্তু এখন সব বন্ধ। ছেলের সঙ্গে যারা গিয়েছিল তাদের একজন আমাকে বলেছিল ছেলেটি নাকি কি এক রোগে মারা গেছে । তারপর থেকেই উনি প্রায়ই ওই নম্বরে ফোন করেন। শেষের কথাকটি খুব আস্তে বলল মেয়েটি যাতে বৃদ্ধ শুনতে না পান । আবার গোঙানির আওয়াজ হতেই মেয়েটি এগিয়ে গেল বৃদ্ধের কাছে । কান পেতে শুনে মাথা নেড়ে এগিয়ে এলো আমাদের কাছে , বললো , ' উনি বলছেন , ওনার আর বেশিদিন নেই তাই ইচ্ছে ওনার আর একটা কিডনি আর দেহের অন্য সব কেজো অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ দান করে যেতে চান , আপনারা দয়া করে তার ব্যবস্থা করে দিন । আমি আর ভবতোষ স্তম্ভিত হয়ে অসীম ভক্তিভরে অশীতিপর বৃদ্ধের পানে চেয়ে ঘাড় নেড়ে ওঁকে আশ্বস্ত করে মেয়েটির সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এলাম। 

লেখক পরিচিতি 

শোভনলাল আধারকার-এর স্কুলে থাকতেই শুরু হয়েছিল গল্প আর মহাকাশের উপর প্রবন্ধ লেখা। ওই সময়েই শুকতারাতে অসীমের অন্বেষণে” প্রকাশিত হয়েছিল। সীমাহীন বলেই বুঝি মহাকাশের আকর্ষণ ছিল অসীম। জ্যোতিঃশাস্ত্রের ছোটখাটো বই পড়ে কম দামী বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চলতে লাগল নক্ষত্রদের সংগে নীরব বার্তালাপ। ইচ্ছা ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করা। কিন্তু “Need to have and Nice to have” এর কলহে সেটা হতে পারেনি। কিন্তু নেশা আর পেশায় দ্বন্দ্ব কখনও হয়নি। তাই এখন এই পরিণত বয়সেও মহাকাশের আর বিজ্ঞানের অনন্ত রহস্য নতুন করে জেনে ও জানিয়ে সহজ সরল ভাষায় পরিবেষণ করে আনন্দ পা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর আই. আই. টিদিল্লি থেকে পড়াশুনা ও গবেষণা,কিছুদিন অধ্যাপনা,তারপর সরকারী বৈজ্ঞানিক দপ্তরে কার্যকালে পৃথিবীর কয়েকটি দেশেও কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

পঞ্চাশটির বেশি প্রবন্ধ নামী বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে (ইন্দোর) আমন্ত্রিত প্রবন্ধ পাঠ করার গৌরবও ভাগ্যে ঘটেছে। বিগত দেড় বছর করোনার প্রকোপে ছাপাখানা বন্ধ থাকার কারণে অনেক ই-ম্যাগাজিনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।

দিল্লি থেকে প্রকাশিত বহুল জনপ্রিয় ই-ম্যাগাজিন, “তাৎক্ষণিকএর জানা-অজানা’ কলমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি জনপ্রিয়-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশ” ওয়েব-সাইটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।   



                  
Wrong Number, Story / Galpo, by Shovanlal Adharkar, Tatkhanik digital bangla / bengali online e magazine, রং নম্বর, গল্প