শ্রীক্ষেত্র
কৌশিক সেন
এইতো একাকী সমুদ্রস্নান আর এইতো একাকী জগন্নাথ
এইতো একাকী কণা কণা শীত, কুয়াশার বুকে
চেনা ফুটপাথ
এইতো আমার গাঙ্গেয় ভূমি, চুমো দেওয়া মা’রা তারা হয়ে যায়
এইতো অঙ্গে সুগন্ধি ধূপে প্রভাতী আকাশে যারা চলে যায়…
যে মেশে বাতাসে, নিমেষে পাতা সে, মাদুর বিছানো মধুযাপনের
জোছনার ছায়া, ফাল্গুনী মায়া হাত ধরে টানে শত আপনের।
কেই বা আপন, কে যে হবে পর, বালি হাতরিয়ে কড়ি
খুঁজি চল
এ শহর বালি, মিছে খোঁজা খালি, শরীর জড়ানো পিত বল্কল।
এইতো একাকী প্রসাদী ভোগ আর এইতো একাকী সুভদ্রা
পাশাপাশি জাগা মৃদু চিলেকোঠা, একাকী জাগুক ও
ছাদরা।
ছাদের ওপরে একাকী জাগুক জ্যোৎস্নার রঙ, মাতাল ফুল
জ্যোৎস্নার রোদে একাকী শোকায় চুপচুপে ভেজা যত এলোচুল
ও চুলে জমেছে দানাদানা নুন, গুনে গুনে চলা
ফাল্গুনী চোখ
চোখের পাতায় একাকী তারারা মুছে নিয়ে যায় আনমনা শোক।
ও শোকে যায়না, কুচোনো আয়না,গুড়ো গুড়ো ছবি
নিয়ে যায় ঢেউ
তুইতো আমার ভগিনীর মতো,এই কথাটা কি
বলেছিল কেউ!
এইতো একাকী বালুকার বেলা, এইতো একাকী বলরাম
ভাই
সাগর কিনারে পতাকা মিনারে একা জেগে থাকা কত রোশনাই।
আলো জ্বালা বীচে দুপায়ের নীচে সরে যায় মাটি, দাঁড়ানোই দায়
এইযে একাকী, সবকিছু ফাঁকি, একা গাঙচিল
ঝরঝঞ্ঝায়।
এইযে সাগরে একাকী যে নাও, দুলে দুলে ফেরে
মাঝ দরিয়ায়
সন্ধের পরে ঘরে ফেরে সেও, জালে বাঁধা মাছ
বুঝি চমকায়।
এইতো একাকী শ্রীখোল বেজেছে, ওই শোনা যায় শত
হরিনাম
এইতো তোমার সামনে দাড়িয়ে মুখোমুখি রথ আর পুরীধাম।
কবি পরিচিতি -
জন্ম ১৯৭৬, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদে। ছাত্রজীবন ও বেড়ে ওঠা বহরমপুর শহরেই। কলেজ উত্তীর্ণ হবার পর কঠোর জীবন সংগ্রাম। সাতাশ বছর বয়সে দিল্লিতে আগমন। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। ষোলো বছর ধরে দিল্লির বাসিন্দা। দিল্লি ও দিল্লির বাইরে কিছু পত্র পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত ও প্রশংশিত। একটি কাব্যগ্রন্থ "রাই জাগো গো" প্রকাশিত।
***************
রাহু গ্রাসের
শেষে
তপন চ্যাটার্জী
কয়েক শতাব্দীর মাৎস্যন্যায় অরাজকতার সময়
রক্তক্ষরণের শোণিতধারায় অচল স্নায়ুতন্ত্র
অবিচার ব্যাভিচারে শরীর মন অবশ
ক্ষত ছড়াচ্ছে খুব দ্রুত অবক্ষয়ে ,
সেই সময় এক ফাল্গুনী পূর্ণিমার রাতে
আবির্ভূত হলেন যুগ সন্ধিক্ষণের মহামানব ।
প্রেম ভক্তির প্লাবন এল , সুস্থ
শীতল হল দেহ মন ,
যবন-কাফের ধনী-নির্ধন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে
এক সাথে চলেছে শ্রীগৌরাঙ্গের নগর সংকীর্তনে ,
সবায়ের কণ্ঠের হরিনাম
নবদ্বীপ থেকে সারা বাংলায় প্রতিধ্বনিত হয়ে
অগ্নিদহনের অবসান , কল্পারম্ভে
গ্রহণমুক্ত চন্দ্র আজ পূর্ণ উদ্ভাসিত ।
যিনি শ্রীবিষ্ণু তিনিই শ্রীকৃষ্ণ
আবার তিনিই শ্রীজগন্নাথ ,
শ্রীবিষ্ণুর অবতার শ্রীগৌরাঙ্গ এবার চলেছেন
শ্রীক্ষেত্রের দুর্গম পথে রথের দড়িতে টান দিতে ,
সেই পূণ্যে বিলীন হবে
মহাকালের কালিমালিপ্ত এক অধ্যায় ,
পথের শেষে অদূরে বৈকুণ্ঠের উন্মুক্ত দ্বার ।
কবি
পরিচিতি-
তপন চ্যাটার্জীর
জন্ম কলকাতার উপকণ্ঠে কাঁচরাপাড়ায়। শিক্ষাগত যোগ্যতায় BE(Elect.),
MBA এবং
সর্বভারতীয় ইঞ্জিনীয়ারিং সারভিস্ পরীক্ষা দিয়ে CEA তে Asstt.
Director পদে যোগ দিয়ে ২০০৯ সালে Chief Engineer পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এরপর কয়েক মাস GERC তে Consultant
পদে কর্মরত থাকার পর আসাম ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনে (AERC)
Member পদে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে অবসর নেন।
চাকরিসূত্রে
দেশের বিভিন্ন জায়গায় এবং আমেরিকা, কানাডা,
জার্মানি, ব্রিটেন ও সমগ্র পশ্চিম ইউরোপে বেশ
কয়েকবার ভ্রমণ করেছেন। বিভিন্ন টেকনিক্যাল ম্যাগাজিন ও সেমিনারে লেখা
প্রকাশিত হয়েছে ও Guest Faculty তে ছিলেন।
সাহিত্যের জগতে
তপন চ্যাটার্জী কবিতা ,গল্প ,ভ্রমণ কাহিনী এবং প্রবন্ধ
লেখেন ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় এবং একটি কবিতার বই আছে।
একজন বাচিক
শিল্পী হিসেবে তপন চ্যাটার্জীর বেশ কয়েকটি আবৃত্তি
এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান YouTube এবং Facebook এ আছে ও সমাদৃত হয়েছে।