Advt

Advt

গন্ধ গেছে চুরি ( রম্য কবিতা / ছড়া ) - ভীষ্মলোচন শর্মা, Gandha Geche Churi by Vismalochan Sharma, Tatkhanik Bangla / Bengali Free Web/Online Magazine

 

রম্য কবিতা / ছড়া

গন্ধ গেছে চুরি

-ভীষ্মলোচন শর্মা, কলকাতা

 

সাতসকালে রাজবাড়িতে মহা হুলুস্থুল,

সিংহাসনে রাজামশাই দুই হাতে দুই শূল।

 

কিড়মিড়য়ে বলেন রাজা, ‘চোরকে চড়াব শূলে,

তারপরে চোরবাবাজীকে পিঁষব হাতীর তলে’।

 

মন্ত্রীরা সব বসে আছেন মুখটি করে চুন,

জানেন না কি ঘটবে, খসলে পানের চুন।

 

সেনাপতি কোথায় গেল, রাজা হাঁকেন  জোরে

- ‘মহারাজ আমি এইখানেতে বসেছি করজোড়ে’।

 

করজোড়ে বসে থাকলে কাজটি হবে কী?

সেনাপতি বলেন, ‘রাজন, সৈন্য পাঠিয়েছি।

 

‘কোথায় কত পাঠিয়েছ হিসেবটা তার বলো’,

-আজ্ঞে, উত্তরেতে হাজার দশেক, দক্ষিণেতে ষোল’।

 

‘পূর্ব পশ্চিম তবে রেখেছো কেন ফাঁকা?’

-‘ফাঁকা নেই মহারাজ, সেখানে পঁচিশ হাজার রাখা’।

 

‘ভাল করে নজর করো, ধরব আমি তারে,

এতবড় সাহস কি না, চুরি আমার ঘরে!’

 

কোতোয়াল বলে, ‘মহারাজ কি কি গিয়েছে চুরি,

হিসাব যদি দেন তাহলে আমরা বামাল ধরি’।

 

রাজা বলেন, ‘চোর বাবাজী সেয়ানা সে তো ভারী,

আর কিছুতে হাত দেয়নি, শুধু গন্ধ গেছে চুরি’।

 

পারস্যদেশ থেকে গন্ধদ্রব্য এনে নিজের হাতে

লাগিয়ে ছিলাম ঘরের কোণে কোণে।

কাল রাতেও শোওয়ার সময় গন্ধ ছিল ঘরে,

আজ সকালে উঠে দেখি নিয়ে গেছে সব চোরে।

রাতের বেলা শুয়েছিলাম দরজা জানলা এঁটে,

ভোররাতেতে চুরি করেছে ঘরেতে সিঁদ কেটে’।

 

রাজপণ্ডিত ছিলেন এতক্ষণ চুপটি করে বসে,

কথা বলার সুযোগ পেয়ে উঠলেন তিনি কেশে।

 

বলেন, ‘গন্ধ চুরি নয়কো ভালো, রাজ্যে অমঙ্গল,

ভিন দেশের সাথে অহেতুক বাধবে গণ্ডগোল।

 

অতি বর্ষা, শস্যক্ষয়, রাজ্যে আসবে ক্ষরা,

এখন মোদের উচিত কাজ চোরকে আগে ধরা।

 

চোর আছে রাজ্যমধ্যে, আমার মনে কয়,

চোর ধরতে লোকের গায়ের গন্ধ শুঁকতে হয়।’

 

রাজা বলেন, ‘মহামন্ত্রী, রাজ্যে লাগাও ঢ্যাঁড়া,

সব মানুষ লাইনে দাঁড়াক, সঙ্গে ছাগল, ভেড়া’।

 

- এক ঘন্টা সময় দিলাম, মানুষ দাঁড়াক এসে,

রাজপ্রাসাদের পাশের ওই কেল্লাখানা ঘেঁষে।

 

গন্ধ যে করেছে চুরি, তার গায়েতেই রবে,

শব্দে শব্দ ঢাকে গন্ধ কিসে যাবে!

 

রাজ-আদেশে সব মানুষ দাঁড়াল লাইন করে।

রাজা বলেন, ‘গন্ধ আমার, শুঁকবো আমি ওরে।

 

সকাল গেল, দুপুর গেল, বিকেল হল পার,

রাজামশাই গন্ধ শোঁকেন, পান না খুঁজে আর।

 

কারো গায়ে ঘামের গন্ধ, কারোর গায়ে মাছের,

মাটির গন্ধ কারোর গায়ে, গন্ধ নানান ধাঁচের।

 

গন্ধ শুঁকে রাজামশাই তখন পাগল প্রায়,

মন্ত্রী এসে বলেন, ‘মহারাজ, এবার চলুন যাই’।

 

‘কোথায় যাব’! মেজাজ হারিয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন রাজা।

গন্ধ শুঁকে বার  করাটা অতই কি আর সোজা!

