কবিতার পাতা
লিখেছেন – ভীষ্মলোচন শর্মা,পুষ্প সাঁতরা,শক্তিপদ
মুখোপাধ্যায়
রাজভোগ
ভীষ্মলোচন
শর্মা
সবুজ দেশের রাজা
সকাল থেকে শুরু করেন
কেবল খাজা খাওয়া।
কঙ্গো দেশের রাণী
লেবুর রসে মিশিয়ে নেন
একটু গরম পানি।
বুদ্ধুগড়ের রাজা
সকাল হলেই হাঁকডাক
দুধ চাই তার তাজা
গুন্ডি দেশের রাণী
আমসত্ত্ব ভাজা চাই
সকালে সাতখানি।
মকরন্দের রাজা
দু’ডজন পাটিসাপটা
পেটের খোলে গোঁজা।
আরাকানের জমিদার
গরম হালুয়া ছাড়া
চোখ খোলে না তার।
জিয়াগঞ্জের রাজা সেন
খাওয়ার ব্যাপারে তিনি
সাক্ষাৎ তানসেন।
নসিগঞ্জের রাজা
সাতসকালেই তার চাই
গরম তেলেভাজা।
হটুগঞ্জের রাজানন্দ
জোয়ান তিনি ভারি
খেতে চান পড়শির পুরো জমিদারি।
নিরামিষি জমিদার রায় পরমেশ
ছানা খান, চিনি খান
শেষপাতে দরবেশ।
কালিয়া পোলাও খান জমিদার সরখেল
রাত হলে শুরু হয়
তার যে খাওয়ার খেল।
রাজারা আর কি খান পাবলিক জানে তা
গিলে খেতে চান তারা
প্রজাদের মাথাটা।
প্রজাদের মাথা খেলে জমিদারি
পোক্ত
নায়েব আছেন যিনি
তিনি ভারি শক্ত।
ডেকে ডেকে প্রজাদের দিয়ে ধার
কর্য
দখল করেছেন তিনি
আজ পুরো রাজ্য।
প্রজারা সকলে দাস টাকা বিনে করে
চাষ
হাফ খোরাকি পায়
যা লাগে বারো মাস।
কবি পরিচিতি
ভীষ্মলোচন শর্মার পোশাকি নাম উৎপল মৈত্র। একদা দৈনিক বসুমতী কাগজে সাংবাদিক ছিলেন। বর্তমানে ‘বইওয়ালা’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার সাথে যুক্ত। স্থায়ী নিবাস কলকাতায়।
----------------------------------------
উঠোন জুড়ে অভিমান
পুষ্প সাঁতরা
গোলাপের ভিতর বিষাদ বৃষ্টিপাত
বিবর্ন প্রাণে ফসলের সবুজ ঘ্রাণ
বিরজা উথাল পাথাল সম্মূখ গিরিখাত
উদাসীন উঠোন জুড়ে মান- অভিমান
রোমে রোমে স্বপ্নের পার্থিব বিলাস
তবু জেগে থাকে বিষন্নতার ঘোর
গুমোট প্রহর কাটে নৈঃশব্দের শ্বাস
অলিখিত তৃপ্তির রমনীয় রাধা ভোর।
কবি পরিচিতি -
লেখনীর সাথে সখ্যতা তিরিশ বছর। কবিতা, গল্প, অনুগল্প, প্রবন্ধ ও
বিশেষ আর্টিকেল লেখেন, নানা পত্রিকার সাথে যুক্ত, একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
আকাশবানী কলকাতায় বিষয় ভিত্তিক চিঠি।
গ্রন্থের সংখ্যা - ছয়টি।পাষানী
অহল্যা- কাব্য,আগডুম বাগডুম – ছড়া,মেঘপাখির ইস্তাহার – কাব্য,আকাশের চিঠি- চিঠি, প্রবন্ধ
সংকলন দোতারা- অনুকাব্য
মৃগশিরার হিমশ্বাস - কাব্য গ্রন্থ
----------------------------------------------------
মুক্তির প্রান্তরে
শক্তিপদ মুখোপাধ্যায়
বিষণ্ণ হে ধরণী,
মোদের মিনতি,
দাও তব অনুমতি,
ঘুরিয়া আসিতে দাও সুদূর কুটীরে।
যেথা গাইবো মোরা,
প্রান ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
আলোকেরই ঝর্ণাধারায়,
সকল শ্রান্তি ঝড়িয়ে ।
সেথা নৃত্যরত পরী এক যেন
হিমের আঁচল পেতে,
জঙ্ঘা তার উজ্জলিত স্বর্ন আলোকেতে।
নিদ্রা ভাঙে বিহঙ্গের কোন ডাকে,
নতুন সূর্যের আলোকচ্ছটা
রইবে মোদের সাথে।
ধুম্রায়িত হাসিঠাট্টার মজলিসি,
আর উষ্ণ পোশাক সাড়া দেবে
আলো আঁধারীর বনবিথী।
দিগন্ত ঢাকা অবগুণ্ঠনে,
সোনালি আলোর প্রভাতি ছটায়
জাগিবে দ্যুলোক মন্দ মন্থরে।
আরে বিহঙ্গ মোর,
মুক্ত করো তব বন্ধ পাখা।
আসিবো ফিরিয়া যেন সকলের মাঝে,
কোন নবীন প্রভাতে,পুনর্জন্মে,
শৈশবের প্রথম উল্লাসে।
মধ্যান্নের অব্যক্ত কঠোর আহ্বানে,
রাঙায় ধরণী সেথা তপ্ত সমীরণে।
অরণ্যের স্নিগ্ধ ছায়ায় তবু
শান্তি রাশি রাশি,
রহিবো মোরা যেন কোন পুরবাসী।
আবরন ধীরে ধীরে ঘেরি চারিধার,
অস্তমান রবি আর সন্ধ্যা অন্ধকার।
চলে যাবে দিন দূর দূরান্তরে,
সাঁঝের বঁধু চুপি চুপি প্রবেশিবে
দ্বারে,
কেড়ে নিয়ে দিবসের রাজদণ্ড,
চন্দ্রটিপ এঁকে দিয়ে গগন ললাটে,
জ্বালিয়ে স্বপ্নদীপ মোদের সমীপে।
হে শর্বরী, হে অবগুণ্ঠিতা,
তোমার বক্ষ জুড়ি যুগে যুগে
অতন্দ্র প্রহরী যারা
নিস্তব্ধ অম্বর মাঝে,
জীজ্ঞাসিনু তাহাদের,
মিলবে না কি ক্ষনিকের আশ্রয়,
আতিমারি-বিরহিত সুদুর প্রান্তরে,
প্রবাসে বিরহ ভুলি জগৎ মাঝারে?
লেখক পরিচিতি –
শক্তি পদ মুখোপাধ্যায়, বিএসসি, সিএআইআইবি, ডিআইএম, ডিসিও, এমএ (ইংরাজি), ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ আধিকারিক। ওঁনার লেখা কবিতা,গল্প এবং প্রবন্ধ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে পাঠকদের প্রশংসা লাভ করেছে। তিন বছর আগে শক্তিপদবাবুর লেখা এবং পরিচালনায় একটি গীতিনাট্য প্রভূত সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ হয়। ওঁনার লেখা কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ, বর্ডারলেস, পাসএজার, মলিকুল, বেটার দ্যান স্টারবাক্স, ইত্যাদি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
শক্তিপদবাবুর কিছু লেখা অদূর ভবিষ্যতে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে, যেমন, দি ড্রিবল ড্রেবল রিভিউ, মিউজ ইন্ডিয়া, ইত্যাদি”।