মন্ত্রী বলেন, ‘গন্ধটা কেউ লুকিয়েছে মাটির তলায়,

মাটির নীচে  এবার একটু খোঁজ করা তো চাই’।

 

রাজা বলেন, ‘মন্ত্রী তোমার বুদ্ধি আছে ঘটে,

এই কথাটা আমার মনে আসেনি তো বটে!।

 

মাটি খোঁড়ো, গন্ধ তাহলে হবে ঠিকই বার,

মাটির নীচে লুকিয়ে রেখে কেউ পাবে না পার’।

 

জ্বলল বাতি হাজার হাজার, রাত যে হল দিন,

মাটি কাটতে লেগে গেল, মজুর লক্ষ তিন।

 

মাটির তলায় রাজপ্রাসাদ, পড়ল পুরো ঢাকা,

রাজা বলেন, ‘মূর্খ সবাই, কোথায় হবে থাকা?

 

মাটি কাটা বন্ধ করো, ফেলো যেখানে ছিল যেটি,

চোর ধরতে গিয়ে তোমরা রাজ্য করলে মাটি!’।

 

রাজজ্যোতিষী এতসময় চুপটি করে ছিলেন।

বলেন তিনি, ‘রাজামশাই হালটি ছেড়ে দিলেন?

 

গণনা আমি করিয়াছি অনেক চিন্তা করি,

অভয় দেন তো বলতে পারি কে করেছে চুরি’

 

রাজা চেঁচান, ‘বলুন বলুন, চড়াব তাকে শূলে,

সকাল থেকে মুখে একেবারে রক্ত দিল তুলে।

 

এতবড় বেয়াদপ সে, আমার বাড়িতে চুরি!

লোকটা বুঝি ষণ্ডা বেজায়, দেখুন তো অঙ্ক করি।

 

সেনাপতিকে ডেকে পাঠাই, সৈন্য রেডি করি,

ধরে তারে আনব ঠিকই কোমরে বেঁধে দড়ি’।

 

রাজজ্যোতিষী বলেন, ‘ধরা নয় কো সহজ মোটে,

চেষ্টা করে দেখতে পারেন নাগাল যদি জোটে।

 

আমার রাজ্যে চুরি করে পালিয়ে যাবে বটে,

এত সাহস হয়েছে তার, এত বুদ্ধি ঘটে!

 

গণনাতে কি পেলেন আপনি নামটি শুধু বলুন,

চোর ধরতে না হয় সঙ্গে আপনি চলুন’।

 

রাজজ্যোতিষী ভাবেন বসে, মন্ত্রী  দেন তাড়া

- আপনি মশায় লোকটা দেখছি বেজায় সৃষ্টিছাড়া

 

রাজজ্যোতিষী বলেন হেসে, নামটি বলতে পারি,

রাজবাড়িতে কাল রাতেতে কে করেছে চুরি।

 

ধরতে তাকে পারবেন না, দেখুন চেষ্টা করে,

আজ পর্যন্ত কেউই তাকে রাখতে পারেনি ধরে।

 

ধরতে তাকে গিয়ে আপনি বৃথা মরলেন ঘুরে,

‘সময়’ই নিয়ে গেছে গন্ধ চুরি করে।

 

ধরতে তাকে পাঠাতে পারেন সৈন্য অস্ত্র ধরা,

কিন্তু মনে রাখবেন রাজন ‘সময়’ যায় না ধরা।

 

গন্ধ চুরি করেনি তো কোনো মানুষজন,

‘সময়’ তারে করেছে চুরি ঘুমিয়েছিলেন যখন।

 

রাজা বলেন সারাটা দিন পণ্ডশ্রমই গেল,

জ্যোতিষী বলেন পণ্ডশ্রম কেন হবে, শিক্ষা একটা হল।

 

সকাল থেকে চিল-চিৎকার, গন্ধ চুরি হল,

বোঝেননি  তো একবারও ‘সময়’ তাকে নিল।

লেখক পরিচিতি

ভীষ্মলোচন শর্মার পোশাকি নাম উৎপল মৈত্র। একদা দৈনিক বসুমতী কাগজে সাংবাদিক ছিলেন। বর্তমানে বইওয়ালা নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার সাথে যুক্ত। স্থায়ী নিবাস কলকাতায়।